মনোযোগ ধরে রাখার উপায়, রুজভেল্ট ড্যাশ।
মনোযোগ ধরে রাখার উপায়, রুজভেল্ট ড্যাশ।
- অনেকেই হয়তো জানেননা রুজভেল্ট ইতিহাসের অন্যতম প্রোডাক্টিভ মানুষ। তিনি মাত্র ৬১ বছরের মত বেঁচে ছিলেন (১৮৫৮-১৯১৯) – কিন্তু এই ছোট জীবনেই তিনি হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে আইন পড়েছেন, সেনাবাহিনীতে কর্ণেল হয়ে যুদ্ধ করেছেন, নিউ ইয়র্কের গভর্ণর হয়েছেন, এবং মাত্র ৪২ বছর বয়সে সবচেয়ে কম বয়সী আমেরিকান প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। আর সবচেয়ে অবাক করা বিষয়, এতকিছুর মাঝে তিনি ৪০টি বই রচনা করেছেন !
- জর্জটাউনের অধ্যাপক এবং লেখক ক্যাল নিউপোর্ট তার বই "ডিপ ওয়ার্ক"-এ ব্যাখ্যা করেছেন, রুজভেল্ট তার জীবনকে এতটা আঁকড়ে ধরতে সক্ষম হয়েছিলেন একটা বিশেষ কারণে, তিনি "কাজের গভীরতা" বা স্বীয় মনোযোগের ব্যাপারটাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব সহকারে দেখতে পেরেছিলেন। সম্পূর্ণ ভাবে মনযোগ স্থির করে যদি আপনার বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ করতে পারেন তাহলে বাইরের জগৎ আপনার কাজের মূল জায়গাটাতে ব্যাঘ্যাত ঘটাতে পারেনা। আমরা যখন কোন কাজ করি তখন অন্য চিন্তা আমাদের মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে। সেটা পজিটিভ/নেগেটিভ যাই হোকনা কেন তা আমাদের কাজের পূর্ণতা আনয়নে ঝামেলার সৃষ্টি করে। তিনি শুধু এই ব্যাঘাত ঘটানো থেকে নিজেকে নিবৃত থাকতে আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন।
- এডমুন্ড মরিসের লিখা রুজভেল্টের বায়োগ্রাফিতে জানা যায় যে, ১৮৭৬-৭৭ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ন কালে একজন ফ্রেশ স্টুডেন্ট হিসেবে শিডিউলিং হ্যাবিট কে তার চারিত্রিক নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। ক্যাল নিউপোর্ট তার লিখাতে ও এই বিষয়ের গভীর ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন।
- রুজভেল্টের পাঠ্যক্রম বহির্ভূত আগ্রহের সীমা পরিসীমা ছিলনা। তিনি স্বভাবজাত ভাবে বক্সিং, রেসলিং, বডি বিল্ডিং, নৃত্যকলা, কবিতা পড়া, খেলাধুলা করা ইত্যাদি সকল বিষয়ে অত্যন্ত পটু ছিলেন। সকল বিষয়ে পারদর্শিতা ও তার ছিল। আশ্চর্যের বিষয় হল রুজভেল্ট তার প্রথম বইটাও তিনি লিখেছিলেন পাখিদের নিয়ে।
- ঐ সময়ের লিখা এবং ডায়েরী গুলো থেকে যা জানা গেছে তা হল, রুজভেল্ট তার পড়াশুনার জন্য একদিনের চারভাগের একভাগ সময় মাত্র ব্যায় করতেন। নিউপোর্ট এর মতে হিসেবে করলে তা কিন্তু কয়েক ঘন্টা মাত্র। সমসাময়িক ছাত্রদের তুলনায় একাডেমিক পড়াশুনার পিছনে কম সময় ব্যয় করেও তিনি তুলনামূলক ভালো কলাফল করতেন।
- ফিউচার প্রেসিডেন্ট কিন্তু সকাল ৮.৩০ থেকে বিকাল ৪.৩০ পর্যন্ত ক্লাস করা, পড়াশুনা করা, ডেইলি এথলেটিক্স, ট্রেনিং, মধ্যাহ্ন ভোজের জন্য একটা নিদ্রিষ্ট ছক এঁকে নিয়ে কাজ গুলো করতেন। এই সময়টাকে ভাগ করাই হত শুধু মাত্র নিবিষ্ট চিত্তে পড়াশুনার প্রতি গভীর মনযোগ প্রদানের জন্য। এর বাইরের বাকি সময় পুরোটাই তিনি অন্যান্য সকল কিছুতে ব্যস্ত রাখতেন নিজেকে।
