Ads

স্বপ্ন আসলেই কি ?

স্বপ্ন আসলেই কি ?

ধনী গরিব, শিশু, বৃদ্ধ, জ্ঞানী, মূর্খ, বোবা, অন্ধ সকলের মাঝে কিন্তু কোন না কোন স্বপ্ন আছে। জীবন নিয়ে স্বপ্ন। ক্যারিয়ার নিয়ে স্বপ্ন, স্বচ্ছলতা নিয়ে স্বপ্ন, আখিরাত নিয়ে স্বপ্ন, একটা ভাল বাইক কেনার স্বপ্ন, একজন ভাল জীবন সঙ্গীর স্বপ্ন, অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছানোর স্বপ্ন, জালিয়াতি করার স্বপ্ন, মানুষকে ঠকানোর স্বপ্ন, শুধু নিজের স্বার্থ সিদ্ধির স্বপ্ন, সন্তানকে নিয়ে স্বপ্ন এই রকম হাজার প্রকার স্বপ্নের ক্যাটাগরী বলে শেষ করা যাবেনা।

আমার কাছে স্বপ্ন ব্যাপারটাই কিন্তু দারুন রোমাঞ্চকর এক অনুভূতির মত। প্রায়ই সব স্বপ্ন কি যে এক সুখানুভূতির আবেশ ছড়িয়ে যায় মনে প্রাণে। কিছু স্বপ্ন তো একবারে মনের মধ্যে গেঁথেই যায় সারা জীবনের মত। কিছু স্বপ্ন অবশ্যই ভয়াবহ হিসেবে ও মনে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করে। ঘুম ব্যাপারটা যেমন আল্লাহর সবচেয়ে আশ্চর্য একটা সৃষ্টি তেমনি তারই মাঝে আবার স্বপ্নের জগতে ঘুরে বেড়ানো তো আর এক দারুন ব্যাপার।

ঘুমের মধ্যে আমাদের মস্তিষ্কের কর্মপ্রক্রিয়ায় কিছু পরিবর্তন ঘটে বলে আমরা জানি। কিন্তু তখন ঠিক কী হয়, সে বিষয়ে আমাদের ধারণা খুবই ভাসা ভাসা। এমনকি বিশেষজ্ঞরাও মানুষের ঘুমন্ত অবস্থার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে কেবল তত্ত্বই দিচ্ছেন। তবে স্বপ্ন দেখার বিভিন্ন দিক নিয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু তথ্য জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

আমি নিজে একবার স্বপ্ন দেখলাম যে আমি ডলারে বেতন নিগোশিয়েট করছি , তারা আমাকে যে স্যালারী অফার করছিল তা আমার যোগ্যতার চেয়ে ও অনেক বেশি বলে মনে হচ্ছিল, কিন্তু ব্যাপারটা আমার কাছে স্বপ্নের মত মনে হওয়াতে আমি আরো বেশি চাইছিলাম এবং দর কষাকষি করছিলাম। এবং আমি দর কষাকষিতে হেরে যাই কিন্তু মনে মনে খুশিই ছিলাম। আশ্চর্য ব্যাপার হল ঠিক ৬ মাস পরেই আমি ওই কোম্পানী থেকে একটা মেইল পাই এবং আমি সত্যিই তাদের বিদেশী রিজিওনাল অফিসে বসে ঠিক ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে পারি। আমি ঠিক ওই এমাউন্ট নিয়ে তাদের যখন বার্গেইন করতে দেখছিলাম তখন আমি দারুন রোমাঞ্চকর এক অনুভূতির স্বাদ পাচ্ছিলাম। আর আমি যেহেতু জেনেই গেছি যে আমার হেরে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে তাই আমার এমাউন্টে আমি প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসের সাথেই একরোখা নীতি অবলম্বন করলাম। মধ্যাহ্ণ ভোজের আগে পর্যন্ত নানা প্রকার যুক্তি তর্ক , ফন্দি ফিকির চলতে থাকলো কিন্তু দফারফা না হওয়ায়, পরে আবার আমরা বসলাম এবং আমার সিদ্ধান্তে অটল থাকার জন্য আমি দরকষাকষিতে জিতে গেলাম এবং আমার অনাকাঙ্খিত বেতনে আমি চাকুরীটা পেয়ে গেলাম। আমি জানিনা এর কোন ব্যাখ্যা আপনাদের জানা আছে কী না? আমি তার পর থেকে যে কোন স্বপ্নের ব্যাখ্যা খোঁজার চেষ্টা করি। কিছু স্বপ্ন মনে থাকে কিছু থাকেনা। কিন্তু স্বপ্ন ব্যাপারটাই আমার কাছে দারুন একটা আশ্চর্য বাস্তবতা বলেই মনে হয়।

বহুদিন ধরেই ধারণা করা হচ্ছে, ঘুমের মধ্যে আমাদের মস্তিষ্ক সারা দিনের কর্মকাণ্ড বা ঘটনাবলিকে বাছাই ও সংরক্ষণের জন্য প্রক্রিয়াজাত করে। যত দিন যাচ্ছে, নতুন নানা গবেষণাও এই ধারণাকেই সমর্থন জোগাচ্ছে। চিকিত্সা মনোবিজ্ঞানী গণ মস্তিষ্ককে পরিপাকতন্ত্রের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, ‘রাতের বেলায় মস্তিষ্ক সারা দিনের সবকিছু গিলে খায়, হজম করে এবং তা থেকে নির্যাসটুকু নিংড়ে নিয়ে বাকিটুকু বের করে দেয়। আর মস্তিষ্ক যা রেখে দেয় আমাদের স্মৃতিতে, চিন্তায়, তা-ই থাকে এবং স্বপ্নকে এ প্রক্রিয়ার পরিপাক পদ্ধতি বলা যেতে পারে। আমরা ভাবি, স্বপ্ন সম্পর্কে আমরা অনেক কিছু জানি। স্বপ্নসংক্রান্ত প্রতিবেদন গুলো থেকে এখানে অজানা বা কম জানা কিছু তথ্য এবং কিছু ভুল ধারণা তুলে ধরা হলো।

ছোট বেলায় মেঘরাজিতে ভেসে চলছি এমন একটা স্বপ্ন দেখতাম। পরবর্তীতে ইংরেজি সিনেমাতে দেখতাম যে উড়োজাহাজ গুলো মেঘের ভিতরে হারিয়ে যায়। এই স্বপ্ন ও আমি দেখা করেছিলাম। আমি এই দৃশ্য দুটার বাস্তব রূপ দেখার জন্য শুধু মাত্র পাইলট হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু পাইলট হলে অনেক বেশি পড়াশুনা করতে হয় যখন সকলেই বলত তখন পাইলট হওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। এরপর বাস্তবে মেঘের উপর দিয়ে উড়োজাহজে চেপে ছাত্র অবস্থাতে যখন দিল্লি গেলাম, তখন ব্যাপারটা আমার কাছে স্বপ্নের চেয়েও মধুর লাগে। আমি যতবার এই মেঘের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি প্রত্যেকবার আমি চোখ বন্ধ করে এই স্বর্গীয় স্বাদ টাকে আস্বাদন করার চেষ্টা করতাম আর আমার ছোটবেলায় দেখা স্বপ্ন মিল আছে কি না বোঝার চেষ্টা করতাম।

স্বপ্ন আসলেই কি ?

মানুষ জীবনের ৩৩% সময় ঘুমিয়ে কাটায়। স্বপ্ন মানুষের ঘুমন্ত জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ। নিদ্রিত অবস্থায় ইন্দ্রিয়গণ স্তিমিত হয় কিন্তু সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় হয় না। তাই নিদ্রাকালে নানারূপ কল্পনাশ্রয়ী চিন্তা ও দৃশ্য উদিত হয়। এই সব দৃশ্য দেখাকে একরকমের “স্বপ্ন দেখা বলা হয়। নিদ্রিত অবস্থায় জাগ্রত অবস্থার ধারাবাহিকতাকেও স্বপ্ন বলা যেতে পারে। স্বপ্নে নিজের কাছে নিজের নানারকম আবেগ, তথ্য ও তত্ত্বের প্রকাশ ঘটে। স্বপ্নে দেখা দৃশ্য জাগ্রত প্রতক্ষ্যের মতোই স্পষ্ট। আমরা স্বপ্ন দেখি অর্থাৎ স্বপ্ন মূলত দর্শন-ইন্দ্রিয়ের কাজ। স্বপ্ন দেখা অনেকটা সিনেমা দেখার মতো। তবে স্বপ্নে অন্যান্য ইন্দ্রিয়েরও গৌণ ভূমিকা থাকে। জাগ্রত অবস্থায় প্রতক্ষ্যের মাধ্যমে যেমন শরীরে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তেমনি স্বপ্ন দেখাতেও কিছু না কিছু শারিরীক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।

স্বপ্ন দেখেনি এমন মানুষ পৃথিবীতে হয়তো একটিও খুঁজে পাওয়া যাবে না। মানুষ প্রায় প্রতিনিয়তই স্বপ্ন দেখে। আমরা সারাদিনে যে সব বিষয় নিয়ে চিন্তা ভাবনা করি রাত্রে ঘুমনোর পরে আমাদের স্বপ্নে সেসব বিষয়ই চলে আসে। অনেকেই এমন টা মনে করে। আবার অনেকেই স্বপ্নকে বিশ্বাসও করে। তবে বিজ্ঞানের কাছে কাল্পনিক বিষয় বস্তুর কোন মূল্য নেই।

আপনি রাতে ঘুমিয়েছেন আর স্বপ্ন দেখেননি, এমনটা কতবার হয়েছে বলুন তো? যদিও আপনার সবসময় সব স্বপ্নের কথা মনে থাকে না, বিজ্ঞান বলে, আপনি প্রতি রাতে প্রায় ৪ থেকে ৬ বার স্বপ্ন দেখেন, মানে যদি আপনি ঘুমান আর কী! স্বপ্ন নিয়ে অধ্যয়নের জন্য বিজ্ঞানের একটি আলাদা শাখাই রয়েছে; যার নাম ‘অনেইরোলোজি’ (Oneirology)। শুধু বিজ্ঞানই না, স্বপ্ন নিয়ে প্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত আছে নানারকম ধারণা আর মতবাদ। তেমন কিছু তত্ত্ব আর মতবাদ নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা।

প্রাচীন সভ্যতাগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, সুমেরীয়রা তাদের স্বপ্নগুলো লিপিবদ্ধ করে রাখত। খ্রিস্টপূর্ব প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে বসবাস করা এই সভ্যতার অধিবাসীদের স্বপ্নের বিভিন্ন প্রতীক এবং সেগুলোর ব্যাখার এক সংকলন পাওয়া যায়- যাকে বলা হয় বিশ্বের প্রথম স্বপ্নকোষ। তারা মনে করত, স্বপ্ন হলো ঈশ্বরের কাছ থেকে তাদের জন্য সংকেত। এর অর্থ জানার জন্য তারা স্বপ্নবিশারদদের শরণাপন্ন হতো। ধারণা করা হয়, স্বপ্ন সম্পর্কে তাদের এই দৃষ্টিভঙ্গি পরবর্তীতে হিব্রু, আরবি এবং গ্রিক সংস্কৃতির স্বপ্ন ব্যাখাকে অনেক প্রভাবিত করে। মিসরীয়রাও সুমেরীয়দের মতো স্বপ্নকে ঈশ্বরের নিদর্শন মনে করত। তারা বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান পালন, এমনকি বলিদানও করত, যাতে ঈশ্বরের তাদের কাছে ভবিষ্যৎ উন্মোচন করেন। ফারাওদের স্বপ্নগুলোকে তারা সরাসরি ঈশ্বরের আদেশ-নিষেধ হিসেবে গ্রহণ করত।

গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটলের মতে, মানুষ কেবলমাত্র স্বপ্নের মাধ্যমেই বিশুদ্ধ জ্ঞান অর্জন করতে পারে; কারণ তখন মনকে স্বাধীন করে দেওয়া হয়। হিপোক্রেটিস, অনেকের মতে যিনি আধুনিক মেডিসিনের জনক, মনে করতেন, স্বপ্ন হলো মানুষের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক। সম্ভবত তখনই প্রথম কোনো মানুষ বুঝতে পারে যে, স্বপ্নের কোনো স্বর্গীয় উৎস নেই, তা মানুষের মনেরই সৃষ্টি। রোম সাম্রাজ্যের অগাস্টাস, যিনি জুলিয়াস সিজারের উত্তরাধিকারী, স্বপ্নকে এত গুরুত্বের সাথে নিতেন যে, তিনি আইন জারি করেছিলেন, কোনো নাগরিক যদি রাষ্ট্র সম্পর্কিত কোনো স্বপ্ন দেখে, সেটা নিয়ে সে যেন নিজ থেকেই বাজারে আলোচনা করে।

আধুনিক বিজ্ঞান কিন্তু অন্যরকম কথা বলে। এই পর্যন্ত স্বপ্ন নিয়ে যত প্রকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে তার সারসংক্ষেপ এই যে, মানুষের ঘুমের বিভিন্ন স্তর রয়েছে; যার মধ্যে একটি হলো ‘রেম স্লিপ’ (REM Sleep) পর্যায়। বেশির ভাগ স্বপ্ন আমরা এই স্তরেই দেখি। ঘুমের এই স্তরে মস্তিষ্কের কিছু অংশ আমরা জেগে থাকলে যেমন সজাগ থাকে, তেমনটাই সজাগ থাকে। একজন সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের ক্ষেত্রে এই REM পর্যায়টি ৫-১০ মিনিট থেকে ৩০-৩৪ মিনিট পর্যন্ত হয়ে থাকে। তো স্বপ্নে আমরা যা দেখি, তা কী-ইবা দেখি, কেনইবা দেখি? আধুনিক ইমেজিং টেকনিক, যেমন- PET Scan, MRI প্রভৃতির কল্যাণে মনোবিশেষজ্ঞ এবং স্নায়ু-বিশেষজ্ঞরা লক্ষ্য করে দেখেছেন যে, স্বপ্ন হলো মস্তিষ্কের অতিরিক্ত তথ্য মুছে দেওয়া এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলোর ভিত্তি আরো মজবুত করার একটি কৌশল।

২০০৭ সালে জার্মানির হিডেলবার্গের ম্যাক্স প্ল্যাংক ইনস্টিটিউটে করা এক গবেষণা এই বক্তব্যটির সত্যতা কিছুটা নিশ্চিত করে। ইঁদুরের উপর করা সেই গবেষণায় গবেষকরা লক্ষ্য করেন যে, ঘুমের সময় মস্তিষ্কের নিওকর্টেক্স যখন সচল হয়, এটি হিপোক্যাম্পাসের বিভিন্ন অংশে সংকেত পাঠায়; যেসব তথ্য হিপোক্যাম্পাস তার Short-Term Storage এ ধারণ করে রেখেছিল, সেগুলো নিওকর্টেক্সকে পাঠানোর জন্য। হিপোক্যাম্পাস তখন তার স্টোরেজ তথা তথ্যভাণ্ডার খালি করে দেয় পরবর্তী দিনের নতুন তথ্য ধারণ করার জন্য। আর নিওকর্টেক্স সিদ্ধান্ত নেয়, কোন তথ্য Long-Term Memory-তে পাঠাবে, আর কোনো তথ্য অপ্রয়োজনীয় মনে করে মুছে ফেলবে। মস্তিষ্কের ভেতর এসব তথ্য আদান-প্রদান প্রক্রিয়ার মাঝে এলোমেলো কিছু তথ্য ঘুমন্ত মনের পর্দায় আটকা পড়ে যায়, যেগুলো স্বপ্ন হিসেবে মানুষ দেখে এবং অধিকাংশ সময় বাস্তবতার সাথে এর খুবই কম মিল পাওয়া যায়।

এ তো গেল স্বপ্নের পরীক্ষণমূলক বৈজ্ঞানিক ব্যাখা। এবার শোনা যাক, মনোবিদরা স্বপ্নকে কীভাবে ব্যাখা করেন। এক্ষেত্রে সবার প্রথমে যার কথা আসে, তিনি হলেন ‘ড্রিম থিওরি’ এর অন্যতম প্রবক্তা সিগমুন্ড ফ্রয়েড। ‘ফ্রয়েডিয়ান সাইকোঅ্যানালাইসিস’-এর মতে, স্বপ্ন হলো মানুষের অবদমিত ইচ্ছা পূরণের জায়গা। ফ্রয়েড স্বপ্নকে বলতেন ‘অবচেতন মনের রাজকীয় পথ’। তিনি মনে করতেন, স্বপ্ন হলো মানুষের অবচেতন মনের প্রতিচ্ছবি এবং তা মানুষের অবচেতন মনের ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষাগুলোই স্বপ্নের আকৃতি ধারণ করে। যদিও তার প্রথম দিকের গবেষণাগুলোতে তিনি উল্লেখ করেছেন যে, স্বপ্নের অধিকাংশ সুপ্ত বিষয়বস্তু হলো যৌনতা কেন্দ্রিক, কিন্তু পরবর্তীতে তিনি এই ধারণা থেকে কিছুটা সরে আসেন। তার পরবর্তী লেখাগুলোতে তিনি দেখিয়েছেন, কীভাবে ভয়-আতঙ্ক, মানসিক আঘাত প্রভৃতি অন্যান্য জিনিসও মানুষের স্বপ্নকে প্রভাবিত করে। এমনকি তিনি স্বপ্নের ক্ষেত্রে অনেক সময় অতিপ্রাকৃত অস্তিত্বের ভূমিকার কথাও উল্লেখ করেন।

স্বপ্নের মানসিক দিক নিয়ে গবেষণাকারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আরেকজন হলেন কার্ল জাংগ (Carl Jung)। তিনি ফ্রয়েডের অনেক তত্ত্বকে প্রত্যাখান করেন। কিন্তু স্বপ্ন যে মানুষের অবচেতন মনের সাথে সম্পর্কিত, ফ্রয়েডের এই ধারণাকে তিনি বিস্তৃত করেন। তিনি মনে করতেন, স্বপ্ন মানুষের জন্য গোপন সংবাদের মতো এবং মানুষের স্বপ্নে দেখা ভাল-মন্দ জিনিসগুলোর প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। তার বিশ্বাস ছিল, স্বপ্ন মানুষের কাছে এমন গোপন কিছু উন্মোচিত করে, যার দ্বারা সে মানসিক, ধার্মিক নানান সমস্যা ও ভয় কাটিয়ে উঠতে পারবে। ফিটজ পার্ল, আরেকজন বিখ্যাত মনোবিদ, উল্লেখ করেন যে, মানুষ স্বপ্নে যা দেখে তা তার ব্যক্তিত্বেরই বিভিন্ন দিক ফুটিয়ে তোলে।

