Ads

কিছু অতিপ্রাকৃত/ভৌতিক বা প্যারানরমাল ঘটনার ব্যাখ্যা।

কিছু অতিপ্রাকৃত/ভৌতিক বা প্যারানরমাল ঘটনার ব্যাখ্যা।

একটি ঘটনা দিয়ে শুরু করা যাক

  • রান্না ঘর থেকে কিসের আওয়াজ আসছিলো।সেটা দেখার জন্য এত রাতে নকশিকাঁথার উষ্ণতা ত্যাগ করে রান্না ঘরে যাওয়াটা মোটেই যোক্তিক মনে হচ্ছে না।আওয়াজটা ক্রমে বাড়ছে,অবশেষে যেতে বাধ্য হলাম।বেচারা মার্জার এই কাজটা না করলেই পারতো!এমনিতেই বাড়িতে একা,তাছাড়া রন্দন বিদ্যায় আমি একেবারে কাঁচা।রান্না করা কই মাছের ভোনা পুরোটাই সাবাড় করে দিয়েছে।দোষটা আমারই ছিল।আমার ভুলে তাকের দরজাটা খুলা ছিল,সেই সুবাদে মার্জার তাঁর ভোজন কাজটা সেরে ফেলেছে।
  • এখন আমাকে ডিম ভাঁজি দিয়ে ভোজন করতে হবে।ইদানিং খাওয়া দাওয়া রীতিমত তিক্ততায় পরিণত হয়েছে।না খেয়ে বেঁচে থাকার কোন পদ্ধতি যদি আবিষ্কার করা যেত!প্রতিদিন তিন বেলা খেতে হয়,আবার এই খাবার জোগাড় করার জন্য সাত আট ঘণ্টা ব্যয় করতে হয়।এই হিসেবে একজন মানুষ তার জীবনের অর্ধেক সময় শুধু খাবারের পেছনে ব্যয় করে!মানুষের জৈবিক শরীরটা যদি পরিবর্তন করে যান্ত্রিক শরীরে রুপান্তরিত করা যেত তাহলে মানুষ তার জীবনের পুরোটা সময় কাজে ব্যয় করত,গবেষণা করতো।আজকের এই বিশ্ব আরো উন্নত থাকতো।এতোদিনে হয়ত মানুষ পুরো সৌরজগতে উপনিবেশ গড়ে তুলতো।
  • পিয়াঁজ কুচি সহ ডিম ভাঁজি করতে আমার কমপক্ষে দশ মিনিট সময় লাগবে।তার চেয়ে বরং ব্রেড খেয়ে নেওয়াটাই ভালো।এই দশ মিনিটে আমি ড.জাফর ইকবালের "প্রেত" বইয়ের তিন চার পৃষ্টা পড়তে পারবো।বাড়িতে একা সময় কাটানোর জন্য "প্রেত" বইটা বেছে নিয়েছি।
  • নামটা শুনে মনে হচ্ছিলো ভূত-প্রেত সংক্রান্ত কিছু হবে।কিন্তু না, এই গল্পে একটা ছেলে আছে যে কি না সবার মনের কথা শুনতে পায়!এমনকি কিছু মার্ডার সম্পর্কেও সে আগে থেকে অবগত হয়ে যায়!সে বুঝতে পারে কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে,এমনকি সে স্বপ্নের মধ্যে দেখতে পায় কোথায় কীভাবে মার্ডার হচ্ছে!

গল্পটা অনেক ইন্টারেস্টিং হবে। চরিত্রটা দারুণ!