- নিউপোর্ট ব্যাপারটাকে ব্যাখ্যা করেছেন এইভাবে যে, এই টুকরো সময় গুলি অধ্যয়নের জন্য তিনি যখন ব্যয় করতেন তা কিন্তু সাধারণত মোট সময়ের হিসেবে খুব একটা বৃহৎ সময় নয় , কিন্তু তিনি সেই সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ মনোযোগের ভিত্তিতে শুধুমাত্র স্কুলের পড়াগুলো করে ফেলাতে তিনি সকলের চেয়ে বেশি লাভবান হতেন। এই সময় গুলোর মাঝে তিনি গল্পে মেতে ওঠা , একটু জিরিয়ে নেয়া বা কফি খাওয়ার পিছনে তিনি কোনও সময় ব্যয় করেননি এবং তিনি নিজের জন্য নির্ধারিত সময়সীমা সম্পর্কে সর্বদা সচেতন ছিলেন। এই সেশনগুলির প্রতিটি ক্ষণ কে তিনি পরিপূর্ন প্রচেষ্টার মাধ্যমে অত্যন্ত কার্যকর করে তুলতেন।
আপনি শুধু এই অংশটুকু গভীর মনযোগ দিয়ে পড়লেই দেখবেন আমরা ঠিক এর উল্টো কাজটা করি।
- নিউপোর্ট বলেছেন যে আপনার জীবন কে গভীর মনযোগের চর্চায় নিমজ্জিত করতে একটা উপায় অবলম্বন করতে পারেন তা হল "আপনার নিজের কর্মদিবসে রুজভেল্টিয়ান প্রখরতার বেগ/প্রচেষ্টা মাঝে মধ্যেই কিছু কিছু অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে ফেলা।" অতীব জরুরী কোন কাজ করতে আপনি সাধারণত কতটুকু সময় ব্যয় করে থাকেন, আপনিকিন্তু তা ভালোই জানেন। সেই সময়টা কে ধরে তার চেয়ে কম সময় উক্ত কাজটার জন্য বরাদ্দ করুন। আপনার চোখের সামনে দরকার হলে একটা কাউন্টডাউন টাইমার রেখে পূর্ন মনযোগ দিয়ে কাজটার ভিতরে প্রবেশ করুন।
- আপনার ফোনে একটি কাউন্টডাউন টাইমার সেট করার চেষ্টা করুন এবং এটিকে আপনার দৃষ্টিভঙ্গিতে রাখার চেষ্টা করুন।
- আপনার এই নিদৃষ্ট সময়সীমা মেনে চলার মানসিকতা তৈরি করতে, আপনাকে অবশ্যই দিবাস্বপ্ন দেখা, হালকা একটু খাওয়া দাওয়া করা, ফেসবুকের মেসেঞ্জারটা ঘুরে আসা, ইমেইলটা চেক করা ইত্যাদি সকল বিভ্রান্তি এড়াতে হবে। এইটা কিন্তু মানসিক ভাবে আপনাকে চরম চাপের মধ্যে ফেলবে, তাই শুরুতেই সপ্তাহে একদিন অন্তত এই কাজ করুন। এরপর আপনার রুজভেল্ট সাহেবের মত আত্মবিশ্বাস জন্ম নিলে ধীরে ধীরে প্রতিদিন চর্চা করতে শুরু করবেন। কয়েক মাস ধরে এই প্র্যাকটিস চালালেই আপনার ভিতরে একটা ট্রান্সফরমেশন চলে আসবে। ফোকাস ধরে রাখার একটা তীব্রতা আপনার ভিতরে কাজ করবে। এবং দেখবেন দিনের বেশিরভাগ সময়টা আপনার অনেক বেশি কার্যকরী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে।
- লিখাটা পড়তে কিন্তু অনেক সহজ মনে হচ্ছে, কিন্তু বাস্তবিক জীবনে শুরুটা অত্যন্ত অধ্যবসায় নিয়ে শুরু করতে হবে। প্রত্যেকবার ব্যর্থতা এসে আঘাত হানবে এবং কিছুদিন পরেই সফলতা দেখা দেবে।
- বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে পৃথিবী যখন অর্থনৈতিক মন্দা ও যুদ্ধের কবলে পড়ে বিধ্বস্ত, এমন সময় তিনি পৃথিবীর কেন্দ্রীয় এক চরিত্রে পরিণত হন। একজন ব্যক্তি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দুবার দায়িত্ব পালন করতে পারেন। তবে এর ব্যতিক্রম ঘটিয়েছিলেন ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট।
- কর্মদক্ষতার বিচারে যিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের মধ্যে সবার শীর্ষে স্থান করে নিয়েছেন। আমেরিকা তথা বিশ্বের দীর্ঘতম সময়ব্যাপী ক্ষমতায় থেকে স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুর রেকর্ড গড়েছেন ফ্রাংকলিন ডিলান্ডো রুজভেল্ট। দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার পরও কাজ করে গেছেন দেশের জন্য। জাতিসংঘ সৃষ্টিতেও তাঁর বিশেষ অবদান রয়েছে। বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে পৃথিবী যখন অর্থনৈতিক মন্দা ও যুদ্ধের কবলে পড়ে বিধ্বস্ত এমন সময় তিনি পৃথিবীর কেন্দ্রীয় এক চরিত্রে পরিণত হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে উইনস্টন চার্চিল এবং যোসেফ স্ট্যালিনের মতো বিশ্ব নেতার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের সেরা প্রেসিডেন্টের অন্যতম ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট ।