স্বপ্নের আবার বিভিন্ন ভাগ-বিভাজন রয়েছে। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এবং মজাদার একটি অংশ হলো লুসিড ড্রিমিং (Lucid Dreaming)। এটি এমন একটি পর্যায়, যখন যে ব্যক্তি স্বপ্ন দেখছে, সে বুঝতে পারে যে সে স্বপ্ন দেখছে। স্বপ্নের বিষয়বস্তু এমনকি চরিত্রের ক্ষেত্রেও ব্যক্তির তখন কিছু মাত্রায় নিয়ন্ত্রণ থাকে! এই লুসিড ড্রিমিং বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত এবং যারা লুসিড ড্রিমিং করতে পারে তাদেরকে অনেক সময় অনেইরোনাট (Oneironaut) বলা হয়।

স্বপ্নে দেখা বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে কিন্তু অনেক বড় বড় আবিষ্কারও হয়েছে! তরুণ আইনস্টাইন নাকি একবার স্বপ্নে দেখেন যে, তিনি একটি খাড়া পাহাড়ের ঢাল দিয়ে গড়িয়ে পড়ে যাচ্ছেন। পড়ার সময় তার গতি বাড়তে থাকল। বাড়তে বাড়তে একপর্যায়ে যখন তা আলোর গতির কাছাকাছি পৌঁছল, তখন তিনি খেয়াল করলেন যে, আকাশের তারাগুলোর আকৃতি তার সাপেক্ষে পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। কথিত আছে, এই স্বপ্নের উপর ভিত্তি করেই আইনস্টাইন পরবর্তীতে তার বিখ্যাত ‘থিওরি অফ রিলেটিভিটি’ আবিষ্কার করেন। গণিতশাস্ত্রের বিখ্যাত প্রতিভা শ্রীনিবাস রামানুজন নিজেই বলতেন যে, স্বপ্নে ‘নামাক্কাল’ নামে এক দেবী এসে তাকে বিভিন্ন জটিল গাণিতিক সূত্র এবং ধারণা বলে যেতেন। তার দেখা ‘গাণিতিক স্বপ্নের’ এক বিখ্যাত ফসল হল ‘পাই’ এর অসীম ধারা।

স্বপ্ন নিয়ে প্রতিনিয়ত গবেষণা চলছে। নিত্যনতুন তথ্য মানুষের সামনে আসছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, মস্তিষ্কের কিছু কিছু রোগ, যেমন- পার্কিনসন্স ডিজিস (Parkinson’s Disease ) প্রভৃতির সাথে স্বপ্নের সম্পর্ক রয়েছে। তবে এ কথা ঠিক যে, স্বপ্ন নিয়ে যত মতবাদ প্রচলিত আছে, তার বেশিরভাগের মধ্যেই বিতর্ক আছে। আর থাকবেই বা না কেন? মানুষ তো এখন পর্যন্ত মস্তিষ্কের কার্যকলাপই ঠিকমত বুঝে উঠতে পারেনি, তাহলে সে এর এক রহস্যময় খেয়াল স্বপ্নকে কীভাবে ব্যাখা করবে? আশা করা যায়, বিজ্ঞান যখন মস্তিষ্কের কার্যকলাপ সম্পূর্ণরূপে বুঝতে পারবে, স্বপ্ন নিয়ে যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর তখন মানুষের হাতের নাগালে আসবে।

তো চলুন জেনে নেই স্বপ্ন সম্পর্কিত কিছু বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা-

  • সাইকোলজিস্ট গণের মতে আপনার যদি রাত্রে অনিদ্রা হয় তার মানে আপনি হয়ত অন্য কারো স্বপ্নে জীবিত ছিলেন। মানে আপনাকে নিয়ে হয়তো কেউ স্বপ্ন দেখছিল। যার কারনে আপনার রাত্রে ঠিক মতো ঘুম হয়নি।
  • যাদের রাত্রে ঘুমনোর সময় নাক ডাকার অভ্যাস আছে তাঁরা সচরাচর স্বপ্ন কম দেখে বা দেখেনা বল্লেই চলে। কারন বিজ্ঞান মনে করে নাক ডাকা ও স্বপ্ন দেখা দুটি একই সাথে সম্ভব না।
  • বিজ্ঞান বলে, গড়ে একজন মানুষ বছরে প্রায় ১৪৬০টি স্বপ্ন দেখে। অর্থাৎ প্রতি রাতে গড়ে প্রায় ৪টি করে।
  • আমাদের মস্তিষ্ক কোন চেহারা তৈরী করতে পারে না। অর্থাৎ আমরা স্বপ্নে যাদের দেখি তাদের সবাইকে জীবনে কোন না কোন সময় দেখেছি। কথাটার ব্যাখ্যা হবে এমন, আমরা পথে ঘাটে চলার সময় অসংথ্য চেহারা দেখি যা মনে রাখতে পারি না। কিন্তু আমাদের সাবন্সেন্স মাইন্ড তা ধরে রাখে এবং পরবর্তীতে স্বপ্নে দেখায়। আবার সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে কিন্তু আমরা আর মনে রাখতে পারিনা যে রাত্রে কাকে দেখেছি ঘুমনোর সময়।
  • প্রতিটি মানুষই স্বপ্ন দেখে। যদি আপনি মনে করেন আপনি স্বপ্ন দেখেন না তার অর্থ হয় আপনি তা মনে রাখতে পারেন না অথবা আপনি জটিল কোন মানসিক রোগে ভুগছেন।
  • মানুষ তার জীবন চক্রে প্রায় ৬ বছর স্বপ্ন দেখে কাটায়।
  • আপনি কি জানেন, গর্ভবতী মহিলারা আমাদের চেয়ে বেশী স্বপ্ন মনে রাখতে পারে। এর কারণ, গর্ভকালীন সময়ে তাদের অতিমাত্রায় হরমোনের পরিবর্তন হয়।
  • আমরা একটি স্বপ্ন দেখার ৫ মিনিটের মধ্যে তার প্রায় ৫০ শতাংশ ভুলে যাই, আর পরবর্তী ১০ মিনিটের মধ্যে ভুলে যাই প্রায় ৯০ শতাংশ। এজন্যই তো বলি আমি রাত্রে যে স্বপ্নটি দেখেছি সেটি মনে করতে পারছি না কেন।
  • আমরা সাধারনত প্রায় ৯০ থেকে ১৮০ মিনিট স্বপ্ন দেখি যেখানে, গড়ে একটি স্বপ্নের স্থায়িত্ব হয় প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট। সবচেয়ে লম্বা সময় স্বপ্ন দেখি সকালের দিকে যার স্থায়িত্ব ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট পর্যন্ত। (কিন্তু আমি তো জানতাম আমাদের প্রতিটা স্বপ্নের স্থায়িত্ব মাত্র ৪ সেকেন্ড, তাহলে কোনটা সত্যি)
  • সাধারণত শিশুরা দুঃস্বপ্ন বেশি দেখে। এর প্রমান, অনেক সময় দেখবেন দেখবেন বাচ্চারা হঠাৎ করে ঘুম থেকে জেগে উঠেই কান্না করা শুরু করে।

মানুষ স্বপ্ন দেখে কেন ?

ঘুমের মধ্যেও ইন্দ্রিয়গণ বাইরের জগত থেকে সংবেদন গ্রহণ করতে পারে। এ সব সংবেদন ইচ্ছামতো প্রতিরূপে রূপান্তরিত হয়ে স্বপ্নদৃশ্যের সৃষ্টি করতে পারে। তবে স্বপ্নের মূল উপাদান তৈরি হয় স্বপ্নদ্রষ্টার দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতা, চিন্তা ও কর্ম থেকে। এবং স্মৃতি থেকে।

মানুষ কতটা স্বপ্ন দেখে ?

জন্মমুহূর্ত থেকেই শিশু দর্শন প্রতিরূপ ব্যতিত অন্যান্য প্রতিরূপের সাহায্যে স্বপ্ন দেখে। জন্মের তিন চার মাস পর থেকেই শিশুরা স্বপ্ন “দেখা” শুরু করে। দুই বছর বয়স পর্যন্ত শিশুরা ঘুম সময়ের প্রায় ৪০ শতাংশ এবং কৈশোরে ঘুম সময়ের ২০ থেকে ২২ শতাংশ স্বপ্ন দেখে। চল্লিশের পর থেকে ঘুম সময়ের ১২ থেকে ১৫ শতাংশ স্বপ্ন দেখা হয়। মানুষের বয়স যত বাড়তে থাকে স্বপ্ন দেখা তত কমতে থাকে। সুতরাং, প্রাকৃতিক প্রবণতা হচ্ছে মানুষ সর্ব স্বপ্নহীন ভাবে পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে।

স্বপ্নের প্রকারভেদঃ

  • চরক-সংহিতা সাত প্রকার স্বপ্নের কথা বলেছে। বৌদ্ধ দর্শনে বর্ণিত হয়েছে নানা প্রকার প্রকারের স্বপ্ন।
  • জীবন চলার পথে মানুষ ভয়,
  • দুঃস্বপ্ন,
  • অতীত স্মৃতি,
  • ইচ্ছাপূরণ,
  • ভবিষ্যতের বার্তা,
  • আধ্যাত্মিক নির্দেশনা,
  • মুর্শিদের উপদেশ,
  • জ্ঞান লাভ
  • ইত্যাদি নানারকম স্বপ্ন দেখে।

আধ্যাত্মিক স্বপ্নঃ

স্বপ্নের সাথে আধ্যাত্মিকতার সম্পর্ক নিবিড়। স্বপ্ন হচ্ছে মুর্শিদের কাছে পৌঁছবার, মুর্শিদ থেকে নির্দেশনা লাভের মহাসড়ক। স্বপ্নে মুর্শিদের সাথে সংযোগ বহুজনের একটা পরীক্ষিত পদ্ধতি। মুর্শিদের সাথে প্রেম থাকলে শিষ্য তাকে স্বপ্নে দেখবে এবং তার কাছ থেকে প্রতিটা বিষয়ে নির্দেশনা প্রাপ্ত হবে, এতে সন্দেহের অবকাশ নেই। স্বপ্নে যে শুধু আধ্যাত্মিক জ্ঞান প্রাপ্তি ঘটে তা নয়, স্বপ্ন সমীক্ষণের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক তত্ত্বও বিকশিত হয়।

স্বপ্নে ভবিষ্যতের বার্তাঃ

স্বপ্ন ভবিষ্যতের বার্তা বহন করতে পারে। পতঙ্গের গুরুমস্তিষ্ক থাকে না কিন্তু পতঙ্গেরা নার্ভক্রিয়ার সাহায্যে ভূমিকম্প, সূর্যগ্রহণ, আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুযোর্গের পূর্বাভাস পেয়ে থাকে। যন্ত্রের যন্ত্রনায় মানুষের মধ্যে ভবিষ্যতের পূর্বভাস পাবার শক্তিগুলো নিস্ক্রিয় হয়ে যায়। ঘুমের সময় গুরু মস্তিষ্কের কর্মকান্ড স্তিমিত হয়ে গেলে স্বতন্ত্র নার্ভক্রিয়া সক্রিয় হয়ে ভবিষ্যৎ বাণী পাঠায়। “বিভূতিযোগ” চর্চা করে যোগীরা স্বতন্ত্র নার্ভক্রিয়াকে সক্রিয় করতে পারেন।

স্বপ্নে ইচ্ছাপূরণঃ

স্বপ্নের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য - ইচ্ছাপূরণ । মানুষ অনেক কিছুই চায় কিন্তু পায় না। এমনও হয়, মানুষ আসলে কি চায় তাই সে জানে না। স্বপ্নে একদিকে চেয়ে না পাওয়া বস্তুগুলো পেয়ে তার ইচ্ছাপূরণ হয় অন্যদিকে স্বপ্ন দ্রষ্টা জানতে পারে আসলে সে কি চায়।

স্বপ্ন দেখার প্রয়োজনীয়তাঃ

স্বপ্ন দেখার জন্যই মানুষকে ৬ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমাতে হয়। তা না হলে মানুষের শারিরীক বিশ্রামের জন্য ২/৩ ঘন্টা ঘুমই যথেষ্ট। সাধারণ মানুষের জন্য স্বপ্ন দেখা ঘুমের মতোই প্রয়োজন। কিন্তু আধ্যাত্মিক সাধনার একটা স্তরে উপনীত হলে স্বপ্ন দেখার কোন প্রয়োজন থাকে না বলে কোন কোন সাধক মন্তব্য করেছেন।

ঘটনা এবং স্বপ্ন একই সময়ে সংগঠিত হওয়াঃ

অনেক সময় এমন স্বপ্নও মানুষ দেখে থাকে যখন স্বপ্ন দেখার সময়ই ঘটনাটা ঘটছে। এমন ঘটনাও ঘটেছে - ছেলে বিদেশে থাকে, যে সময়ে সে স্বপ্নে তার বাবার মৃত্যু দেখেছে ঠিক সে সময়েই বাস্তবে তার বাবা ইন্তেকাল করেছেন। টেলিপ্যাথি ছাড়া অন্য কোনভাবে এমন ঘটনার ব্যাখ্যা করা যায় না।

স্বপ্ন স্মরণঃ

ঘুম থেকে জেগে উঠার পর অধিকাংশ স্বপ্নই ঠিকঠাক মনে থাকে না। অনেক সময় ঘুম ভাঙ্গার পর পর স্বপ্ন মনে থাকে কিন্তু যতই সময় যেতে থাকে স্বপ্ন ততই বিষ্মৃতিতে চলে যায়। কিন্তু কিছু স্বপ্ন আছে যা বাস্তব ঘটনার চেয়েও বেশি স্পষ্ট এবং উজ্জ্বল। এসব স্বপ্ন জীবনে কখনোই ভুলা যায় না।

স্বপ্ন বর্ণনায় মিথ্যাচারঃ

ঘুম ভাঙ্গার পর দেখা স্বপ্ন মানুষ যখন অন্যের কাছে বর্ণনা করে তখন সাধারণত মানুষ মিথ্যাচারের আশ্রয় নেয়। কারণ, স্বপ্ন বর্ণনার সময় জাগ্রত অবস্থার মনোভাব দেখা স্বপ্নের উপর প্রভাব ফেলে। স্বপ্ন এতটা সাজানো গোছানো থাকে না যতটা সাজিয়ে গোছিয়ে মানুষ তা বর্ণনা করে।

স্বপ্নব্যাখ্যাঃ

আদিকাল থেকেই স্বপ্নব্যাখ্যার প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। আরটেমিডোরাস তার বিখ্যাত অনিরো ক্রিটিকন বইয়ে স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে প্রথম স্বপ্ন ব্যাখ্যার রীতি লিপিবদ্ধ করেন। স্বপ্নের উৎস, প্রক্রিয়া, তাৎপর্য ও ব্যাখ্যার পদ্ধতি সম্বন্ধে ফ্রয়েডের আবিষ্কার মনঃসমীক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশেও খাবনামা জাতীয় বইয়ের কাটতি কম নয়। স্বপ্নের ব্যাখ্যা কোন বইয়ে থাকতে পারে না। স্বপ্নের সঠিক ব্যাখ্যা কেবল জানতে পারে স্বপ্নদ্রষ্টা নিজে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে অধিকাংশ স্বপ্ন দ্রষ্টা এটাই জানে না যে সে সঠিক ব্যাখ্যাটা জানে। নিজেদের স্বপ্নকে নিজেরা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করলে অনেক তথ্য ও তত্ত্ব আবিষকৃত হয়। কিন্তু এজন্য প্রথমে স্বপ্ন স্মরণ রাখার অনুশীলন করতে হয়।

স্বপ্ন স্মরণ রাখার অনুশীলনঃ

রাতে ঘুমাবার আগে ২১ বার বলতে হবে - আজ রাতে আমি যে সব স্বপ্ন দেখবো তার প্রত্যেকটি স্বপ্ন মনে রাখবো এবং ঘুম ভাঙ্গার সাথে সাথে তা লিখে রাখবো। এভাবে ২১ দিন চেষ্টা করলে সব স্বপ্ন মনে রাখা যায়। নিজেকে জানার জন্য স্বপ্নকে স্মরণ রাখার এবং স্বপ্ন বিশ্লেষণের গুরুত্ব অপরিসীম। যে জ্ঞান স্বপ্নদ্রষ্টার আছে কিন্তু যার অস্তিত্ব সম্পর্কে স্বপ্নদ্রষ্টা সচেতন নয় স্বপ্নে সেসব জ্ঞান প্রকাশিত হয়। কিন্তু স্বপ্নদ্রষ্টার সচেতন প্রচেষ্টা ব্যতিত তা সম্ভব নয়।

ইচ্ছা স্বপ্ন দেখাঃ

মানুষ ইচ্ছা স্বপ্নের সৃষ্টি করতে পারে। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে যাকে বা যে বিষয়ে স্বপ্ন দেখতে চায় সে বিষয়ে মনোনিবেশ করলে ইচ্ছা স্বপ্ন দেখা যায়।

স্বপ্নের তাৎপর্যঃ

যে যেমন মানুষ সে তেমন স্বপ্ন দেখে। স্বপ্নের তাৎপর্য নির্ভর করে স্বপ্নদ্রষ্টার চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গির উপর। যে সব মানুষের জাগ্রত অবস্থায়ই কর্মকান্ডের কোন তাৎপর্য নেই তার স্বপ্নেরও কোন তাৎপর্য নেই। স্বপ্ন তাৎপর্যপূর্ণ হয় যখন জাগ্রত অবস্থায় মানুষ তাৎপর্যপূর্ণ কাজ করে। রবীন্দ্রনাথ তাঁর রাজষির্ নাটকের কাহিনী স্বপ্নে পেয়েছেন, ইংরেজ কবি কোলরিজ তাঁর বিখ্যাত কোবলা খান কবিতাটি স্বপ্ন দেখে লিখেছেন, বিজ্ঞানী নিলস বোর পরমাণুর গঠন স্বপ্নে দেখেছেন, বিজ্ঞানী কেকুলে বেনজিনের গঠন-তত্ত্বটি স্বপ্নে দেখেন অর্থাৎ এক চিন্তা তাৎপর্যপূর্ণ স্বপ্ন সৃষ্টি করে।

স্বপ্ন প্রতীকঃ

আদি কাল থেকেই মানুষ স্বপ্ন প্রতীকের কথা ভেবে আসছে। লাঠি, সাপ, পিস্তল, গর্ত, ঘর, কাগজ, গহনা, ঘোড়ায় চড়া, চাবি, নদী, সমূদ্র ইত্যাদি নানা রকমের স্বপ্ন প্রতীকের ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। ওড়ার স্বপ্ন, পড়ে যাবার স্বপ্ন, নিজেকে উলঙ্গ দেখার স্বপ্ন, পরীক্ষার স্বপ্ন, চোর ডাকাতের স্বপ্ন, পানিতে পড়ে যাবার স্বপ্ন, প্রিয়জনের মৃত্যুর স্বপ্ন ইত্যাদি স্বপ্নও প্রতিকী। স্বপ্ন প্রতীকের অভিধান আছে। প্রথম অভিধানটি প্রকাশিত হয় মিশরে। মুসলিম রাজাদের দরবারে স্বপ্নব্যাখ্যাদাতাগণ একসময় খুব সমাদৃত ছিলেন। বাইবেলের সুবিখ্যাত স্বপ্নগুলোর ব্যাখ্যাদাতা জোসেফের কথা আমাদের সবারই জানা। বাইবেলে অধিকাংশ শব্দই কুমন্ত্রণাদাতার সৃষ্টি এ রকম একটা আয়াত আছে।