  • আপন মনে পড়তে লাগলাম।কিন্তু এক পর্যায়ে গল্পটা ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে।কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম।গল্পের মধ্যে খুব জটিল একটা থিওরি দাড় করানো হয়েছে।মানুষের মধ্যে একটা সত্তা আছে,যা বিশেষ প্রকৃয়ায় শরীর থেকে আলাদা করা যায়।নিথর দেহ রুমের মধ্যে পড়ে থাকলেও ভেতরের সত্তাটিকে যে কোন জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায়।কিন্তু এই কাজটা সবাই করতে পারে না।অনেক সাধনার প্রয়োজন,তাছাড়া এই পদ্ধতি অনেক যন্ত্রণাদায়ক।
  • হঠাৎ করে বিদ্যুৎ চলে গেল,আকাশের গর্জন শোনা যাচ্ছে।বৃষ্টির উপক্রম।হাতে C2 একটা মোবাইল।মোবাইলে চার্জ নেই সেটা আমি খিয়াল করি নি।কিছুক্ষণের মধ্যে মোবাইলটা বন্ধ হয়ে যাবে।অন্ধকার রুমে বসে থাকা কিংবা ঘুমিয়ে থাকা অস্বাভাবিক কিছু না।কিন্তু ভেতরে যদি একটু ভয়ের দানা সৃষ্টি হয়,তাহলে এই রাতটা হতে পারে বিভীষিকাময় রাত।মূলত আমি ভয় পাই না
  • অন্ধকারে ভয় পাওয়ার কি আছে?কিন্তু এই গল্পটা পড়ে একটু ভয় পেয়ে গেলাম।একা বাড়িতে এরকম একটা ভয়ংকর বই নিয়ে গভীর রাতে পড়তে বসাটা ঠিক হয় নি।
  • বইটিতে লকলকে জিহ্বা ওয়ালা একটি দেবীর বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।দেবীর সামনে একটি সুন্দরী কুমারীকে বসিয়ে বাধ্য যন্ত্রের তালে সবাই নাচতে শুরু করলো।সবাই মদ্য পানে লিপ্ত হয়ে পাগলের মত নাচতে লাগলো, এক পর্যায়ে তারা উলঙ্গ হয়ে নাচতে লাগলো এবং কেউ কেউ বেহুশ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।সবাই যখন জ্ঞান হারা হয়ে মাটিতে পড়ে গেল,তখন এই মাটির তৈরি দেবীর মধ্যে প্রাণের সঞ্চার ঘটলো।লকলকে জিহ্বাটা নড়ে উঠলো!

কি অদ্ভুত বর্ণনা! আমার শরীর শিওরে উঠলো।

আরও পড়তে পারেনঃ---

মোটিভেশনাল স্পিচ আসলেই ঠিক কতটা কাজে দেয় ।
জীবনে সফল হওয়ার ১৬টি সিক্রেট উপায় ২০২৩
১১টি পদ্ধতি অবলম্বন করে জীবনে সফল হওয়ার উপায়–২০২৩
ছোট ছোট কাজের মাধ্যমে যেভাবে ভালো নেতা হওয়া যায়।
অর্থ যেখানে নেই, ভালোবাসা সেখানে দুর্লভ। দিনশেষে আমরা একা ভয়ংকর একা।
আটটি উপায়ে বদলে ফেলুন নিজের জীবন, ব্যর্থতা কাটিয়ে জীবনে সফল হওয়ার আট পরামর্শ