রুজভেল্টের পড়াশোনা গর্টন স্কুলে। তার জীবনে এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক এন্ডিকোট প্রিবডির অসামান্য প্রভাব পড়েছিল। পরবর্তীকালে তিনি হার্ভার্ড কলেজে পড়াশোনা করেন। রাষ্ট্রপতি ভবনে তার প্রথম প্রবেশ ঘটে ১৯৩৩ সালের ৪ মার্চ আমেরিকার ৩২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে। এর আগে তিনি একজন সিনেটর, নৌবাহিনীর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি এবং নিউইয়র্ক রাজ্যের গভর্নর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার ১১ বছর আগে তিনি পোলিওতে আক্রান্ত হন। এতে তাঁর কোমরের নিচের অংশ চিরতরে অবশ হয়ে যায়। কিন্তু এত বড় দুর্ঘটনার পরও থেমে থাকেননি রুজভেল্ট। ১৯৩৩ সালে রুজভেল্ট যখন প্রথমবারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন, তখন দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল শোচনীয়, বেকারত্বের হার ছিল উচ্চ। এ সময় রুজভেল্ট বিভিন্ন হুকুম জারি করে এ অর্থনৈতিক দুরবস্থা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেন।
আমরা জানি, একজন ব্যক্তি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দুবার দায়িত্ব পালন করতে পারেন। তবে এর ব্যতিক্রম ঘটিয়েছিলেন ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট। যুক্তরাষ্ট্রের তিনিই একমাত্র প্রেসিডেন্ট, যিনি তিনবার এ দায়িত্ব পালন করেছেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার কার্যকাল ছিল ১২ বছর ১ মাস ৮ দিন। শুধু তাই-ই নয়, চতুর্থবারের জন্য মনোনীতও হয়েছিলেন তিনি। তবে শারীরিক অবস্থা তাঁর পক্ষে ছিল না।
টানা চতুর্থ মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হয়ে তিনি যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয়ের ছক আঁকছিলেন, তত দিনে তার বয়স প্রায় ৬৩ বছর। রাষ্ট্রপতি হিসেবে ১২ বছর এবং এর আগে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ৮ বছর অর্থাৎ টানা ২০ বছর তাকে অমানুষিক শ্রম দিতে হয় এবং অসংখ্য দেশ ও রণাঙ্গনে ঘন ঘন ভ্রমণ করতে হয়। এতে তার স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে। ১৯৪৫ সালের ১২ এপ্রিল বিকালে তিনি মাথার পেছনে তীব্র ব্যথা অনুভব করেন।
চিকিৎসকদের মতে, তার মাথায় তীব্র রক্তক্ষরণ হয়েছিল। ওইদিনই বিকাল ৩টা ৩৫ মিনিটে রুজভেল্ট শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। রুজভেল্টের মৃত্যুতে আমেরিকার পতাকা অর্ধনমিত অবস্থায় ৩০ দিন জাতীয় শোক পালন করা হয়। তাকে স্প্রিং উড এস্টেটের রোজ গার্ডেনে সমাহিত করা হয়। ' রুজভেল্টের মৃত্যুর এক মাসের মধ্যে হিটলারের নাৎসি বাহিনী এবং জাপানের পরাশক্তির পরাজয়ের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস ও রাজনীতির ব্যাপারে ইংল্যান্ডের ৪৭ জন বিশেষজ্ঞ নিয়ে পরিচালিত এক জরিপে ক্ষমতা, দক্ষতা ও জনপ্রিয়তায় ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্টকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের তালিকায় শীর্ষস্থানে বসানো হয়। যে তিনটি কারণ দেখিয়েতাঁরেক শীর্ষে রাখা হয়েছে তা হলোঃ
- ১। আধুনিক যুক্তরাষ্ট্রের স্থপতি,
- ২। অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবেলায় একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক এবং
