ফেইসবুকে স্যাড রোমান্টিক স্ট্যাটাস এর বিশাল কালেকশান--০৪ @মিঃ মধু
ফেইসবুকে স্যাড রোমান্টিক স্ট্যাটাস এর বিশাল কালেকশান--০৪
মাঝেমধ্যে কোনো কারণ ছাড়াই কান্না পায়, কোনো কারণ ছাড়াই মন খারাপ থাকে। কারণ খুঁজতে মন চায় না আসলে, বেশি ভাবলে মাথা ব্যথা করে, সেসব সময়ে শুধু কাঁদতে ভাল্লাগে...।
মনপ্রাণ দিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করে, মনে মনে ভাবতে ভাল্লাগে আমি একা, আমার কেউ নাই, কোথাও কেউ ছিলো না কোনওদিন....
অথচ চারিদিকে কত মনের মানুষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে, জ্বর হইলে কপালে জল্পট্টি দেওয়ার লোক থাকে, ঘাম হলে রুমাল এগিয়ে দেওয়ার লোক থাকে, অর্ধেক খেয়ে উঠে গেলে এঁটোকাঁটা পরিষ্কার করে দেওয়ার লোক আছে, জামাকাপড় কেচে মেলে দেওয়ার, ইস্ত্রি করে আলমারিতে তুলে দেওয়ার, ঘর ঝেড়ে মুছে দেওয়ার সব, সব, সব খুঁটিনাটি কাজ করে দেওয়ার লোক থাকে আমাদের...
বাড়ি ফিরতে লেট হইলে ফোন করে চোদ্দ বার জিগ্যেস করার মানুষ আছে, কোয়ারেন্টাইন পিরিয়ডে কত বন্ধু আছে দিনে রাতে মেসেজে ফোনে ভিডিও কলে খোঁজখবর নিয়ে যাচ্ছে....
তবুও ভাবতে আরাম লাগে যে আমার কেউ নাই, সবাইকে বলতে আরোই ভালো লাগে আমার কেউ নাই। একলা ঘরে কাঁদলে বড় শান্তি পাই, গোছানো জিনিস বিছানায় ছড়িয়ে দিতে ভাল্লাগে.....
সিগারেট খেতে খেতে কাঁদার মধ্যে একটা সেইরকম ব্যাপার আছে, মুখে বলে বোঝানো যাবে না। স্নান করতে এক একদিন ইচ্ছে করে না, ব্রাশ করতেও মন চায় না, কিছু খেতেও স্বাদ পাই না, অন্ধকার ঘরে মড়ার মতো পড়ে থাকতে মন চায়....
বিছানার সাথে লেপ্টে থাকতে ভাল্লাগে, ফ্যানের আওয়াজটাই একমাত্র শুনতে ইচ্ছে হয়, বাইরের কোনো শব্দ অসহ্য লাগে এমনকি মায়ের ডাকও। যেন কোথাও একটা কিছু নেই, একটা ফাঁকা জায়গা থাকে আমাদের বুকের ভেতর, এই ফাঁকা জায়গাটা নিয়ে ভাবলে বেশ শান্তি পাই....
এই যেমন ঘরের জানালায় বসে বৃষ্টির শব্দ শোনা, কোথাও একটা বৃষ্টি হচ্ছে জোরে, আমরা শুধু ঠান্ডা হাওয়া টুকু মাখতে পারি, মাটির গন্ধ মেশানো ঠান্ডা হাওয়া এসে ধাক্কা মারে বুকে, অথচ যে বৃষ্টি ছোঁয়ার আশায় জানলার পাল্লা খুলেছিলাম, সেই বৃষ্টি অধরা থেকে গেল....
যাকগে, মাঝমধ্যে মুড এতটাই বিচ্ছিরি ভাবে সুইং করে, যে কেউ ভালো কথা বললেও যেন মনে হয় কানের মধ্যে বিষ ঢালছে, কারোর কোনো কথাই ভাল্লাগে না, ফোন রিসিভ করতে ইচ্ছে হয় না, রান্না করতে, জল খেতে, ছাদে গিয়ে মাদুর বিছিয়ে বসতেও ভালো লাগে না.....
কারোর সাথে যোগাযোগ রাখতে মন চায় না, কারোর শরীর খারাপের খবর পেলেও জানতে ইচ্ছে হয় না কেমন আছে মানুষটা! আর যখন খবর নিই, তখন হয়তো মানুষটাই এই পৃথিবীতে থাকলো না....
এক একটা সময় আসে, সারাদিন শুধু ভাল্লাগে না, ভাল্লাগে না, বলতেই বেশি ভাল্লাগে,
স্ট্যাটাসঃ---০৮
"হিংসে" শব্দটা খুবই ছোট, কিন্তু এই ছোট্ট শব্দটাই আমাদের গোটা একটা জীবনকে শেষ করে দিতে পারে, আমাদের ক্লান্ত চোখ থেকে ঘুম আর শান্ত মন থেকে শান্তি কেড়ে নিতে পারে.....
আমরা বেশিরভাগ কেউই প্রিভিলেজড নই, সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মাইনি, আমাদেরকে প্রতিটা পরিস্থিতি সাথে লড়তে হয়, আমরা যে সব লড়াইয়ে জিতি, এমনটা নয়!....
আমরা হেরে যাই, মুখ থুবড়ে পড়ি, ফ্রাস্ট্রেটেড হই, তারপর আমরা নিজেদের সাথে অন্যের তুলনা করি, তার থেকেই জন্ম নেয় এক গভীর হিংসেবোধ....
পৃথিবীতে খুব কম মানুষই এমন আছে, যাদের ভেতর কোনোকিছুর জন্য কোনো হিংসেবোধ কাজ করে না...
আমরা মুখ থুবড়ে পড়া মানুষরা বেশিরভাগ সময় অন্যের সাথে নিজের তুলনা টেনে আনি খুব তুচ্ছ থেকে তুচ্ছ ব্যাপারে....
অমুকের এত টাকা আছে অথচ ওর থেকে আমি পরিশ্রম করি বেশি তবুও আমার টাকা নেই কেন....
তমুককে দেখতে কত সুন্দর! আমাকে দেখতে নয় কেন....
অমুকের বর কত যত্ন নেয়, অমুকের প্রেমিকা একটুও সন্দেহ করে না, অমুকের প্রেমিক কত কি উপহার দেয়, তমুকের মা বাবা কত ভালো, নিজের ছেলে মেয়ের মন বুঝতে পারে, তমুকের পরিবার কত ভালো.....
যেন মনে হয় সবাই খুব ভালো আছে এবং সুস্থ ও সুন্দর আছে একমাত্র আমাকে বাদ দিয়ে....
বিষয়টা হলো, হিংসে শুধুমাত্র মানুষকে নয়, সম্পর্কগুলোকেও শেষ করে দেয়....
শুনুন, আমরা মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে মেয়েরা কেউই সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মাইনি, তাই আমাদের সমস্ত ইচ্ছেগুলোকে আমাদেরই পূরণ করতে হবে.....
হ্যাঁ আমাদের লড়াই করতে হবে, জীবনে লড়াই না করে যারা সবকিছু পেয়ে যায়, তাদের সাফল্যের কাহিনী বা ব্যর্থতার গল্প শোনার জন্য কারোর ভেতর কোনো ইন্টারেস্ট থাকে না....
আপনি লড়াই করে সাফল্য পেলে সব্বাই আপনাকে নিজের অনুপ্রেরণা বানাবে, যাতে আপনার সাফল্যের কাহিনী শুনে অনেকে অনুপ্রাণিত হতে পারে, নিজেকে এমন ভাবে তৈরি করুন....
নিজের ভেতরের হিংসেটাকে জেদে পরিণত করুন, আর অন্য অনেকের চেয়ে নিজেকে অনেক উঁচুতে প্রতিষ্ঠিত করুন....
আমরা যারা নিজের কাছে যা কিছু আছে, তা নিয়ে সন্তুষ্ট নই, তাদের মনের ভেতর একটাই জেদ থাকা উচিত,
"অমুকের কাছে যা কিছু আছে, একদিন আমার কাছেও থাকবে, কিংবা তার থেকেও বেশি থাকবে" ব্যস এটুকু ভাবলেই আমরা অনেকটা এগিয়ে যেতে পারবো....
আজ হয়তো হচ্ছে না, একদিন ঠিক হবে, শুধু বারবার ভেঙে পড়ার পরেও উঠে দাঁড়ানোর জেদ থাকতে হবে....
বারবার ব্যর্থতা থেকে ফ্রাস্ট্রেশন আসবেই, যতবেশি ফ্রাস্ট্রেটেড হই আমরা, ততবেশি কাজ করার শক্তি কমে আসে...
হ্যাঁ আমাদের কাছে হয়তো অনেককিছুই নেই, কিন্তু আমাদের ভেতর জেদ থাকলে একদিন আমরা সাফল্য পাবোই, কোনো না কোনো ভাবে পাবোই....।
স্ট্যাটাসঃ---০৯
এক একটা সম্পর্ক খুব ধুমধাম করে শুরু হয়, দুটো মানুষই রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দেয়, দেখা হলেই চুমু খায় ঘনঘন, জড়াজড়ি করে নিজেদের ছবি দেয় ফেসবুকে, সেকেন্ডে সেকেন্ডে কাছের মানুষকে নিয়ে গুচ্ছ কবিতা লেখে....
তারপর যখন খুব ধীরে ধীরে কাছের মানুষকে খুব কাছ থেকে চিনতে শুরু করে, তখন একঘেয়েমি লাগে, বিরক্ত লাগে, উল্টোদিকের মানুষটার ছোট ছোট খুঁত গুলো বড্ড বেশি করে চোখে লাগে.....
দিনরাত ঝগড়া, অশান্তি, নোংরা খিস্তি, দোষারোপ, অপমান, পাল্টা অপমান চলতে থাকে...
অসহ্য লাগে, কতক্ষণে মুক্তি, আর কতক্ষণ! চারদশকের প্রেম কাটিয়ে আলটিমেটলি যখন সম্পর্কটা একদিন শেষ হয়, ভেতর ভেতর একটা উথালপাথাল হয় তখন, বাইরে কিন্তু দিব্যি ভালো থাকার মুখোশ পরে ঘোরে.....
এদিকে দুমড়ে মুচড়ে শেষ হয়ে যায় দুটো মানুষের রাতের ঘুম, সকালের ব্রেকফাস্ট, দুপুরের খাবার, বিকেলে চায়ের কাপ হাতে বারান্দায় দাঁড়ানো, সন্ধের বাজার....
মনে হয় যেমনই ছিল, তবুও তো ছিল মানুষটা, দমবন্ধ করা চিনচিনে যন্ত্রণা আঁকড়ে ধরে আষ্টেপৃষ্ঠে, না পারে চিৎকার করে কেঁদে উগরে দিতে সমস্তটা, আর না পারে পোয়াতি মেয়ের মতো দীর্ঘসময় বয়ে নিয়ে বেড়াতে দুঃখগুলো....
ঠিক এই মুহূর্তে এমন একটা মানুষ দরকার, যার সাথে কথা বললেই মন ভালো হয়ে যায়....
তাকে আমরা কক্ষনো দেখবো না, তাকে খুব কাছ থেকে জানার চেষ্টাও করবো না, বড্ড অচেনা হবে মানুষটা, টুকটাক কথোপকথনের মধ্যে দিয়ে তাকে যতটুকু ছুঁয়ে থাকা যায়, অনুভব করা যায়, স্পর্শ করা যায়, ব্যস ওটুকুই, এর বেশি কিছু নয়....
আসলে, কিছু মানুষ নরম রোদ হয়ে আমাদের গালে আলতো হাত বুলিয়ে দিতে জানে...
কিছু মানুষের প্রেমে কোনোদিন পড়তে নেই, প্রেমে পড়লে মানুষগুলো সস্তা হয়ে যায়, অধিকার বোধ জন্মে গেলে ভালো লাগা উবে যায়....
সব ঘর তো নিজের হয় না তাই না! তবুও তো আমরা নিজেদের ঘর ভেবে কত আশ্রয়কে আপন করে ফেলি, কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলি, কত বেনামি কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ি, কত স্মৃতি জমিয়ে ফেলি.....
কিছু মানুষকে বাস্তবে রাখতে নেই, জীবনের খাতায় রাখতে নেই, শুধু মনখারাপের দিনে তাদের কাছে যেতে হয়....
কিছু মানুষকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে নেই, আবার হুটহাট খরচ করে ফেলতেও নেই, কিছু মানুষকে স্রেফ আজীবন ধরে স্মৃতির পাতায় সঞ্চয় করে যেতে হয়.....।
স্ট্যাটাসঃ---১০
#আমরা_যাঁরা_বোকা_মূর্খ_সব_হারানোর_দলে ।
কিছু মানুষ বড্ড বোকা হয়, সবার চালাকি বুঝেও না বোঝার ভান করে-
মনপ্রাণ দিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করে, মনে মনে ভাবতে ভাল্লাগে আমি একা, আমার কেউ নাই, কোথাও কেউ ছিলো না কোনওদিন....
অথচ চারিদিকে কত মনের মানুষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে, জ্বর হইলে কপালে জল্পট্টি দেওয়ার লোক থাকে, ঘাম হলে রুমাল এগিয়ে দেওয়ার লোক থাকে, অর্ধেক খেয়ে উঠে গেলে এঁটোকাঁটা পরিষ্কার করে দেওয়ার লোক আছে, জামাকাপড় কেচে মেলে দেওয়ার, ইস্ত্রি করে আলমারিতে তুলে দেওয়ার, ঘর ঝেড়ে মুছে দেওয়ার সব, সব, সব খুঁটিনাটি কাজ করে দেওয়ার লোক থাকে আমাদের...