  • লাল চোখ,লকলকে জিহ্বা,উলঙ্গ শরীর।শরীর থেকে আটালো জেলির মত পদার্থ গড়িয়ে পড়ছে।এরকম একটা নারী মূর্তির চিত্র আমার চোখের সামনে ভাসতে লাগলো।এটা স্বাভাবিক, আমারা যা পড়ি তা কল্পনা করি,এবং মস্তিষ্ক সেই অনুযায়ী কাল্পনিক দৃশ্য তৈরি করে।যা আমাদের চোখের সামনে ছবির মত ফোটে ওঠে।
  • কিন্তু এখন আমি যে দৃশ্যটা দেখলাম।সেটা আমি কোন যুক্তি দিয়ে মিলাতে পারবো বলে মনে হয় না।আমি পাথরের মত স্থির হয়ে বসে থাকলাম।নিঃশ্বাস নিতে পারছি না।মনে হচ্ছে শরীরের প্রতিটা শিরা উপশিরা ব্লক হয়ে গেছে।আমার মন চাচ্ছে আমি সমস্ত শক্তি দিয়ে গগন বিদীর্ণ করে চিৎকার করি,কিন্তু চিৎকার করার মত কোন শক্তি আমি পাচ্ছি না।গলা শুকিয়ে গেছে,খুবই তেষ্টা পেয়েছে,কোন শব্দ আমার মুখ থেকে বের হচ্ছে না।
  • আমি দেখতে পাচ্ছি পাশের রুমের দরজার পাশে সেই নারী মূর্তিটা দাঁড়িয়ে আছে!বীভৎস উলঙ্গ নারী মূর্তি।বুক পর্যন্ত লকলকে লম্বা জিহ্বা থেকে লালা গড়িয়ে পড়ছে,লাল রক্তবর্ণ চোখ।লম্বা চুল হাঁটু পর্যন্ত ঝুলে আছে।সমস্ত শরীর থেকে আঠালো পদার্থ গড়িয়ে পড়ছে।বীভৎস নারী মূর্তিটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে,এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।অন্ধকারের মধ্যে আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।তাকে মূর্তি বলা যাবে না, জীবন্ত মনে হচ্ছে। লকলকে জিহ্বা দুলছে!হঠাৎ করে বাইরে প্রচন্ড বিদ্যুৎ চমকালো,ভেণ্টিলেটরের ফাঁক দিয়ে বিজলির আলো রুমে প্রবেশ করলো সাথে সাথে নারী মূর্তিটি উধাও হয়ে গেল।
  • মোবাইলটাও বন্ধ হয়ে গেছে।রুম পুরোপুরি অন্ধকার।ঘরে মোমবাতি আছে কি না জানা নেই,তবে রান্না ঘরে দেশলাই আছে।কিন্তু এই ঘুটঘুটে অন্ধকারে রান্না ঘরে যাওয়ার মত সাহস পাচ্ছি না।যদি রান্না ঘরে গিয়ে দেখি উনুনের পাশে নারী মূর্তিটা দাঁড়িয়ে আছে।অথবা যাওয়ার পথে দরজার আড়াল থেকে আমার উপর ঝাপিয়ে পড়লো আর লকলকে লালা মিশ্রিত জিহ্বা দিয়ে আমাকে চাটতে লাগলো।নানা রকম উদ্ভট চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো।
  • ঠাণ্ডা আবহাওয়া তারপরও ভয়ে শরীর ঘামতে লাগলো।বিছানার পেছনে কারো হাঁটার শব্দ শুনতে পাচ্ছি।মাথাটা ঘুরিয়ে যদি দেখি বীভৎস দেহটা সেখানে দাঁড়িয়ে আছে।

-না,

  • -আমি এই দৃশ্য দেখতে চাই না।কাঁথা টান দিয়ে মুখ পর্যন্ত মুড়িয়ে শুয়ে পড়লাম।শরীর থেকে ঘাম ঝরছে,কিন্তু কাঁথা সরাতে ইচ্ছে করছে না।কেন যেন মনে হচ্ছে মেয়েটা আমার অাশেপাশে আছে, এক ধরনের ভোটকা দুর্গন্ধ পাচ্ছি।এমন তো হওয়ার কথা না।গল্পের চরিত্রটা এখানে আসবে কী করে?তাছাড়া আমি যে দৃশ্যটা দেখেছি সেটা তো ভুল না।এখন ভোটকা দুর্গন্ধ পাচ্ছি। বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে গেলাম।
  • একটা দেশলাই হাতের কাছে রাখতে হবে।আমি হয়ত প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গেছি।দেশলাইয়ের কাঠি জ্বালিয়ে কিছুটা সাহস সঞ্চার করা যাবে।কিন্তু রান্না ঘরে কিভাবে যাবো।এ যেন আমার কাছে বড় একটা চেলেন্জ।একটা গান ধরলাম, অন্ধাকরে গান গাইলে নাকি ভয় দূর হয়।হালকা হালকা বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিলো।হাতড়িয়ে রান্না ঘর থেকে দেশলাই নিয়ে আসলাম।
  • কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক দেশলাইয়ে সাত থেকে আটটি কাঠি আছে।একেই কী বলে মারফিউস লো।বিদ্যুৎ চলে যাওয়া,মোবাইল বন্ধ হয়ে যাওয়া,এখন দেশলাইয়ের কাটির স্বল্পতা।
  • ঠাস করে একটা কাঠি জ্বালিয়ে নিলাম,ভালো করে পুরো রুম চেক করলাম।কোন কিছুর সন্ধান পেলাম না।কিন্তু নাকের মধ্যে ভোটকা গন্ধ আসছেই।পঁচা প্রাণীর দুর্গন্ধের মতো।দেশলাই হাতে পেয়ে কিছুটা ভয় কমেছে।ভয়ের খপ্পরে পড়ে গেলে সেখান থেকে বের হওয়াটা অনেক কষ্টকর।
  • রাত গভীর হয়ে গেছে,ঘড়িতে দুটো বাজে।এই রাত শেষ হবে বলে মনে হয় না।বিদ্যুৎ আসার কোন লক্ষণ নেই।বাইরে প্রচণ্ড হাওয়া বইছে।
  • কোন ভাবেই যদি ঘুম চলে আসে তাহলে বাঁচা গেল।কিন্তু ভেতরে সন্দেহের দানা বিঁধে গেছে।সেই লকলকে জিহ্বা ওয়ালা উলঙ্গ বীভৎস নারীটা যদি আবার দেখা দেয়।
  • এখন ঘুমানোর চেষ্টা করছি।কিন্তু কল্পনার মধ্যে উদ্ভট ভয়ংকর সব চেহারা ভেসে উঠছে।প্রচণ্ড ভয় পেলে যা হয় আরকি।এই বাড়িতে ভূত-প্রেত বলতে কিছু নেই।তবে অনেক বড় বাড়ি-চতুর্দিকে বাঁশ ঝাড়,বড় বড় গাছ গুলা বাড়িকে একেবারে অন্ধকার করে রেখেছে।