- ৩। পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে একজন সুদক্ষ কূটনীতিক।
রুজভেল্টের পরের অবস্থানে রয়েছেন আব্রাহাম লিংকন আর তৃতীয়স্থানে রয়েছেন জজ ওয়াশিংটন। এছাড়া চর্তুথ-টমাস জেফারসন্স, ৫ম তিয়োডোর রুজভেল্ট, ৬ষ্ঠ উডরো উইলসন, ৭ম হেরি ট্রু ম্যান ও ৮ম স্থানে আছেন রোনাল্ড রিগ্যান। ৩১তম স্থানে রয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডবিস্নউ বুশ (জুনিয়র)। আর বিল ক্লিনটন রয়েছেন ১৯ ও জন এফ কেনিডি রয়েছেন ১৫তম স্থানে। ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্টকে অনেকে আব্রাহাম লিঙ্কন ও জর্জ ওয়াশিংটনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রেষ্ঠ তিন রাজনীতিবিদ বলে থাকেন। রুজভেল্টের অবদানের মূল্যায়ন করতে গিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছিল, 'আজ থেকে শতসহস্র বছর পরও মানুষ হাঁটু গেড়ে ঈশ্বরকে এই বলে ধন্যবাদ দেবে যে, হোয়াইট হাউসে একদা ফ্রাংকলিন ডি রুজভেল্ট ক্ষমতাসীন হয়েছিলেন।
রুজভেল্টের অসুস্থতা এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া
তিনি ১৯২২ সালের নির্বাচনে রাজনৈতিতে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে সমর্থন তৈরির চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তাঁর ক্যারিয়ার অসুস্থতার কারণে লাইনচ্যুত হয়েছিল। ১৯২১ সালের আগস্টে রুজভেল্ট ক্যাম্পোবেলো দ্বীপে অবকাশ জাপন কালীন সময়ে, অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হন। তার দেহের বিভিন্ন অর্গানগুলো অকেজ হয়ে পড়ে। স্থায়ীভাবে রুজভেল্ট এর শরীরের কোমর থেকে নিচের অংশ অচল হয়ে পড়ে ।
পোলিও তাকে আঘাত করে এবং পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়ে ফেলে রেখে যাওয়ার সময় ডেমোক্র্যাটিক পার্টির একজন উঠতি তারকা ছিলেন ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট। এসময় যদিও তার মা রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণের পক্ষে ছিলেন, কিন্তু রুজভেল্ট, তাঁর স্ত্রী, এবং রুজভেল্টের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং উপদেষ্টা লুই হাও সহ প্রায় সবাই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন যে, রুজভেল্ট তার রাজনৈতিক কর্মজীবন অব্যাহত রাখবেন।
রুজভেল্ট বহু লোককে বোঝাতে পেরেছিলেন যে তিনি উন্নতি করছেন, এবং পুনরায় পাবলিক অফিসে প্রার্থী হওয়ার আগেই সুস্থ হয়ে যাবেন। কঠোরভাবে নিজেকে নিয়ন্ত্রন করেন, তার মাজায় এবং পায়ে লোহার ধনুর্বন্ধনী পরা অবস্থায় স্বল্প দূরত্বে একা একাই তিনি চলতে শুরু করেন।
ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট ভিশন সচেতন একজন মানুষ ছিলেন, তিনি সবাইকে বলতেন, যেন কখনও তাঁর হুইলচেয়ার জনসমক্ষে ব্যবহার না করা হয় এবং প্রেসের সামনে এমন কোনও চিত্র যেন তুলে ধরা না হয় যাতে তার অক্ষমতা প্রকাশ পেতে পারে।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তাকে প্রেসিডেন্ট হবার আগে অথবা প্রেসিডেন্ট থাকা কালীন সময়ে তার একটি বড় ইমেজে পরিনত করেছিল। এ অবস্থায়ও তিনি জন সাধারনের সামনে সোজা হয়ে দাঁড়াতেন , এবং সাপোর্ট হিসেবে তার ছেলে কে তিনি পাশে রাখতেন।
তিনি এমন একজন ব্যাক্তি ছিলেন যে, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্তেও তিনি কখনই তার কাজে এবং তার নীতিতে কোন রকমের দুর্বলতা প্রকাশ করেননি।