বাড়ি ফিরতে লেট হইলে ফোন করে চোদ্দ বার জিগ্যেস করার মানুষ আছে, কোয়ারেন্টাইন পিরিয়ডে কত বন্ধু আছে দিনে রাতে মেসেজে ফোনে ভিডিও কলে খোঁজখবর নিয়ে যাচ্ছে....
তবুও ভাবতে আরাম লাগে যে আমার কেউ নাই, সবাইকে বলতে আরোই ভালো লাগে আমার কেউ নাই। একলা ঘরে কাঁদলে বড় শান্তি পাই, গোছানো জিনিস বিছানায় ছড়িয়ে দিতে ভাল্লাগে.....
সিগারেট খেতে খেতে কাঁদার মধ্যে একটা সেইরকম ব্যাপার আছে, মুখে বলে বোঝানো যাবে না। স্নান করতে এক একদিন ইচ্ছে করে না, ব্রাশ করতেও মন চায় না, কিছু খেতেও স্বাদ পাই না, অন্ধকার ঘরে মড়ার মতো পড়ে থাকতে মন চায়....
বিছানার সাথে লেপ্টে থাকতে ভাল্লাগে, ফ্যানের আওয়াজটাই একমাত্র শুনতে ইচ্ছে হয়, বাইরের কোনো শব্দ অসহ্য লাগে এমনকি মায়ের ডাকও। যেন কোথাও একটা কিছু নেই, একটা ফাঁকা জায়গা থাকে আমাদের বুকের ভেতর, এই ফাঁকা জায়গাটা নিয়ে ভাবলে বেশ শান্তি পাই....
এই যেমন ঘরের জানালায় বসে বৃষ্টির শব্দ শোনা, কোথাও একটা বৃষ্টি হচ্ছে জোরে, আমরা শুধু ঠান্ডা হাওয়া টুকু মাখতে পারি, মাটির গন্ধ মেশানো ঠান্ডা হাওয়া এসে ধাক্কা মারে বুকে, অথচ যে বৃষ্টি ছোঁয়ার আশায় জানলার পাল্লা খুলেছিলাম, সেই বৃষ্টি অধরা থেকে গেল....
যাকগে, মাঝমধ্যে মুড এতটাই বিচ্ছিরি ভাবে সুইং করে, যে কেউ ভালো কথা বললেও যেন মনে হয় কানের মধ্যে বিষ ঢালছে, কারোর কোনো কথাই ভাল্লাগে না, ফোন রিসিভ করতে ইচ্ছে হয় না, রান্না করতে, জল খেতে, ছাদে গিয়ে মাদুর বিছিয়ে বসতেও ভালো লাগে না.....
কারোর সাথে যোগাযোগ রাখতে মন চায় না, কারোর শরীর খারাপের খবর পেলেও জানতে ইচ্ছে হয় না কেমন আছে মানুষটা! আর যখন খবর নিই, তখন হয়তো মানুষটাই এই পৃথিবীতে থাকলো না....
এক একটা সময় আসে, সারাদিন শুধু ভাল্লাগে না, ভাল্লাগে না, বলতেই বেশি ভাল্লাগে,
আর কিচ্ছু ভাল্লাগে না.....।
স্ট্যাটাসঃ---০২
কথা কাটাকাটি, রাগ, ঝগড়া, মান, অভিমান, দুঃখ, ব্যথা হবেই, রোজই হবে। কিন্তু তা বলে হুটহাট সম্পর্ক ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া, বারবার ফোন কেটে দেওয়া, ডোন্ট কেয়ার এটিটিউড নিয়ে ব্রেকআপ করে নেওয়াটাও কোনো কাজের কথা নয়.....।
না, আমি জোর করে নিজের সম্মান বিসর্জন দিয়ে কাউকেই কোনো সম্পর্কে পড়ে থাকতে বলছি না, কিন্তু তুচ্ছ তুচ্ছ ঝগড়ায় নিজেদের মধ্যে একটা প্রচ্ছন্ন দেওয়াল তুলে দেওয়াটাও উচিত নয়। সামান্য ঝামেলায় বহুদিনের একটা সুন্দর সম্পর্ক ভেঙে দেওয়া ঠিক নয়, কথা কাটাকাটির সময় একে অপরকে জঘন্য ভাবে অপমান করে নিজেদের ভেতর দূরত্ব বাড়িয়ে নেওয়াও ঠিক নয়....
এই দুনিয়ায় এমন কেউ নেই! যার রাগ, অভিমান, দুঃখ, ব্যথা, শোক নেই, কিন্তু এই সবটুকু নিয়েও প্রতিটা মানুষ একটা অসাধারণ জীবনযাপন করার চেষ্টা করে প্রতিদিন....
হাজারটা মানুষের কাছে ধাক্কা খেয়েও, হাজারটা মানুষের কাছে অপমানিত হয়েও, হাজারটা মানুষের কাছে ঠকে যাওয়ার পরও মানুষ সম্পর্কে জড়ায়, আরো একবার একটা নতুন মানুষকে বিশ্বাস করে, নিজের একটা পৃথিবী তৈরি করার চেষ্টা করে....
আমি বিশ্বাস করি, মানুষের জীবনে এক একটা সুস্থ সুন্দর সম্পর্ক হলো এক একটা এচিভমেন্ট অর্থাৎ প্রাপ্তি....
মানুষ দিনের শেষে ঠিক যতগুলো সম্পর্ককে, যতগুলো মানুষকে নিজের ভেতর জমিয়ে রাখে, সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় ঠিক ততগুলো সম্পর্কই তার জীবনের সর্বোচ্চ প্রাপ্তি, সর্বোচ্চ পাওনা হয়ে থেকে যায়....
একটা সুস্থ সুন্দর সম্পর্ক গড়তে, এবং তা লালন করতে প্রচুর প্রচুর সময় লাগে। এত যত্ন করে গড়া সম্পর্ক যখন তুচ্ছ তুচ্ছ মান অভিমানে ভেঙে যায় তখন শুধু একটা সম্পর্ক শেষ হয় না, বরং দুটো মানুষও বদলে যায়, নিজেদেরকে হারিয়ে ফেলে, বাঁচতে ভুলে যায়, ভেতর ভেতর মরে যায়....
প্রতিটা মানুষের জীবনে সম্পর্ক যেমন এচিভমেন্ট, তেমনই পারস্পরিক সম্মান বজায় রাখা হলো সবচেয়ে বড় ইনভেস্টমেন্ট...
খুব সহজ হিসেব, যত বেশি সম্মান আদান প্রদান হবে, ততই বেশি সম্পর্ক মজবুত হবে....
তাই বলছি রাগ হোক, ঝগড়া হোক, ভাতের থালা ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হোক, দড়াম করে মুখের উপর নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হোক, কিন্তু যেন দিনের শেষে মানুষ দুটো মুখোমুখি এক টেবিলে বসে খাবার খেতে পারে।
এক বিছানায় পাশাপাশি শুতে পারে, ভোরের বেলায় দরজার সামনে পড়ে থাকা পেপারটা একজন এনে অপরজনের হাতে তুলে দিতে পারে....
দুজনে মিলে সকাল বেলায় রোদ মাখতে মাখতে গরম চায়ের কাপ হাতে যেন বারান্দায় দাঁড়াতে পারে। একজনের শরীর খারাপ হলে আর একজন যেন ডাক্তারের কাছে দৌঁড়ে যেতে পারে....
এই দুনিয়ায় কারোর সাথেই কারোর চিন্তা ভাবনা সম্পূর্ণ ভাবে মিলে যায় না, আমরা শুধুমাত্র আজীবন নিজেদের চিন্তাভাবনাগুলোকে আমাদের কাছের মানুষটার চিন্তাভাবনার সাথে মেলানোর চেষ্টা করতে পারি....
তাই বলছি নিজেদের ভেতর কথা বলুন, কি কি সমস্যা হচ্ছে নিজেদের ভেতর, সেগুলো নিয়ে দুজনেই বসে আলোচনা করুন....
সমস্যাগুলোকে আইডেন্টিফাই করুন, সকাল বেলায় ঝগড়া করে বেরিয়ে গেলেও রাতের বেলায় বাড়ি ফিরে এসে একসঙ্গে একটু ছাদে গিয়ে খোলা হাওয়ায় বসুন....
পরস্পর পরস্পরকে সম্মান করুন, দুজনেই দুজনের ভাবনা চিন্তাকে নিজের জীবনে খুব সামান্য হলেও প্রয়োগ করার চেষ্টা করুন....
"ও ঝামেলা করেছে, আমি কেন কথা বলবো" এই ধরণের মানসিকতাগুলোই দুজনের ভেতর দূরত্বের সৃষ্টি করে....
ঝামেলা যেই করুক, ঝামেলার সমাধান বার করার চেষ্টা করুন। সম্পর্কে কেউই ছোট বড় হয় না, একটা সম্পর্কে দুজনেরই সমান ডেডিকেশন থাকে.....
"আমার অভিমান না বুঝলে আমি কোনোদিনই কথা বলবো না" এই ধরণের মানসিকতাও চেঞ্জ করুন....
আপনার মনের ভেতর ঢুকে সমস্ত গোপন কুঠুরির হদিশ বার করার মতো সময় এই দুনিয়ায় কারোর হাতেই নেই....
তাই অভিমানকে দীর্ঘজীবী না করে নিজেই নিজের সমস্যাগুলো আপনার পার্টনারকে খুলে বলুন, যত বেশি সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা হবে, তত বেশি সমাধান বেরোবে....
দিনের শেষে নিজেদের ভেতর কথা বলার জন্য আধঘন্টা রাখুন, সারাদিন মানুষটা কি কি কাজে ব্যস্ত ছিল, তার সারাদিনটা কেমন কাটলো, মানুষটা কি খেলো, শরীর কেমন আছে মানুষটার, জিগ্যেস করুন....
সম্পর্কে মান অভিমান থাক, কিন্তু দিনের শেষে সেই মান অভিমান ধুয়ে বৃষ্টি নামার মতো একটা খোলা ছাদও থাক....
যতই ঝগড়া হোক, কেউই যেন কাউকে ছেড়ে না চলে যায়...।
স্ট্যাটাসঃ---০২
কারোর বিয়ে ভেঙে গেলে আমি তার কাছে গিয়ে জিগ্যেস করি না,
"কিভাবে বিয়েটা ভাঙলো, কি হয়েছিল গো?"....
কারোর চোখের তলায় বীভৎস কালি পড়লেও আমি তাকে হুট করে জিগ্যেস করি না,
"এমা চোখের তলায় এত কালি কেন? কিছু হয়েছে নাকি"....
হাসতে থাকা মানুষগুলো হঠাৎ করে চুপচাপ হয়ে গেলেও আমি কখনোই তাদের জিগ্যেস করি না,
"এত চুপচাপ কেন? আগে তো বেশ আনন্দে থাকতে, হঠাৎ কি এমন হলো, যে চুপচাপ হয়ে গেলে?".....
বেশিরভাগ মানুষের ভেতর একটা চাপা যন্ত্রণা থাকে, কিছু ঘেঁটে যাওয়া অতীত থাকে, কিছু নরম দুঃখ থাকে, কিছু বিশ্বাসঘাতকতার গল্প থাকে, কিছু ব্যথা আর কিছু শোক থাকে.....
আমার ভালো লাগে না সবসময় এই যন্ত্রণাগুলোকে নাড়া দিতে, যতক্ষণ না মানুষটা নিজের থেকে এসে নিজের গল্প শোনায় ততক্ষণ বারবার খোঁচা মেরে জিগ্যেস করতে আর ভালো লাগে না.....
নিজের ব্যর্থতার কথা সেই মানুষটা খুব ভালো করেই জানে, তাই তাকে বারবার প্রশ্ন করে আর আয়না দেখাতে ভালো লাগে না....
তার চেয়ে কেউ যদি চোখের জল লুকিয়ে হাসির অভিনয়ও করে, আমি সেই অভিনয় বুঝতে পেরেও চুপ থাকি, তার অভিনয়কে সম্মান করি....
কাউকেই না বেশি প্রশ্ন করবেন না যতই আপনার কাছের মানুষ হোক না কেন!
কিছু ব্যথা কিছু হেরে যাওয়া অত্যন্ত ব্যক্তিগত হয়, সে যদি আপনাকে নিজের মনের অবস্থা জানাতে চায় তখন স্রেফ চুপচাপ শুনবেন....
জোর করে জানতে চাইবেন না, তাতে উল্টোদিকের মানুষটা আরও বেশি ক্ষতবিক্ষত হয়.....।
স্ট্যাটাসঃ---০৩
বাড়িতে ডেকে আদর আপ্যায়ন করা মানুষটাও তোমায় একদিন দূরে ঠেলে সরিয়ে দিতে পারে,
স্ট্যাটাসঃ---০২
কথা কাটাকাটি, রাগ, ঝগড়া, মান, অভিমান, দুঃখ, ব্যথা হবেই, রোজই হবে। কিন্তু তা বলে হুটহাট সম্পর্ক ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া, বারবার ফোন কেটে দেওয়া, ডোন্ট কেয়ার এটিটিউড নিয়ে ব্রেকআপ করে নেওয়াটাও কোনো কাজের কথা নয়.....।
না, আমি জোর করে নিজের সম্মান বিসর্জন দিয়ে কাউকেই কোনো সম্পর্কে পড়ে থাকতে বলছি না, কিন্তু তুচ্ছ তুচ্ছ ঝগড়ায় নিজেদের মধ্যে একটা প্রচ্ছন্ন দেওয়াল তুলে দেওয়াটাও উচিত নয়। সামান্য ঝামেলায় বহুদিনের একটা সুন্দর সম্পর্ক ভেঙে দেওয়া ঠিক নয়, কথা কাটাকাটির সময় একে অপরকে জঘন্য ভাবে অপমান করে নিজেদের ভেতর দূরত্ব বাড়িয়ে নেওয়াও ঠিক নয়....