অথচ-এই বাড়িতে রাত তিনটার সময় ছাদে বসে থাকতাম।

পুকুর পাড়ে বসে গান করতাম।ভয়ংকর কোন কিছুর সম্মুখীন হই নি।আর আজ ঘরের ভেতর এমন একটা পরিস্থিতির সম্মুখীন হলাম,ভয়ে একেবারে কুকড়িয়ে যাচ্ছি।

কিসের ভয়?ভয় বলতে কিছু আছে নাকি?নিজেকে নানা রকম প্রশ্ন করতে লাগলাম।আর সাহস উদ্দিপনা দিতে লাগলাম।

এবং নিজেকে উপদেশ দিতে লাগলাম-

-আবির,তুমি হাসো।হাসলে মাথায় অক্সিজেনের প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে।তখন তুমার ভয় কমবে।হাসি মস্তিষ্কের জন্য খুবই উপকারী।

-তুমি হাসো

-এভাবে নিজেকে আদেশ করতে লাগলাম।

তারপর হাহাহা করে জোরে হাসি দিলাম।নীরব রাত্রিতে নিজের হাসিটাকে ভয়ংকর মনে হলো।রান্না ঘর থেকে কিছু একটা পড়ার শব্দ আসলো।হতে পারে বিড়াল।আমার হাসি শুনে ভয় পেয়েছে আর দৌঁড় দিতে গিয়ে স্পর্শ লেগে কোন কিছু পড়ে গেছে।আচ্ছা ওই কদকার বীভৎস মেয়েটা কি আড়ালে বসে আমার কাণ্ড কারখানা দেখছে?আমার হাসি শুনে কি সেও জিহ্বা নাড়িয়ে হাসছে?হঠাৎ মনে হলো এটা আমার হাসি না।আমার ভেতর থেকে অন্য কেউ হাসছে।

-সাথে সাথে নিজেকে ধমক দিলাম।

চুপ থাক 'আবির'।কী সব যা তা ভাবছো।তুমি ভয় পেয়েছো 'আবির'।কিছুক্ষণের মধ্যে এই ভয় কেটে যাবে।তুমি নানা রকম উদ্ভট বিষয় নিয়ে ভাবছো। এতে তুমার ভয় আরো বাড়ছে।এগুলা ভুয়া।ভূত প্রেত বলতে কিছু নেই।এভাবে নিজেকে বুঝাতে লাগলাম।

চোখের পাতা ভারী হয়ে আসছে,এখনি ঘুম আসবে মনে হয়। আর নড়াচড়া করব না,কোন ধরণের চিন্তাও করবো না। আজকের রাত থেকে মুক্তি পেতে হলে-ঘুমানো ছাড়া দ্বিতীয় কোন রাস্তা নাই।চিন্তাগুলো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে,এখনি ঘুম আসবে বুঝি।

হঠাৎ দরজায় ঠুকা দেওয়ার শব্দ শুনতে পেলাম।তারপর আস্তে করে একটা ডাক শুনলাম "আবির"

মুহূর্তের মধ্যে তন্দ্রা ভাব চলে গেল।হৃদকম্পন কয়েক গুন বেড়ে গেল।সটান করে বসে পড়লাম।