স্বপ্ন ও লক্ষ্যঃ

স্বপ্ন ও লক্ষ্য এক নয়। লক্ষ্য, স্বপ্নের মতো কল্পনা আশ্রিত নয়। লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট এবং স্পষ্ট। স্বপ্ন স্পষ্ট হতে পারে কিন্তু সুনির্দিষ্ট নয়। লক্ষ্য সংক্ষিপ্ত। স্বপ্ন বিস্তারিত। লক্ষ্য এবং স্বপ্ন দুইটি আলাদা বিষয়। স্বপ্ন ও লক্ষ্যের মধ্যে বেশ পার্থক্য আছে। জীবনে যদি সফল হতে চান তবে আপনার মধ্যে স্বপ্ন ও লক্ষ্য দুই থাকতে হবে।

আপনার জীবনের স্বপ্নগুলো মনের ভিতরে জায়গা দখল করে রাখে এবং লক্ষ্য আপনাকে বাস্তব জীবনে জায়গা করে দিবে। আমাদের মধ্যে অনেকেই স্বপ্ন অর্জন করার চেষ্টা করি, কিন্তু স্বপ্ন অর্জন করা যায় না। স্বপ্ন শুধুমাত্র উপলব্ধি করা যায়।

আপনার প্রতিটি স্বপ্নকে ঘিরে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য তৈরি করতে পারলে স্বপ্নগুলি উপলব্ধি করতে পারবেন। স্বপ্ন মানে ভবিষ্যতের জন্য কিছু ফলাফল আশা করা এবং লক্ষ্য মানে সেই ফলাফলকে বাস্তবরূপ দেওয়ার জন্য কাজ করা। স্বপ্নের কোনো নির্দিষ্ট সময়সূচি নেই, মানে আপনি যদি সারা জীবন ধরে একটি স্বপ্ন দেখতে চান তবে তাই পারবেন। কিন্তু লক্ষ্য মানে অবশ্যই একটি নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে।

লক্ষ্য মানে কিছু একটা করা আর স্বপ্ন কিছু একটি নিয়ে কল্পনা করা। আপনি চাইলেই বিনা টাকায়, বিনা পরিশ্রমে স্বপ্ন দেখতে পারবেন। কিন্তু লক্ষের বেলায় অবশ্যই আপনাকে কাজ করতে হবে। ধরুন, আপনার স্বপ্ন একটি দামী গাড়ি কিনবেন। এই স্বপ্ন আপনি দেখতেই পারেন, কেউ আপনাকে বাঁধা দিবে না, এমনকি এই স্বপ্নের কথা ভেবে আপনি নিজেই আনন্দ পাবেন।

এবার আসি লক্ষ্যের ব্যাপারে। আপনি কত টাকা দিয়ে গাড়িটি কিনতে চান, এত টাকা কোথায় পাবেন, কত দিনের মধ্যে গাড়িটি কিনবেন, কোথা থেকে কিনবেন, এই গাড়িটি কেনার জন্য আপনাকে কি করতে হবে, কি কি উপায়ে টাকা জমাবেন, লোন করবেন কিনা, কত দিনের মধ্যে লোন পরিশোধ করবেন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আপনার লক্ষ্য। স্বপ্ন কখনই সুনিদিষ্ট হয় না, অন্যদিকে লক্ষ্য সব সময়ই সুনিদিষ্ট হয়। লক্ষ্য বাস্তবিক জীবনে একটি ফলাফল দাড় করাতে পারে, স্বপ্ন মনের ভিতরে কল্পনার জগত বানাতে পারে।

অনেক বড় স্বপ্ন আপনাকে অনুপ্রানিত করতে পারে অন্যদিকে একটি বাস্তবিক লক্ষ্য আপনার জীবন পরিবর্তন করতে পারে। অনেক বড় স্বপ্ন দেখার জন্য পরিশ্রম করা লাগে না কিন্তু যে কোন লক্ষ্যের জন্য পরিশ্রমের কোনই বিকল্প নেই। তবে স্বপ্ন ছাড়া কোনো লক্ষ্য তৈরি হতে পারে না। স্বপ্ন হতে হবে অনেক বড় এবং লক্ষ্য হতে হবে নির্দিষ্ট, পরিমাপযোগ্য, অর্জনযোগ্য, বাস্তববাদী এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে।

যখন আপনার একটি বড় স্বপ্ন থাকবে তখনই সেই স্বপ্নকে লক্ষ্যে রুপান্তর করতে হবে। বড় স্বপ্নটিকে ভেঙ্গে ছোট ছোট লক্ষ্যে ভাগ করতে পারলে সফলতা সুনিশ্চিত।

চিন্তা ও স্বপ্নঃ

চিন্তা স্বপ্নকে প্রভাবিত করে কিন্তু চিন্তার তুলনায় স্বপ্নের বিচরণ ক্ষেত্র অনেক বেশি প্রশস্ত। স্বপ্ন যুক্তির গন্ডিতে আবদ্ধ থাকে না কিন্তু চিন্তা যুক্তির গন্ডিতে আবদ্ধ থাকে। পরিবেশ, রীতি-নীতি, ভাল-মন্দ, বিবেক ইত্যাদি চিন্তার স্বাধীন গতিকে বাধাগ্রস্থ করে। স্বপ্নের জগতে এসব বাধা নেই। তাই জাগ্রত অবস্থায় কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার চাইতে স্বপ্নে সিদ্ধান্ত নিতে পারলে সিদ্ধান্তটি নির্ভুল হবে।

শখ বা স্বপ্নের অনেক কাজ অনেকেই জমিয়ে রেখে দেন অবসরে যাওয়ার পরে করবেন বলে। কিন্তু সেগুলো এখনই শুরু করে দেওয়া ভালো। কারণ, অবসর-পরবর্তী সময়টা তো না-ও আসতে পারে। জীবনে সত্যিকারের অবসর আসলে কখনোই মেলে না। সময় খুবই সীমিত, কাজেই সেটা অপচয় করার কোনো মানে হয় না। ১০টি সহজ ধাপ অনুসরণ করে আপনার স্বপ্নগুলোকে সত্যি করতে পারেন। তাই শুরু করে দিন, আজই।

  • স্বপ্নটাকে চিনে নিন:

জীবনের লক্ষ্য নিয়ে অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকেন। ব্যাপারটা সহজভাবে সমাধানের চেষ্টা করুন। আপনার কী করতে ভালো লাগে? ভাবুন। সবকিছু এখনই চূড়ান্ত করার দরকার নেই। শুধু ধারণাগুলো জড়ো করার চেষ্টা করুন। যেসব কাজ করতে গিয়ে আপনি আন্দোলিত হন ও উৎসাহবোধ করেন এবং যা কিছুর সঙ্গে আপনার বিশেষ ভালো লাগা ও আবেগ যুক্ত রয়েছে সেগুলোর সম্ভাবনা নিয়ে ভাবুন। সম্ভব হলে এ রকম কিছু বিষয় লিখে রাখুন। জীবন নিয়ে কী কী স্বপ্ন দেখেন, সেগুলো গুছিয়ে লেখার বা ভাবার চেষ্টা করেই দেখুন, কী হয়। চোখ বন্ধ করে ভবিষ্যতের একটা ছবি কল্পনা করুন। যেমন যদি আপনি লেখক হতে চান, প্রতিদিন কিছু না কিছু লিখুন। এভাবেই নিজের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় চর্চাটা চালিয়ে যান।

  • সিদ্ধান্ত নিন এবং আস্থাবান হোন:

অনেকেই উচ্চাভিলাষী স্বপ্ন দেখেন এবং সেগুলোর সম্ভাবনা নিয়ে নিজেই নিজেকে নিরুৎসাহিত করেন: ‘আমি পারব না... আমাকে দিয়ে হবে না’ ইত্যাদি। এ ধরনের প্রবণতা বন্ধ করুন। নিজের স্বপ্ন নিয়ে নেতিবাচক ধারণাকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। স্বপ্নটাকে নিয়ে অঙ্গীকার থাকতে হবে। আর সেটা পূরণের প্রতিশ্রুতি নিজেকেই দিতে হবে। প্রতিদিনই স্বপ্নটাকে একটু একটু করে বাস্তবে রূপ দেওয়ার কাজ চালিয়ে যেতে হবে। সিদ্ধান্তের সঙ্গে আত্মবিশ্বাস যোগ করলেই সেটা অঙ্গীকারে রূপ নেয়। সিদ্ধান্ত নিন আপনি জীবনে কী করতে চান। বিশ্বাস করুন, সেটা অবশ্যই সম্ভব হবে এবং ঘটবেই। এই বিশ্বাসের জাদুকরী পরশেই আপনার স্বপ্নটা বাস্তবে রূপ নেবে। যদি সিদ্ধান্ত না নেন, বিশ্বাস না করেন এবং অঙ্গীকারবদ্ধ না হন, আপনি লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবেন না।

  • ভয়কে জয় করুন:

এটা একবারের বিষয় নয়। বারবার আপনাকে এই কাজটা করতে হবে। স্বপ্ন ব্যর্থ হওয়ার ভয়টা আপনাকে পিছিয়ে দেবে। লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য প্রাসঙ্গিক বিষয়টি নিয়ে বিস্তর চর্চা বজায় রাখতে হবে। নিয়মিত। এটাকে কঠিন মনে করবেন না। সঠিক চর্চা বা অভ্যাসটাকে বেছে নিন। বারবার চর্চা করুন। এই পুনরাবৃত্তি ইতিবাচক।

  • তৎপর হোন:

খুঁজে বের করুন, ঠিক কোন কাজটা করলে আপনার স্বপ্ন পূরণ হবে। তারপর সেটা শুরু করে দিন। প্রতিদিন। নিরন্তর। এই ধাপের মূল কথা হলো, প্রতিদিন নিজের সক্রিয়তা ধরে রাখুন।

  • নিজেকে ভালোবাসুন:

প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় নানা কাজের ঝামেলা ও বিড়ম্বনায় স্বপ্ন বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতা থেকে আপনার বিচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা অনেক। তাই তাড়াহুড়া করা যাবে না। তাহলে সব পণ্ড হতে পারে। ধীরে ধীরে ধৈর্যসহকারে অগ্রসর হোন। মাঝে মাঝে বিরতি নিন। নিজেকে সুস্থির রাখুন। নিজের কথা শুনুন। প্রতিদিন কিছুটা সময় নীরবতা ও নির্জনতার মধ্যে কাটান। নিজেকে সময় দিন। নিজেকে সময় দিন অনুভূতি ও ভাবনাগুলোকে সুসজ্জিত করার। এতে আপনি নিজের স্বপ্ন ও লক্ষ্যগুলোর সংস্পর্শে থাকতে পারবেন। ইচ্ছেগুলোও বেঁচে থাকবে।

  • অন্যদের সাফল্য থেকে প্রেরণা নিন:

কাউকে দেখে যদি নিজের চেয়ে বেশি ভাগ্যবান মনে হয়, নিজেকে বলুন, ‘জেনে রাখো, আমিও লক্ষ্যে পৌঁছাব। আমি পারবই!’ যদি ভালো কিছু আশা করেন, সব নেতিবাচকভাবে নিজের চারপাশ থেকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করুন। এগুলো আপনার শক্তি ক্ষয় করে। অন্যদের ব্যাপারেও নেতিবাচক ভাবনাকে প্রশ্রয় দেবেন না। কাউকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। সবাই যার যার মতো। ফেসবুকেও নেতিবাচক মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকুন। অন্যদের অনুপ্রেরণা দিন। এর সুফল আপনিও পাবেন। অর্থের পেছনে ছুটবেন না। টাকাই চূড়ান্ত নয়, আরও অনেক কিছু আছে অর্জনের। টাকাপয়সাকে অতিমূল্যায়ন করবেন না।

  • ভুল থেকে শিক্ষা নিন:

ভুল তো হবেই, তাকে নিজ স্বপ্নগুলো বাদ দেওয়ার অজুহাত হিসেবে দাঁড় করাবেন না। অনেক ব্যর্থতার মুখোমুখি হতে হবে। সেগুলোর কোনো কোনোটি আপনার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। আবার কোনোটি হয়তো লক্ষ্যটাকেই বদলে দেবে। স্বপ্নটাকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পারলে অবশ্য এ ধরনের ঘটনার সম্ভাবনা কম। সময় নিন। নিষ্ঠার সঙ্গে ভাবুন। দু-একটা ভুল করে ফেললেও সঠিক পথে ফিরে আসার সুযোগ খোলাই থাকে। নিজেকে আসল পথে দেখতে পেলে আপনারই ভালো লাগবে।

  • ছোট ছোট সিদ্ধান্তও গুরুত্বপূর্ণ:

প্রতিদিন সকাল সকাল জেগে ওঠার সিদ্ধান্ত নিন। এটাকে বড় কিছু মনে না হলেও একসময় আপনার জীবনে বড় প্রভাব বিস্তার করবে। প্রতিটি ছোট্ট সিদ্ধান্তই তাৎপর্যপূর্ণ। কোনো না কোনোভাবে সেগুলো কাজে লাগে। কারণ, আপনি যা সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটাই একসময় ঘটবে। আর আপনি সাফল্য, নাকি ব্যর্থতা অর্জন করবেন, সেটা আপনার কিছু সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর করবে। তাই সিদ্ধান্ত বা বাছাই করার ক্ষেত্রে সুবিবেচনার পরিচয় দিতে হবে।

  • বদ-অভ্যাসকে জয়ী হতে দেবেন না:

এই সংক্ষিপ্ত জীবন, অনেক ব্যর্থতা ও নেতিবাচক অভ্যাসগুলোর ওপর দোষ চাপানোর সুযোগ অনেক। কিছু কিছু বিষয়ের ওপর আমরা বিরক্ত হয়ে পড়ি, সেগুলোর ব্যাপারে একঘেয়ে অনুভূতিতে আচ্ছন্ন হই। এসবের বেড়াজাল থেকে বের হওয়ার পথ নিজেকেই খুঁজে নিতে হবে। অভ্যাস বদলানো কঠিন হলেও অসম্ভব তো নয়। তাই কোনো বদ-অভ্যাসকে আপনার ওপর ছড়ি ঘোরানোর সুযোগ দেবেন না।

  • সবাইকে বন্ধু ভাবুন:

দ্য আলকেমিস্ট বইয়ের লেখক পাওলো কোহেলো বলেছেন, ‘আর যখন তুমি কিছু চাইবে, সমগ্র মহাবিশ্ব তোমাকে সেটি অর্জনে সহায়তা করবে।’ এই উদ্ধৃতির আলোকে অনুপ্রাণিত হয়ে আপনাকে এগিয়ে যেতে হবে। তিনটি ধাপ অনুসরণ করুন: প্রথমত, বড় স্বপ্ন দেখুন। দ্বিতীয়ত, অবিরত তৎপর থাকুন। তৃতীয়ত, বিশ্বাস রাখুন, স্বপ্নপূরণের পথে মহাবিশ্ব আপনার পাশে আছে।

দিবাস্বপ্নঃ

ভবিষ্যৎ নিয়ে মানুষের কল্পনা ও আকাঙ্খাকে দিবাস্বপ্ন বলা হয়। দিবাস্বপ্ন বস্তুগত প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। বস্তুজীবনে সঠিক ব্যবহারে দিবাস্বপ্ন অতীতের পরিসমাপ্তি ঘটায়, বর্তমানকে সুগঠিত করে এবং ভবিষ্যৎ জীবনের নতুন পথের সন্ধান দেয়। দিবাস্বপ্ন ভবিষ্যতের ছবি দেখিয়ে ব্যক্তিকে শক্তি ও সাহস যোগাতে পারে। সঠিক ব্যবহার জানলে দিবাস্বপ্ন শিল্প, সাহিত্য, সঙ্গীত ও নব নব আবিষ্কারের দ্বার উন্মোচন করে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই দিবাস্বপ্নকে সৃষ্টিশীলতায় ব্যবহার করে না অথচ প্রায় সারাক্ষণই তাৎপর্যহীন দিবাস্বপ্ন দেখে। দিবাস্বপ্নকে দিবাস্বপ্ন বলা হয় কারণ, সাধারণ মানুষের কাছে দিবাস্বপ্নের বিষয়বস্তুও বাস্তবের মতো বাস্তব নয়। আধ্যাত্মিক সাধনায় দিবাস্বপ্ন সহায়ক। মুর্শিদ স্মরণ, নিজেকে জানা এবং আমি'র মধ্যে থাকতে দিবাস্বপ্ন বাধা দেয় না। দিবাস্বপ্ন সাধারণ মানুষকে বর্তমানে থাকতে দেয় না। এজন্যই সাধকেরা সিদ্ধি লাভকে জীবনের স্বপ্ন থেকে জাগরণ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

মানুষ সজাগ থাকলে স্বপ্ন দেখে না। একজন সিদ্ধ পুঁরুষ ঘুমন্ত অবস্থায়ও সজাগ থাকেন অথবা যিনি সব সময় সজাগ থাকেন তাঁকেই সিদ্ধ পুঁরুষ বলা হয়। তাই সিদ্ধ পুঁরুষদের স্বপ্ন দেখার কথা নয়।

আমরা সারা রাত ধরে স্বপ্ন দেখি

অনেকেই জানেন যে, ঘুমের ‘ৱ্যাপিড আই মুভমেন্ট’ বা ‘আরইএম’ পর্যায়ে আমরা স্বপ্ন দেখি। কিন্তু চিকিত্সা মনোবিজ্ঞানী গণ বলছেন, আসলে আমরা সারা রাত ধরেই স্বপ্ন দেখতে থাকি। তিনি বলেন, এই পর্যায়টাতে আমরা আসলে স্বপ্নের সঙ্গে অনেক বেশি একাত্ম থাকি। কিন্তু বাকি সময়টাতে আমরা তা ‘দেখতে পাই না’ বলে ‘স্বপ্ন দেখা’ চলছে না, বিষয়টি এমন নয়। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘আরইএম’ পর্যায় বাড়তে থাকে বলে আমরা রাতের তিন-ভাগের শেষ ভাগে বেশি স্বপ্ন দেখি।

কেন কিছু মানুষ, কিছু স্বপ্ন ভুলে যায় ?