এই দুনিয়ায় এমন কেউ নেই! যার রাগ, অভিমান, দুঃখ, ব্যথা, শোক নেই, কিন্তু এই সবটুকু নিয়েও প্রতিটা মানুষ একটা অসাধারণ জীবনযাপন করার চেষ্টা করে প্রতিদিন....
হাজারটা মানুষের কাছে ধাক্কা খেয়েও, হাজারটা মানুষের কাছে অপমানিত হয়েও, হাজারটা মানুষের কাছে ঠকে যাওয়ার পরও মানুষ সম্পর্কে জড়ায়, আরো একবার একটা নতুন মানুষকে বিশ্বাস করে, নিজের একটা পৃথিবী তৈরি করার চেষ্টা করে....
আমি বিশ্বাস করি, মানুষের জীবনে এক একটা সুস্থ সুন্দর সম্পর্ক হলো এক একটা এচিভমেন্ট অর্থাৎ প্রাপ্তি....
মানুষ দিনের শেষে ঠিক যতগুলো সম্পর্ককে, যতগুলো মানুষকে নিজের ভেতর জমিয়ে রাখে, সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় ঠিক ততগুলো সম্পর্কই তার জীবনের সর্বোচ্চ প্রাপ্তি, সর্বোচ্চ পাওনা হয়ে থেকে যায়....
একটা সুস্থ সুন্দর সম্পর্ক গড়তে, এবং তা লালন করতে প্রচুর প্রচুর সময় লাগে। এত যত্ন করে গড়া সম্পর্ক যখন তুচ্ছ তুচ্ছ মান অভিমানে ভেঙে যায় তখন শুধু একটা সম্পর্ক শেষ হয় না, বরং দুটো মানুষও বদলে যায়, নিজেদেরকে হারিয়ে ফেলে, বাঁচতে ভুলে যায়, ভেতর ভেতর মরে যায়....
প্রতিটা মানুষের জীবনে সম্পর্ক যেমন এচিভমেন্ট, তেমনই পারস্পরিক সম্মান বজায় রাখা হলো সবচেয়ে বড় ইনভেস্টমেন্ট...
খুব সহজ হিসেব, যত বেশি সম্মান আদান প্রদান হবে, ততই বেশি সম্পর্ক মজবুত হবে....
তাই বলছি রাগ হোক, ঝগড়া হোক, ভাতের থালা ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হোক, দড়াম করে মুখের উপর নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হোক, কিন্তু যেন দিনের শেষে মানুষ দুটো মুখোমুখি এক টেবিলে বসে খাবার খেতে পারে।
এক বিছানায় পাশাপাশি শুতে পারে, ভোরের বেলায় দরজার সামনে পড়ে থাকা পেপারটা একজন এনে অপরজনের হাতে তুলে দিতে পারে....
দুজনে মিলে সকাল বেলায় রোদ মাখতে মাখতে গরম চায়ের কাপ হাতে যেন বারান্দায় দাঁড়াতে পারে। একজনের শরীর খারাপ হলে আর একজন যেন ডাক্তারের কাছে দৌঁড়ে যেতে পারে....
এই দুনিয়ায় কারোর সাথেই কারোর চিন্তা ভাবনা সম্পূর্ণ ভাবে মিলে যায় না, আমরা শুধুমাত্র আজীবন নিজেদের চিন্তাভাবনাগুলোকে আমাদের কাছের মানুষটার চিন্তাভাবনার সাথে মেলানোর চেষ্টা করতে পারি....
তাই বলছি নিজেদের ভেতর কথা বলুন, কি কি সমস্যা হচ্ছে নিজেদের ভেতর, সেগুলো নিয়ে দুজনেই বসে আলোচনা করুন....
সমস্যাগুলোকে আইডেন্টিফাই করুন, সকাল বেলায় ঝগড়া করে বেরিয়ে গেলেও রাতের বেলায় বাড়ি ফিরে এসে একসঙ্গে একটু ছাদে গিয়ে খোলা হাওয়ায় বসুন....
পরস্পর পরস্পরকে সম্মান করুন, দুজনেই দুজনের ভাবনা চিন্তাকে নিজের জীবনে খুব সামান্য হলেও প্রয়োগ করার চেষ্টা করুন....
"ও ঝামেলা করেছে, আমি কেন কথা বলবো" এই ধরণের মানসিকতাগুলোই দুজনের ভেতর দূরত্বের সৃষ্টি করে....
ঝামেলা যেই করুক, ঝামেলার সমাধান বার করার চেষ্টা করুন। সম্পর্কে কেউই ছোট বড় হয় না, একটা সম্পর্কে দুজনেরই সমান ডেডিকেশন থাকে.....
"আমার অভিমান না বুঝলে আমি কোনোদিনই কথা বলবো না" এই ধরণের মানসিকতাও চেঞ্জ করুন....
আপনার মনের ভেতর ঢুকে সমস্ত গোপন কুঠুরির হদিশ বার করার মতো সময় এই দুনিয়ায় কারোর হাতেই নেই....
তাই অভিমানকে দীর্ঘজীবী না করে নিজেই নিজের সমস্যাগুলো আপনার পার্টনারকে খুলে বলুন, যত বেশি সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা হবে, তত বেশি সমাধান বেরোবে....
দিনের শেষে নিজেদের ভেতর কথা বলার জন্য আধঘন্টা রাখুন, সারাদিন মানুষটা কি কি কাজে ব্যস্ত ছিল, তার সারাদিনটা কেমন কাটলো, মানুষটা কি খেলো, শরীর কেমন আছে মানুষটার, জিগ্যেস করুন....
সম্পর্কে মান অভিমান থাক, কিন্তু দিনের শেষে সেই মান অভিমান ধুয়ে বৃষ্টি নামার মতো একটা খোলা ছাদও থাক....
যতই ঝগড়া হোক, কেউই যেন কাউকে ছেড়ে না চলে যায়...।
স্ট্যাটাসঃ---০২
কারোর বিয়ে ভেঙে গেলে আমি তার কাছে গিয়ে জিগ্যেস করি না,
"কিভাবে বিয়েটা ভাঙলো, কি হয়েছিল গো?"....
কারোর চোখের তলায় বীভৎস কালি পড়লেও আমি তাকে হুট করে জিগ্যেস করি না,
"এমা চোখের তলায় এত কালি কেন? কিছু হয়েছে নাকি"....
হাসতে থাকা মানুষগুলো হঠাৎ করে চুপচাপ হয়ে গেলেও আমি কখনোই তাদের জিগ্যেস করি না,
"এত চুপচাপ কেন? আগে তো বেশ আনন্দে থাকতে, হঠাৎ কি এমন হলো, যে চুপচাপ হয়ে গেলে?".....
বেশিরভাগ মানুষের ভেতর একটা চাপা যন্ত্রণা থাকে, কিছু ঘেঁটে যাওয়া অতীত থাকে, কিছু নরম দুঃখ থাকে, কিছু বিশ্বাসঘাতকতার গল্প থাকে, কিছু ব্যথা আর কিছু শোক থাকে.....
আমার ভালো লাগে না সবসময় এই যন্ত্রণাগুলোকে নাড়া দিতে, যতক্ষণ না মানুষটা নিজের থেকে এসে নিজের গল্প শোনায় ততক্ষণ বারবার খোঁচা মেরে জিগ্যেস করতে আর ভালো লাগে না.....
নিজের ব্যর্থতার কথা সেই মানুষটা খুব ভালো করেই জানে, তাই তাকে বারবার প্রশ্ন করে আর আয়না দেখাতে ভালো লাগে না....
তার চেয়ে কেউ যদি চোখের জল লুকিয়ে হাসির অভিনয়ও করে, আমি সেই অভিনয় বুঝতে পেরেও চুপ থাকি, তার অভিনয়কে সম্মান করি....
কাউকেই না বেশি প্রশ্ন করবেন না যতই আপনার কাছের মানুষ হোক না কেন!
কিছু ব্যথা কিছু হেরে যাওয়া অত্যন্ত ব্যক্তিগত হয়, সে যদি আপনাকে নিজের মনের অবস্থা জানাতে চায় তখন স্রেফ চুপচাপ শুনবেন....
জোর করে জানতে চাইবেন না, তাতে উল্টোদিকের মানুষটা আরও বেশি ক্ষতবিক্ষত হয়.....।
স্ট্যাটাসঃ---০৩
বাড়িতে ডেকে আদর আপ্যায়ন করা মানুষটাও তোমায় একদিন দূরে ঠেলে সরিয়ে দিতে পারে,
তোমার চোখের জল মুছিয়ে তোমার ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে দেওয়ার মানুষটাও একদিন তোমায় ন্যাকা,
সস্তা, ফালতু মনে করতে পারে....।
ভেঙে পড়ার সময় কাঁধ বাড়িয়ে দেওয়ার মানুষটাও একদিন তোমায় অবিশ্বাস করতে পারে, তোমায় সুন্দর জিনিস উপহার দেওয়ার মানুষটাও একদিন তোমার জীবনে বিষ ঢেলে দিতে পারে.....
তোমায় ভালোবেসে বুকে জড়িয়ে ধরা মানুষটাও একদিন তোমার বুকেই ছুরি বসাতে পারে....
তোমায় গোটা পৃথিবী মানা মানুষটাও একদিন তোমায় ফোন করে বলতে পারে "আমার ঠিক আর ভালো লাগছে না এই রিলেশনশিপে থাকতে".....
তোমায় নিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হওয়া মানুষটাও তোমার ফোনকলস ইগনোর করতে পারে, তোমার প্রোফাইল সারাদিন স্টক করে তোমায় নিয়ে নিজের বন্ধুমহলে বাজে কথা বলতে পারে.....
কাজেই নিজের আবেগকে সংযত করো, এখনকার দিনে বেশি আবেগপ্রবণ হওয়া অপরাধ, ভীষণ আবেগপ্রবণ মানুষরা যে কোনও কাউকে খুব অল্প সময়ে বিশ্বাস করে ফেলে। খুব আবেগপ্রবণ মানুষরা খুব অল্প সময়ে যে কোনো কাউকে বিশ্বাস করে নিজের সমস্ত গোপন কথা খুলে বলে দেয়....
আবেগহীন হওয়া যেমন অপরাধ, তেমনই খুব আবেগপ্রবণ হওয়াও অভিশাপ, যে অভিশাপ সারাজীবন নিজেকেই বহন করে নিয়ে বেড়াতে হয়....।
স্ট্যাটাসঃ---০৪
সব বৃষ্টি মনখারাপের হয় না, অসময়ে বৃষ্টি এলে হাতের মুঠোয় জল নিয়ে মাখিয়ে দিতে ইচ্ছে করে প্রিয় মানুষের গালে। গলায় সুর না থাকলেও গান গাইতে ইচ্ছে করে, ঠান্ডা হাওয়ায় ভিজতে ইচ্ছে করে...
ঠোঙা ভর্তি গরম জিলিপি নিয়ে রাস্তার ধারে টিনের শেডের নীচে দাঁড়িয়ে খেতে ইচ্ছে করে, লাল নীল কাগজের নৌকা বানিয়ে ভাসাতে ইচ্ছে করে....
ব্যাগের মধ্যে ছাতা ঢুকিয়ে কাছের মানুষের গা ঘেষে হাঁটতে ইচ্ছে করে, রাস্তায় জমা কাদাজলে জুতো খুলে লাফাতে ইচ্ছে করে.....
গলির ভেতর ঢুকে ঠোঁট ঠোঁট ঢুকিয়ে চুমু খেতে ইচ্ছে করে, একটা সাইকেল কারোর কাছ থেকে ধার নিয়ে কোনো একটা অচেনা জায়গায় চলে যেতে ইচ্ছে করে, যেখানে কেউ আমাদের চিনবে না। নামহীন স্টেশনে বসে দুকাপ চা খেতে ইচ্ছে করে মাটির ভাঁড়ে....
খুব জোরে জাপটে ধরতে ইচ্ছে করে মানুষটাকে, যাতে হাত ফস্কে পালাতে না পারে কোনোদিন...
সব বৃষ্টি অভিমানের হয় না, সব বৃষ্টি অযত্নের হয় না, সব বৃষ্টি অনাদরের হয় না, সব বৃষ্টি কান্না লুকোনোর হয় না।
কিছু বৃষ্টিতে দুটো মানুষ একে অপরকে ভালোবাসার, কাছে আসার আবদারে ভিজিয়ে দেয় আদ্যোপান্ত...।
স্ট্যাটাসঃ---০৫
কোনো ছেলে এগিয়ে এসে কথা বলতে চাইলেই, বা আপনার হাসি, চোখ বা আপনার গুণের প্রশংসা করলেই সে আপনার সাথে শুতে চাইছে! এমনটা প্লিজ ভাববেন না...।
কোনো মেয়ে রাত জেগে থাকা মানেই সে আপনার সাথে কথা বলার জন্য প্রস্তুত,
ভেঙে পড়ার সময় কাঁধ বাড়িয়ে দেওয়ার মানুষটাও একদিন তোমায় অবিশ্বাস করতে পারে, তোমায় সুন্দর জিনিস উপহার দেওয়ার মানুষটাও একদিন তোমার জীবনে বিষ ঢেলে দিতে পারে.....
তোমায় ভালোবেসে বুকে জড়িয়ে ধরা মানুষটাও একদিন তোমার বুকেই ছুরি বসাতে পারে....
তোমায় গোটা পৃথিবী মানা মানুষটাও একদিন তোমায় ফোন করে বলতে পারে "আমার ঠিক আর ভালো লাগছে না এই রিলেশনশিপে থাকতে".....
তোমায় নিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হওয়া মানুষটাও তোমার ফোনকলস ইগনোর করতে পারে, তোমার প্রোফাইল সারাদিন স্টক করে তোমায় নিয়ে নিজের বন্ধুমহলে বাজে কথা বলতে পারে.....