তারপর আবার ডাক শুনলাম

-"আবিরররররর"

অনেকটা ধাতব কণ্ঠের মতো মনে হল।

এক ঝটকায় বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে একটু মনযোগ দিয়ে শব্দটা আবার শুনতে লাগলাম।হতে পারে এটা আমার ভুল।এবার দরজার মধ্যে আঁচড়ানোর শব্দ শুনতে পেলাম।কে যেন লম্বা লম্বা নখ দিয়ে দরজায় অনবরত খামছি দিচ্ছে।

আচ্ছা,

ওই ভিদকুটে নারী মূর্তিটার হাতে কী লম্বা লম্বা নখ ছিল?মনে করার চেষ্টা করতে লাগলাম।

সাথে সাথে আবার আমার নামের প্রতিধ্বনি।

"আবিরররররর"আবিরররর""

আমি স্পষ্ট উচ্চারণ শুনতে পাচ্ছি।ধাতব স্বর, নামের শেষের 'র' টা অনেক লম্বা হয়ে উচ্চারিত হচ্ছে।

আমার হাঁটু থর থর করে কাঁপতে লাগলো, আর দাঁড়াতে পারছি না।বিছানায় গিয়ে বসার মতো শক্তি পাচ্ছি না।ফ্লোরে বসে পড়লাম।

এখন আবারও উচ্চারিত হতে লাগলো-

-আবির-আবির-আবির-আবির-আবির,,,।

-আমি দুই হাত দিয়ে কান চেপে ধরলাম।আমার হাত কাঁপছে,আমার পুরো শরীর কাঁপছে।গলা শুকিয়ে গেছে।পাশে জল রাখা উচিৎ ছিল।কিছুতেই ভয় কমাতে পারছি না।অতীতে ঘটে যাওয়া সুন্দর সুন্দর স্মৃতি গুলা মনে করতে লাগলাম।এতে করে কিছুটা ভয় কমতে পারে।

শরীর থেকে জলের মত ঘাম ঝরছে।কোথায় যেন পড়েছিলাম প্রচণ্ড ভয় পেলে শরীরের কাপড় খুলে ফেলে জরসরো হয়ে বসে থাকলে ভয় কমে যায়।এই থিওরিটা কি প্রয়োগ করবো,নাকি কম্বল দিয়ে পুরো শরীর মুড়িয়ে দশ মিনিট বসে থাকবো।

তারপর কয়েক মুহূর্ত স্তির হয়ে বসে থাকলাম।এক ঝটকায় উঠে দাঁড়ালাম এবং কোন কিছু চিন্তা না করেই দরজা খুলে দিলাম।

-দরজা খুলার সাথে সাথে আমার বিড়ালটা দৌঁড় দিয়ে রুমের ভেতর ঢুকলো!তাহলে কি বিড়ালটা এতোক্ষণ দরজায় আচড় কাটছিলো,ভেতরে প্রবেশ করার জন্য।বিড়ালের আছড় কাটা আর মিয়াও মিয়াও শব্দটাকে আমার মস্তিষ্ক কী ভয়ংকর রুপে উপস্থাপন করেছে!

এবার আসা যাক ভীবৎস নারীর ব্যাখ্যায়-

ওই রাতে আমি বাড়িতে একা ছিলাম।আর ড.জাফর ইকবালের ''প্রেত'' বইটি পড়ছিলাম।বইয়ে ভয়ংকর কিছু চরিত্র ছিলো।লেখক এমন ভাবে তা ফুটিয়ে তুলেছেন অনেকটা জীবন্ত মনে হয়েছিল।তাছাড়া বাইরে ঝড়-বৃষ্টি ছিলো এমনকি বিদ্যুৎও ছিলো না।ভূতুড়ে পরিবেশের সাথে বইয়ের চরিত্রগুলা আরো জীবন্ত হয়ে উঠলো।অার আমার ভেতরে ভয়ের দানা সৃষ্টি হয়।প্রচন্ড ভয় পাওয়ার কারণে মস্তিষ্ক ভিজুয়াল হ্যালোসিনেশনের স্বীকার হয়।এই সুযোগে মস্তিষ্ক বইয়ে বর্ণিত ভীবৎস নারী মূর্তির কাল্পনিক দৃশ্য তৈরি করে,যা বাস্তব বলে মনে হয়েছিল।মূলত সেটা ছিল মস্তিষ্কের ধোঁকা।তাছাড়া অলফ্যাক্টরি