কেউ কেউ স্বপ্ন মনে রাখতে পারে। কারও কারও আবার স্বপ্ন দেখার বিষয়টি মনে থাকলেও, কী দেখেছে তা আর মাথায় থাকে না। বিজ্ঞানীদের কাছে অবশ্য এর ব্যাখ্যা আছে। তারা বলছেন, কিছু মানুষ স্বপ্নের বিষয়বস্তু মনে রাখতে পারেন না। এর কারণ লুকিয়ে আছে তাদের ঘুমানোর পদ্ধতি এবং শরীরের কিছু রাসায়নিক পদার্থের কর্মপ্রক্রিয়ায়।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, যখন আমরা ঘুমাই, তখন আমাদের মস্তিষ্ক চারটি ভিন্ন ভিন্ন ধরনের মানসিক অবস্থার মধ্য দিয়ে যায়। চূড়ান্ত পর্যায়টির নাম হলো র্যাপিড আই মুভমেন্ট বা আরইএম। এই পর্যায়ে ঘুমের সময় একজন ব্যক্তির চোখের পাতা দ্রুত কাঁপতে থাকে। এ সময় হৃদপিণ্ডের গতি ধীর হয় আসে এবং মানুষের শরীর আটোনিয়া নামের একটি অবস্থায় চলে যায়। এ সময় মানবদেহ নিষ্ক্রিয় অবস্থায় চলে যায় এবং বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নাড়াচাড়া করা যায় না।

ঠিক এই পরিস্থিতিতে স্বপ্ন দেখার ক্ষেত্রে মানব মস্তিষ্কের দুটি রাসায়নিক পদার্থ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এগুলো হলো—এসিটোকোলিন ও নোরাপিনাফ্রিন। এসিটোকোলিনের উৎপাদন যত বাড়ে, মস্তিষ্কের কর্মতৎপরতা তত বেড়ে যায়। স্বপ্নের বিষয়বস্তু একজনের কাছে কতটা স্পষ্ট হবে, সেটি নিয়ন্ত্রণ করে এসিটোকোলিন। আবার নোরাপিনাফ্রিন সতর্কতা ও মানসিক চাপের মাত্রা নির্ধারণ করে। এসিটোকোলিনের উৎপাদন যত বাড়ে, নোরাপিনাফ্রিনের পরিমাণ কমতে থাকে। নোরাপিনাফ্রিনের পরিমাণ কমতে থাকলে আমাদের স্বপ্নগুলো মনে রাখার সক্ষমতাও কমতে থাকে।

হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের স্লিপ রিসার্চার রবার্ট স্টিকগোল্ড বিবিসিকে বলেন, ‘যখন আমরা প্রথমবার ঘুম থেকে উঠি, তখন স্বপ্নগুলো অত্যন্ত ভঙ্গুর অবস্থায় থাকে। এই পরিস্থিতি কেন সৃষ্টি হয়, তার সঠিক ব্যাখ্যা এখনো জানা যায়নি। যদি কেউ লাফ দিয়ে ঘুম থেকে উঠে দিনের কাজ শুরু করে দেন, তবে তার পক্ষে স্বপ্ন মনে রাখা সম্ভব হবে না। ছুটির দিনের প্রশান্তির ঘুমই স্বপ্ন মনে রাখার উৎকৃষ্ট উপায়।’

অ্যালার্মে জাগলে স্বপ্ন মনে থাকে না

ঘড়ি বা মুঠোফোনের অ্যালার্মে ধরফড় করে আকস্মিকভাবে জেগে উঠলে তার ঠিক আগের মুহূর্তেই ঘুমের ঘোরে কী দেখছিলেন, কী ভাবছিলেন, তা ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এ কারণে এভাবে ঘুম থেকে জেগে উঠলে স্বপ্ন মনে থাকে না। এই চিকিত্সা মনোবিজ্ঞানী বলেন, স্বপ্ন মনে রাখার ভালো উপায় হলো ঘুম থেকে ধীরে ধীরে জেগে ওঠা, ধীরে ধীরে চোখ মেলা, বিছানায় গড়াগড়ি দেওয়া, তারপর ওঠা। তিনি আরও বলেন, ‘স্বপ্নে কী দেখছেন তা ধরে রাখতে তার পেছনে ছুটবেন না। স্বপ্নের পেছনে ছুটলে স্বপ্ন পালিয়ে যায়।’

স্বপ্ন মনে রাখা মস্তিষ্ক ভিন্নভাবে কাজ করে

২০১৪ সালের নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিতই তাঁদের দেখা স্বপ্ন মনে রাখতে পারেন, তাদের মস্তিষ্কের বিশেষ একটি অংশে বিশেষ স্বতঃস্ফূর্ত কর্মকাণ্ড ঘটে থাকে। যারা স্বপ্ন মনে রাখতে পারেন, তাঁদের মস্তিষ্কের ‘টেমপোরো-পারিয়েটাল জাংশন’ নামক একটি অংশে এটা ঘটে। শুধু ঘুমের মধ্যেই নয়, জেগে থাকা অবস্থায়ও স্বপ্ন মনে রাখতে পারা আরা না-পারা এই দুই দল মানুষের মস্তিষ্কের এই অংশের কর্মকাণ্ড কিছুটা আলাদা। ওই গবেষণা থেকে দেখা যায়, যাঁরা ঘুমের মধ্যে হালকা শব্দেই জেগে ওঠেন বা নড়েচড়ে ওঠেন বা ঘুমের ঘোরেই শব্দের প্রতিক্রিয়া দেখান, তাঁদের মধ্যে স্বপ্ন মনে রাখার হার বেশি।

স্বপ্নের মধ্যেও শরীর সাড়া দেয়

জেগে থাকা অবস্থায় আমাদের শরীর যেভাবে সাড়া দেয় বা প্রতিক্রিয়া করে, ঠিক তেমনি স্বপ্নের মধ্যেও আমাদের শরীর সাড়া দিতে পারে। স্বপ্নে কিছু দেখে বা শুনে কিংবা স্বপ্নে কারও সঙ্গে কথাবার্তা বলার সময় হঠাত্ ঘুম ভেঙে গেলে আপনি জেগে উঠলেন। কিন্তু যার সঙ্গে কথা বলছিলেন, জেগে উঠে আপনি তাকে আর পাচ্ছেন না। এ অবস্থাটা খুবই হতাশাজনক নিশ্চয়ই। জেগে ওঠার পরও, চোখ মেলার পরও আমাদের শরীরে, মনে স্বপ্নের অবস্থাটা বা ওই ঘোরটা থেকে যায় বলেই এমন হয়। আর বাস্তবের মতোই ঘুমের মধ্যেও স্বপ্নে উত্তেজিত হয়ে পড়লে আপনার রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে বা অন্য কোনো আবেগের সঙ্গে খাপ খাইয়ে শরীরে অন্য কোনো উত্তেজনা তৈরি হতে পারে।

স্বপ্নেও ‘সময়ের হিসাব’ বাস্তবের মতোই

স্বপ্ন নিয়ে বহুল প্রচলিত ধারণা হলো, এক সেকেন্ডের কয়েক ভাগের এক ভাগ সময়ে আমরা একটা লম্বা স্বপ্ন দেখে ফেলি বা স্বপ্ন খুবই স্বল্পকাল স্থায়ী হয়। স্বপ্ন আসলে টানা ২০, ৩০ বা ৬০ মিনিটও স্থায়ী হতে পারে। রাতের প্রথম দিককার সময়ে স্বপ্ন মাত্র কয়েক মিনিট স্থায়ী হলেও রাত বাড়তে থাকার সঙ্গে সঙ্গে স্বপ্নের দৈর্ঘ্যও বাড়তে থাকে। কেননা রাতের শেষভাগেই ঘুমের ‘আরইএম’ পর্যায়টা দীর্ঘ হয়।

‘দুঃস্বপ্ন’ মানেই কেবল ভীতির স্বপ্ন নয়

‘খারাপ স্বপ্ন’ বা ‘দুঃস্বপ্ন’ অনেক সময়ই ভয়ের স্বপ্ন হয়ে থাকে কিন্তু এর ভেতরে অন্য গল্পও আছে। ২০১৪ সালের একটি নতুন গবেষণায় মনোবিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন যে, ‘দুঃস্বপ্ন’ অনেক ক্ষেত্রেই ব্যক্তির ব্যর্থতা, দুঃশ্চিন্তা, উদ্বেগ, বিষণ্নতা, বিভ্রান্তি বা এমন অন্যান্য মানসিক অবস্থার প্রতিফলন থেকে ঘটে থাকে। ১৩১ জন প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের ওপর পরিচালিত এক জরিপ থেকে এটা লক্ষ করা হয়। ওই গবেষকেরা আরও জানান, পুরুষেরা মারামারি বা সংঘাত-সংঘর্ষের ‘দুঃস্বপ্ন’ বেশি দেখেন আর নারীরা ‘দুঃস্বপ্ন’ দেখেন সম্পর্কের সংকট নিয়ে।

স্বপ্নে মরে গেলেও তা বলতে আপনি বেঁচে থাকেন

‘স্বপ্নে দেখলাম আমি মরে গেছি’—এটা স্বপ্ন দেখা নিয়ে একটা খুবই সাধারণ অভিজ্ঞতা। অনেকেই বলে থাকেন, স্বপ্নে এমন মৃত্যু দেখাটা ভালো না। কিন্তু মনোবিজ্ঞানী গন বলেন, এটা নিয়ে দুর্ভাবনার কিছু নেই। তারা বরং বলছেন, ‘স্বপ্নে মরার সুযোগ পেলে, তা মিস করাটা ঠিক হবে না! যান ওই ঘটনাটার অভিজ্ঞতাটা নিয়ে ফেলুন।’

ইসলামে স্বপ্নের ব্যাখ্যাঃ

সত্য স্বপ্ন নবুয়্যতের অংশ। রসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেছেনঃ “সত্য স্বপ্ন নবুয়্যতের ৪৬ ভাগের এক ভাগ।” (আল-বুখারীঃ ৬৪৭২; মুসলিম ৪২০১)

ওহী নাযিলের পূর্বে রসূলুল্লাহ্ (সঃ) স্বপ্ন দেখতেন যা দিবালোকের মত স্পষ্ট ছিল। (আল-বুখারী, ৩; মুসলিম, ২৩১)

স্বপ্ন দর্শনকারীর সততা ও আন্তরিকতার সাথে স্বপ্নের সত্যাসত্য সম্পর্কিত। যারা বেশী সত্যবাদী তাদের স্বপ্নও বেশী সত্য হয়। (মুসলিম, ৪২০০)

কিয়ামতের কাছাকাছি সময়ে খুব কম স্বপ্নই অসত্য হবে। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ “এটা এজন্যই হবে যে সে সময়টা নবুয়্যতের সময় ও প্রভাব থেকে অনেক দূরবর্তী হবে। ফলে বিশ্বাসীদেরকে সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে কিছুটা পুষিয়ে দেয়া হবে, যা তাদের কাছে সুসংবাদ বয়ে আনবে অথবা তাদেরকে তাদের ঈমানের ব্যাপারে ধৈর্য ধরতে ও দৃঢ় থাকতে সাহায্য করবে।” (আল-বুখারী, ৬৪৯৯; মুসলিম ৪২০০)

একই কথা বলা যেতে পারে সে সমস্ত অলৌকিক ঘটনাবলী সম্পর্কে যা সাহাবীদের সময়ের পরে ঘটেছিল। এগুলো তাদের সময়ে সংঘটিত হয়নি কারন তাদের দৃঢ় ঈমানের কারনে তা তাদের প্রয়োজন ছিলনা। কিন্তু তাদের পরে আসা লোকদের সে অলৌকিক ঘটনাবলীর দরকার ছিল তাদের দূর্বল ঈমানের কারনে।

স্বপ্ন তিন প্রকারেরঃ রহমানী (যেগুলো আল্লাহ্র পক্ষ থেকে হয়), নফসানী (মনস্তাত্বিক, এগুলো ব্যক্তির নিজের পক্ষ থেকে হয়) এবং শয়তানী (যেগুলো শয়তানের পক্ষ থেকে হয়)। রসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেছেনঃ “স্বপ্ন তিন প্রকারেরঃ এক প্রকারের হয় আল্লাহর পক্ষ থেকে, আরেক প্রকার যা মানুষকে ভারাক্রান্ত করে, আর তা হয় শয়তানের পক্ষ থেকে, আরেক প্রকারের স্বপ্ন সংঘটিত সে সমস্ত ব্যাপার থেকে যা ব্যক্তি জাগ্রত অবস্থায় চিন্তা করেছে যা ঘুমের ঘোরে সে দেখতে পায়।” (আল-বুখারী, ৬৪৯৯; মুসলিম, ৪২০০)

নবীদের স্বপ্ন হল ওয়াহী কারন কারন তাঁরা শয়তান থেকে সুরক্ষিত। এ ব্যাপারে উম্মতের ইজমা রয়েছে। এজন্যই ইব্রাহীম (আঃ) স্বপ্নে দেখেই তাঁর পুত্র ইসমাইলকে (আঃ) কুরবানী করতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

নবীদের ছাড়া অন্য লোকদের স্বপ্নকে সুস্পষ্ট ওয়াহীর (কুর’আন ও সুন্নাহ্) আলোকে যাচাই করে দেখতে হবে। যদি সেগুলো কুর’আন ও সুন্নাহ্ সমর্থিত হয় তাহলেতো ভাল; নাহলে সে স্বপ্নের ভিত্তিতে কোন কাজ করা যাবেনা। এটা একটা অতীব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, কারন অনেক বিদ’আতপন্থী ও সূফীরা তাদের স্বপ্নের উপর নির্ভ্র করেই গোমরাহ হয়ে গিয়েছে।

কেউ যদি সত্য স্বপ্ন দেখার আশা করে তবে তার উচিৎ সত্য কথা বলার জন্য সদা সচেষ্ট থাকা, হালাল খাওয়া, শরীয়তের হুকুম আহকামগুলো মেনে চলা, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ) যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকা, সম্পূর্ণ পবিত্র অবস্থায় কিবলা মূখী হয়ে শয়ন করা এবং চক্ষু বুজে আসা পর্যন্ত আল্লাহর জিকরে লিপ্ত থাকা। যদি কেউ এমন করে তাহলে কদাচ তার স্বপ্ন অসত্য হতে পারে।

সবচেয়ে সত্য স্বপ্ন হচ্ছে যা সেহরীর সময়ে দেখা যায়, কারন এ সময়ে আল্লাহ্ তা‘আলা নেমে আসেন এবং তাঁর রহমত ও ক্ষমা আমাদের নিকটবর্তী থাকে। আরো ব্যাপার হচ্ছে এ সময়ে শয়তানরাও চুপ থাকে; অন্যদিকে সূর্যাস্তের পরে অন্ধকার নেমে আসলে শয়তানরা ও শয়তানী লোকেরা চারিদিকে ছড়িয়ে পরে। [দ্রষ্টব্যঃ ইবন আল-কায়্যিম, “মাদারিজ আস-সালিকীন” ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫০-৫২]

ইমাম ইবন হাজার আল-আসক্বালানী বলেছেনঃ স্বপ্ন সাধারণত দু’ধরণের হয়ে থাকে।

প্রথম প্রকার হচ্ছে সত্য স্বপ্ন। এগুলো হচ্ছে নবীদের ও তাঁদের অনুসারী নেককার লোকদের স্বপ্ন। অন্যলোকদের ক্ষেত্রেও এগুলো ঘটতে পারে, তবে এটা বিরল, যেমন মিশরের কাফির বাদশার স্বপ্ন যা তার জন্য ইঊসুফ (আঃ) ব্যাখ্যা করেছিলেন। সত্য স্বপ্নগুলো বাস্তব জীবনেও সত্য হয়ে দেখা দেয় যেমন স্বপ্নে দেখা হয়েছে।

দ্বীতিয় প্রকার হল মিশ্র ধরণের মিথ্যা স্বপ্ন, যা কোন ব্যাপারে সতর্ক করে। এ গুলো আবার দু’ধরণের।

এক প্রকার হচ্ছে শয়তানের খেলা যা দিয়ে সে ব্যক্তিকে ভারাক্রান্ত করে তোলে। যেমন সে দেখল যে তার মাথা কেটে ফেলা হয়েছে এবং সে সেই কাটা মাথার অনুসরণ করছে; অথবা সে এমন কোন সঙ্কটে পড়েছে যা থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য কোন সাহায্যকারী সে পাচ্ছেনা।

অন্য প্রকার হল যখন সে দেখে যে ফেরেশতারা তাকে কোন হারাম কাজ করতে বলছে; অথবা এমন সব বিষয় যা সাধারণত অর্থহীন।

যখন কেউ দেখে এমন কিছু যা বাস্তব জীবনে ঘটছে, অথবা তা ঘটার আশা করে এবং সে তা বাস্তবতার মতই স্বপ্নে দেখে। এমনও হয় যে সে দেখে যা সাধারণত তার জীবনে ঘটে অথবা যা তার চিন্তায় থাকে। এ স্বপ্নগুলো সাধারণত বর্তমান ও ভবিষ্যতের কথা বলে, কদাচ অতীত সম্পর্কে। [ফাতহ আল-বারী, দ্বাদশ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৫২-৩৫৪]

আবূসাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) বলেছেনঃ নবী (সঃ) বলেছেন, “তোমাদের কেউ যদি এমন কোন স্বপ্ন দেখে যা সে পসন্দ করে, তাহলে তা আল্লাহ্র পক্ষ থেকে। সুতরাং তার উচিৎ আল্লাহ্র প্রসংশা আদায় করা ও অন্যদেরকে স্বপ্ন সম্পর্কে বলা। কিন্তু সে যদি এমন স্বপ্ন দেখে যা সে অপসন্দ করে তাহলে তা শয়তানের পক্ষ থেকে। সুতরাং তার উচিৎ এর ক্ষতি থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাওয়া এবং কাউকে এ স্বপ্ন সম্পর্কে না বলা। এরূপ করলে তার কোন ক্ষতি হবেনা।” [আল-বুখারী, ৬৫৮৪; মুসলিম ৫৮৬২]

আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) বলেছেনঃ রসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেছেন, “ভাল স্বপ্ন হয়ে থাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে এবং খারাপ স্বপ্ন হয় শয়তানের পক্ষ থেকে। কেউ যদি এমন কিছু দেখে যা সে অপসন্দ করে তাহলে সে যেন তার বাম দিকে তিনবার থুতু ফেলে এবং শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চায়। তাহলে এটা তার কোন ক্ষতি করতে পারবেনা। [আল-বুখারী ৬৫৯৪; মুসলিম ৫৮৬২] থুথু ফেলা বলতে এখানে এমন থুতু ফেলা বুঝানো হয়েছে যাতে মুখ থেকে শুষ্ক বাস্পাকারে বের হওয়া থুতু বুঝানো হয়েছে যাতে মুখের লালা মিশ্রিত থাকেনা।

জাবের (রাঃ) বর্ণনা করেছেনঃ রসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেছেন, “কেউ যদি এমন কিছু দেখে যা সে অপসন্দ করে তাহলে সে যেন তার বাম দিকে তিনবার থুতু ফেলে এবং শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে তিনবার আশ্রয় চায়; যেন পাশ ফিরে শোয়। [মুসলিম ৫৮৬৪]