কাজেই নিজের আবেগকে সংযত করো, এখনকার দিনে বেশি আবেগপ্রবণ হওয়া অপরাধ, ভীষণ আবেগপ্রবণ মানুষরা যে কোনও কাউকে খুব অল্প সময়ে বিশ্বাস করে ফেলে। খুব আবেগপ্রবণ মানুষরা খুব অল্প সময়ে যে কোনো কাউকে বিশ্বাস করে নিজের সমস্ত গোপন কথা খুলে বলে দেয়....
আবেগহীন হওয়া যেমন অপরাধ, তেমনই খুব আবেগপ্রবণ হওয়াও অভিশাপ, যে অভিশাপ সারাজীবন নিজেকেই বহন করে নিয়ে বেড়াতে হয়....।
স্ট্যাটাসঃ---০৪
সব বৃষ্টি মনখারাপের হয় না, অসময়ে বৃষ্টি এলে হাতের মুঠোয় জল নিয়ে মাখিয়ে দিতে ইচ্ছে করে প্রিয় মানুষের গালে। গলায় সুর না থাকলেও গান গাইতে ইচ্ছে করে, ঠান্ডা হাওয়ায় ভিজতে ইচ্ছে করে...
ঠোঙা ভর্তি গরম জিলিপি নিয়ে রাস্তার ধারে টিনের শেডের নীচে দাঁড়িয়ে খেতে ইচ্ছে করে, লাল নীল কাগজের নৌকা বানিয়ে ভাসাতে ইচ্ছে করে....
ব্যাগের মধ্যে ছাতা ঢুকিয়ে কাছের মানুষের গা ঘেষে হাঁটতে ইচ্ছে করে, রাস্তায় জমা কাদাজলে জুতো খুলে লাফাতে ইচ্ছে করে.....
গলির ভেতর ঢুকে ঠোঁট ঠোঁট ঢুকিয়ে চুমু খেতে ইচ্ছে করে, একটা সাইকেল কারোর কাছ থেকে ধার নিয়ে কোনো একটা অচেনা জায়গায় চলে যেতে ইচ্ছে করে, যেখানে কেউ আমাদের চিনবে না। নামহীন স্টেশনে বসে দুকাপ চা খেতে ইচ্ছে করে মাটির ভাঁড়ে....
খুব জোরে জাপটে ধরতে ইচ্ছে করে মানুষটাকে, যাতে হাত ফস্কে পালাতে না পারে কোনোদিন...
সব বৃষ্টি অভিমানের হয় না, সব বৃষ্টি অযত্নের হয় না, সব বৃষ্টি অনাদরের হয় না, সব বৃষ্টি কান্না লুকোনোর হয় না।
কিছু বৃষ্টিতে দুটো মানুষ একে অপরকে ভালোবাসার, কাছে আসার আবদারে ভিজিয়ে দেয় আদ্যোপান্ত...।
স্ট্যাটাসঃ---০৫
কোনো ছেলে এগিয়ে এসে কথা বলতে চাইলেই, বা আপনার হাসি, চোখ বা আপনার গুণের প্রশংসা করলেই সে আপনার সাথে শুতে চাইছে! এমনটা প্লিজ ভাববেন না...।
কোনো মেয়ে রাত জেগে থাকা মানেই সে আপনার সাথে কথা বলার জন্য প্রস্তুত,
এমনটাও ভাববেন না প্লিজ....।
কোনো ছেলে যদি বারবার চাকরির পরীক্ষায় অসফল হয়, তার মানেই সে আর কোনোদিন কোনোকিছু করতে পারবে না, তার জীবনটা নষ্ট, এমনটা ভাববেন না। একটু ভরসা রাখুন, ঠিক পারবে....
কোনো মেয়ে যদি বিয়ের পর চাকরি করতে চায়, তার মানেই যে সে আর শশুর বাড়ির দায়িত্ব নেবে না, শশুর শাশুড়িকে দেখবে না, এমনটা ভাববেন না প্লিজ, দেখবেন দুদিকটাই ঠিক সামলে নেবে....
প্রেমিকা ছেড়ে যাওয়ার সময় কোনো ছেলে যদি কান্নাকাটি করে, প্রেমিকাকে আটকাতে চায়, তারমানেই যে ছেলেটি আর কোনো মেয়ে পাবে না, বা ছেলেটি ভীতু, দুর্বল এমনটা ভাববেন না। আসলে যে ভালোবাসে, সে তার কাছের মানুষকে কিছুতেই ছাড়তে চায় না, শেষ অবধি চেষ্টা করে আটকানোর....
কোনো মেয়ে যদি নিজের ভালোবাসার মানুষের ভুলগুলো বারবার ক্ষমা করে দেয়, তারমানেই যে মেয়েটি নির্ভরশীল ছেলেটির উপর তাই ভুলগুলো ক্ষমা করে দিচ্ছে, এমনটা নয়। আসলে ভালোবাসার মানুষকে আমরা বারবার সুযোগ দিতে ভালোবাসি.....
মেয়েটা মা হতে চাইছে না মানেই মেয়েটার শারীরিক সমস্যা আছে, বা মেয়েটির বৈবাহিক জীবন সুখের নয়, এমনটা ভাববেন না প্লিজ। মা হওয়াটা একটা চয়েজ, একটা নিজস্ব স্বাধীন অধিকার....
ছেলেটি চুপচাপ থাকে মানেই সে ভীষণ অহংকারী, দাম্ভিক কিংবা হয়তো আনস্মার্ট, কথা বলতে পারে না, এমনটা ভাববেন না প্লিজ। কেউ কেউ নিজের মনের মতো মানুষ খুঁজে বেড়ায় কথা বলার জন্য, সবার সাথে মিশতে পারে না...
দূর থেকে অনেকেই অনেককিছু বিচার করে, কিন্তু কাছ থেকে একবার মিশে দেখুন, কথা বলে দেখুন, সবাই সমান নয়....
তাই দূর থেকে বিচার করা বন্ধ করুন...।
স্ট্যাটাসঃ---০৬
শুনুন, কোনো মেয়ে যদি নিজের প্রেমিকের সাথে ঘনঘন ফেসবুকে ছবি আপলোড করে!
কোনো ছেলে যদি বারবার চাকরির পরীক্ষায় অসফল হয়, তার মানেই সে আর কোনোদিন কোনোকিছু করতে পারবে না, তার জীবনটা নষ্ট, এমনটা ভাববেন না। একটু ভরসা রাখুন, ঠিক পারবে....
কোনো মেয়ে যদি বিয়ের পর চাকরি করতে চায়, তার মানেই যে সে আর শশুর বাড়ির দায়িত্ব নেবে না, শশুর শাশুড়িকে দেখবে না, এমনটা ভাববেন না প্লিজ, দেখবেন দুদিকটাই ঠিক সামলে নেবে....
প্রেমিকা ছেড়ে যাওয়ার সময় কোনো ছেলে যদি কান্নাকাটি করে, প্রেমিকাকে আটকাতে চায়, তারমানেই যে ছেলেটি আর কোনো মেয়ে পাবে না, বা ছেলেটি ভীতু, দুর্বল এমনটা ভাববেন না। আসলে যে ভালোবাসে, সে তার কাছের মানুষকে কিছুতেই ছাড়তে চায় না, শেষ অবধি চেষ্টা করে আটকানোর....
কোনো মেয়ে যদি নিজের ভালোবাসার মানুষের ভুলগুলো বারবার ক্ষমা করে দেয়, তারমানেই যে মেয়েটি নির্ভরশীল ছেলেটির উপর তাই ভুলগুলো ক্ষমা করে দিচ্ছে, এমনটা নয়। আসলে ভালোবাসার মানুষকে আমরা বারবার সুযোগ দিতে ভালোবাসি.....
মেয়েটা মা হতে চাইছে না মানেই মেয়েটার শারীরিক সমস্যা আছে, বা মেয়েটির বৈবাহিক জীবন সুখের নয়, এমনটা ভাববেন না প্লিজ। মা হওয়াটা একটা চয়েজ, একটা নিজস্ব স্বাধীন অধিকার....
ছেলেটি চুপচাপ থাকে মানেই সে ভীষণ অহংকারী, দাম্ভিক কিংবা হয়তো আনস্মার্ট, কথা বলতে পারে না, এমনটা ভাববেন না প্লিজ। কেউ কেউ নিজের মনের মতো মানুষ খুঁজে বেড়ায় কথা বলার জন্য, সবার সাথে মিশতে পারে না...
দূর থেকে অনেকেই অনেককিছু বিচার করে, কিন্তু কাছ থেকে একবার মিশে দেখুন, কথা বলে দেখুন, সবাই সমান নয়....
তাই দূর থেকে বিচার করা বন্ধ করুন...।
স্ট্যাটাসঃ---০৬
শুনুন, কোনো মেয়ে যদি নিজের প্রেমিকের সাথে ঘনঘন ফেসবুকে ছবি আপলোড করে!
কোনো ছেলে যদি নিজের প্রেমিকাকে ডেডিকেট করে চারটে কবিতার লাইন লেখে,
তাতে আপনার এত ফাটে কেন?
কোনো মেয়ে যদি প্রেমিকের কাছ থেকে পাওয়া উপহার হোয়াটস এপের স্ট্যাটাসে দেয়, কোনো মধ্যবয়স্ক লোক যদি নিজের স্ত্রীর জন্মদিন সেলিব্রেট করার ছবি ফেসবুকের স্টোরিতে দেয়, তাতে আপনার সমস্যা কোথায়?
কোনো ছেলে যদি ভিড় রাস্তায় নিজের প্রেমিকাকে প্রপোজ করে, কোনো মেয়ে যদি তিনবেলা তার প্রেমিককে "খাওয়া হলো" কিনা জিগ্যেস করে, তাতেই বা আপনার কেন মনে হয় সবই আদিখ্যেতা?
কোনো স্ত্রী যদি রাতের খাবারটা স্বামীর হাতে খেতে চায়, কোনো পুরুষ যদি স্ত্রী ঘুম থেকে ওঠার আগে তার জন্য চা বানিয়ে নিয়ে যায় বেডরুমে, তাতেই বা আপনার কেন মনে হয় তারা ভীষণ ন্যাকা?
কোনো ছেলে যদি নিজের প্রেমিকার নামের প্রথম অক্ষরটা ট্যাটু করায় নিজের হাতে, কোনো মেয়ে যদি ভিড় ট্রেনে তার প্রেমিককে জড়িয়ে ধরে থাকে, তাহলে অসুবিধেটা কোথায়?
না কোনো ন্যাকামি নয়, না কোনো আদিখ্যেতা নয়, এটাও ভালোবাসা, ভালোবাসায় কেউ চুপ শান্ত ধীর স্থির হয়ে যায়, আবার কেউ কেউ চিৎকার করে নিজের ভালোবাসাকে সকলের সামনে প্রকাশ করতে চায়...
সবকিছুতেই এত বিচার কেন করেন? যে যার মতো করে ভালোবাসে, ভালোবাসতে দিন...
যদি বলেন "শো অফ" করছে, তাতেই বা কি হয়েছে! ভালোবাসারই তো "শো অফ" করছে, ভালোবাসাই তো ছড়িয়ে দিচ্ছে! রাগ হিংসে, নোংরামি তো ছড়াচ্ছে না...
ভালোবাসার "শো অফ" করা ভালো, তাতে দুটো মানুষকে দেখে আর পাঁচটা মানুষ নিজের প্রেমিক প্রেমিকার কথা ভাবে ব্যস্ত ট্রাফিক জ্যামে দাঁড়িয়ে....
জীবনটা কোনো কবিতা বা সাহিত্য নয়, যে নিজের জীবনটাকে যেভাবে পারে আনন্দ করে, উপভোগ করে বাঁচুক, শুধু অন্যের ক্ষতি না করলেই হলো....
দয়া করে কাউকে আপনার নিজের মতো করে বিচার করবেন না, জীবনটা জটিল না করে সহজ ভাবে বাঁচাই হলো জীবন থেকে পাওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার, সবার এই উপহার পাওয়ার অধিকার আছে....।
স্ট্যাটাসঃ---০৭
সম্পর্ক বলতেই আমাদের মাথায় আসে একজন নারী ও একজন পুরুষ, কি তাইতো! সেই কারণেই হয়তো দুজন মেয়ে বা দুজন ছেলে যখন একসঙ্গে সংসার করতে চায়, তখন আমাদের মধ্যে অনেকেরই চোখ মাথায় উঠে যায়, কিংবা অনেকেরই হাসিতে ফেটে পড়তে ইচ্ছে করে।
সম্পর্ক সবসময় নারী ও পুরুষের ভেতর হয় না, দুটো মানুষের ভেতর হয়। সেই দুটো মানুষ দুজন নারী হতে পারে, দুজন পুরুষ হতে পারে, আবার দুজন নারী পুরুষও হতে পারে....
দুটো মানুষ নিজের ইচ্ছেতে যখন একসঙ্গে থাকতে চায়, সেখানে নাক গলানোটাকে, তাদের একসঙ্গে থাকতে না দেওয়াকে, জোর করে তাদের আলাদা করে দেওয়াকে কি বলে জানেন? অপরাধ! আপনি যদি এই কাজটি করে থাকেন, তাহলে আপনি অপরাধী🙂
শুনুন, নারী বা পুরুষ নয়, একজন মানুষ হিসেবে মানুষকে আগে সম্মান করতে শিখুন, মানুষ হয়ে মানুষের ইচ্ছেকে, চিন্তা ধারাকে সম্মান করতে শিখুন। নিজের পছন্দ অপছন্দকে অন্যের উপর চাপিয়ে দেবেন না....
যারা ভালোবাসে, তাদের ধর্ম জাতপাত লিঙ্গের ভিত্তিতে আলাদা করে দেবেন না, বরং তাদের এক করে দিন, তাদের এক হতে সাহায্য করুন, দেখবেন আপনিও আপনার ভালোবাসার মানুষের সাথে থাকতে পারবেন...