হ্যালোসিনেশনের কারণে মস্তিষ্কে বিভিন্ন ধরণের ঘ্রাণের উদ্রেক ঘটে।এমনকি ঘ্রাণের বিকৃতিও ঘটতে পারে।যেমন, ডিমের গন্ধ নাকে আসলে মনে হবে ড্রেইন থেকে পঁচা গন্ধ বেরিয়ে আসছে।

সিজোফ্রেনিয়ার মতো ভয়ংকর মানসিক রোগে আক্রান্ত মানুষেরা প্রতিনিয়ত হ্যালোসিনেশন,ইলিউশন এবং ডিলিউশনের স্বীকার হন।এগুলা নিয়ে আমি বিস্তারিত লিখতে যাচ্ছি না।এছাড়া বিভিন্ন ধরণের মাদক দ্রব্য অতিরিক্ত মাত্রায় সেবন করলে সেবনকারীরা হ্যালোসিনেশন,ইলিউশন ডিলিউশনের সম্মুখীন হন।

কথা হচ্ছে, যারা দাবি করেণ নিজের চোখে ভূত-প্রেত দেখেছেন তাদের মধ্যে সবাই না হলেও কেউ কেউ আসলেই সত্যি কথা বলছেন। তবে এক্ষেত্রে তারা যেটাকে অশরীরী জাতীয় কিছু দেখার বা অনুভব করার দাবি করছেন সেগুলোর আসলে বৈজ্ঞানীক ব্যাখ্যা আছে। সত্যি কথা বলতে কি, এদের বৈজ্ঞানীক ব্যাখ্যাগুলো মূল অশরীরী দেখার কাহিনীর থেকেও বেশি চমকপ্রদ।

এই পর্যন্ত যেসব স্থানে ভূতের দেখা পাওয়া গেছে দাবি করা হয়েছে, সেই সবকটা স্থানেই

বিজ্ঞানীরা যন্ত্রপাতি দিয়ে প্রচণ্ড প্রতিক্রিয়াশীল

তড়িৎ চুম্বকীয় ক্ষেত্রের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন।

কোন স্থানে যদি তড়িৎ চুম্বকীয় ক্ষেত্রের প্রভাব বেশি থাকে আর সেখানে আপনি বেশিক্ষণ অবস্থান করেণ তাহলে তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গের প্রভাব আপনার মস্তিষ্কে পড়বে।আপনার স্বাভাবিক চিন্তাধারার ব্যাঘাত ঘটবে।চোখের সামনে নানা রকম উদ্ভট কাণ্ডকারখানা দেখতে পারবেন।আপনার মস্তিষ্ক নানা রকম অশরীরী দৃশ্য তৈরি করবে।

এবার ইনফ্রাসাউণ্ড নিয়ে কিছু বলা যাক।

মনে করেণ, আপনি একজন গাড়ি চালক।আপনি প্রতিদিন গাড়ি নিয়ে কাজে বের হন।হঠাৎ দেখতে পেলে গাড়ির পেছনে ধূসর রঙ্গের কোন ছায়ামূর্তি বসে আছে।লাফ দিয়ে গাড়ি থেকে নামলেন তারপর তাকিয়ে দেখলেন গাড়ির ভেতরে কেউ নেই।তখন আপনার মনে হবে নিশ্চয়ই আপনি ভূত-প্রেত জাতীয় কোন কিছু দেখে ফেলেছেন।আপনি দেখেছেন ঠিকিই,কিন্তু যা দেখেছেন সেটা আপনার মস্তিষ্কের তৈরি ছিল।আর তার কারণ হতে পারে আপনার গাড়ির ইন্জিন থেকে বের হওয়া ইনফ্রাসাউণ্ড।

তাহলে এবার জানা যাক - ইনফ্রাসাউণ্ড কী?