১৯২৫ সালে শুরু করে রুজভেল্ট বেশিরভাগ সময় দক্ষিণ আমেরিকাতে কাটিয়েছিলেন, প্রথমে তার হাউজবোট, লারোওকে। হাইড্রোথেরাপির সম্ভাব্য সুবিধাগুলি দ্বারা আগ্রহী হয়ে তিনি ১৯২৬ সালে জর্জিয়ার উর্ম স্প্রিংস-এ একটি পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
পুনর্বাসন কেন্দ্রটি তৈরির জন্য রুজভেল্ট শারীরিক থেরাপিস্টের এক কর্মীকে নিয়োগ করেছিলেন এবং ” মেরিওয়েদার ইন “ কেনার জন্য তাঁর বেশিরভাগ উত্তরাধিকার তিনি ব্যবহার করেছিলেন।
১৯৩৮ সালে, রুজভেল্ট ইনফ্যান্টাইল প্যারালাইসিসের জন্য জাতীয় ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা সে সময়ে উদ্ভাবিত পোলিও ভ্যাকসিনগুলি বিকাশের জন্য বিশেষ ভুমিকা পালন করে। তিনি ১৯২৮ সালে নিউইয়র্ক এর গভর্নর নির্বাচিত হন এবং ১৯৩২ সাল পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৩২ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে রুজভেল্ট ক্রমশ জাতীয় রাজনীতির দিকে মনোনিবেশ করেন। এবং নির্বাচিত হয়ে একটি অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ভঙ্গুর রাষ্ট্রের দায়িত্ত ভার কাধে নেন।
একজন হুইল চেয়ারে চলা মানুষের কাধে দায়িত্ব পড়ে আমেরিকা কে হুইল চেয়ার থেকে টেনে তুলে দার করানোর। পক্ষাঘাতগ্রস্থ অসুস্থতা সত্তেও ব্যক্তিগত জয়ের দ্বারা উত্সাহিত, রুজভেল্ট জাতীয় চেতনাকে পুন একত্রিকরণের জন্য তার অবিচ্ছিন্ন আশাবাদ এবং সক্রিয়তার উপর নির্ভর করেছিলেন। এটি এমন একটি সময়, যখন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রায়শই আশ্রয় কেন্দ্রে প্রেরণ করা হত, অথচ তার কাধে গুরু দায়িত্ব এসে পড়ে।
তিনি মানুষকে প্রচন্ড ভাবে আলোড়িত করতে পারতেন, খুব ভালো ভাবে উৎসাহিত করতে পারতেন। আজকের দিনে আমরা যে মোটিভেশনাল স্পিকারদের কথা বলি রুজভেল্ট ছিলেন সেই সময়ের একজন মোটিভেশনাল লীডার। তিনি এর দ্বারা তার ভোটারদের মন জয় করেছিলেন, ২০০৭ সালে ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট (এফডিআর) এর জীবনী লেখক জন এডওয়ার্ড স্মিথ বলেছিলেন, “তিনি জাতিকে হাঁটু থেকে উঠানোর জন্য হুইলচেয়ার থেকে নিজেকে তুলেছিলেন।
- প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট এর জীবনী নিয়ে আলোচনার কারণ হল তার অদম্য মনোবল আর ইচ্ছা শক্তির পরিচয় ঘটানো। কম সময়ে এত প্রোডাক্টিভ ভাবে কাজ করার পেছনে তাঁর ব্যবহার করা মনোযোগ ধরে রাখার উপায় রুজভেল্ট ড্যাশ অনেক বড় ভূমিকা রেখেছে।
- কম সময়ে এত প্রোডাক্টিভ ভাবে কাজ করার পেছনে তাঁর ব্যবহার করা মনোযোগ ধরে রাখার উপায় রুজভেল্ট ড্যাশ অনেক বড় ভূমিকা রেখেছে।
- দীর্ঘ সময় নয়, গভীর ফোকাস ।
- মজার ব্যাপার হল রুজভেল্ট দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতেন না। কিন্তু তাঁর টাইম ম্যানেজমেন্ট এতই ভালো ছিল যে, তিনি অল্প সময়েই অনেকটা কাজ করতে পারতেন। লম্বা সময় ধরে কাজ করার বদলে তিনি এমন একটি পদ্ধতিতে কাজ করতেন, যাতে গভীর ভাবে কাজে মনোযোগ থাকে। তাঁর এই ধারণাকে কাজে লাগিয়ে পরবর্তীতে আরও মনোযোগ বৃদ্ধি করার কৌশল যেমন, পমোডরো টেকনিক এবং ডিপ ওয়ার্ক মেথড এর সৃষ্টি হয়েছে।
- এই সব পদ্ধতিগুলোর মূল আইডিয়াই হল, একটি নির্দিষ্ট সময় শুধুমাত্র একটি কাজেই নিজের সমস্ত মনোযোগ বা ফোকাস দেয়া। পমোডরো এবং ডিপ ওয়ার্ক নিয়ে আমরা ইতোমধ্যেই কাজ করেছি, আজ আপনার মনোযোগ ধরে রাখার দক্ষতাকে আরও শক্তিশালী করতে রুজভেল্ট ড্যাশ পদ্ধতি জানাবো।