ইবন হাজার (রঃ) বলেছেনঃ ভাল স্বপ্ন সম্পর্কে সংক্ষেপে যা বলা হয়েছে সে ব্যাপারে আমরা তিনটি বিষয় নির্দেশ করতে পারিঃ

  • ভাল স্বপ্নের জন্য ব্যক্তির আল্লাহর প্রসংশা আদায় করা উচিৎ।
  • স্বপ্ন দ্রষ্টার এ জন্য খুশী হওয়া উচিৎ।
  • সে যাদেরকে ভালবাসে তাদের কাছে তার স্বপ্ন বর্ণনা করা উচিৎ; তাদের কাছে নয় যাদেরকে সে অপসন্দ করে।

ইবন হাজার (রঃ) আরো বলেছেনঃ খারাপ স্বপ্ন সম্পর্কে সংক্ষেপে যা বলা হয়েছে সে ব্যাপারে আমরা চারটি বিষয় নির্দেশ করতে পারিঃ

  • স্বপ্নদ্রষ্টার উচিৎ এর খারাবী থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাওয়া,
  • শয়তানের ক্ষতি থেকে আল্লার আশ্রয় চাওয়া
  • ঘুম থেকে জাগরিত হওয়ার পর নিজের বাম দিকে তিনবার থুতু ফেলা; এবং
  • কারো কাছেই তার এটা বর্ণনা না করা।

আল-বুখারীর বাব আল-ক্বায়দ ফী আল-মানামে পঞ্চম একটা বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে; আর তাহল নামাজ পড়া। বর্ণনাটা নিম্নরূপঃ যদি কেউ কোন অপসন্দনীয় কিছু স্বপনে দেখে সে যেন তা কাউকে না বলে; বরং তার উচিৎ শোয়া থেকে উঠে নামাজ পড়া। ইমাম মুসলিমও তাঁর সহীহ্তে এটাকে মাউসূল হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

মুসলিম ষষ্ঠ বিষয়টি উল্লেখ করেছেন; তা হল পার্শ্ব পরিবর্তন করে শোয়া। উপসংহারে বলা যায় স্বপ্ন দেখলে উপরোক্ত ছয়টি বিষয়ে আমল করা উচিৎ।[দেখুনঃ ফাতহ আল-বারী, দ্বাদশ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৭০]

তিরমিজী্তে আবূ রাজ়ীন থেকে বর্ণনা করা এক হাদীস মতে, স্বপ্ন দ্রষ্টার স্বপ্নের কথা কাউকেই বলা উচিত নয় শুধুমাত্র এমন অন্তরঙ্গ বন্ধুকে ছাড়া যে তাকে অত্যন্ত ভালবাসে এবং যে প্রজ্ঞাবানও। অন্য বর্ণনা মতে স্বপ্নের কথা কাউকেই বলা উচিৎ নয় শুধুমাত্র জ্ঞানী ও প্রিয়জন ছাড়া। অন্য আরেকটি বর্ণনা মতে স্বপ্নের কথা শুধু কোন আলেমকে বা এমন ব্যক্তি যে আন্তরিক সদুপদেশ দিতে পারে তাকে ছাড়া আর কাউকে বলা যাবেনা। কাজী আবূ বকর ইবন আল-আরাবী (রঃ) বলেছেনঃ আলেমের ব্যাপারটা হচ্ছে তিনি তাঁর জ্ঞানের আলোকে সাধ্যমত ভাল ব্যাখ্যা দিতে পারবেন; আর আন্তরিক উপদেশদানকারী হয়তো তাকে এমন কিছু শিখিয়ে দেবেন যা তার জন্য উপকারী প্রমাণিত হবে অথবা কাজটা করতে তাকে সাহায্য করবেন। যিনি প্রজ্ঞাবন তিনি জানবেন কীভাবে স্বপ্নের ব্যাখ্যা করতে হয় এবং স্বপ্নদ্রষ্টাকে শুধু তাই বলবেন যা তার জন্য সাহায্যকারী হবে; নতুবা তিনি চুপ থাকবেন। তার প্রিয় ব্যক্তির অবস্থা হচ্ছে তিনি যদি ভাল কিছু জানেন তাহলে বলবেন; আর যদি না জানেন বা সন্দেহে থাকেন তাহলে তিনি চুপ থাকবেন। [দ্রষ্টব্যঃ ফাতহুল বারী, দ্বাদশ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৬৯]

ইমাম বাগাওয়ী (বাগাভী) তাঁর শারহ্ আস—সুন্নাহতে (১২/২২২) উল্লেখ করেছেনঃ জেনে রেখ যে স্বপ্নের তাবীর বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। স্বপ্ন ব্যাখ্যা করা যায় কুর’আন অথবা সুন্নাহ্র আলোকে, অথবা জনগণের মধ্যে প্রচলিত বাগবিধির আলোকে অথবা বিভিন্ন নাম ও রূপকের মাধ্যমে অথবা বিপরীত কোন বিষয়ের আলোকে।

তিনি নিম্নরূপ উদাহরণ দিয়েছেনঃ

কুর’আনের আলোকে ব্যাখ্যাঃ রশিকে কৃত ওয়াদা বা চুক্তি হিসেবে গ্রহন করা যায়, কারণ আল্লাহ্ বলেছেন, “তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর রজ্জুকে শক্ত করে ধারণ কর।” [আলে ইমরান, ৩/১০৩]

সুন্নাহর আলোকে ব্যাখ্যাঃ দাড় কাক কোন পাপাচারী ব্যক্তির প্রতিনিধিত্ব করা, কারন রসূলুল্লাহ্ (সঃ) তাই বলেছেন।

বাগধারা/বাগবিধির আলোকে ব্যাখ্যাঃ কোন গর্ত খনন করা মানে কোন চক্রান্ত, কারন লোকেরা বলে থাকে, “যে কোন গর্ত খনন করে সে তাতে পতিত হয়।”

নামের আলোকে ব্যাখ্যাঃ কেউ যদি রাশেদ নামে কাউকে দেখে তার মানে হবে বুদ্ধিমত্তা।.

বিপরীত বিষয়ের আলোকে ব্যাখ্যাঃ ভয় দেখা মানে নিরাপত্তা, কারণ আল্লাহ্ বলেছেন (তর্জমা), “তিনি নিশ্চয়ই তাদের ভীতির পরে এর পরিবর্তে দান করবেন নিরাপত্তা।” [আন-নূর, ২৪/৫৫]

অন্যদিকে ইবন সীরীন (সঃ) এর স্বপ্নের তাবীর নামে যে বইটি বাজারে প্রচলিত অনেক গবেষকের মতে এটা আসলে এই মহান আলেম লিখেছেন বলে কোনভাবেই প্রমান করা যায় না।

মানুষের স্বভাব হলো, তারা কোনো স্বপ্ন দেখলে প্রিয়জনের কাছে তা বলে বেড়ায়। আবার অনেকে অন্যদের খুশি করার জন্য বানিয়ে বানিয়ে স্বপ্ন বর্ণনা করে। অথচ রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সবচেয়ে বড় মিথ্যা হলো, কোনো ব্যক্তি নিজেকে তার পিতা ছাড়া অন্যের সন্তান বলে দাবি করা। যে স্বপ্ন সে দেখেনি তা বর্ণনা করা। আর রাসুলুল্লাহ (সা.) যা বলেননি, তা তাঁর সম্পর্কে বলে বেড়ানো। ’ (বুখারি, হাদিস : ৩৫০৯) তাই সবার কাছে স্বপ্নের কথা বলে দেওয়া উচিত নয়। ভালো স্বপ্ন দেখলে করণীয় : যদি কেউ ভালো স্বপ্ন দেখে, তাহলে তিনটি কাজ করবে—

এক. আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করে ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ বলবে।

দুই. এটা অন্যকে সুসংবাদ হিসেবে জানাবে।

তিন. স্বপ্ন এমন ব্যক্তিকে বলবে, যে তাকে ভালোবাসে। আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ এমন স্বপ্ন দেখে, যা তার ভালো লাগে, তাহলে সে বুঝে নেবে, এটা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে। সে এ স্বপ্নের জন্য আল্লাহর প্রশংসা করবে আর অন্যকে এ ব্যাপারে জানাবে। আর যদি এমন স্বপ্ন দেখে, যা সে পছন্দ করে না, তাহলে বুঝে নেবে, এটা শয়তানের পক্ষ থেকে। তখন সে এ স্বপ্নের ক্ষতি থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করবে এবং বাঁদিকে তিনবার থুতু নিক্ষেপ করবে। আর কাউকে এ স্বপ্নের কথা বলবে না। মনে রাখবে, এ স্বপ্ন তার ক্ষতি করতে পারবে না। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬৫৮৩)

খারাপ স্বপ্ন দেখলে করণীয় : যদি কেউ খারাপ স্বপ্ন দেখে, তাহলে ভয়ের কিছু নেই। ভয়ের স্বপ্নে বিচলিত হওয়ার কারণ নেই। কেউ খারাপ স্বপ্ন দেখলে এ কাজগুলো করবে—

এক. এই স্বপ্নের ক্ষতি ও অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করবে এবং তিনবার ‘আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম’ পড়বে। (মুসলিম, হাদিস : ২২৬২)

এ ক্ষেত্রে এই দোয়াও পড়া যায় : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজু বিকা মিন শাররি হাজিহির রুইয়া। ’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে এই স্বপ্নের অনিষ্ট থেকে পরিত্রাণ চাই।

দুই. বাঁদিকে তিনবার থুতু নিক্ষেপ করবে। (মুসলিম, হাদিস : ২২৬১)

তিন. যে কাতে ঘুমিয়ে খারাপ স্বপ্ন দেখেছে, তা পরিবর্তন করে অন্য কাতে শুতে হবে। (মুসলিম, হাদিস : ২২৬২)। অবস্থা বদলে দেওয়ার ইঙ্গিতস্বরূপ এটা করা হয়ে থাকে।

চার. খারাপ স্বপ্ন দেখলে কারো কাছে বলবে না। আর নিজেও এর ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করবে না। (বুখারি, হাদিস : ৬৫৮৩)

পাঁচ. স্বপ্ন দেখার পর ঘুম ভেঙে গেলে উঠে দুই রাকাত নামাজ পড়বে। (মুসলিম, হাদিস : ২২৬৩)

কিছু স্বপ্ন আছে যা অনেক মানুষই তাদের জীবদ্দশায় এক বা একাধিকবার দেখে থাকেন। ব্রিটিশ মনোবিজ্ঞানী ইয়ান ওয়ালেস এরকম সবচেয়ে বেশি দেখা নয়টি স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

আদিম কাল থেকে প্রতিদিনকার জীবনের যে বিষয়টি নিয়ে মানুষ রহস্যে আবৃত হয়েছে, উত্তর খুঁজেছে, তা হলো স্বপ্ন। তবে স্বপ্ন অলৌকিক কিছু নয়। আমরা যে স্বপ্ন দেখি তার বড় একটি অংশই আসে অবচেতন মনের ভাবনা থেকে। সেই সঙ্গে চেতন মনের চিন্তা ও প্রতিদিনকার অভিজ্ঞতাও স্বপ্নের প্লট তৈরিতে ভূমিকা রাখে। কোনো স্বপ্ন একজন মানুষ কেন দেখছে বা এর ব্যাখ্যাই বা কী...এই উত্তর পেতে হলে জানতে হবে সেই মানুষটির মানসিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা। আবার কিছু স্বপ্ন আছে যা অনেক মানুষই তাদের জীবদ্দশায় এক বা একাধিকবার দেখে থাকেন। ব্রিটিশ মনোবিজ্ঞানী ইয়ান ওয়ালেস এরকম সবচেয়ে বেশি দেখা নয়টি স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

১. ধাওয়া খাওয়া

স্বপ্নে কোনো ব্যক্তি বা একদল লোক দ্বারা নিজেকে ধাওয়ার শিকার হতে দেখেছেন কি? অনেকেই এ স্বপ্ন দেখে থাকেন। অনেক সময় ধাওয়া খেয়ে পালানোও যায় না, জড়তা বোধ হয়। বেশ আতঙ্ক লাগে এই স্বপ্ন দেখে।

কেন দেখছেন: আপনি এই স্বপ্ন দেখছেন কারণ আপনার জীবনে কোনো একটি ইস্যু চলছে যেটি আপনি মোকাবেলা করতে চান, কিন্তু কীভাবে করবেন তা বুঝতে পারছেন না।

কী করা উচিত: এই ইস্যুটি অনেক সময় এমন কোনো সুযোগ, যা অর্জনের মাধ্যমে আপনার খুব বড় কোনো উচ্চাশা পূরণ হবে। সেই 'ইস্যু'টি চিহ্নিত করে তা অর্জন করতে লেগে যান, কারণ তা অনেক সময় বেশ চ্যালেঞ্জিংও হতে পারে।

২. দাঁত পড়ে যাওয়া

স্বপ্নে নিজের দাঁত পড়ে যেতে দেখেন অনেকে। দুর্ঘটনার কারণে অথবা কোনো কারণ ছাড়াও এমনি দাঁত পড়ে যেতে দেখতে পারেন স্বপ্নে।

কেন দেখছেন: স্বপ্নে দাঁত আপনার আত্মবিশ্বাস ও ক্ষমতার প্রতীক। কোনো পরিস্তিতির কারণে আপনার আত্মবিশ্বাস কমে যাচ্ছে বা আপনি দুর্বল বোধ করছেন, এজন্যই এ স্বপ্ন দেখছেন।

কী করা উচিত: এই পরিস্থিতি আপনাকে আরও দুর্বল করে ফেলবে এমনটা না ভেবে ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করুন ও সমাধান খোঁজার চেষ্টা করুন। স্বপ্ন আপনাকে ভবিষ্যত দেখাচ্ছে না, বর্তমান পরিস্থিটুকুই প্রতীকীভাবে দেখাচ্ছে।

৩. টয়লেট খুঁজে না পাওয়া

প্রকৃতি খুব ডাকছে কিন্তু সাড়া দেওয়ার জায়গা পাচ্ছেন না। টয়লেট খুঁজে বেড়াচ্ছেন কিন্তু কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছেন না। এমন দেখেছেন কি? এটিকেও অন্যতম বহুল দেখা স্বপ্ন হিসেবে ধরা হয়।

কেন দেখছেন: টয়লেট আমাদের সবচেয়ে প্রাথমিক চাহিদাগুলোর একটি। এই স্বপ্ন দেখার মানে হচ্ছে আপনার খুব দরকারি কোনো চাওয়াটা আপনি প্রকাশ করতে পারছেন না অথবা চেয়েও পাচ্ছেন না।

কী করা উচিত: ইয়ান ওয়ালেস বলছেন, এরকম স্বপ্ন দেখলে অন্যের চাহিদার কথা একটু কম ভেবে নিজের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর দিকেই ভালোভাবে নজর দেওয়া উচিত।

৪. নিজেকে নগ্ন দেখা

স্বপ্নে জীবনে একবারও নিজেকে নগ্ন দেখেনি এমন মানুষ খুব কম পাওয়া যাবে। সাধারণত অনেক লোকের সামনে নিজেকে হঠাৎ নগ্ন হিসেবে আবিষ্কার করা হয়।

কেন দেখছেন: লজ্জা নিবারণ ছাড়াও আমাদের পোশাক পরার অন্যতম কারণ হলো অন্যের সামনে নিজের একটি ভাবমূর্তি তুলে ধরা। স্বপ্নে নগ্ন দেখার কারণ হলো বাস্তব জীবনে আপনি অসহায় বোধ করছেন এবং আপনার ভয় হচ্ছে আপনার কোনো গোপন বা ব্যক্তিগত কিছু সবাই জেনে যাবে এবং আপনার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে।

কী করা উচিত: চিন্তিত না হয়ে কী কারণে আপনি এমন বোধ করছেন এবং কী করলে এর সমাধান হবে, এছাড়া এর ভালো ও মন্দ দিকগুলো কী সেগুলো নিয়ে যৌক্তিকভাবে চিন্তা করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

৫. প্রস্তুতিবিহীন পরীক্ষা

হয়তো পরীক্ষার হলে গিয়েছেন, কিন্তু প্রশ্ন দেখে কিছুই লিখতে পারছেন না। দুশ্চিন্তায়, ভয়ে সব আরও গুলিয়ে যাচ্ছে আপনার। এমন স্বপ্ন দেখেছেন কি? খুবই পরিচিত একটি স্বপ্ন।

কেন দেখছেন: পরীক্ষা হলো এমন এক বিষয় যেখানে আমরা আমাদের সক্ষমতা যাচাই করি, নিজেকে বিচার করি। অতএব এই স্বপ্ন দেখার মানে হচ্ছে বাস্তব জীবনে আপনার কোনো কাজ নিজেই আপনি নিজেই অনেক বিচার করছেন।

কী করা উচিত: আপনি যা করেছেন তা নেতিবাচক নাও হতে পারে, হয়তো তার অনেক ইতিবাচক দিকও আছে। অতএব নিজেকে কাঠগড়ায় দাঁড় না করিয়ে বাস্তবতা মেনে নিন, নিজের প্রজ্ঞার প্রতি আস্থা রাখুন।

৬. উড়তে পারা

স্বপ্নে নিজেকে উড়তে দেখেছেন কখনো? বাস্তব জীবনে মানুষের ওড়ার ক্ষমতা না থাকলেও স্বপ্নের ভেতর উড়তে পারাটা বেশ মজার এক অভিজ্ঞতা।

কেন দেখছেন: আপনাকে চাপে রাখছিল বা নেচে ঠেলে দিচ্ছিল এমন কোনো পরিস্থিতি থেকে আপনি রেহাই পেয়েছেন তার প্রতীকী উপস্থাপনই হলো এই স্বপ্ন।

কী করা উচিত: এই রেহাই পাওয়াটা আপনার ভাগ্য ভালো ছিল, শুধু এমনটা না ভেবে নিজেকেও কিছু ধন্যবাদ দিন আর হাফ ছেড়ে বাঁচা সুন্দর সময়টা উপভোগ করুন!