আমাদের মানুষদের শ্রবণক্ষমতার সীমা নিম্নে ২০ হার্জ হতে উপরে ২০,০০০ হার্জ পর্যন্ত। ২০ হার্জের নিচের কোন শব্দই আমরা শুনতে পাইনা। এই সীমার নিচের শব্দকেই বলে ইনফ্রাসাউণ্ড। আমরা ইনফ্রাসাউণ্ড শুনতে পাইনা, কিন্তু সেটার কম্পন ঠিকই অনুভব করতে পারি। এই অতি মৃদু কম্পনের কারণে হঠাৎ বিষন্নতা হতে শুরু করে অস্থির অস্থির লাগা পর্যন্ত অনেক কিছুই ঘটতে পারে আপনার সাথে। ইনফ্রাসাউণ্ডের কারণে অনেকে গাড়িতে চড়ার সময় বমি করে থাকেন।

ডা.রিচার্ড ওয়াইজম্যান বলেন-

“আমরা এই তরঙ্গগুলোকে অনুভব করে থাকি সবসময়, বিশেষত আমাদের পাকস্থলীতে, এবং এর ফলে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া যেমন ঘটতে পারে (কোন কারণ ছাড়াই মনে ফূর্তিভাব চলে আসা) তেমনি নেতিবাচক অনুভূতিও হতে পারে (হঠাৎ অস্বস্তি লাগতে থাকা)। যদি আপনার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ উপযুক্ত হয় তবে এই তরঙ্গরা আপনার মনে হঠাৎ তীব্র আতংকের সঞ্চারও করতে পারে”।ইনফ্রাসাউন্ড প্রাকৃতিক ভাবে উৎপন্ন হতে পারে ঝড়ো আবহাওয়া হতে (ভূত দেখার পারফেক্ট সময়), বিজলী চমকানো হতে, দমকা বাতাস হতে, এমনকি নিত্য ব্যবহার্য্য আসবাবপত্র হতেও!যেমন,আপনার মাথার উপরের ঘূর্ণনরত ফ্যান থেকে যদি ২০ হার্জের নিচের শব্দ তরঙ্গ বের হতে থাকে তাহলে হঠাৎ একদিন দেখতে পারবেন আপনার রুমের মধ্যে অশরীরী ভূত-প্রেত ঘোরাফেরা করছে।

আরও পড়তে পারেনঃ---

.. কেউ অপমান করলে কি করবেন? ..
.. নিজের ভালোর জন্য যাদের থেকে দূরে থাকবেন। ..
.. দ্রুত মন ভালো করার ১০টি যুগান্তকারী উপায় জেনে নিন। ..
.. কেউ অপমান করলে আপনার যা করা উচিত এবং অনুচিত নয়। ..
.. কিভাবে একজন মানুষ তার শিক্ষার মাধ্যমে মনুষ্যত্ব অর্জন করে? ..
.. ডিপ্রেশন দূর করার কার্য্যকরী ও একদম সঠিক উপায় জেনে নিন ..

এজন্যই আমি বলি-

তোমার সাথে অস্বাভিক কিছু ঘটলে সেটা মস্তিষ্কের ধোঁকা।আর প্রকৃতির মধ্যে

অস্বাভাবিক কিছু ঘটলে সেটা প্রকৃতির ধোঁকা।

যারা এই রহস্য বেধ করতে পারে না তাদের কাছে এই ধোঁকাই আলৌকিক শক্তি হিসেবে ধরা দেয়।

আজ থেকে তিনশো বছর আগে মানুষ কল্পনাও করতে পারে নি-তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আকাশে উড়বে।পৃথিবী ছাড়িয়ে মহাকাশে পাড়ি জমাবে।পৃথিবীর এক প্রান্তের মানুষের গলার আওয়াজ আরেক প্রান্তে পৌঁছে যাবে মুহূর্তের মধ্যে।তা কেবল সম্ভব হয়েছে প্রকৃতিকে জানার কারণে।

এই পৃথিবীতে অনেক প্যারানরমাল বিষয় আছে যা মানুষের ব্যাখ্যার বাইরে। হতে পারে সেটা আমাদের জানার স্বল্পতা।কারণ প্রকৃতিতে যা কিছুই ঘটে না কেন, তা কোন না কোন সূত্র,নিয়ম বা প্যাটার্ণ কে অনুসরণ করে।

  • এখন আপনিই ভাবেন-লৌকিক এই পৃথিবীতে আলৌকিক কোন কিছুর অস্তিত্ব আছে কী না?

  • লেখা: মো: মাহফুজুর রহমান

 

ধন্যবাদান্তেঃ---"মিঃ মধু"

আরও বিস্তারিত জানতে চেক করুন "অদৃশ্য কাব্য" মঞ্চ, 

No comments

Powered by Blogger.