- মনোযোগ ধরে রাখার উপায়, রুজভেল্ট ড্যাশ যেভাবে কাজ করে
- এটি যদিও খুবই কার্যকর একটি উপায়, কিন্তু এটা খুব কঠিন কিছু নয়। কিছু বিশেষ ধাপ অনুসরন করলেই এটা খুব সহজে করা যায়। আসল ব্যাপার হল চর্চাটা ধরে রাখা। রুজভেল্ট ড্যাশ পদ্ধতিতে মনোযোগ ধরে রাখার ধাপগুলো অন্যান্য অনেক জায়গায় হয়তো আলাদা আলাদা ভাবে জেনেছেন। কিন্তু এগুলো একসাথে অনুসরন করলে আপনার প্রোডাক্টিভিটি অনেকটাই বেড়ে যাবে। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক রুজভেল্ট ড্যাশ পদ্ধতিতে মনোযোগ ধরে রাখার উপায়।
সবচেয়ে জরুরী কাজটি বেছে নিন
- এটা যদিও খুব সাধারণ, কিন্তু একটু চিন্তা করলেই বুঝবেন ব্যাপারটা কতটা জরুরী। আপনি যদি আপনার কাজ গুলোর মধ্যে সবচেয়ে জরুরী কোনটা – এটা না বোঝেন – তাহলে একটি কাজের মধ্যে আরেকটি কাজের চিন্তা আপনাকে বিরক্ত করবে।
- পূর্ণ ফোকাস রাখার জন্য আপনাকে এমন একটি কাজ বেছে নিতে হবে – যেটি আসলেই গুরুত্বপূর্ণ এবং যেটি সফল হলে আপনি বেশ খানিকটা এগিয়ে যাবেন। এতে করে এই কাজটি করার সময়ে অন্য কাজের চিন্তা মাথায় আসবে না।
- এছাড়া, আপনি একটি দিনের বা কয়েক দিনের কাজ ক্রম অনুসারে সাজিয়ে নিতে পারেন। কোন কাজটির পর কোন কাজটি করবেন – তা ঠিক করা থাকলে মাথা অনেক হাল্কা থাকে। না হলে একটি কাজ শেষ করার পর কোন কাজটি করবেন – এই চিন্তাও মনোযোগ নষ্ট করতে পারে।
- ধরুন আপনি একটি বাজেট করবেন। এখন বাজেট করার জন্য আপনার বিভিন্ন রকমের তথ্য প্রয়োজন হবে। এখন কোন তথ্যটি আগে সংগ্রহ করবেন, কোনটি পরে করবেন- তা আগে থেকে ঠিক করে না রাখলে একটি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের সময়ে অন্য বিষয়ের চিন্তা মাথায় চলে আসতে পারে।
- এই ক্ষেত্রে অনেক সময়েই মানুষ একটি কাজ ছেড়ে আরেকটি কাজে মনোযোগ দিয়ে ফেলে। এবং এটা প্রায়ই ঘটে নিজের অজান্তে। অন্য কাজটি করার এক পর্যায়ে আবার আগের কাজটির কথা মনে পড়ে যায়, তখন হাতের কাজ বন্ধ করে আবারও আগের কাজে ফিরে যায়। এতে করে কোনও কাজেরই পূর্ণ মনোযোগ থাকে না, এবং অনেকটা সময় নষ্ট হয়।
- কিন্তু কোন কাজটির পর কোন কাজটি করা হবে – এটা আগে থেকে ঠিক করা থাকলে, এই অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা অনেক সহজ হয়ে যায়।
কাজ করতে কত সময় লাগবে, তা বোঝার চেষ্টা করুন
- রুজভেল্ট ডট পদ্ধতিতে মনোযোগ ধরে রাখার জন্য একটি কাজ করতে কত সময় লাগতে পারে – তার বিষয়ে আগে থেকে একটা ধারণা করে রাখাটা জরুরী। যে কাজেই হাত দেয়ার প্রস্তুতি নিন না কেন, আগে থেকেই সেই কাজের সময় সম্পর্কে একটা ধারণা করার চেষ্টা করুন। এটা যে সব সময়ে পারফেক্ট হতে হবে – এমন কোনও কথা নেই। মোটামুটি একটা ধারণা হলেই চলবে।
- এতেকরে, কাজ শুরু করার পর একটু সময় পরই মনোযোগ অন্য দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে। কারণ, আপনি জানেন কাজটি করতে আপনার কতক্ষণ লাগতে পারে। একারণে সেই নির্দিষ্ট সময়টি পর্যন্ত আপনার মন ও মস্তিষ্ক এই কাজটিতেই ফোকাস করার চেষ্টা করবে। সেই সময়ের আগে মন অন্যদিকে কম যাবে – এবং আপনি অনেক বেশি ফোকাসের সাথে কাজ করতে পারবেন।
সময়ের আগে ডেডলাইন সেট করুন
- আগের ধাপে কাজ শেষ হতে কতক্ষণ লাগতে পারে – সেই ব্যাপারে একটা ধারণা পেয়েছেন। এখন তার চেয়ে একটু কম সময় ধরে ডেডলাইন সেট করুন।
- মনে করুন, একটি কাজ করতে আপনার ২ ঘন্টা লাগবে বলে আপনি ধারণা করেছেন। এখন ডেডলাইন সেট করার সময়ে ২ ঘন্টার চেয়ে কম সেট করুন। এবং সেই সময়ের মধ্যে কাজটি শেষ করার চেষ্টা করুন।