৭. নিচে পড়ে যাওয়া

অনেক উঁচু থেকে নিচে পড়ে যাচ্ছেন, তখনই হুট করে ঘুম ভেঙে গেল! ঘুম ভেঙে গিয়েও আপনার বুক হয়তো তখনও ধকধক করছে! অতি পরিচিত কিন্তু বিরক্তিকর এক স্বপ্ন।

কেন দেখছেন: এই স্বপ্ন দেখার কারণ হলো আপনি বাস্তব জীবনে এমন কোনো পরিস্থিতে আছেন যেখানে বিষয়গুলো আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে এমন ভয় ক্রমাগত হচ্ছে।

কী করা উচিত: দুশ্চিন্তায় না থেকে নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করুন। মাঝে মাঝে কোনো বিষয় তার মতো করেই এগোতে দেওয়া উচিত, খুব নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা না করে সেটাকে নিজের মতো করেই হতে দিন।

৮. নিয়ন্ত্রণহীন যানবাহন

আপনি গাড়ি অথবা অন্য কোনো যান চালাচ্ছেন কিন্তু সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। পরিচিত স্বপ্নগুলোর মধ্যে এটিকেও ধরা হয়।

কেন দেখছেন: এমন স্বপ্ন যদি দেখে থাকেন তাহলে বুঝতে হবে আপনার কোনো লক্ষ্য পূরণের ক্ষেত্রে বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছেন। সেই লক্ষ্য পূরণে আপনার চেষ্টা আছে ঠিকই, কিন্তু সব কিছু গুছিয়ে উঠতে পারছেন না।

কী করা উচিত: সব কিছু কিছুই আপনার মনের মতো অবস্থায় থাকবে এমনটা ভাবা নিশ্চয়ই ভুল। প্রতিবন্ধকতাগুলোকে স্বাভাবিক ভেবে নিয়ে সেগুলো সামলানোর চেষ্টা করুন।

৯. অব্যবহৃত ঘর দেখা

আপনি স্বপ্নে কোনো পুরনো অথবা অব্যবহৃত শূন্য ঘরে নিজেকে আবিষ্কার করেছেন এমন হয়েছে কখনো? এমনটা দেখা মানেই কিন্তু মন খারাপের মতো কিছু নয়।

কেন দেখছেন: শূন্য ঘরটি আসলে আপনার চরিত্রের অন্য কোনো দিককে নির্দেশ করছে, যেদিক সম্পর্কে আপনি হয়তো আগে জানতেনই না। এটি হতে পারে কোনো অজানা প্রতিভা বা সমস্যা সমাধানের নতুন কোনো পন্থা যা আপনি নজরে আনছেন না।

কী করা উচিত: নিজেকে নিয়ে আরও ভাবুন। নিজেকে যতটা সীমাবদ্ধ ভাবছেন ততটা হয়তো আপনি নন। নিজেকে আরও এক্সপ্লোর করুন, নতুন আইডিয়া নিয়ে ভাবতে থাকুন। আপনি হয়তো নিজের ভেতর এমন কোনো গুণ আবিষ্কার করবেন যা কখনো কল্পনাও করেননি।

মস্তিষ্ক হলো আমাদের দেহের চলিকাশক্তি। তাই তো শরীরের কোথাও কোনো গোলযোগ দেখা দিলে সে খবর মস্তিষ্কে পৌঁছাতে সময় লাগে না। আর খবরটা পাওয়া মাত্র তার প্রভাব পড়ে আমাদের হাতের লেখা থেকে দৈনন্দিন জীবন সম্পর্কিত সব ক্ষেত্রেই। বাদ যায় না স্বপ্নও।

সেই কারণেই তো হাতের লেখার মতো স্বপ্নের বিশ্লেষণ করেও শরীর সম্পর্কিত একাধিক অজানা বিষয় জেনে ফেলা সম্ভব, এমনকি মৃত্যু কখন আসছে সে সম্পর্কেও!

স্বপ্ন আসলে কী? সহজ কথায় স্বপ্ন হলো এক ধরনের গল্প, যা মস্তিষ্কের কোনো এক অজানা কেরামতির কারণে ঘুমানোর সময় আমাদের মনের পর্দায় ফুটে ওঠে। স্বপ্ন যেকোনো ধরনের হতে পারে। হতে পারে আনন্দময় বা দুঃখে ভরা। কিন্তু কেন কেউ স্বপ্ন দেখে, সে সম্পর্কে এখনো পর্যন্ত স্পষ্ট করে কিছু জানা যায়নি। তবে বিশেষজ্ঞরা একটা বিষয়ে একমত হয়েছেন যে স্বপ্নের সঙ্গে আমাদের শরীর এবং বর্তমান অবস্থার একটা গভীর যোগ থাকে, সেই কারণেই তো স্বপ্নের বিষয়বস্তু হয় কখনো আমাদের পূরণ না হওয়া ইচ্ছা, তো কখনো শরীর সম্পর্কিত নানা বিষয়।

এই যেমন এই লেখায় আলোচিত স্বপ্নগুলির কথাই ধরুন না। এমন স্বপ্ন তখনই আসে, যখন শরীর ভেতর থেকে ভাঙতে শুরু করে। তাই এমন কোনো কিছু ঘুমনোর সময় দেখলে সাবধনা হন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করুন।

সাধারণত যে যে স্বপ্নগুলো মৃত্যু দূতের কাজ করে, সেগুলো হলো...

১. বাজছে ড্রাম দ্রিম দ্রিম

চারিদিকে কেউ নেই। শুধু একটা অবছা অবয়ব নিজের মনে কোনো একটা বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে চলেছে। এমন স্বপ্ন কি মাঝে-মধ্যেই দেখেন? তাহলে সাবধান! কারণ স্বপ্ন নিয়ে গবেষণা করা বিশেষজ্ঞদের মতে ঘুমানোর সময় ড্রামের মতো কোনো কিছু বাজাতে দেখা একেবারেই শুভ নয়। এটা হতে পারে শেষ লগ্নের বাদ্যি! তাই সাবধান!

২. খাবার খাচ্ছেন পেট পুরে

এক লোক প্রায়ই ঘুমনোর সময় গুপি গাইন-বাঘা বাইন সিনেমার সেই সিনটা দেখতেন, যেখানে গুপি-বাঘা কবজি ডুবিয়ে খাবার খাচ্ছে। হয়তো বিশ্বাস করবেন না, কিন্তু এমন স্বপ্ন দেখার কয়েক দিনের মধ্যেই সেই মানুষটা মারা গিয়েছিলেন। এমন খাওয়া-দাওয়ার স্বপ্ন দেখা মোটেও ভালো নয়। এমন কিছু দেখার অর্থ হলো মৃত্যু খুব কাছাকাছি চলে এসেছে।

৩. সাদা থান কাপড় পরা

কোনো মেয়ে যদি স্বপ্নে নিজেকে সাদা থান কাপড় পরা অবস্থায় দেখে তাহলে এ কথা মেনে নিতে হবে যে খারাপ কিছু ঘটতে চলেছে তার সঙ্গে। হয়তো এই ধরণের যুক্তি ২১ শতকে ভিত্তহীন মনে হলেও একাধিক প্রাচীন বইয়েও এই বিষয়ের উল্লেখ পাওয়া গেছে যে স্বপ্নের সঙ্গে আমাদের বাস্তব জীবনের একটা যোগ রয়েছে। যেমনটা রয়েছে সচেতন মনের সঙ্গে অবচেতন মনের। তাই তো বিষয়টিকে হালকা ভাবে নেওয়া একেবারেই উচিত নয়।

৪. বেড়াতে যাওয়া মানা

ধরুন আপনি আগামী কাল ভারতে বেড়াতে যাচ্ছেন। এদিকে আজ রাতে আপনার পরিবারের কোনো সদস্য এই বেড়াতে যাওয়া নিয়ে কিছু স্বপ্ন দেখেছেন, তাহলে আপনার ট্রিপ ক্যানসেল করা উচিত। কারণ এমন ধরনের স্বপ্ন দেখার অর্থ হলো মারাত্মক খারাপ কিছু হতে চলা।

৫. কাক বা তেল

যেকোনো ভূতের সিনেমায় দেখবেন কাককে প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কারণ কাক মানেই অশুভ কিছু এমনটা সেই প্রচীন কাল থেকেই মানা হয়ে থাকে। সেই কারণেই স্বপ্ন নিয়ে নাড়াচাড়া করা স্পেশলিস্টদের মতে কাককে নিয়ে কোনো স্বপ্ন দেখা মোটেই ভালো নয়। কারণ কাক মৃত্যুর সমার্থক। একইভাবে স্বপ্নে তেল সম্পর্কিত কিছু দেখলেও ভয়ের বিষয়।

৬. ভাঙা মূর্তি

হ্যারি পটার সিরিজের গবলেট অব ফায়ার সিনেমাটার একটা সিনের কথা মনে পড়ে, যেখানে লর্ড ভল্ডমট প্রথমবার হ্যারির সম্মুখীন হচ্ছে। আর যে জায়গায় এই পুরো ঘটনাটা ঘটছে সেখানে ইতি-উতি ছড়িয়ে রয়েছে একাধিক ভাঙা মূর্তি। এমন ভাঙা মূর্তির স্বপ্ন দেখলে কিন্তু বিপদ! কারণ ঘুমানোর সময় এমন কিছু দেখার অর্থ হলো মৃত্যু আপনার চারপাশে ঘোরাফেরা করছে। এমন পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত সাবধান হয়ে চলতে হবে। না হলে কিন্তু...!

স্বপ্ন কখনও প্রতীকের মাধ্যমে বা কখনও সরাসরি ভবিষ্যৎ জীবনের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরে। এখানে ৭টি পরীক্ষিত স্বপ্ন উল্লেখ করা হল, যারা এই স্বপ্নগুলি দর্শন করে থাকলে ভবিষ্যৎ প্রচুর অর্থের মালিক হবেন।

১) কেউ যদি শস্যদানার স্বপ্ন দেখে থাকেন:

স্বপ্নে কেউ যদি ফসল কাটার পর প্রচুর শস্যদানা তার চার পাশে ছড়িয়ে রয়েছে এমন স্বপ্ন যদি ঘুমের মধ্যে দর্শন করে থাকলে, তা হলে বলা চলে অনেক কষ্টের পর বা পরিশ্রমের পর তিনি অনেক অর্থের মালিক হতে চলেছেন।

২) স্বপ্নে কেউ যদি মাংসের টুকরো দর্শন করেন:

স্বপ্নে কেউ যদি থালায় রান্না করা একটি মাংসের টুকরো দর্শন করে থাকেন, তার অর্থ বর্তমানে তিনি যে পরিমাণ অর্থের মালিক, খুব শীঘ্রই তা বেড়ে হবে দ্বিগুণ বা তিন গুণ। তবে মনে রাখতে হবে, যদি কেউ এক টুকরো কাঁচা মাংসের স্বপ্ন দেখেন তার ফল হবে অশুভ ও বিপরীত।

৩) স্বপ্নে কেউ যদি প্রচুর মুদ্রা বা কয়েন বা নতুন টাকার বান্ডিল দর্শন করেন:

এই রকম স্বপ্ন যদি কেউ দেখেন, যে দিকে তাকানো যাক না কেন শুধু টাকার বান্ডিল আর বান্ডিল, এমন স্বপ্ন দেখার অর্থ তিনি বেশ সৌভাগ্যবান। এই স্বপ্ন আশাব্যঞ্জক অবস্থার কথা ঘোষণা করে। শীঘ্রই তিনি জাগতিক দিক থেকে প্রচুর অর্থের মালিক হতে চলেছেন, শুধু অর্থ নয় তার সঙ্গে সমস্ত ভোগের সামগ্রীর মালিক হতে চলেছেন।

৪) স্বপ্নে কেউ যদি ৮ (আট) সংখ্যার স্বপ্ন দেখে থাকেন:

৮ সংখ্যার স্বপ্ন মানে নিকট ভবিষ্যতে তিনি ভাবতে পারেননি এমন পরিমাণ অর্থের মালিক হতে চলেছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে যাঁরা এই স্বপ্ন দেখে থাকেন এবং দেখার পরে অর্থের মালিক হন, তাঁদের প্রথম জীবন খুব অর্থকষ্টের মধ্য দিয়ে কেটে থাকে।

৫) কেউ যদি সোনা বা সোনার তৈরি কিছু, বা সোনার গয়নার স্বপ্ন দেখে:

স্বপ্নে সোনা বা সোনার তৈরি যা কিছুর স্বপ্ন সব সময়েই শুভ। এই স্বপ্নের অর্থ বর্তমান অবস্থা থেকে আরও ভাল অবস্থায় উত্তরণ, ব্যবসায়ে অতি নিকট ভবিষ্যতে প্রচুর অর্থ তার হাতে লাভ হিসেবে আসতে চলেছে। বা অন্য কোনও ভাবে তার কাছে অর্থ বা সম্পদ আসতে চলেছে।

স্বপ্নে যদি কেউ দেখে থেকে তাকে কেউ সোনার তৈরি কিছু উপহার দিচ্ছে, এর মানে অচিরেই তার পদোন্নতি হতে চলেছে।

৬) স্বপ্নে কেউ যদি দেখে থাকে ক্ষীরসমুদ্রে সাঁতার কাটছে বা এমন দেশে গিয়েছে যেখানে চারিদিকে শুধু দুধ আর মধু:

এই জাতীয় স্বপ্ন পৃথিবীর সব দেশেই মানুষ দেখে থাকে খুব প্রাচীন কাল থেকে। এই জাতীয় স্বপ্নের ফল সব সময় খুব শুভ হয়ে থাকে। যারা এই স্বপ্ন দেখে তারা সব সময় আর্থিক স্বচ্ছলতার মধ্যে দিনযাপন করে, তাদের কাছে অর্থের প্রাচুর্য কোনও সময় কমে না, বরং যাতেই হাত দিয়ে থাকে তাতেই সোনা ফলে। এরা চাকরি ও ব্যবসা যা-ই করুক না কেন খুব সহজ ভাবেই অর্থ রোজগার করে থাকে। এরা যত দিন বেঁচে থাকে, কখনওই এদের মনে হয় না অর্থ রোজগার কমে যাবে।

৭) স্বপ্নে কেউ যদি ছোঁ মারতে চলেছে এমন ঈগলকে দেখে থাকে:

এই স্বপ্নের অর্থ, প্রচুর পরিশ্রমের সাফল্যপ্রাপ্তি। অনেক কষ্ট করে কোনও ব্যবসা দাঁড় করানো, তার থেকে মুনাফা অর্জন, টাকাকড়ি জমানো, বাড়ি বা গাড়ির মালিক হওয়া।

চিনা জ্যোতিষমতে স্বপ্নে নিজেকে বা কাউকে নগ্ন দেখলে কী ফল পাওয়া যায়

(১) স্বপ্নে যদি দেখেন অন্যেরা আপনাকে উলঙ্গ অবস্থায় দেখছে, এর অর্থ আপনি অল্প দিনের মধ্যে অর্থ কষ্টে পড়বেন।

(২) স্বপ্নে আপনি যদি নিজেকে উলঙ্গ অবস্থায় দেখে থাকেন, এর মানে খুব শীঘ্রই আপনার স্বাস্থ্য খারাপ হতে চলেছে। এর জন্য আপনাকে আগে থেকে স্বাস্থ্য সম্বন্ধে সচেতন হতে বলা হচ্ছে ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলা হচ্ছে।

(৩) একজন ব্যবসায়ী যদি স্বপ্নে নিজেকে উলঙ্গ অবস্থায় দেখে থাকেন, এতে বোঝায় অল্প দিনের মধ্যে ব্যবসায় ভাল রকম সাফল্য আসবে এবং ভবিষ্যতে তিনি প্রচুর অর্থের মালিক হবেন।

(৪) স্বপ্নে কোনও অসুস্থ ব্যক্তি যদি নিজেকে উলঙ্গ অবস্থায় দেখেন, তবে তাঁর অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে বলে মনে করা হয়।

(৫) স্বপ্নে কেউ যদি বিপরীত লিঙ্গের ব্যক্তিকে উলঙ্গ অবস্থায় দেখে লজ্জা অনুভব করেন, তবে খুব শীঘ্রই সেই ব্যাক্তি সামাজিক ক্ষেত্রে অসুবিধাজনক অবস্থার মধ্যে পড়বেন।

(৬) স্বপ্নে কেউ যদি তাঁর স্ত্রী বা বান্ধবীকে উলঙ্গ অবস্থায় দেখেন, এতে বোঝায় তাঁদের মধ্যে বর্তমানে যে সম্পর্ক আছে তা খারাপের দিকে যাবে।

(৭) কোনও পুরুষ স্বপ্নে যদি কোনও মহিলাকে উলঙ্গ অবস্থায় দেখেন, তা হলে তাঁর আর্থিক অবস্থা ও সৌভাগ্য আসতে চলেছে।

(৮) কোনও মহিলা যদি স্বপ্নে কোনও পুরুষকে উলঙ্গ অবস্থায় দেখেন, এতে বোঝায় খুব শীঘ্রই সেই মহিলা কোনও ব্যাপারে দুশ্চিন্তা বা শোকের মধ্যে পড়বে।

(৯) কোনও মহিলা স্বপ্নে তার স্বামীকে উলঙ্গ অবস্থায় দেখলে ধরে নিতে হবে, স্বামীর সঙ্গে কিছু দিনের মধ্যেই অশান্তির সৃষ্টি হবে।

(১০) কোনও মহিলা স্বপ্নে যদি নিজেকে উলঙ্গ অবস্থায় দেখে আনন্দ পেয়ে থাকেন, এর অর্থ খুব শীঘ্রই তাঁর কিছু সমস্যা আসতে পারে। নানা ভাবে আর্থিক ক্ষতি এবং সামাজিক ভাবে অপমানিতও হতে পারেন।

স্বপ্ন মিলে যাওয়ার ঘটনা সব সত্যি নয়

কটা জিনিস লক্ষ্য করলাম, আমার মা প্রায়ই স্বপ্ন দেখে এর ফল বলে দেয় এবং এর ফলাফল অনেক ক্ষেত্রে মিলে যায়।

যেমন- আমার মা বলে মানুষের সামনের ভাল দাঁত পড়লে ঘরের অল্প বয়সের মানুষ মারা যায়, সাপে আক্রমণ করতে দেখলে সামনে কোনো বিপদ আছে এটা বলেন এবং অনেক ক্ষেত্রে সত্যও হয়।

এর কি ব্যাখ্যা আছে ? অবশ্যই আছে। তবে বৈজ্ঞানিক ভিত্তি না বলে, বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা শব্দটি বলাই বেশি উপযোগী।

স্বপ্নের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা- ফিলোসফিক্যাল, সাইকোলজিক্যাল, নিউরোলজিক্যাল, ধর্মীয়, এমন কি স্বপ্ন নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক ও প্রকৃতিগত ব্যাখ্যাও পাওয়া যায়। যেসবের অনেকগুলোই আবার অনেকাংশে গ্রহণযোগ্য। তবে, আমাদের কাছে অর্থাৎ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে যে ব্যাখ্যা বা দিকটি বেশি দরকারি সে সম্পর্কে কিছু কথা উল্লেখ করছি।

মানুষ যখন ঘুমায় তখন প্রত্যেকটি মানুষকে দুই ধরনের ঘুমের ভেতর দিয়ে পুরো সময়টিকে পার করতে হয়। একটাকে বলে, ‘রেম স্লিপ’ অন্যটি হলো ‘ননরেম স্লিপ’। দুই ধরনের ঘুমেরই আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট, আলাদা আলাদা চরিত্র আছে। সময়, ঘুমের গভীরতা, শরীরের প্রতিক্রিয়া, মস্তিষ্কের কাজ, ঘুম থেকে সজাগ হবার প্রবণতা, স্বপ্ন দেখা এমন কি ঘুম ভাঙার পর কেমন অনুভূতি হবে সেসবও নির্ভর করে দুই ধরনের ঘুমের চরিত্রের উপর।

