Ads

ভালোলাগা ও ভালোবাসার মধ্যে পার্থক্য কি?

ভালো লাগা ও ভালোবাসার মধ্যে পার্থক্য

প্রেম সবার জীবনেই আসে। কারো জীবনে খুব তাড়াতাড়ি আসে, আবার কারো জীবনে আসে একটু দেরিতে। অনেকেই আবার বুঝতেও পারে না যে সে প্রেমে পড়েছে! প্রেমের ব্যাপারে কারো কারো ক্ষেত্রে দেখা যায়, কাউকে প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে যায়। অন্য একদলের আবার এই ভালো লাগা তৈরি হতে দীর্ঘদিন সময় লাগে।

তবে ভালো লাগা ও ভালোবাসার মধ্যে পার্থক্য বুঝে উঠতে পারেন না অনেকেই। ফলে অনেকেই জড়িয়ে পড়েন ভুল সম্পর্কে। কিছু লক্ষণ দেখে বুঝে নেয়া সম্ভব যে কোনটি ভালোলাগা আর কোনটি ভালোবাসা। আর সেটি খেয়াল করেই প্রেমে পড়ার বিষয়টি বুঝে নেয়া সম্ভব। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক প্রেমে পড়ার আট লক্ষণ-

  • >> এখনকার সময়ে মুঠোফোন মানুষের জীবনের বিরাট অংশ দখল করে আছে। তবে একটি ফোনকল কি আপনার জীবনের সব খারাপ লাগা মুছিয়ে দিতে পারে? ওই বিশেষ মানুষের কল এলে কি মুহূর্তেই সব অবসাদ, ক্লান্তি, একঘেয়েমি কেটে যাচ্ছে? তাহলে আপনি তার প্রেমে পড়েছেন।
  • >> মুঠোফোনে আসা একটি মেসেজ কি আপনার সব দুঃখ, চিন্তা নিমেষেই ভুলিয়ে দিতে পারে? তাহলে আপনার প্রেমে পড়া নিয়ে আর কোনো সংশয় থাকার কথা নয়।
  • >> বিরামহীন কর্মজীবনে যদি কোনো বিশেষ মানুষকে দেখার জন্য অফিসে না যেতে ইচ্ছে করে, তাহলে বুঝতে হবে আপনি প্রেমে পড়েছেন।
  • >> বসের বকুনি খেয়েও যদি কারো চোখে চোখ রাখলেই মন জুড়িয়ে যায়, তাহলে বুঝে নিন যে আপনি প্রেমে পড়েছেন।
  • >> বিশেষ মানুষ যা করে, সেটিই কি আপনার কাছে সঠিক মনে হয়? তাহলে নিঃসন্দেহে বুঝতে হবে, আপনি প্রেমে পড়েছেন।
  • >> যদি কারো সঙ্গে দেখা হওয়ার আনন্দে আপনি আপনার সবচেয়ে প্রিয় পোশাকটি পরে ফেলেন, তাহলে আর সেটা প্রেম না হয়ে যায় কোথায়!
  • >> অফিস থেকে ফেরার পথে রাস্তায় কিংবা বাসে প্রচণ্ড ভিড় থাকাই স্বাভাবিক। তবে এসবের মধ্যেও আপনার মন যদি থাকে ফুরফুরে, মনে টুংটাং পিয়ানোর শব্দ বাজে, তাহলে এবার বলেই ফেলুন সঙ্গীকে।
  • >> মনে মনে সব সময়ই গুনগুন করে গাইছেন প্রেমের কোনো গান? তাহলে বুঝে নিন, প্রেমে পড়ার হাত থেকে আপনিও নিস্তার পাননি।

এই লক্ষণগুলো যদি আপনার মধ্যে না থাকে তবে বুঝে নিবেন যে, এটি ওই মানুষটির প্রতি শুধুমাত্র আপনার ভালো লাগা, ভালোবাসা নয়। আর যদি লক্ষণগুলো আপনার সঙ্গে মিলে যায়, তবে আজই মনের কথা জানিয়ে দিন বিশেষ মানুষকে। বলা তো যায় না, তিনিও হয়তো আপনার পদক্ষেপের আশায় আছেন।

এবার আসুন, আরও বিস্তারিত ও গভীরভাবে আলোচনা করা যাকঃ-

  • ভালোবাসা এবং প্রেম দুটি শব্দের অর্থই বোঝায় ইংরেজি Love শব্দে। অন্যদিকে দুটি শব্দের মাঝে রয়েছে সূক্ষ্ম পার্থক্য। ভালোবাসা সার্বজনীন। প্রেম বিপরীত লিঙ্গের প্রতি সুতীব্র আকর্ষণ। মানুষের আবেগ অনুভূতির স্বাভাবিক রূপ ভালোবাসা। মানুষের প্রতি মানুষের ভালোলাগা, শ্রদ্ধাবোধ থেকেই মূলত ভালোবাসার জন্ম। অবশ্য ভালোবাসার সংজ্ঞা আরো ব্যাপক। যেকোন ঘটনা, ব্যক্তি, প্রাণী, স্মৃতি, বিষয় ইত্যাদির প্রতি ভালোবাসা হতে পারে।
  • বিশেষ কোন ‘সাবজেক্ট’ বা বিষয়ের প্রতি মানুষের বিশেষ অনুভূতির নামও ভালোবাসা। প্রেমের সঙ্গে এর সবচেয়ে বড় পার্থক্য, ভালোবাসা সাধারণত এক-তরফা হয়। অবশ্যই দু’তরফা ভালোবাসাও হতে পারে। কিন্তু একতরফা ভালোবাসাও কেউ আটকাতে পারে না। ধরা যাক, কেউ আকাশ ভালোবাসে। উল্টোদিকে আকাশ কাউকে ভালবাসতে পারে না। পারলেও শুধু নির্দেশ করে, সে (আকাশ) তার অনুভূতিকে প্রকাশ করতে পারছেনা বা পারেনা।