- তবে প্রথমেই ২ ঘন্টার কাজ ১ ঘন্টায় করার চেষ্টা করবেন না। হয়তো ১ ঘন্টা ৪৫ মিনিট বা তারও কম করতে পারেন। এটাকে ধীরে ধীরে বাড়াতে থাকবেন – যতটা মানুষ হিসেবে আপনার পক্ষে সম্ভব হয়। এই বিষয়টা প্রাকটিস করলে দেখবেন যে কোনও কাজই আগের চেয়ে অনেক কম সময়েই ভালো ভাবে করার অভ্যাস হয়ে যেতে থাকবে। আর কম সময়ে বেশি কাজ করার মাইন্ডসেট থাকলে এমনিতেই অন্যদিকে মনোযোগ যাওয়ার বদলে হাতের কাজের ওপরই সম্পূর্ণ ফোকাস দেয়ার অভ্যাস হতে থাকবে।
- রুজভেল্ট ড্যাশের মাধ্যমে মনোযোগ ধরে রাখার উপায় চর্চা করার জন্য এই ধাপটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এটাই মূলত আপনার মানসিকতা ও ফোকাসকে প্রতিদিন শক্তিশালী করবে।
পারফেক্ট করার চেয়ে শেষ করায় গুরুত্ব দিন ।
- পারফেকশনিস্ট হওয়া ভালো। কিন্তু সব সময়ে পারফেক্ট কাজ করতে গেলে সময়ের সাথে দৌড়ে পারবেন না। সেরা প্রোডাক্টিভিটির সাথে যারা কাজ করেন, তারা আগে ডেডলাইনের মধ্যে কাজটি শেষ করেন – এবং পরে সেটির ভুল-ত্রুটি খুঁজে বের করেন।
- এবং এই ভুল ত্রুটি খোঁজার জন্যও সময় নির্দিষ্ট করা থাকে। কাজ করার সময়ে পারফেক্ট বা নিখুঁত ভাবে করতে গেলে আপনাকে অনেক ধীরে কাজ করতে হবে। একটু কাজ করার পর, আবার সেটুকু বিচার করতে হবে। এতে করে অনেক বেশি সময় অযথা খরচ হয়। সেইসাথে, এভাবে কাজ করতে গেলে কাজের প্রতি পূর্ণ ফোকাসও দেয়া হয় না। অন্যান্য অনেক কিছুর সাথে মিলিয়ে বিচার করতে গিয়ে আসল বিষয় থেকেও মাঝে মাঝে সরে আসতে হয়। কাজেই, পূর্ণ ফোকাসে কাজ করার জন্য কাজ নিখুঁত করার বদলে আগে শেষ করায় মন দিন। তারপর সেগুলোর ভুল ত্রুটি অন্য সময়ে ধরুন।
অন্য সবকিছু ভুলে যান ।
- এটা আসলে বলার অপেক্ষা রাখে না। তবুও এটি একটি ধাপ হিসেবে ধরা হয়, কারণ এটাই রুজভেল্টের মনোযোগ ধরে রাখার উপায় এর মূল দর্শন। যখন যে কাজ করছেন, তখন পৃথিবীর বাকি সবকিছু ভুলে যান। বর্তমান যুগে এটা আরও সত্য। ফোন, মেইল, মেসেজ, সোশ্যাল মিডিয়ার নোটিফিকেশন প্রতিনিয়ত কাজের ওপর থেকে মানুষের মনোযোগ সরিয়ে নিচ্ছে। ফলে কাজের মান আগের মত ভালো হচ্ছে না।
- কাজের সময়ে ফেসবুক, নিউজ – ইত্যাদির কাছে ভুলেও যাবেন না। পারলে ফোনও বন্ধ রাখুন। একটি গোপন নম্বর রাখতে পারেন, যেটি শুধু পরিবার ও অল্প কিছু মানুষের কাছে থাকবে – এবং বলা থাকবে খুব বড় ইমার্জেন্সী না হলে যেন আপনাকে এই নম্বরে কল দেয়া না হয়।
- মন বসে না পড়ার টেবিলে। কথাটি খুব জনপ্রিয়। আসলেই যখন কোনো কিছুতে মন বসানো কঠিন হয়ে যায়, নিজের ওপর বিরক্তি লাগে। দেখা গেল এমন একটা কাজ হাতে এসেছে, সেটা দ্রুত শেষ করতে হবে। কিন্তু কিছুতেই মনোযোগ দিতে পারছেন না। মাইক্রোসফটের এক গবেষণায় বলা হয়, মানুষের মনোযোগ কোনো কিছুতে ৮ সেকেন্ড স্থির থাকে। কিন্তু এই স্থিরতার মাত্রা বাড়ানো যায়।
- অনেকে মনোযোগ বাড়ানোর জন্য নির্জন কোনো জায়গায় চলে যান। সেটি ভালো অভ্যাস। বিপত্তিটা ঘটে, যখন সঙ্গে থাকে মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপ। পুরো দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে মনোযোগ বাড়ানোর কাজটি করা বাস্তবসম্মত হয়। তাই আপনার সাধ্যের মধ্যে যে বিষয়গুলো আছে, সেগুলো নিয়ে শুরুটা করে দিতে পারেন। এ বিষয়ে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মেখলা সরকার বলেন, যখন যে কাজটি করবেন, সব ভাবনা–চিন্তার মূলে তখন সেই কাজকে প্রাধান্য দেবেন। কেন কাজটি করা দরকার, সেটি ভাববেন। কিন্তু মনের ওপর চাপ সৃষ্টি করবেন না। বারবার যদি মনে করতে থাকেন, মনোযোগ নেই, সেটি করবেন না। দরকার হলে ব্যায়াম করুন। শুরুতে ১৫ মিনিট, এরপর ধীরে ধীরে সেই সময় বাড়ান। মেডিটেশন করতে পারেন।