ননরেম স্লিপের আরেক নাম ডিপ স্লিপ বা গভীর ঘুম। ননরেম স্লিপ দিয়ে ঘুম শুরু হলেও, রাত যত বাড়ে ননরেম স্লিপ কমতে থাকে এবং রেম স্লিপ ততই বাড়তে থাকে। রেম স্লিপেই মানুষ স্বপ্ন দেখে এবং ঘুম থেকে জেগে ওঠার পর তা মনে করতে পারে।

উপরের এই কথাগুলো হলো একজন সাধারণ এবং সুস্থ মানুষের কথা। কিন্তু ডিপ্রেশন বা যারা অতিরিক্ত এনজাইটিতে ভোগেন তাদের রাতের শুরু থেকেই রেম স্লিপ বেশি হতে থাকে। তারা সারা রাতই বিভিন্ন ধরনের স্বপ্ন দেখে। ভোর বেলা ঘুম থেকেই উঠলে টায়ার্ড ফিল করেন। কারণ স্বপ্নের সাথে সাথে ব্রেইনও কাজ করতে থাকে, ফলে ঘুমের মাধ্যমে যে পূর্ণ রেস্ট হবার কথা সেটা হয় না।

অন্যদিকে ডিপ্রেশনে মানুষ সাধারণত দুঃস্বপ্নই বেশি দেখে। কেনো দুঃস্বপ্ন দেখে? এ নিয়ে তেমন কোনো সঠিক ও প্রমাণিত ব্যাখ্যা জানা নাই। তবে বলা হয়, মানুষ অবচেতন মনে যা ভাবে, যেভাবে ভাবে, তারই প্রতিফলন স্বপ্ন।

আর স্বপ্নের সাথে মিলে যাওয়ার ঘটনার ব্যাখ্যা খুব বেশি সত্যি নয়। যা হয় তা হলো কাকতালীয়। অবচেতন মন ঘটনাটিকে মিলাতে চায়। মানুষ যখন মানসিক ভাবে বিষণ্ন থাকে তখন সব কিছুকেই মেলাতে চায়। আর বিষণ্ন অবস্থায় ঘটে যাওয়া সেই ঘটনাকেই মানুষ মনে রাখতে চায়। অপর দিকে যখন মুড ভালো থাকে তখন মানুষ অনেক বিষয়কে সহজেই ইগনোর করতে বা এড়িয়ে পারে।

স্বপ্নের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নিয়ে কাজ করার বিষয়টিকে বলা হয় অনাইরোলজি (oneirology)। আরো বেশি জানতে আপনি ইন্টারনেট এর সাহায্য নিতে পারেন।

পুরোনো প্রেমিক অথবা প্রেমিকাকে স্বপ্ন দেখা নতুন কিছু নয়। আবার এর মানে এই নয়- আপনার অবচেতন মন তাকে পুনরায় কাছে পেতে চাইছে! অথবা আপনি বর্তমান সঙ্গীর ওপর অসন্তুষ্ট।

আপনি যেকোনো বিষয়েই স্বপ্ন দেখতে পারেন। কিন্তু স্বপ্ন যদি অতীত সামনে নিয়ে আসে, তবে ভাবনার বটে! তখন কিছু প্রশ্ন সামনে চলে আসতে পরে। যেমন হঠাৎ তাকে কেন এতদিন পর স্বপ্নে দেখলেন? এই স্বপ্ন কী ইঙ্গিত দিচ্ছে? চলুন কারণগুলো জেনে নেই।

সম্পর্ক ভেঙে যাক, এটি কাম্য নয়। তবু সম্পর্ক ভেঙে যায়। প্রিয় মানুষকে হারিয়ে আমরা মানসিক যন্ত্রণায় ভুগি। কখনো কখনো এই শোক ঘুমের মধ্যে এসে ধরা দেয়। তখন আমরা তাকে স্বপ্নে দেখি। এর একমাত্র কারণ হতে পারে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার শোক।

আমাদের অসতর্ক মন সবসময় কিছু বিষয়ের মধ্যে ঘুরপাক খায়। হতে পারে ছোটবেলার কোনো ঘটনা। হতে পারে পুরোনো সম্পর্ক বা জীবনের এমন কোনো ঘটনা যা আপনাকে যথেষ্ট ভুগিয়েছে। জটিলতা তৈরি করেছে। অতীতের অনেক ঘটনা বর্তমান জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ মনে করুন, প্রথম প্রেমিক বা প্রেমিকা আপনার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। বর্তমানে আপনি আরেকটি সম্পর্কে আছেন। হঠাৎ স্বপ্নে দেখলেন, আপনি বর্তমান প্রেমিক বা প্রেমিকার সঙ্গে প্রতারণা করছেন। এমন স্বপ্নের সঠিক ব্যাখ্যা না থাকলেও বিশেষজ্ঞদের ধারণা মতে, আগে আপনি প্রতারিত হয়েছেন বলেই এখন এমন স্বপ্ন দেখছেন। আপনার অবচেতন মন প্রতিশোধ নিতে চাইছে।

সম্পর্ক ভেঙে গেলে দুটি মানুষের মাঝে যেমন দূরত্ব বাড়ে, তেমনি ভুলগুলো চিহ্নিত করে দেয়। এরপর এক সময় আপনার মনে হবে, ব্রেকআপ অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবুও একা থাকার মাঝেই কখনো কখনো আপনি প্রাক্তনকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে পারেন। এই স্বপ্ন দেখা থেকে শিক্ষা নিতে পারেন, যা আপনাকে নতুন সম্পর্কে জড়াতে সাহায্য করবে।

স্বপ্নে দেখা মানুষ, স্থান ও বিষয়বস্তু অনেকটাই প্রতীকী। এর সঙ্গে বাস্তবের মিল খুব কম পাওয়া যায়। আপনার স্বপ্ন প্রতীকীও হতে পারে, যা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কোনো সময় বা কোনো কিছু উপস্থাপন করছে। আপনি নিজেকে প্রশ্ন করতে পারেন- স্বপ্নে আপনার পুরোনো প্রেমিক কোন অনুভূতি বা স্মৃতির কথা বলছে? এর জবাব খুঁজুন।

এমন হতে পারে, ভেঙে যাওয়া সম্পর্কের কারণে মানসিক শান্তি অনুভব করছেন না। আপনি হয়তো সম্পর্ক ভেঙে যাক তা চাননি। কিন্তু সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার মতো ঘটনাগুলো হঠাৎ করেই ঘটে। এই পরিস্থিতিতে আপনার মনের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। আপনি ভিন্ন কিছু বলতে বা করতে চাইতে পারেন। সম্ভবত আপনি এমন কিছু করতে পারেন যা তার কাছে বিরক্তির কারণ ছিল। এমন অবস্থায় অশান্তির অবসান ঘটানোর পথপ্রদর্শক হতে পারে স্বপ্ন। পুরোনো প্রেমিককে স্বপ্নে দেখায় আপনি সমাধানের পথ পেয়ে যেতে পারেন। হয়তো এ কারণেই আপনাকে দেখা দিচ্ছে।

হতে পারে আপনি বর্তমান সম্পর্কে খুশি। কিন্তু আপনি সম্পর্কে মন থেকে ভিন্ন কিছু চাইছেন। এমন অপূর্ণ কোনো চাহিদা পুরোনো প্রেমিক বা প্রেমিকাকে স্বপ্নে দেখার মাধ্যমে আপনার সামনে আসতে পারে। এই চাহিদার কথা সঙ্গীকে বলতে গিয়ে ভুলেও স্বপ্নের কথা বলবেন না।

একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, এমন অনেকেই তাদের প্রাক্তনকে স্বপ্নে দেখেছেন যারা ইমোশন নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। এমনও হতে পারে, আপনি তাকে ফিরে পেতে চাইছেন। এমন অবস্থায় আপনি তাকে স্বপ্নে দেখলেন। যদি এমন ঘটে তবে কিছু বিষয়ে আত্ম-অনুসন্ধান করতে হবে। জানতে হবে, কেন সম্পর্ক ছিন্ন হলো? আপনাদের মধ্যে সমস্যার কারণ কী ছিল?

স্বপ্নগুলোর অর্থ বুঝবেন যেভাবে

অবচেতন মন স্বপ্নের মাধ্যমে আমাদের পুনরায় জাগিয়ে তোলে। স্বপ্নে মূলত অতীতের কোনো ঘটনার কিছু তথ্য সামনে এনে দেয়, যে জটিলতা থেকে আপনি বের হয়ে আসতে চান। স্বপ্ন আপনাকে অনেক কিছুর ইঙ্গিত দিয়ে যায়। ঠিকমত বিশ্লেষণ না করলে আপনি হয়তো মূল বিষয়টি বুঝতেই পারবেন না। তাই স্বপ্ন দেখার পর নিজেকে কিছু প্রশ্ন করার মাধ্যমে আপনি স্বপ্নের অর্থ বুঝতে পারবেন। যেমন-

* স্বপ্নে আপনি কী অনুভব করেছেন?

* এই অনুভূতি কী নতুন, নাকি পুরোনো? যদি পুরোনো হয়, কখন আপনি প্রথমবার এই অনুভূতি পেয়েছেন?

* যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছেন সেই ব্যক্তি, স্থান অথবা ঘটনা কি আপনার অতীত উপস্থাপন করছে?

* যদি কোনো সংখ্যা স্বপ্নে দেখে থাকেন, তবে মনে করার চেষ্টা করুন এই সংখ্যা কিসের সঙ্গে সম্পর্কিত।

স্বপ্ন যদি আপনার মন জাগিয়ে তোলে তবে আপনাকে অবশ্যই এর ফলে সামনে আসা ঘটনা, থিম, অনুভূতি এবং ইস্যু বিবেচনায় নিতে হবে। যা আপনার চলার পথে সহায়ক হতে পারে।

আমাদের স্বপ্নের ভিতরে কি বোবায় ধরে?

আমরা অনেক সময় স্বপ্নের ভিতরে অনুভব করি, কি যেন একটা ভারী কিছু চাপ দিয়ে আছে, এমন ভারী যে তিনি নিশ্বাস নিতে পারা যায়না। এমনকি পাশে কেউ থাকলে তাকেও ডাকতে পারা যায়না। স্বপ্ন ভেঙে যায় এবং ঘুম থেকে উঠেই স্বপ্নটা বাস্তবেই ঘটতে থাকে। মনে হয় যে আমার কোন শক্তি নেই'। প্রায় রাতেই গভীর ঘুম থেকে জেগে ওঠতে হয়। নিজের হাত পা নাড়ানোর মতো, মুখে আওয়াজ করার মতো শক্তিটাও পাওয়া যায়না। অনেক চেষ্টা করলে গোঙানির মতো শব্দ হয়।"

"মনে হয় যেন এই বোধহয় দম আটকে মারা যাব। মাত্র কয়েক সেকেন্ড এই অবস্থাটা থাকে। কিন্তু তাতেই মনে হয় ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। এতো ভয়ংকর, ওই সময়টা। যার না হয় সে কখনোই বুঝবেনা। এমন অভিজ্ঞতার কথা আমাদের আশেপাশে আরও অনেকের কাছ থেকে শোনা যায়। যাকে অনেকে "বোবায় ধরা" বলে থাকেন।

বোবায় ধরা কী?

চিকিৎসাশাস্ত্রের ভাষায় এই সমস্যাকে বলা হয় স্লিপ প্যারালাইসিস, বা ঘুমের মধ্যে পক্ষাঘাত। স্লিপ প্যারালাইসিস হলে একজন ব্যক্তি কিছু সময়ের জন্য কথা বলা বা নাড়াচাড়া করার শক্তি হারিয়ে ফেলেন।

এটি সাধারণত কয়েক সেকেন্ড থেকে এক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। তবে ওই সময়টায় রোগী ভীষণ ঘাবড়ে যান, ভয় পেয়ে যান। বোবায় ধরা বা স্লিপ প্যারালাইসিস হল গভীর ঘুম ও জাগরণের মাঝামাঝি একটি স্নায়ুজনিত সমস্যা। ঘুমের ওই পর্যায়টিকে বলা হয় র্যাপিড আই মুভমেন্ট-রেম। রেম হল ঘুমের এমন একটি পর্যায় যখন মস্তিষ্ক খুব সক্রিয় থাকে এবং এই পর্যায়ে মানুষ স্বপ্ন দেখে থাকে।

কিন্তু সে সময় শরীরের আর কোন পেশী কোন কাজ করেনা। এ কারণে এসময় মস্তিষ্ক সচল থাকলেও শরীরকে অসাড় মনে হয়।

বোবায় ধরা কাদের হয়, কেন হয়?

স্লিপ প্যারালাইসিস হওয়ার নির্দিষ্ট কোন বয়স নেই। এই পরিস্থিতি যে কারও সঙ্গে যেকোনো বয়সে হতে পারে। তবে ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা বা এনএইএস-এর তথ্য মতে তরুণ-তরুণী এবং কিশোর বয়সীরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন।

স্লিপ প্যারালাইসিস হওয়ার পেছনে কিছু কারণকে চিহ্নিত করেছে তারা।

১। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব বা ছেড়ে ছেড়ে ঘুম হওয়া। অসময়ে ঘুমানো। অনেক সময় কাজের সময় নির্দিষ্ট না হলে, অথবা দূরে কোথাও ভ্রমনে গেলে এমন ঘুমের সমস্যা হতে পারে।

২। মাদকাসক্ত হলে অথবা নিয়মিত ধূমপান ও মদপান করলে।

৩। পরিবারে কারও স্লিপ প্যারালাইসিস হয়ে থাকলে।

৪। সোশ্যাল অ্যাঙ্কজাইটি বা প্যানিক ডিসঅর্ডার বা বাইপোলার ডিজঅর্ডারের মতো মানসিক সমস্যা থাকলে।

বোবায় ধরার লক্ষণ:

১. বড় করে নিশ্বাস নিতে অনেক কষ্ট হয়। মনে হবে যেন বুকের মধ্যে কিছু চাপ দিয়ে আছে। দম বেরোচ্ছেনা।

২. অনেকের চোখ খুলতে এমনকি চোখ নাড়াচাড়া করতেও সমস্যা হয়।

৩. অনেকের মনে হয় যে কোন ব্যক্তি বা বস্তু তাদের আশেপাশে আছে, যারা তার বড় ধরণের ক্ষতি করতে চায়।

৪. ভীষণ ভয় হয়। শরীর ঘেমে যায়।

৫. হৃৎস্পন্দন ও শ্বাস প্রশ্বাসের গতি বেড়ে যায়। অনেকের রক্তচাপও বাড়তে পারে।

৬. পুরো বিষয়টা কয়েক সেকেন্ড থেকে এক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। প্রভাবটি কেটে গেলে আগের মতো কথা বলা বা নড়াচড়া করায় কোন সমস্যা থাকেনা। তারপরও অনেকে অস্থির বোধ করেন এবং পুনরায় ঘুমাতে যেতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন।

এর চিকিৎসা:

স্লিপ প্যারালাইসিস আসলে গুরুতর কোনও রোগ নয়। মাঝে মাঝে নিজে থেকেই ভাল হয়ে যায়। মনকে চাপমুক্ত রাখার পাশাপাশি ঘুমানোর অভ্যাসে ও পরিবেশে ইতিবাচক পরিবর্তন আনলে অনেক ক্ষেত্রেই এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।

এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা সাধারণ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন:

১। রাতে অন্তত ৬ ঘণ্টা থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করা। এবং সেই ঘুম যেন গভীর হয়।

২। প্রতিদিন রাতে একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং সকালে একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে জেগে ওঠার অভ্যাস করা। এমনকি ছুটির দিনগুলোতেও।

৩। ঘুমের জন্য শোবার ঘরটিতে আরামদায়ক পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করতে হবে। যেন সেই ঘরে কোলাহল না থাকে, ঘরটি অন্ধকার থাকে এবং তাপমাত্রা সহনীয় মাত্রায় থাকে, খুব বেশি না আবার কমও না। সম্ভব হলে ঘরে ল্যাভেন্ডারের সুগন্ধি ছিটিয়ে দেয়া যেতে পারে।

৪। ঘুমাতে যাওয়ার আগ মুহূর্তে ভারী খাবার সেইসঙ্গে ধূমপান, মদ পান এবং ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় যেমন চা-কফি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

৫। ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত চার ঘণ্টা আগে ব্যায়াম করার চেষ্টা করা।

৬। ঘুমের সময় হাতের কাছে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ অর্থাৎ ঘুমের বাঁধা হতে পারে এমন কোন বস্তু রাখা যাবেনা।

৭। দিনের বেলা দীর্ঘ সময় ঘুম থেকে বিরত থাকতে হবে।

৮. স্লিপ প্যারালাইসিস হলে নিজের মনকে প্রবোধ দিতে হবে যে ভয়ের কিছু নেই, এই পরিস্থিতি সাময়িক, কিছুক্ষণ পর এমনই সব ঠিক হয়ে যাবে। এই সময়ে শরীর নাড়াচাড়া করার চেষ্টা থেকে বিরত থাকতে হবে।

কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে:

এসব নিয়ম মেনে চলার পরও যদি কারও বাড়াবাড়ি রকমের স্লিপ প্যারালাইসিস হয় অর্থাৎ আপনার ঘুমে নিয়মিতভাবে ব্যাঘাত ঘটে তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। কেননা স্লিপ প্যারালাইসিস ঘন ঘন হলে উদ্বিগ্নতার কারণে রক্তচাপ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে বা কমে যায়, যা বড় ধরণের স্বাস্থ্য-ঝুঁকির সৃষ্টি করতে পারে। চিকিৎসক রোগীর সার্বিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকেন। অনেক সময় তারা কম থেকে বেশি মাত্রার অ্যান্টি ডিপ্রেসেন্ট ওষুধ প্রেসক্রাইব করেন।

চিকিৎসা পদ্ধতি:

নিউরোলজিস্ট বা স্নায়ু বিশেষজ্ঞরা মূলত ব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে তারা ইলেক্ট্রোমায়োগ্রাম-ইএমজি পরীক্ষা করে থাকেন। এখানে মূলত মাংসপেশির ইলেকট্রিকাল অ্যাকটিভিটির মাত্রা পরীক্ষা করা হয়। যেটা কিনা স্লিপ প্যারালাইসিসের সময় অনেক কমে যায়। রাতে ঘুম না হওয়ার কারণে স্লিপ প্যারালাইসিসে আক্রান্তদের অনেকেরই দিনের বেলায় ঘুম ঘুম ভাব হয়। সেসময় চিকিৎসকরা রোগীর এই দিনের বেলার ঘুম পরীক্ষা করে থাকেন। যাকে বলা হয় ডে-টাইম ন্যাপ স্টাডি এবং এর পরীক্ষাটিকে বলা হয় মাল্টিপল স্লিপ ল্যাটেন্সি টেস্ট। স্লিপ প্যারালাইসিসের সময় মস্তিষ্ক জেগে উঠলেও শরীর তখনও শিথিল থাকে। এর কারণ হিসেবে কানাডার দুই গবেষক জানিয়েছেন যে মস্তিষ্কে দুই ধরণের রাসায়নিক বা অ্যামাইনো অ্যাসিডের নি:সরণের কারণে মাংসপেশি অসাড় হয়ে পড়ে।রাসায়নিক দুটি হল, গ্লাইসিন এবং গামা অ্যামাইনোবিউটিরিক অ্যাসিড-গ্যাবা।

টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞানী প্যাট্রিসিয়া এল ব্রুকস এবং জন এইচ পিভার, পিএইচডি একাধিক পরীক্ষার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন যে নিউরোট্রান্সমিটার গ্যাবা এবং গ্লাইসিন মস্তিষ্কে পেশী সক্রিয় রাখার কোষগুলোকে "সুইচ অফ" করে দেয়।

মানুষ স্বপ্নের ভিতর কিংবা ঘুমের মধ্যে হাটে কেন ?