আপনি অন্নেক শান্তি পাবেন, আপনার ভেতরে একটা আশ্চর্যরকম শক্তি কাজ করবে, আপনার মনে হবে আপনি সমাজের কিছু চিরাচরিত গোঁড়ামি, কুসংস্কার, ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে একটা জয় হাসিল করেছেন। আপনি জিতে গেছেন, আর এভাবেই আমরা একদিন জিতে যাবো হয়তো....।
কোনো মেয়ে যদি প্রেমিকের কাছ থেকে পাওয়া উপহার হোয়াটস এপের স্ট্যাটাসে দেয়, কোনো মধ্যবয়স্ক লোক যদি নিজের স্ত্রীর জন্মদিন সেলিব্রেট করার ছবি ফেসবুকের স্টোরিতে দেয়, তাতে আপনার সমস্যা কোথায়?
কোনো ছেলে যদি ভিড় রাস্তায় নিজের প্রেমিকাকে প্রপোজ করে, কোনো মেয়ে যদি তিনবেলা তার প্রেমিককে "খাওয়া হলো" কিনা জিগ্যেস করে, তাতেই বা আপনার কেন মনে হয় সবই আদিখ্যেতা?
কোনো স্ত্রী যদি রাতের খাবারটা স্বামীর হাতে খেতে চায়, কোনো পুরুষ যদি স্ত্রী ঘুম থেকে ওঠার আগে তার জন্য চা বানিয়ে নিয়ে যায় বেডরুমে, তাতেই বা আপনার কেন মনে হয় তারা ভীষণ ন্যাকা?
কোনো ছেলে যদি নিজের প্রেমিকার নামের প্রথম অক্ষরটা ট্যাটু করায় নিজের হাতে, কোনো মেয়ে যদি ভিড় ট্রেনে তার প্রেমিককে জড়িয়ে ধরে থাকে, তাহলে অসুবিধেটা কোথায়?
না কোনো ন্যাকামি নয়, না কোনো আদিখ্যেতা নয়, এটাও ভালোবাসা, ভালোবাসায় কেউ চুপ শান্ত ধীর স্থির হয়ে যায়, আবার কেউ কেউ চিৎকার করে নিজের ভালোবাসাকে সকলের সামনে প্রকাশ করতে চায়...
সবকিছুতেই এত বিচার কেন করেন? যে যার মতো করে ভালোবাসে, ভালোবাসতে দিন...
যদি বলেন "শো অফ" করছে, তাতেই বা কি হয়েছে! ভালোবাসারই তো "শো অফ" করছে, ভালোবাসাই তো ছড়িয়ে দিচ্ছে! রাগ হিংসে, নোংরামি তো ছড়াচ্ছে না...
ভালোবাসার "শো অফ" করা ভালো, তাতে দুটো মানুষকে দেখে আর পাঁচটা মানুষ নিজের প্রেমিক প্রেমিকার কথা ভাবে ব্যস্ত ট্রাফিক জ্যামে দাঁড়িয়ে....
জীবনটা কোনো কবিতা বা সাহিত্য নয়, যে নিজের জীবনটাকে যেভাবে পারে আনন্দ করে, উপভোগ করে বাঁচুক, শুধু অন্যের ক্ষতি না করলেই হলো....
দয়া করে কাউকে আপনার নিজের মতো করে বিচার করবেন না, জীবনটা জটিল না করে সহজ ভাবে বাঁচাই হলো জীবন থেকে পাওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার, সবার এই উপহার পাওয়ার অধিকার আছে....।
স্ট্যাটাসঃ---০৭
সম্পর্ক বলতেই আমাদের মাথায় আসে একজন নারী ও একজন পুরুষ, কি তাইতো! সেই কারণেই হয়তো দুজন মেয়ে বা দুজন ছেলে যখন একসঙ্গে সংসার করতে চায়, তখন আমাদের মধ্যে অনেকেরই চোখ মাথায় উঠে যায়, কিংবা অনেকেরই হাসিতে ফেটে পড়তে ইচ্ছে করে।
সম্পর্ক সবসময় নারী ও পুরুষের ভেতর হয় না, দুটো মানুষের ভেতর হয়। সেই দুটো মানুষ দুজন নারী হতে পারে, দুজন পুরুষ হতে পারে, আবার দুজন নারী পুরুষও হতে পারে....
দুটো মানুষ নিজের ইচ্ছেতে যখন একসঙ্গে থাকতে চায়, সেখানে নাক গলানোটাকে, তাদের একসঙ্গে থাকতে না দেওয়াকে, জোর করে তাদের আলাদা করে দেওয়াকে কি বলে জানেন? অপরাধ! আপনি যদি এই কাজটি করে থাকেন, তাহলে আপনি অপরাধী🙂
শুনুন, নারী বা পুরুষ নয়, একজন মানুষ হিসেবে মানুষকে আগে সম্মান করতে শিখুন, মানুষ হয়ে মানুষের ইচ্ছেকে, চিন্তা ধারাকে সম্মান করতে শিখুন। নিজের পছন্দ অপছন্দকে অন্যের উপর চাপিয়ে দেবেন না....
যারা ভালোবাসে, তাদের ধর্ম জাতপাত লিঙ্গের ভিত্তিতে আলাদা করে দেবেন না, বরং তাদের এক করে দিন, তাদের এক হতে সাহায্য করুন, দেখবেন আপনিও আপনার ভালোবাসার মানুষের সাথে থাকতে পারবেন...
আপনি অন্নেক শান্তি পাবেন, আপনার ভেতরে একটা আশ্চর্যরকম শক্তি কাজ করবে, আপনার মনে হবে আপনি সমাজের কিছু চিরাচরিত গোঁড়ামি, কুসংস্কার, ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে একটা জয় হাসিল করেছেন। আপনি জিতে গেছেন, আর এভাবেই আমরা একদিন জিতে যাবো হয়তো....।
স্ট্যাটাসঃ---০৮
"হিংসে" শব্দটা খুবই ছোট, কিন্তু এই ছোট্ট শব্দটাই আমাদের গোটা একটা জীবনকে শেষ করে দিতে পারে, আমাদের ক্লান্ত চোখ থেকে ঘুম আর শান্ত মন থেকে শান্তি কেড়ে নিতে পারে.....
আমরা বেশিরভাগ কেউই প্রিভিলেজড নই, সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মাইনি, আমাদেরকে প্রতিটা পরিস্থিতি সাথে লড়তে হয়, আমরা যে সব লড়াইয়ে জিতি, এমনটা নয়!....
আমরা হেরে যাই, মুখ থুবড়ে পড়ি, ফ্রাস্ট্রেটেড হই, তারপর আমরা নিজেদের সাথে অন্যের তুলনা করি, তার থেকেই জন্ম নেয় এক গভীর হিংসেবোধ....
পৃথিবীতে খুব কম মানুষই এমন আছে, যাদের ভেতর কোনোকিছুর জন্য কোনো হিংসেবোধ কাজ করে না...
আমরা মুখ থুবড়ে পড়া মানুষরা বেশিরভাগ সময় অন্যের সাথে নিজের তুলনা টেনে আনি খুব তুচ্ছ থেকে তুচ্ছ ব্যাপারে....
অমুকের এত টাকা আছে অথচ ওর থেকে আমি পরিশ্রম করি বেশি তবুও আমার টাকা নেই কেন....
তমুককে দেখতে কত সুন্দর! আমাকে দেখতে নয় কেন....
অমুকের বর কত যত্ন নেয়, অমুকের প্রেমিকা একটুও সন্দেহ করে না, অমুকের প্রেমিক কত কি উপহার দেয়, তমুকের মা বাবা কত ভালো, নিজের ছেলে মেয়ের মন বুঝতে পারে, তমুকের পরিবার কত ভালো.....
যেন মনে হয় সবাই খুব ভালো আছে এবং সুস্থ ও সুন্দর আছে একমাত্র আমাকে বাদ দিয়ে....
বিষয়টা হলো, হিংসে শুধুমাত্র মানুষকে নয়, সম্পর্কগুলোকেও শেষ করে দেয়....
শুনুন, আমরা মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে মেয়েরা কেউই সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মাইনি, তাই আমাদের সমস্ত ইচ্ছেগুলোকে আমাদেরই পূরণ করতে হবে.....
হ্যাঁ আমাদের লড়াই করতে হবে, জীবনে লড়াই না করে যারা সবকিছু পেয়ে যায়, তাদের সাফল্যের কাহিনী বা ব্যর্থতার গল্প শোনার জন্য কারোর ভেতর কোনো ইন্টারেস্ট থাকে না....
আপনি লড়াই করে সাফল্য পেলে সব্বাই আপনাকে নিজের অনুপ্রেরণা বানাবে, যাতে আপনার সাফল্যের কাহিনী শুনে অনেকে অনুপ্রাণিত হতে পারে, নিজেকে এমন ভাবে তৈরি করুন....
নিজের ভেতরের হিংসেটাকে জেদে পরিণত করুন, আর অন্য অনেকের চেয়ে নিজেকে অনেক উঁচুতে প্রতিষ্ঠিত করুন....
আমরা যারা নিজের কাছে যা কিছু আছে, তা নিয়ে সন্তুষ্ট নই, তাদের মনের ভেতর একটাই জেদ থাকা উচিত,
"অমুকের কাছে যা কিছু আছে, একদিন আমার কাছেও থাকবে, কিংবা তার থেকেও বেশি থাকবে" ব্যস এটুকু ভাবলেই আমরা অনেকটা এগিয়ে যেতে পারবো....
আজ হয়তো হচ্ছে না, একদিন ঠিক হবে, শুধু বারবার ভেঙে পড়ার পরেও উঠে দাঁড়ানোর জেদ থাকতে হবে....
বারবার ব্যর্থতা থেকে ফ্রাস্ট্রেশন আসবেই, যতবেশি ফ্রাস্ট্রেটেড হই আমরা, ততবেশি কাজ করার শক্তি কমে আসে...
হ্যাঁ আমাদের কাছে হয়তো অনেককিছুই নেই, কিন্তু আমাদের ভেতর জেদ থাকলে একদিন আমরা সাফল্য পাবোই, কোনো না কোনো ভাবে পাবোই....।
স্ট্যাটাসঃ---০৯
এক একটা সম্পর্ক খুব ধুমধাম করে শুরু হয়, দুটো মানুষই রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দেয়, দেখা হলেই চুমু খায় ঘনঘন, জড়াজড়ি করে নিজেদের ছবি দেয় ফেসবুকে, সেকেন্ডে সেকেন্ডে কাছের মানুষকে নিয়ে গুচ্ছ কবিতা লেখে....
তারপর যখন খুব ধীরে ধীরে কাছের মানুষকে খুব কাছ থেকে চিনতে শুরু করে, তখন একঘেয়েমি লাগে, বিরক্ত লাগে, উল্টোদিকের মানুষটার ছোট ছোট খুঁত গুলো বড্ড বেশি করে চোখে লাগে.....
দিনরাত ঝগড়া, অশান্তি, নোংরা খিস্তি, দোষারোপ, অপমান, পাল্টা অপমান চলতে থাকে...
অসহ্য লাগে, কতক্ষণে মুক্তি, আর কতক্ষণ! চারদশকের প্রেম কাটিয়ে আলটিমেটলি যখন সম্পর্কটা একদিন শেষ হয়, ভেতর ভেতর একটা উথালপাথাল হয় তখন, বাইরে কিন্তু দিব্যি ভালো থাকার মুখোশ পরে ঘোরে.....
এদিকে দুমড়ে মুচড়ে শেষ হয়ে যায় দুটো মানুষের রাতের ঘুম, সকালের ব্রেকফাস্ট, দুপুরের খাবার, বিকেলে চায়ের কাপ হাতে বারান্দায় দাঁড়ানো, সন্ধের বাজার....
মনে হয় যেমনই ছিল, তবুও তো ছিল মানুষটা, দমবন্ধ করা চিনচিনে যন্ত্রণা আঁকড়ে ধরে আষ্টেপৃষ্ঠে, না পারে চিৎকার করে কেঁদে উগরে দিতে সমস্তটা, আর না পারে পোয়াতি মেয়ের মতো দীর্ঘসময় বয়ে নিয়ে বেড়াতে দুঃখগুলো....
ঠিক এই মুহূর্তে এমন একটা মানুষ দরকার, যার সাথে কথা বললেই মন ভালো হয়ে যায়....
তাকে আমরা কক্ষনো দেখবো না, তাকে খুব কাছ থেকে জানার চেষ্টাও করবো না, বড্ড অচেনা হবে মানুষটা, টুকটাক কথোপকথনের মধ্যে দিয়ে তাকে যতটুকু ছুঁয়ে থাকা যায়, অনুভব করা যায়, স্পর্শ করা যায়, ব্যস ওটুকুই, এর বেশি কিছু নয়....
আসলে, কিছু মানুষ নরম রোদ হয়ে আমাদের গালে আলতো হাত বুলিয়ে দিতে জানে...
কিছু মানুষের প্রেমে কোনোদিন পড়তে নেই, প্রেমে পড়লে মানুষগুলো সস্তা হয়ে যায়, অধিকার বোধ জন্মে গেলে ভালো লাগা উবে যায়....
সব ঘর তো নিজের হয় না তাই না! তবুও তো আমরা নিজেদের ঘর ভেবে কত আশ্রয়কে আপন করে ফেলি, কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলি, কত বেনামি কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ি, কত স্মৃতি জমিয়ে ফেলি.....
কিছু মানুষকে বাস্তবে রাখতে নেই, জীবনের খাতায় রাখতে নেই, শুধু মনখারাপের দিনে তাদের কাছে যেতে হয়....