প্রেম অবশ্যই দু’তরফের হতে হবে। শুধু এক পক্ষ থেকে প্রেম হয়না। অনেকের দৃষ্টিতে প্রেমের গভীরতা বা আবেদন ভালোবাসার থেকেও বেশি। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া একজন মানুষের প্রতি কারও ভালোবাসা থাকতেই পারে। কিন্তু সেটাকে প্রেম বলা যাবে না। দু’তরফের আকর্ষণ থাকলে তবেই ডানা মেলবে প্রেম।

  • অভিধান বলছে, প্রেম (বিশেষ্য) = (প্রিয় + ইমন্)
    প্রেম (বিশেষ্য) = প্রণয় / প্রেম / অনুরাগ / প্রীতি / বন্ধুত্ব / স্নেহ / শ্রদ্ধা / ভক্তি / আসক্তি / আকর্ষণ / টান / পছন্দ!
    প্রিয় (বিশেষ্য) = ভালবাসা বা প্রনয়ের পাত্র / স্বামী / বন্ধু / সুহৃদ / ভাল লাগে এমন ব্যক্তি বা বিষয়।
  • তদ্ধিত প্রত্যয় (secondary suffix)= আক্ষরিক অর্থ -তাহার জন্য হিতকর। কিন্তু ব্যাকরণে এটি একটি প্রত্যয় হিসাবে ব্যবহৃত হয়। বাংলা ব্যকরণে পাঁচটি প্রত্যয়ের একটি হলো তদ্ধিত প্রত্যয়। যে প্রত্যয় শব্দমূলের শেষে যুক্ত হয়ে নূতন শব্দ তৈরি করে, তাকে তদ্ধিত-প্রত্যয় বলে।

  • প্রেম হল প্রানের আরাম, মনের শান্তি !! প্রেমটা অবশ্যই দু’পক্ষের হতে হবে। শুধু এক পক্ষ থেকে প্রেম হয়না।
    সাধারনত আত্মহিত, আত্মসন্তুষ্টি, আত্মশুদ্ধি, আত্মতুষ্টি ইত্যাদি কারনেই প্রেমের জন্ম বা ব্যাপ্তি !!
  • প্রেমাষ্পদের প্রতি আসক্তি ছাড়া প্রেম আসেনা, প্রেমাষ্পদের প্রতি আসক্তি সাধারনত সম্মতি বা সহযোগ থেকেই আসে, নাহ’লে সে প্রেমে ব্যাঘাত ঘটে!

ভালবাসা (ক্রিয়া) = ভাল (বিশেষণ) + বাসা (ক্রিয়া)
বাংলা ব্যাকরণে ভালবাসা সাধারনত ২ প্রকার : ১. ভালবাসা (ক্রিয়া) ২. ভালবাসা (বিশেষ্য)
ভালবাসা (ক্রিয়া) = প্রণয়যুক্ত বা প্রেমযুক্ত হওয়া / প্রীতিভাবাপন্ন হওয়া / স্নেহ করা / শ্রদ্ধা করা / ভক্তি করা / আসক্ত হওয়া বা আকৃষ্ট হওয়া / পছন্দ করা !!

ভালবাসা (বিশেষ্য) = প্রণয় / প্রেম / অনুরাগ / প্রীতি / সদ্ভাব / বন্ধুত্ব / স্নেহ / শ্রদ্ধা / ভক্তি / আসক্তি / আকর্ষণ / টান / পছন্দ!
ভালবাসা (বিশেষ্য) আর প্রেম (বিশেষ্য) প্রায় কাছাকাছি। সমরূপ বা সমার্থক হলেও ভালবাসার (ক্রিয়া) ব্যাপ্তি এখানেই শেষ নয়। ভালবাসার প্রকৃতি বা ব্যাপ্তি শুধুমাত্র অনুভবে জানা সম্ভব। গুটিকয় শব্দ দ্বারা ভালবাসার ভাব প্রকাশ করা সম্ভব নয়।

মূলগত তফাৎ

  • ১। ‘ভালবাসা’-তে দুই পক্ষের কোনো ভূমিকা নেই। প্রধান ভুমিকা ‘ত্যাগ’-এর।
    ২। প্রেম আত্মহিত-কেন্দ্রিক, ভালোবাসা পরহিত-কেন্দ্রিক।
    ৩। প্রেম ভালোবাসার একটা রুপ, কিন্তু ভালোবাসা স্বতন্ত্র।
    ৪। প্রেমের ক্ষেত্র সংকীর্ণ, আর ভালোবাসার ক্ষেত্র ব্যাপক ও সর্বজনীন।
    ৫। দুপক্ষের সম্মতিতে প্রেম হয়, আর ভালোবাসায় অপরপক্ষের সম্মতি মুখ্য নয়।
    ৬। ভালবাসার জন্য প্রেম আবশ্যক নয় কিন্তু প্রেমের জন্য ভালবাসা অপরিহার্য।
    ৭। প্রেম হল আত্মসুখের জন্য প্রেমাষ্পদকে আপন করে নেওয়ার প্রবল আকাঙ্খা, ভালবাসা হল প্রেমাষ্পদের সুখের জন্য নিজেকে বিলীন করে দেওয়া।

জীবন, প্রেম, ও ভালোবাসা বিষয়ক সমস্যা-সমাধান ও বিশ্লেষণ জানতে ভিজিট করুন

'Mr Modhu'(Invisible Poetry) এবং যোগ দিন "অদৃশ্য কাব্য" মঞ্চে।

No comments

Powered by Blogger.