আমি প্রথম ইন্ডিয়ান একটা সিনেমায় অনুপম খের কে ঘুমের মধ্যে হাঁটতে দেখে ভেবেছিলাম এইটা শুধু সিনেমাতে ফান করার জন্য চিত্রায়িত করা হয়েছে। পরবর্তীতে নানা অনুসন্ধান চালিয়ে ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছিলাম। আপনারাও

অনেকেই টিভির পর্দায় দেখে থাকবেন যে ঘুমের মাঝে ও মানুষ হাটে ,ব্যাপারটা মজার মনে হলে ও এটা কিন্তু মজার না বাস্তব জীবনে কারন বাস্তব জীবনে ঘুমের মধ্যে কেউ হেটে থাকলে তিনিই বুঝবেন প্রতিনিয়ত কত সমস্যায় পড়তে হয়, কারন ঘুমের মধ্যে উনি কি করছেন না করছেন তা উনি না জানলে ও অন্যরা ঠিকই এর কবলে পড়ছে।

এটি এক ধরনের প্যারাসোমনিয়া। ঘুমের মধ্যে হাটাকে সোমনমবুলিজম’ বা নকচামবুলিজম বলা হয়।

স্লিপওয়াকিং কিন্তু কোনো অসুখ নয়। বরং মানুষের অবচেতন মনের কাজ। অধিকাংশ স্লিপওয়াকারই কিন্তু ঘুম ভাঙার পর আর মনে করতে পারে না, ঘুমের মধ্যে সে আসলে কী কী করেছিল। যদিও-বা মনে থাকে, খুবই আবছা। তবে একে অসুখ না বললেও, সমস্যা তো বলতেই হয়। ঘুমের মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে কে কী করে বসে, তার কি ঠিক আছে!

কীভাবে হয় স্লিপওয়াকিং

ঘুমের স্তর মূলত ৪টি। প্রথম তিনটি স্তরকে আলাদা কোনো নামে ডাকা হয় না; বলা হয় প্রথম স্তর, দ্বিতীয় স্তর ও তৃতীয় স্তর। তবে চতুর্থ স্তরটিকে আলাদা নামে ডাকা হয়-- রেপিড আই মুভমেন্ট। ঘুমের এই স্তরে আসলে ঘুমের মধ্যেই মানুষের চোখ নড়াচড়া করতে থাকে।

এই চতুর্থ স্তরের আলাদা করে নাম দেওয়ার কারণ, ঘুমের এই স্তরটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এই স্তরে এসেই মানুষ স্বপ্ন দেখে। এই স্তরে কাউকে ঘুম থেকে জাগানোটাও খুব কঠিন। যদি কারও ঘুম ভেঙেই যায়, তাহলে সে কেমন একটা ঘোরের মধ্যে থাকে। তখন সে কী করছে, তা একদমই খেয়াল থাকে না।

স্লিপওয়াকিংয়ের ঘটনাও ঘটে এই স্তরে। ছোটদের ক্ষেত্রে সাধারণত ঘুমানোর এক থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যেই আরইএম বা রেপিড আই মুভমেন্ট শুরু হয়। আর তা কয়েক সেকেন্ড থেকে দু-এক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। অবশ্য ঘুমের মধ্যে আরইএম শুধু একবারই হয় না, বেশ কয়েকবার হয়ে থাকে।

কাদের হয়, কেন হয়

বড়দের তুলনায় ঘুমের মধ্যে হাঁটাহাঁটি ছোটরাই বেশি করে। বিশেষ করে কৈশোর পেরুবার সময় অনেকেরই স্লিপওয়াকিংয়ের সমস্যা দেখা যায়। তবে বাবা-মায়ের কারও যদি কখনও স্লিপওয়াকিংয়ের সমস্যা হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে সন্তানের স্লিপওয়াকিংয়ের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, বাবা অথবা মা যে কোনো একজন স্লিপওয়াকার হলে, ৪৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই তাদের বাচ্চারা স্লিপওয়াকার হয়। আর দুজনই হলে, সন্তানের স্লিপওয়াকার হওয়ার সম্ভাবনা ৬০ শতাংশ।

এছাড়াও আরও নানা কারণে স্লিপওয়াকিং হতে পারে। ঘুম কম হলে, বা অনিয়মিতভাবে ঘুমালে স্লিপওয়াকিং হতে পারে। আবার জ্বর বা অন্য কোনো শারীরিক অসুস্থতার কারণে, কিংবা মানসিক চাপের কারণেও স্লিপওয়াকিং হতে পারে।

স্লিপওয়াকিং এর সময় মানুষ কী করে

সবচেয়ে বেশি দেখা যায় যে স্লিপওয়াকিং, তা হল-- বিছানা থেকে উঠে হাঁটাহাঁটি করা। তবে স্লিপওয়াকিংয়ের ক্ষেত্রে আরও নানা ব্যাপার ঘটতে পারে। কেউ কেউ ঘুমের মধ্যে কথাও বলে।

বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায়, স্লিপওয়াকিংয়ের সময় স্লিপওয়াকার একটা ঘোরের মধ্যে থাকে। চোখও তন্দ্রাচ্ছন্ন থাকে। কিছু বললে সেটা বুঝতেও পারে না, উত্তরও দিতে পারে না। কারও কারও ক্ষেত্রে দেখা যায়, তারা বারবার একই কাজ করছে; যেমন, বারবার চোখ ডলা বা পাজামা ধরে টানাটানি করা। অনেকে আবার ঘুমের মধ্যেই বাথরুম মনে করে ঘরের মধ্যেই প্রস্রাব করে দেয়। অনেকে তো আবার বিছানাতেই প্রস্রাব করে দেয়।

আর স্লিপওয়াকিংয়ের সময় চোখ খোলা থাকবে না বন্ধ থাকবে, তারও কোনো ঠিক নেই। কারও কারও চোখ খোলা থাকে, আবার কারও কারও চোখ থাকে বন্ধ।

কীভাবে নিরাপদ থাকা যায়

স্লিপওয়াকিং কোনো অসুখ নয়। ঘুমের মধ্যে হাঁটা শারীরিক বা মানসিক কোনো ক্ষতিও করে না। তারপরও এটা একটা সমস্যাই বটে। কারণ আর কিছুই নয়, ঘুমের মধ্যে হাঁটার সময় তো মানুষের চেতনা থাকে না। কাজেই তখন যে কোনো বিপদই ঘটতে পারে। কেউ হয়তো হাঁটতে গিয়ে বিছানা থেকে পড়ে গেল। কিংবা কেউ পড়ে গেল সিঁড়ি থেকেই। হাঁটতে হাঁটতে এমনকি ঘরের বাইরে বা রাস্তায়ও চলে যেতে পারে। করে বসতে পারে বিপজ্জনক কিছু। আর যেহেতু স্লিপওয়াকিং বাচ্চাদের ক্ষেত্রেই বেশি হয়, সে ক্ষেত্রে সেটা একটু বেশিই বিপজ্জনক।

তাই স্লিপওয়াকিং থেকে কীভাবে নিরাপদ থাকা যায়, সেটাও জেনে রাখা দরকার। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি হল, ঘরের দরজা-জানালা ভালো করে বন্ধ রাখা। প্রয়োজনে অতিরিক্ত তালাও ব্যবহার করা যেতে পারে। ঘরে কাচের বা ভঙ্গুর কোনো কিছু না রাখাই ভালো। মেঝেতে উঁচু কিছু রাখাও ঠিক না, তাতে হোঁচট খাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। রাখা যাবে না আগুন জ্বালানোর কোনো সরঞ্জামও। আর বিছানাটাও হওয়া উচিত একটু নিচু, যাতে পরে গেলেও বেশি ব্যথা না লাগে।

তবে আরও ভালো হয়, যদি স্লিপওয়াকিং বন্ধ করা যায়। সে জন্য কিছু কৌশল প্রয়োগ করে দেখা যেতে পারে। যেমন, ঘুমের আগে হালকা ধাঁচের গান শোনা, নিয়ম মতো ঘুমানো ইত্যাদি। আর ঘুমানোর আগে চা, কফি বা পানি পান না করাই ভালো।

স্লিপওয়াকারদের আশপাশের মানুষদেরও কিছু করণীয় আছে। প্রথম করণীয় হল, স্লিপওয়াকার ঘুমিয়ে গেলে আশপাশে খুব বেশি শব্দ না করা। আর কেউ যদি স্লিপওয়াকিং শুরু করেই দেয়, হঠাৎ করে না জাগিয়ে আস্তে আস্তে বিছানায় নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দেওয়াই ভালো। ঘুম ভাঙাতে গেলে সে ভয়ই পেয়ে যেতে পারে।

তবে স্লিপওয়াকিং যদি একটু বেশি-ই হয়, কিংবা কৈশোর পেরিয়ে যাওয়ার পরও যদি স্লিপওয়াকিং বন্ধ না হয়, সে ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

স্বপ্নের ক্যারিয়ার।

সবারই স্বপ্ন থাকে ভালো একটা নামকরা জায়গায় কাজ করার। অফিসের গাড়ি থাকবে, নিজের একটা আলাদা রুম থাকবে, কল করলেই চাঁ কফি চলে আসবে। ৫ টার পরে অফিসে থাকতে হবেনা। প্রায় বিদেশে ট্যুর দিতে হবে। পরিবারের সদস্য কেউ অসুস্থ হলে অফিসের টাকায় চিকিৎসা খরচ দিয়ে দেবে। গুগলের মত অফিসের ভিতরে থাকবে খোলামেলা স্পেস, আবার একটু খানি পাওয়ার ন্যাপ নেয়ার ব্যবস্থা থাকবে। অফিসের বস কোনদিন গালি দিবেন না। স্বপ্নের ক্যারিয়ার গড়তে মূলত দরকার প্রস্তুতি। আমরা প্রস্তুতি ও নেইনা তাই স্বপ্ন ও ধরা দেয় না। দক্ষতা শিক্ষার কোন পরিবেশ কোনদিনই পাইনা বলে আমাদের স্বপ্ন কেন ধরা দিচ্ছেনা এই নিয়ে আমাদের ক্ষোভের শেষ থাকেনা। কয়েকটা বিষয়ে একটু সচেতন হলেই হয়ত আমাদের স্বপ্ন টা পূরণ হতে পারে।

সব স্বপ্নের রং হয়না তো,

জীবন টা তো নয় রাঙা।

শিখতে হবে যে কোনো পরিস্থিতিতে।

পৃথিবী প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে এবং সবাই ব্যবসায়ের নতুন নতুন পদ্ধতি বের করছে। যদি আপনি মনে করেন আপনার দক্ষতা অনেক বেশি এবং আপনার বর্তমান চাকরি অনেক ভালো তারপরও আপনাকে বর্তমান অবস্থানে থেকে সবকিছু ভালোভাবে শিখে নিতে হবে। কারণ আপনি যদি ভবিষ্যতে এর চেয়েও ভালো কিছু করতে চান সেক্ষেত্রে আপনার পূর্ব-দক্ষতা এবং জ্ঞান কাজে লাগবে।

শুনুন, জিজ্ঞাসা করুন এবং শিখুন।

কথায় আছে একজন ভালো শ্রোতা অনেক কিছু শিখতে পারে। তাই আপনার সহকর্মী, বস এবং গুরুজন যা বলে তা শুনুন। তাদের অভিজ্ঞতা এবং উপদেশ থেকে আপনি অনেক কিছু শিখতে পারবেন। আপনার কাজ সম্পর্কিত যে যে বিষয়ে সমস্যা অনুধাবন করবেন, সে সম্পর্কে তাদের জিজ্ঞেস করে সমাধান জেনে নিন। তাদের কাছ থেকে জেনে নিন কীভাবে আপনার ওপর অর্পিত কাজ সুন্দর করা যায়।

বর্তমান কাজকে মূল্যায়ন করুন।

আপনার বর্তমান কাজই হতে পারে, আপনার ক্যারিয়ার শুরুর সবচেয়ে ভালো মাধ্যম। এটা সত্য যে, খুব কম মানুষই এটা মেনে নেয়। কোনো কিছুই বিনাশ্রমে আসে না, যারা এটা মানে তারাই সফলকামী হয়। আপনি যদি আপনার বর্তমান কাজের সব দায়-দায়িত্ব আস্থার সঙ্গে পালন করেন, তাহলে এটাই হতে পারে আপনার নতুন ক্যারিয়ার বা ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার গড়ার সিঁড়ি।

যখন যে কাজ আপনার ওপর অর্পিত হবে তা নির্দ্বিধায় করুন। কাজের মাধ্যমেই পারেন আপনি আপনার বসের তথা প্রতিষ্ঠানের আস্থা অর্জন করতে। তাই দেখা যেতে পারে, ভবিষ্যতে আপনার প্রতিষ্ঠানের কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদ সৃষ্টি হলে সেই পদের জন্য যোগ্যতার নিমিত্তে আপনাকে অগ্রাধিকার দেয়া হতে পারে।

সম্পর্ক গড়ে তুলুন।

আপনার ক্যারিয়ারের পরবর্তী ধাপ অনেকটা আপনার যোগাযোগের সম্পর্ক এবং সামর্থ্যের ওপর নির্ভর করে গড়ে ওঠে। আপনি কি জানেন শতকরা ৫০%-এরও বেশি চাকরি হয় জানা শোনা ও সম্পর্কের মাধ্যমে। আপনার সম্পর্কের জাল যদি বিস্তৃত হয়, তবে সেখান থেকে আপনি নতুন নতুন ব্যবসায়িক ধারণা ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাসংবলিত ধারণা পাবেন যা আপনার ক্যারিয়ারের নতুন দ্বার উন্মোচন করতে পারে। তাই নতুন সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে এবং তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে জেনে নিতে হবে তারা কেমন আছে, কী করে, ক্যারিয়ারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পদ্ধতি কী কী?

কাজকে গ্রহণ করুন।

আপনার বর্তমান কাজ সাদরে গ্রহণ করতে শিখুন। আগে নিশ্চিত হোন যে, আপনি আপনার কাজকে গ্রহণ করেছেন নাকি বাধ্য হয়ে মেনে নিয়েছেন। যদি শেষেরটি হয় তবে আপনার সময় এবং মেধা দুটোরই অপচয় হবে।

যখন আপনি একটি নতুন চাকরি শুরু করবেন, তখন আপনার কাজ, কাজের মূল্যায়ন এবং এ কাজের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে আপনার সহকর্মী কিংবা ঊর্ধ্বতন কারও সঙ্গে আলাপ করে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার ভেতরের চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন হতেও পারে।

আপনার কাজ সম্পর্কে নিশ্চিত হোন।

আপনার ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার গড়ার চিন্তার আগে ভালোভাবে নিশ্চিত হয়ে নিন যে এটাই আপনার স্বপ্নের কাজ। আপনার স্বপ্নের কাজে সবকিছু আনন্দের সঙ্গে করতে ইচ্ছে হবে আর এর ব্যত্যয় হলে আপনি আনন্দ খুঁজে পাবেন না। আপনি কী ধরনের কাজ পছন্দ করেন? আপনি কি অন্য চাকরিজীবীদের দায়-দায়িত্ব নিতে পছন্দ কিংবা অপছন্দ করেন? আপনি কি প্রযুক্তি বা মানুষের সঙ্গে কাছ করতে পছন্দ করেন? আপনি নিজেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চান? আপনি কি একজন অভিনেতা, ডিজাইনার বা দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার হতে চান? নাকি ম্যানেজার হতে চান? আপনার ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার গড়ার আগে আপনার লক্ষ্য নির্ধারণ করে নিন।

নিজেকে প্রস্তুত করুন।

এক মুহূর্তও অপচয় নয়। আপনার জীবন বৃত্তান্ত এখন থেকে প্রতিনিয়ত আপডেট করুন। কালকেই হয়তোবা আপনার হাতের কাছে ধরা দিতে পারে আপনার স্বপ্নের চাকরি। তাই নিজেকে এবং নিজের জীবন বৃত্তান্ত যথোপযুক্তভাবে গড়ে তুলুন যাতে যে কোনো প্রতিষ্ঠান অনায়াসে আপনাকে নিয়োগ দেয়। যদি আপনি না জানেন কীভাবে সিভি লিখে এবং কীভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে হয় তবে এখন থেকেই তা শিখতে চেষ্টা করুন।

নমনীয়তা খুব জরুরী।

উগ্রতা সর্বদাই খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। কোনো কাজই জোরপূর্বক করে নেয়া যায় না। আর জোরপূর্বক করে নেয়া হলেও পরবর্তীতে তার কুফল ভোগ করতেই হয়। তাই উগ্রতা নয়, নমনীয়তায় জীবন গড়াটাই যৌক্তিক।

সহিষ্ণুতা

প্রবাদ আছে, ভালো জিনিস একটু দেরিতেই আসে। কোনো কাজেই তাড়াহুড়া করাটা ভালো না। ত্বরিত যে কোনো কাজের মধ্যে ভুল হওয়ার আশঙ্কা বেশি।

সময় সচেতনতা

প্রত্যেকটা মানুষেরই উচিত সময়ের সঠিক ব্যবহার করা। সময়ের কাজ সময়ে করতে পারলে যে কোনো ব্যক্তিই তার ক্যারিয়ারকে সফল স্থানে নিয়ে যেতে পারবে। অযথা সময় অপচয়কারী প্রয়োজনীয় সময় এসে হাঁপিয়ে ওঠে। ফলে সে তার কাজে ভুল করে। পরে করব বলে ফেলে রাখলে কোনো কাজেরই সফল সমাধান দেয়া সম্ভব নয়। তাই সময় সচেতন হয়ে উঠুন।

লিখেছেনঃ— Habibur Rahman

Smart Factory 4.0 Consultant for Textile Apparel Industries.


ধন্যবাদান্তেঃ---"মিঃ মধু"

আরও বিস্তারিত জানতে চেক করুন "অদৃশ্য কাব্য" মঞ্চ।

No comments

Powered by Blogger.