প্রযুক্তিকে দূরে সরিয়ে রাখুন
- এ সময়ে এটি সবচেয়ে কঠিন কাজ বলে মনে করেন মনোবিজ্ঞানীরা। কিন্তু কেউ যদি এই চেষ্টা একবার করতে পারেন, তাহলে খুব ভালো হয়। এক দিনে সম্ভব নয়, তাই সপ্তাহখানেক হাতে সময় নিয়ে এটি করে ফেলতে হবে। মানুষ চাইলে সব সম্ভব—এই বিশ্বাস মনে রাখলে দেখবেন সত্যিই পেরেছেন।
শ্বাস–প্রশ্বাসের ব্যায়াম
- নিজেকে শান্ত ও স্থির রাখতে শ্বাস–প্রশ্বাসের ব্যায়াম খুব কাজে দেয়। পাঁচবার শ্বাস নিন ও ছেড়ে দিন। চোখ বন্ধ করে ভাবুন যে আপনার এখন মনোযোগ আসবে।
ভালো মিউজিক শুনুন
- অনেকে কোনো কিছু শুনলে কাজ করতে পারেন না। কিন্তু হালকা কোনো নরম সুরের মিউজিক শুনতে শুনতে আপনি মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে পারবেন। সুন্দর সুর, গান মনকে ফুরফুরে করে। ক্লান্তি কমিয়ে দেয়। সে কারণে আপনি চাইলে এভাবে মনোযোগ বাড়াতে পারেন।
বিরতি নিন
- ধরুন কিছুতেই আসছে না মনোযোগ। সে ক্ষেত্রে কাজ থেকে হালকা বিরতি নিতে পারেন। নিজের মতো করে বা সময় কাটাতে ভালো লাগে, এমন কারও সঙ্গে গল্প করতে পারেন। অ্যারোমা থেরাপি নিতে পারেন। মনোযোগ বাড়ানোর বেশ কিছু মেডিটেশন আছে, সেগুলো করতে পারেন। পড়তে ভালো লাগে, এমন কোনো বই পড়তে পড়তে দেখবেন আবার ফিরে আসছে মনোযোগ।
তালিকা তৈরি করুন
- সব কাজ একবারে না করে বা কাজ জমিয়ে রাখবেন না। তাতে মস্তিষ্ক জানান দিতে থাকে, অনেক কাজ সামনে। এতে মনোযোগের বিঘ্ন ঘটে। তাই প্রতিদিন
- অল্প অল্প করে কাজ করুন। যেদিন একেবারে করতে ইচ্ছে করবে না, চা–কফি পান বা খাওয়ার বিরতি নিন। কবে কী কাজ, সেই তালিকা বা চেকলিস্ট তৈরি করুন। যতই মুঠোফোন বা গুগল ক্যালেন্ডার থাকুক না কেন, হাতের কাছে ডায়েরি রাখুন। এতে সহজে কাজ করা যাবে।
ধ্যান (মেডিটেশন) করুন
- ধ্যান বা মেডিটেশনের মাধ্যমে মনকে প্রশিক্ষিত করা হয়। আমাদের মন একসঙ্গে অনেক কিছু চিন্তা করতে থাকে। ধ্যানের মাধ্যমে একটি বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার অভ্যাস তৈরি হয়।
শারীরিক পরিশ্রম
- ব্যায়াম, হাঁটাচলা বা দৌড়ঝাঁপ শরীরের জন্য ভালো, এটা আপনি জানেন। তবে এটাও মনে রাখুন, মস্তিষ্কও আপনার শরীরের অংশ। ফলে, শারীরিক পরিশ্রম মস্তিষ্ক সুস্থ রাখার জন্যও জরুরি।
প্রকৃতির কাছে যান
- সবুজ একটা বৃক্ষ দেখলে মস্তিষ্কে ইতিবাচক বার্তা যায়। তাই এটা সহজেই অনুমেয় যে সাতসকালে সবুজের মধ্যে হাঁটাহাঁটি কতটা উপকারী। এমনকি প্রকৃতির ছবি দেখলেও চোখ ও মস্তিষ্ক আরাম পায়।
সহজ দিয়ে শুরু করুন।
- যেকোনো কাজের বেলায়, বিশেষ করে পড়াশোনার সময় সহজ বিষয় দিয়ে শুরু করুন। একটা গতি চলে এলে কঠিন বিষয়েও মনোযোগ দেওয়া সহজ হয়ে যাবে।
পরিমিত ঘুমান
- কম ঘুম আমাদের মনোযোগে বিরাট অন্তরায়। আবার বেশি ঘুমও বড় ক্ষতি করে ফেলে। তাই পর্যাপ্ত ঘুম এবং ঘুমের জন্য শারীরিক শ্রম জরুরি।
- এইসব ব্যবস্থা নিতে পারলে অনেক বেশি মনোযোগের সাথে কাজ করতে পারবেন।
লিখেছেনঃ— Habibur Rahman
Smart Factory 4.0 Consultant for Textile Apparel Industries.
ধন্যবাদান্তেঃ---"মিঃ মধু"
আরও বিস্তারিত জানতে চেক করুন "অদৃশ্য কাব্য" মঞ্চ।
No comments