কিছু মানুষকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে নেই, আবার হুটহাট খরচ করে ফেলতেও নেই, কিছু মানুষকে স্রেফ আজীবন ধরে স্মৃতির পাতায় সঞ্চয় করে যেতে হয়.....।
স্ট্যাটাসঃ---১০
#আমরা_যাঁরা_বোকা_মূর্খ_সব_হারানোর_দলে ।
কিছু মানুষ বড্ড বোকা হয়, সবার চালাকি বুঝেও না বোঝার ভান করে-
নিজের গোটাজীবনটা পার করে দেয়...।
নিজের জীবন নিয়ে কখনো বেশি কিছু ভাবে না এই মানুষগুলো, বারবার ঠকে সবার কাছে তবুও সবার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেয় হাসিমুখে...
খুব সামান্য ইনকামেই এই মানুষগুলোর দিন চলে যায়, এই সাদামাটা মানুষগুলোর কোনো বিলাসিতা নেই, কোনও চাহিদা নেই, কোনো প্রলোভন নেই, কারোর প্রতি কোনো হিংসে নেই, কোনো লোক দেখানো আড়ম্বর নেই...
কেউ বাজে রসিকতা করলেও এই বোকাসোকা মানুষগুলো চুপচাপ সরে আসে, কারোর সাথে কোনো তর্ক বিতর্কে জড়ায় না। এই মানুষগুলোর ভেতর প্রতিবাদ নেই, চিৎকার নেই, আঘাত পেলে মুখ বুজে সরে আসে, কাউকে নিয়ে কোনো বাজে মন্তব্য কোথাও করে না...
কাউকে ভালোবাসলেও নিজের ভেতর চেপে রাখে, নিজের মনের কথাগুলো কখনো কাউকে বুঝতে দেয় না....
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সারাটাদিন কাজ করলেও একটুও ক্লান্তি নেই মানুষগুলোর চোখেমুখে, বরং একটা স্নিগ্ধ হাসি লেগে থাকে সবসময় ঠোঁটের কোনায়...
খুব অল্প টাকা নিজের জন্য রেখে বাকিটা নিজের পরিবারের হাতে তুলে দিতে জানে এই মানুষগুলো, যদিও এই সহজ সরল মানুষগুলো নিজের পরিবারের কাছেই বোঝা হয়ে থেকে যায় গোটাজীবন....
সামান্য ভুল হলেই মানুষগুলোকে শুনতে হয় "এইটুকু কাজও মন দিয়ে করতে পারিস না? তোর দ্বারা কিচ্ছু হবে না".....
কিছু মানুষ নিজের সবটুকু বিলিয়ে দেওয়ার পরও অযোগ্য হয়ে থেকে যায় প্রিয়জনদের কাছে....
এই ভিড়ের মধ্যে মিশে যাওয়া আড়ম্বরহীন মানুষগুলো মুখচোরা হয় খুব, বিয়েবাড়িতে ছবি তোলার সময় একদম পেছনের সারিতে থাকে, রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে একদম কোনায় চেপে বসে, চামচের বদলে হাত ব্যবহার করে খাওয়ার সময়....
মানুষগুলো নিজের ছবি তুলতে ভালোবাসে না, কিন্তু অন্য কেউ ছবি তুলে দিতে বললে খুব যত্নে ছবি তুলে দেয়...
এই মানুষগুলো সারাজীবন বুকের ভেতর পাথর জমিয়ে সবার সামনে হাসতে পারে, সবার মন ভালো করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে, কাউকে গোমড়ামুখো দেখতে পছন্দ করে না.....
এই মানুষগুলো নিজেদেরকে লুকিয়ে রাখে সবার আড়ালে, সবার দোষ নিজের ঘাড়ে চাপিয়ে নিয়ে হাসতে হাসতে সরে যেতে পারে অন্ধকারে....
নিজের মানুষদের কাছেই আজীবন ঠকতে ঠকতে ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যায় মানুষগুলো, তবুও তাঁরা কোনোদিন ব্যথায় কঁকিয়ে ওঠে না, কারোর বিরুদ্ধে কোথাও কোনো অভিযোগ জানায় না....
এত চালাক মানুষের ভিড়ে এরকম বোকাসোকা মানুষ কিছু থাকা ভালো, জীবনটা সহজ হয়....
এই মানুষগুলোই আমাদেকে ভালোবাসার, কর্তব্যবোধের, দায়িত্ববোধের আসল মানে শিখিয়ে দিয়ে যায়....।
স্ট্যাটাসঃ---১১
ছেড়ে যাওয়ার পর কিছু মানুষকে আর একটুও মনে পড়ে না, তারা কোথায় যেন হারিয়ে যায়।
নিজের জীবন নিয়ে কখনো বেশি কিছু ভাবে না এই মানুষগুলো, বারবার ঠকে সবার কাছে তবুও সবার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেয় হাসিমুখে...
খুব সামান্য ইনকামেই এই মানুষগুলোর দিন চলে যায়, এই সাদামাটা মানুষগুলোর কোনো বিলাসিতা নেই, কোনও চাহিদা নেই, কোনো প্রলোভন নেই, কারোর প্রতি কোনো হিংসে নেই, কোনো লোক দেখানো আড়ম্বর নেই...
কেউ বাজে রসিকতা করলেও এই বোকাসোকা মানুষগুলো চুপচাপ সরে আসে, কারোর সাথে কোনো তর্ক বিতর্কে জড়ায় না। এই মানুষগুলোর ভেতর প্রতিবাদ নেই, চিৎকার নেই, আঘাত পেলে মুখ বুজে সরে আসে, কাউকে নিয়ে কোনো বাজে মন্তব্য কোথাও করে না...
কাউকে ভালোবাসলেও নিজের ভেতর চেপে রাখে, নিজের মনের কথাগুলো কখনো কাউকে বুঝতে দেয় না....
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সারাটাদিন কাজ করলেও একটুও ক্লান্তি নেই মানুষগুলোর চোখেমুখে, বরং একটা স্নিগ্ধ হাসি লেগে থাকে সবসময় ঠোঁটের কোনায়...
খুব অল্প টাকা নিজের জন্য রেখে বাকিটা নিজের পরিবারের হাতে তুলে দিতে জানে এই মানুষগুলো, যদিও এই সহজ সরল মানুষগুলো নিজের পরিবারের কাছেই বোঝা হয়ে থেকে যায় গোটাজীবন....
সামান্য ভুল হলেই মানুষগুলোকে শুনতে হয় "এইটুকু কাজও মন দিয়ে করতে পারিস না? তোর দ্বারা কিচ্ছু হবে না".....
কিছু মানুষ নিজের সবটুকু বিলিয়ে দেওয়ার পরও অযোগ্য হয়ে থেকে যায় প্রিয়জনদের কাছে....
এই ভিড়ের মধ্যে মিশে যাওয়া আড়ম্বরহীন মানুষগুলো মুখচোরা হয় খুব, বিয়েবাড়িতে ছবি তোলার সময় একদম পেছনের সারিতে থাকে, রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে একদম কোনায় চেপে বসে, চামচের বদলে হাত ব্যবহার করে খাওয়ার সময়....
মানুষগুলো নিজের ছবি তুলতে ভালোবাসে না, কিন্তু অন্য কেউ ছবি তুলে দিতে বললে খুব যত্নে ছবি তুলে দেয়...
এই মানুষগুলো সারাজীবন বুকের ভেতর পাথর জমিয়ে সবার সামনে হাসতে পারে, সবার মন ভালো করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে, কাউকে গোমড়ামুখো দেখতে পছন্দ করে না.....
এই মানুষগুলো নিজেদেরকে লুকিয়ে রাখে সবার আড়ালে, সবার দোষ নিজের ঘাড়ে চাপিয়ে নিয়ে হাসতে হাসতে সরে যেতে পারে অন্ধকারে....
নিজের মানুষদের কাছেই আজীবন ঠকতে ঠকতে ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যায় মানুষগুলো, তবুও তাঁরা কোনোদিন ব্যথায় কঁকিয়ে ওঠে না, কারোর বিরুদ্ধে কোথাও কোনো অভিযোগ জানায় না....
এত চালাক মানুষের ভিড়ে এরকম বোকাসোকা মানুষ কিছু থাকা ভালো, জীবনটা সহজ হয়....
এই মানুষগুলোই আমাদেকে ভালোবাসার, কর্তব্যবোধের, দায়িত্ববোধের আসল মানে শিখিয়ে দিয়ে যায়....।
স্ট্যাটাসঃ---১১
ছেড়ে যাওয়ার পর কিছু মানুষকে আর একটুও মনে পড়ে না, তারা কোথায় যেন হারিয়ে যায়।
সাবানের গ্যাজার মতো হয় কিছু মানুষ, যতক্ষণ গায়ের মধ্যে ঘষি, ততক্ষণই গ্যাজা হয়,
ধুয়ে নিলেই আর কিচ্ছু থাকে না....।
ছেড়ে যাওয়ার পর এক একটা মানুষের গায়ের গন্ধ, কাছে আসার স্পর্শটুকুও আর মনে থাকে না,
ছেড়ে যাওয়ার পর এক একটা মানুষের গায়ের গন্ধ, কাছে আসার স্পর্শটুকুও আর মনে থাকে না,
কেমন যেন সব থিতিয়ে যায়। অথচ মানুষটা থাকাকালীন যতবার ছেড়ে যেতে চেয়েছে, আমরা কান্নাকাটি করেছি, বৃষ্টির দিনে একসাথে ভিজেছি, লম্বা ঘাসের উপর বসে একে অপরের চোখের দিকে ঘন্টার পর ঘন্টা তাকিয়ে থেকেছি....
কত কথা বলেছি, যা কিছু কোনোদিন কাউকে বলিনি, সব সবটা বলেছি….
কিন্তু মানুষটা আল্টিমেটলি যখন বিচ্ছিরিভাবে ছেড়ে যায়, তখন স্রেফ দুদিন মনখারাপ হয়, জ্বর আসে, ভাত খাওয়ার সময় গলা ধরে আসে, রাতে ঘুম পায় না, কান্না পায়, কিন্তু তারপর আর একটুও মনে থাকে না...
তার কাছে আসাও মনে থাকে না, ছেড়ে যাওয়াও মনে থাকে না, এমনকি তার দেওয়া উপহার দেখলেও খুব আবছা কিছু স্মৃতি মনে পড়ে, ভালো করে তার মুখটাও আর মনে পড়ে না....
কিছু মানুষ জড়িয়ে পড়তে জানে না, তাই তারা ছেড়ে যাওয়ার পরও তেমন কোনো আক্ষেপ থাকে না, তাদের ফিরে আসার অপেক্ষাও না....
খুব সহজেই কিছু মানুষকে আমরা ভুলে যাই, তারা আমাদের অভিমানে, অভিযোগে, প্রার্থনায়, কোথাওই থাকে না....।
স্ট্যাটাসঃ---১২
#আমরা_ভীষণ_সাদামাটা_ও_অযোগ্য ।
কিছু মানুষের প্রতি চূড়ান্ত শারীরিক আকর্ষণবোধ জন্মালেও আমরা কখনোই তাদেরকে কাছে পাওয়ার স্বপ্ন দেখি না....
আমরা কিছু মানুষকে কোনোদিন ভুলেও স্পর্শ করার স্বপ্ন দেখি না। আমরা তাদেরকে সবসময় দূর থেকে ভালোবাসি, শ্রদ্ধা করি, ইনফ্যাক্ট তাদেরকে সামনে থেকে দেখার দুরন্ত ইচ্ছেটাকেও চেপে রাখি ভীষণ ভাবে.....
কিছু মানুষের প্রতি শারীরিক আকর্ষণের থেকেও বেশি মানসিক আকর্ষণ বোধ কাজ করে আমাদের ভেতরে....
মাঝেমধ্যে শুধু মনে হয় মানুষটাকে যদি একবার সামনে থেকে দেখতে পেতাম, তাহলে গোটাজীবনটা ওই মানুষটার নামে লিখে দিতাম.....
মাঝেমধ্যে মনে হয় মানুষটার সাথে যদি একটা মুহূর্ত দূর থেকেও কাটাতে পারতাম, তাহলেও আমাদের জীবনটা স্বার্থক হতো...
বেশি কিছু চাইতাম না, মানুষটার সাথে একটা সাদামাটা বিকেল কাটাতে চাইতাম....
কোনো একটা নদীর পাড়ে বসে আমাদের জীবনে ঘটে যাওয়া দুই একটা খারাপ ঘটনার কথা যদি শোনাতে পারতাম মানুষটাকে। অতীতের স্মৃতি মনে করতে করতে গলাটা ভারী হয়ে গেলে, চোখের কোনটা ভিজে উঠলে মানুষটা আমাদের দিকে একটা রুমাল এগিয়ে দিতো....
মায়ের দিব্যি কেটে বলছি, ওই রুমালটুকু নিয়েই আমরা ফিরে আসতাম ঘরে....
কিংবা মানুষটার সাথে জীবনে একবার হলেও পাহাড়ে যেতে চাইতাম। একটা সূর্য ওঠা ভোরের সাক্ষী থাকতাম আমরা দুজনেই, মানুষটাকে ন্যূনতম ছোঁয়ার চেষ্টা করতাম না...
শুধু দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখতাম রোদের প্রথম আলো যখন মানুষটার মুখে এসে পড়ে, তখন কাকে বেশি পবিত্র লাগে, ওই মানুষটাকে নাকি রোদের আলোটাকে?
মানুষটার কয়েকটা ছবি তুলে নিতাম লুকিয়ে লুকিয়ে, তারপর সারাজীবন আগলে আগলে মানুষটাকে জমিয়ে রাখতাম বুকের ভেতর। খুব কান্না পেলে ছবিটা দেখে কাঁদতাম, খুব আনন্দ হলে ছবিটার সাথে কথা বলতাম, খুব রাগ হলে ছবিটার সামনে চুপচাপ বসতাম....
কিংবা কোনো একটা বৃষ্টির দিনে আমরা দুজন পাশাপাশি বসে থাকতাম চোখে চোখ রেখে, ওই মুহূর্তটুকু আমরা লুকিয়ে বাঁচিয়ে রাখতাম....
ওই মুহূর্তটুকু কেড়ে নেওয়ার অধিকার কারোর কোনোদিন থাকতো না....
হ্যাঁ, সারাজীবন আমরা কিছু মানুষকে এভাবেই দূর থেকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে থাকতাম, এভাবেই মানুষটাকে ভালোবাসায়, অভিমানে, প্রার্থনায় রেখে দিতাম....
আসলে আমরা ভীষণ সাধারণ, দামি গিফ্টস দেওয়ার টাকা নেই আমাদের কাছে, বিশাল কিছু ল্যাভিস লাইফ আমরা কেউই লিড করি না, রাতের বেলা আমাদের ঘরে এখনো লোডশেডিং হয়, গরম লাগলে এখনো ছাদে মাদুর পেতে শুই....
কাছের মানুষটাকে দামি রেস্টুরেন্টে খাওয়ানোর মতো প্রিভিলেজড আমরা নই, এখনো আমরা সেদ্ধ ডালভাত খাই রোজ সকালে....
ডিগ্রি ফিগ্রী তেমন বিশাল নেই, সাধারণ চাকরি করি, দেখতেও অসাধারণ নই আমরা....
আমরা ভিড়ে মিশে যাওয়া লোক, আমাদের দিকে কারোর চোখ আটকে যায় না....
আমাদের দেখে কেউ কবিতা লেখে না, আমাদের জন্য কেউ শোবার ঘরে সুগন্ধি ফুল সাজিয়ে রাখে না....
আমরা ভীষণ সাদামাটা, আমাদের মতো মানুষদের যোগ্যতা খুবই কম হয়, যাঁকে আমরা ভালোবাসি, তাঁকে ছোঁয়ার অধিকার আমাদের থাকে না....
যাঁদের আমরা ভালোবাসি, আমরা তাঁদের কাছে চিরকালই অযোগ্য হয়েই থেকে যাই....
ভালোবাসার মানুষকে জীবনে না রাখতে পারাও একটা অভিশাপ.....
আর সেই অভিশাপটা আমরা চিরকাল বহন করি স্বগর্বে...।
স্ট্যাটাসঃ---১৩
#কিছু_প্রেম_অভিশাপ_হয়ে_যায় ।
যেসব ছেলে মেয়েরা তাদের প্রেমিক প্রেমিকাকে অত্যন্ত সন্দেহ করে, সবসময় নিজের হাতের মুঠোয় রাখতে চায়, সারাক্ষণ নজরদারি চালায় তাদের প্রেমিক প্রেমিকা কোথায় কি করছে! কার সাথে মিশছে, কতক্ষন ফেসবুকে অনলাইন আছে, রাতে কটা অবধি জেগে আছে বারবার চেক করে....
সারাদিন ফোনের ভেতর চিপকে থাকে, অন্য কোনো বন্ধু ফোন করলে ভয়ঙ্কর ভাবে নিজের প্রেমিক প্রেমিকাকে অপমান করে, রাগ করে, অভিমানে ফেটে পড়ে।
সবসময় "আদর করো, চুমু দাও, একটু ভালোবাসো" এই কথাগুলোই ঘ্যানঘ্যান করে বলতে থাকে, তাদের সাথে একটা সময়ের পর প্রেম করার ইচ্ছেটাই মরে যায়....
আমার প্যানপ্যানানি টাইপের প্রেম কোনোদিন পছন্দ নয়, যেখানে একটা মানুষ একটা মানুষের জন্য চুপচাপ অপেক্ষা করতে জানে না, যেখানে একটা মানুষ একটা মানুষকে ব্যক্তিগত জায়গা দেয় না, যেখানে একটা মানুষ একটা মানুষকে ছাড়তে জানে না, একজন অপরজনের স্বাধীনতায় বারবার হস্তক্ষেপ করে,
একটা মানুষ একটা মানুষকে বিশ্বাস করে না, সারাটাক্ষণ নিজের ঘেরাটোপের মধ্যে রাখে, বন্দিশালায় বন্দি করে রাখে, সেখানে আর যাই হোক প্রেম হতে পারে না, ভালোবাসা ধীরে ধীরে মরে যায়...
পজেসিভনেস একটা সময় পর্যন্ত ভালো লাগে, তারপর আর নয়...
প্রেম একটা খোলামেলা ছাদের মতো, যেখানে স্বেচ্ছায় দুটো মানুষ মাদুর পেতে খানিক বসতে পারে, গল্প করতে পারে, বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতে পারে, রাষ্ট্রদেশসমাজযৌনতাসম্পর্কসুখদুঃখবন্ধুবান্ধব নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে পারে....
বৃষ্টিতে গা ভিজিয়ে ঠায় বসে একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারে, একে অপরের ভুল ত্রুটি গুলো ধীরে ধীরে শুধরে দিতে পারে। প্রখর রোদে বেরিয়ে একসঙ্গে মিলে বাজারটা করতে পারে, একে অপরের অসুবিধে, সমস্যায় পাশে থাকতে পারে...
.
এরকম খোলামেলা মানুষের সাথে প্রেম করলে মানুষ নিজেকে উন্নত করতে শেখে...
যে মানুষটা পাশে থাকলে একটা আলসেমি ল্যাদখোর জীবন ভুলে আমাদের ভেতর দারুণ একটা জেদ কাজ করে, সারাটা দিন প্রচুর কাজ করেও ক্লান্তি আসে না চোখে মুখে, রাতের খাবারটা বেড়ে যে মানুষটা অপেক্ষা করতে জানে....
সেই মানুষটাকে পাশে পেলে জীবনটা সুন্দর হয়ে ওঠে....
নাচ শেখার যে ইচ্ছেটা মরে গিয়েছিল ভেতর ভেতর, সেই ইচ্ছেটাকে জাগিয়ে তুলতে পারে যে মানুষটা, সাঁতার কাটতে ভয় পাওয়া মানুষটাকে যে মানুষটা হাত ধরে জলে নামাতে পারে, পাহাড়ে উঠতে ভয় পাওয়া মানুষটাকে যে পাহাড়ে উঠিয়ে সূর্য ছোঁয়াতে পারে,
রান্না না জানা মানুষটাকে যে মানুষটা হাতে ধরে রান্না শেখাতে পারে, খুব অগোছালো জীবন যাপন করা মানুষটাকে যে মানুষটা ভোরবেলায় ঘুম থেকে উঠিয়ে কুয়াশা ভেজা ঘাসে হাঁটতে শেখায়,
সেরকম মানুষের সাথে ভালোবেসে সংসার করা হলো সৌভাগ্যের ব্যাপার, সবার কপালে জোটে না....।
স্ট্যাটাসঃ---১৪
দুইদিন টিউশনি করানোর পর তৃতীয় দিন ছাত্রীর মা আমায় ডেকে আমার হাতে একটা খাম দিয়ে বললো,
- কাল থেকে তোমার আর আমার মেয়েকে পড়াতে হবে না। তুমি দুই দিন আমার মেয়েকে পড়িয়েছো। আমি তোমাকে ১ মাসেরই টাকা দিলাম।
আমি অবাক হয়ে ছাত্রীর মাকে বললাম,
-- আন্টি কিছু মনে না করলে জানতে পারি আমার অপরাধটা কি?
আন্টি অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বললো,
- না, তোমার কোন অপরাধ নেই। এমনিতেই তোমাকে আসতে হবে না।
আমি তখন ছাত্রীর মাকে বললাম,
-- আন্টি আমি আপনার মেয়েকে ১ মাস পড়াই। তারপর যদি আপনার মনে হয় আমি আপনার মেয়েকে ঠিক মত পড়াতে পারছি না; তখন না হয় আমাকে বাদ দিয়ে দিবেন। আমার আপত্তি থাকবেনা।
এইবার ছাত্রীর মা আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
- আসলে আমার মেয়ে তোমার কাছে পড়তে চাচ্ছে না। শুধু ভালো পড়ালেই হয় না একটু দেখতে শুনতেও ভালো হতে হয়। তোমায় দেখলে না কি আমার মেয়ে ভয় পেয়ে যায়...
আমি আন্টির হাতে খাম দিয়ে বললাম,
-- টিউশনি করাতে হলে যে ফর্সা ভালো চেহারার অধিকারী হতে হয় তা আগে জানতাম না। যদি জানতাম তাহলে বিশ্বাস করেন আমি আপনার মেয়েকে পড়াতে আসতাম না...
ছাত্রীর বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় হাটছি আর কলেজ জীবনের কথা ভাবছি। কলেজে একবার একটা অনুষ্ঠানের উপস্থাপনার জন্য স্যার ভালো একজন উপস্থাপক খুঁজছিলেন। আমি সবার সামনে হাত তুলে বলেছিলাম,
- স্যার, আমি ভালো উপস্থাপনা করতে পারি। স্কুলে পড়ার সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমি উপস্থাপনা করতাম..
স্যার আমার ভালো করে দেখে হাসতে হাসতে বলেছিলো,
-- তোর মত কাউয়া(কাক) যদি উপস্থাপনা করে তাহলে অনুষ্ঠানে যে কয়জন মানুষ আসবে সেই মানুষগুলোও পালাবে...
স্যারের এই এক কথাতে রাতারাতি আমার নাম আবুল বাশার পিয়াস থেকে "কাউয়া বাশার পিয়াস" হয়ে গিয়েছিলো। তখন আর কেউ আমায় আবুল বাশার পিয়াস নামে চিনতো না। সবাই চিনতো "কাউয়া পিয়াস" নামে...
কয়েকদিন আগে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকা যাচ্ছিলাম। আমার পাশের সিটে বসেছিলো সুন্দরী একটা মেয়ে। আমি যখন আমার সিটে বসতে যাবো তখনি মেয়েটা নাক মুখ ওড়না দিয়ে চেপে ধরলো। বাস কিছু দূর যাবার পরেই মেয়েটা বাসের কন্ট্রাক্টরকে ডেকে বললো,
- আমায় এই সিটটা পাল্টে দেন তো। আমি অন্য কোথাও বসবো।
বাসের কন্ট্রাক্টর আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে তাকালো। তারপর মেয়েটাকে বললো,
-- আপা, এই লোকটা কি আপনার সাথে অসভ্যতামি করেছে? যদি কোনোরকম কিছু করে থাকে তাহলে বলেন। আমি এখনি লোকটাকে বাস থেকে নামিয়ে দিতেছি। কন্ট্রাক্টরের মুখ থেকে এমন কথা শুনে বাসের অন্য সব যাত্রীরা আমার উপর ক্ষেপে উঠলো। একজন লোক চিৎকার করে বললো,
~ অবশ্যই নোংরামি করেছে। তা না হলে আপা সিট ছেড়ে উঠতে যাবে কেন।
এক ভদ্রমহিলা মুখ বাঁকিয়ে বললো,
~ চেহারা দেখেই বুঝা যায় বদমাইশ টাইপ। এইসব কুলাঙ্গারদের জন্য মেয়েদের রাস্তাঘাটে চলাচলই এখন দায় হয়ে পড়েছে।
এমন একটা অবস্থা হয়ে পড়েছিলো যে বাসের সবাই মিলে এখন আমায় মারতে আসবে। আমি বহু কষ্টে সবাইকে থামিয়ে দিয়ে মেয়েটাকে বললাম,
-- আপনি আমার ছোট বোনের মত। আমি কি আপনার সাথে কোন নোংরামি করেছি?
মেয়েটা মাথা নিচু করে বললো,
- না।
আমি তখন বাসের যাত্রীদের বললাম,
-- ভাই আমার অপরাধ কি জানেন? আমার অপরাধ হলো আমি দেখতে কালো। আপনাদের মত সাদা চামড়ার কিছু মানুষ মনে করে আমাদের মত কালো মানুষের গা থেকে গন্ধ বের হয়। আপনাদের ধারণা পৃথিবীর সমস্ত খারাপ মানুষ কালোই হয়৷
যে ভদ্রমহিলা আমায় বদমাইশ, কুলাঙ্গার বলেছিলো সেই মহিলার কাছে গিয়ে বললাম,
-- আপনি আমার চেহারা দেখেই বুঝে গেলেন আমি বদমাইশ। বিশ্বাস করেন আমি কোনো বদমাইশি করছি তো দূরের কথা আজ পর্যন্ত কোনো মেয়ের দিকে খারাপ দৃষ্টিতে তাকাছি পর্যন্ত না। কিন্তু কেন জানি না এই মুহূর্তে আপনার সাথেই আমার বদমাইশি করতে ইচ্ছে করছে...।
নিউমার্কেট এসেছিলাম কিছু শপিং করতে। এমন সময় আমার রুমমেট রাকিব ফোন দিয়ে বললো,
- মেসে আসার সময় দোকান থেকে আমার জন্য একটা ফেয়ার এন্ড হ্যান্ডসাম ক্রিম নিয়ে আসিস তো। আমি তোকে পরে টাকা দিয়ে দিবো।
রাকিবের কথা মতন কসমেটিকসের দোকানে গিয়ে ক্রিমের কথা বলতেই দোকানের ছেলেটা আমায় দেখে মুচকি হাসলো। তারপর আমার হাতে ক্রিমটা দিতে দিতে বললো,
- শুধু শুধু ভাই টাকা গুলো জলে ফেলবেন। আপনার যে কালার আপনাকে যদি ৩ দিন ৩ রাত হুইল পাউডার দিয়ে পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয়; তবুও আপনার কালারের বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হবে না।
দোকানের ছেলেটার কথা শুনে মনে হচ্ছিলো ওর গালে একটা সজোরে থাপ্পড় মারি কিন্তু ওরই বা কি দোষ। দোষ তো আমার বাবা মার। কারণ উনারা আমাকে জন্ম দিয়েছে।
দোকান থেকে বের হয়েই মাকে ফোন দিলাম। মা ফোনটা রিসিভ করতেই আমি মাকে বললাম,
-- মা, শুনেছি বাবা মা কোনো পাপ করলে তার দায়ভার কিছুটা সন্তানের উপর এসে পড়ে৷ তোমরা কি কোনো পাপ করেছিলে যার ফল স্বরূপ তোমাদের ঘরে আমার মত একটা কালো ছেলে জন্ম নিলো।
মা আমার কথা শুনে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
-তুই আবার তোর গায়ের রঙ কালো দেখে মন খারাপ করছিস? তুই কালো দেখে কি হয়েছে। তুই আমার কাছে সোনার টুকরো ছেলে।
মা কেঁদে দিয়েছিলো দেখে আমি মাকে হাসানোর জন্য বললাম,
-- দেখলে মা তুমিও আমায় তেমন ভালোবাসো না। যদি ভালোবাসতে তাহলে সোনার টুকরো না বলে হীরের টুকরো বলতে।
আমার কথা শুনে মা হাসতে হাসতে বললো,
- তুই আমার কোহীনূর হীরার টুকরো ছেলে...
সবাই আমাকে কালো বলে দূরে সরিয়ে রাখলেও মা বাবার দোয়া সবসময় আমার সাথেই ছিলো। আর সে জন্যই হয়তো আমি খুব ভালো একটা চাকরি পেয়েছি। চাকরি পাওয়ার পর থেকেই আমার উপর বাবা মা অত্যাচার করা শুধু করলো বিয়ের জন্য। আমিও বিয়ে করবো বলে রাজি হয়েছি তবে একটা শর্ত দিয়েছি। বিয়ে করলে আমি কালো কোন মেয়েকেই করবো।
আজ মেয়ে দেখতে যাবো। মাকে ডেকে বললাম,
- মেয়ে কালো তো?
মা বললো,
-- আমি মেয়েকে এর আগেও দেখেছি। মেয়ের গায়ের রঙ কালোই। কিন্তু আজ আমরা দেখতে যাবো বলে মেক-আপ করে হয়তো সুন্দরী হয়ে যাবে। তবে চিন্তা করিস না। মুখ ধোঁয়ার পর মেয়ে আবার কালো হয়ে যাবে...
আমরা ড্রয়িং রুমে বসে আছি মেয়ে দেখার জন্য। কিছুক্ষণ পর মেয়ে আসলো। মেয়েকে দেখেই কয়েক মিনিটের জন্য আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। একটা মেয়ে কি করে এত সুন্দর হতে পারে। ভালো করে মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি মুখে কোন মেকাপ নেই। শুধু চোখে হালকা একটু কাজল আছে। মেয়ে দেখা শেষ হলে আমি মাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে বললাম,
-- মা, তুমি না বলেছিলে মেয়ে কালো। এই মেয়ে তো দেখছি বেজায় সুন্দরী। শুধু সুন্দর না ভয়ংকর রকম সুন্দরী। তোমায় আগেই বলেছিলাম আমি, নিজে যেমন ঠিক তেমন মেয়েই বিয়ে করবো।
আমার কথা শুনে মা বললো,
-আরে মেয়ে সুন্দর না। মেক-আপ করেছে তো তাই সুন্দর লাগছে।
আমি মায়ের হাতটা ধরে বললাম,
-- কেন শুধু শুধু মিথ্যা বলছো মা। মেয়ে কোনো মেক-আপ করে নি। এত সুন্দর একটা মেয়ে।হয়তো ও চাইবে ওর হাজবেন্ড যেন খুব সুদর্শন হয়। আমার সাথে বিয়ে হলে দেখা যাবে মেয়েটার লাইফটাই নষ্ট হয়ে গেছে। আমার সাথে একটা সেলফি তুলতে পারবে না। বান্ধবীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে লজ্জা পাবে। একসাথে ঘুরতে লাজ্জা পাবে।
আমার কথা শুনে মা কাঁদতে কাঁদতে বললো,
- তুই কালো হয়েছিস দেখে কি একটা সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করতে পারবি না?
আমি মাকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
-- না পারি না মা। একটা সুন্দরী মেয়ে কখনোই একটা কালো ছেলেকে বিয়ে করতে চায় না। যদি কখনো বিয়ে করতে রাজি হয় তাহলে ভেবে নিবে হয় মেয়েটা বাবা মায়ের চাপে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে। নয়তো কালো ছেলেটার খুব ভালো ক্যারিয়ার আছে সেজন্য রাজি হয়েছে...
দুপুরে অফিসে বসে কাজ করছি। এমন সময় একটা অচেনা নাম্বার থেকে কল আসলো। আমি ফোনটা রিসিভ করতেই অপর প্রান্ত থেকে একটা মেয়ে বললো,
- আমি শ্রাবণী। কাল আপনারা যে মেয়েটাকে দেখতে গিয়েছিলেন আমিই সেই মেয়ে।
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
--আপনি আমায় হঠাৎ ফোন দিলেন যে?
মেয়েটি তখন বললো,
- আমি আপনার অফিসের নিচে। দয়া করে একটু আসবেন? আপনার সাথে আমার জরুরী কিছু কথা আছে....
একটা রেস্টুরেন্টে আমি আর মেয়েটি বসে আছি। রেস্টুরেন্টের অনেকেই আমাদের হা করে দেখছে। আমি চেয়েছিলাম রেস্টুরেন্ট বাদে অন্য কোথাও বসতে কিন্তু মেয়েটিই আমায় জোর করে এইখানে নিয়ে আসলো।
কফির মগে মেয়েটি চুমুক দিতে দিতে আমায় বললো,
-- সত্যি বলতে আপনাকে আমার প্রথম দেখাতে ভালো লাগে নি। কিন্তু আড়লে যখন আপনি আপনার মায়ের সাথে কথা বলছিলেন আমি আপনার সব কথা শুনে নিয়েছিলাম। তারপর থেকেই আপনাকে প্রচন্ড ভালোবেসে ফেলেছি। ১ মিনিটের কথা শুনে যে কাউকে ভালোবেসে ফেলা যায় সেটা যদি আমার সাথে না ঘটতো তাহলে আমি হয়তো কখনোই বিশ্বাস করতাম না।
আমি মাথা নিচু করে বললাম,
-- তারমানে আপনি আমায় করুণা করছেন?
মেয়েটি কফির মগটা রেখে আমার হাতধরে বললো,
- আমায় একটাবার সুযোগ দাও। আমি তোমায় এতটাই ভালোবাসবো যে মেয়েদের সম্পর্কে তোমার ধারণাটাই পাল্টে দিবো....
ডাক্তারের চেম্বারের সামনে বসে আছি। এমন সময় দেখি ডাক্তারের চেম্বার থেকে আমার ছাত্রী পিহু আর ওর মা বের হচ্ছে। আমি আন্টিকে সালাম দিয়ে বললাম,
-- আন্টি আমায় চিনতে পেরেছেন? আমি আপনার মেয়েকে দুইদিন পড়িয়েছিলাম। কিন্তু ৩ দিনের দিন আমায় বের করে দিয়েছিলেন।
আন্টি তখন বললো,
- হ্যাঁ। চিনতে পেরেছি..
এমন সময় রুম থেকে শ্রাবণী এসে বললো,
- সরি সরি, আজ রোগীর খুব চাপ ছিলো তাই দেরি হয়ে গেলো। অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছো। তাই না?
আমি তখন আন্টিকে বললাম,
--আন্টি, আমার স্ত্রী শ্রাবণী।
আর শ্রাবণীকে বললাম,
- ও হলো পিহু। একসময় আমার ছাত্রী ছিলো।
শ্রাবণী মুচকি হেসে বললো,
-- হ্যাঁ আমি জানি ওর নাম পিহু। আমিও ওর ট্রিটমেন্ট করছি।
আন্টি আর পিহু আমাদের দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো। আমি হেঁটে যেতে যেতে শ্রাবণীকে বললাম,
-- পিহুর কি হয়েছে?
শ্রাবণী বললো,
- এক টিচারের সাথে ওর শারিরীক সম্পর্ক ছিলো। পরে প্রেগন্যান্ট হয়ে যায়। কোন ক্লিনিকে যেন এভরসন করিয়েছে। এখন বিয়ের পর আর বাচ্চা হচ্ছে না...
হঠাৎ শ্রাবণী দাঁড়িয়ে বললো,
- ঐ, এই টিচারটা তো কোনোভাবে তুমি নাতো?
আমি রেগে গিয়ে বললাম,
-- আমি কেন হতে যাবো?আমি কালো বলেই তো আমাকে ৩ দিনের দিন বের করেই দিয়েছিলো।
আমার কথা শুনে শ্রাবণী হাসতে হাসতে বললো,
- নীল শার্টে তোমায় খুব সুন্দর লাগছে।
আমি মাথা নিচু করে বললাম,
-- কাউয়ার মত লাগছে...
আমার কথা শুনে শ্রাবণী আমার হাত ছেড়ে দিয়ে বললো,
- যে ছেলে নিজে নিজেকে সম্মান করে না;তাকে মানুষে কিভাবে সম্মান করবে..
শ্রাবণী রাগ করে একা একা হাঁটছে। আর আমি ওর পিছু পিছু যাচ্ছি আর ভাবছি, কালো কলঙ্কের দাগ হলেও মাঝে মধ্যে কালোকে বাদে সাদাকে অসম্পূর্ণ লাগে..।
স্ট্যাটাসঃ---১৫
এক_ডিভোর্সি_নারীর_বাস্তব_জীবনী
ডিভোর্সের আগে শ্বশুর বাড়ি জেলখানা মনে হতো,
ডিভোর্সের পরে এখন নিজের বাড়িই দোজখের মত লাগছে। (বাণীতে ডিভোর্সি নারী)
পরিস্থিতি যেমনই হোক, ডিভোর্স কখনো সুখ দেয়না! কমপক্ষে কোন মেয়ে সুখী হতে পারে না।
জানিনা, আমি কেন লিখছি? হয়তো এজন্য কারণ, আমি চাই আর কেউ আমার মতো ভুল না করুক। হয়তো এজন্য কারণ, আমি চাই ঠুনকো কারণে সংসারগুলো ভেঙে না পড়ুক।
আমি ঊনিশ বছর বয়সী একজন নারী।
আমাদের বিয়ে হয়েছিল আমার পছন্দে।
সংসারও টিকে ছিল দের বছর। আমাদের একটা ছেলেও আছে, ওর বয়স এখন এক বছর।
আমার স্বামীর স্বভাব-চরিত্র সবই বেশ ভালোই ছিল। শুধু একটু জেদি । অবশ্য তাও সবসময় না, মাঝেমধ্যে। মানুষ ভাবে ওর বদ জেদের জন্যই বুঝি আজ এই অবস্থা। কিন্তু আমি জানি, আমাদের সমস্যার শুরুটা ওর দিক থেকে হয়নি।
সব সংসারেই তো টুকটাক কিছু সমস্যা থাকে। ওরকম আমাদের মধ্যেও মাঝেসাঝে ঝগড়া-ঝাটি হতো। কিন্তু ঝগড়া বাধলেই আমি তল্পিতল্পা গুছিয়ে বাপের বাড়ির দিকে হাঁটা দিতাম। বাপের বাড়িতে বোনরাও আসতো, আর ভাইরা তো ছিলই।
ওদের কাছে কেদেকেটে সব বলতাম। তখন সবাই ওকে ফোন করে কথা শোনাত। আমার ছোট বোন তো রীতিমত অপমান করত!
আমার কাছেও মনে হতো, ঠিকই আছে। কত বড় সাহস, আমার সাথে লাগতে আসে। আমাকে নিজের মতো চালাতে চায়। আমার মধ্যে কেমন একটা জেদ কাজ করতো।
ওর কাছে ছোট হব, ওর কাছে নিজের ভুল স্বীকার করব, মাফ চাইব, এটা ভাবতেই পারতাম না।
উল্টো বড় গলা করে বলতাম,“ডিভোর্স দাও! তোমার মতো লোকের সাথে কে সংসার করে?”
নাহ, ডিভোর্স আমি কখনোই মন থেকে চাই নি।
ওটা ছিল মুখের কথা।
ওর সামনে ছোট হওয়ার চাইতে ডিভোর্স চাওয়াই আমার কাছে সঠিক মনে হতো।
একদিনের কথা এখনও মনে পড়ে। সেদিন ছোট একটা ব্যাপার নিয়ে তর্ক করতে করতে দুজনেই খুব উত্তেজিত হয়ে পড়েছি। রাগে আমার শরীর কাঁপছে। যা মুখে আসছে তাই বলছি। তুই-তোকারি, গালিগালাজ, অপমান কিচ্ছু বাদ যায় নি।
এক পর্যায়ে সহ্যের বাধ ভেঙে ও আমার গায়ে হাত তুললো!
এর আগে কিংবা পরে কখনোই ও আমার গায়ে হাত তুলে নি। কিন্তু ঐ একটা থাপ্পড়, ওটাই যথেষ্ট ছিল।
আমি বাপের বাড়ি চলে গেলাম।
আর হ্যাঁ বরাবরের মতো এবারও নিজের দিকটা না বলে খালি ওর দিকটাই বলে গেলাম।
মানুষের দোষ দিয়ে আর কী লাভ! সবাইকে যা বলেছি, সেটার উপর ভিত্তি করেই তারা বিচার করেছে। পরিবারের সবাই বললো, এমন ছেলের সাথে সংসার করার কোনো দরকার নাই।
মামলা ঠুকে দাও।
আমি সবার পরামর্শে মামলা করলাম।
ওর নামে নারী নির্যাতনের কেইস করা হল।
খুব দ্রুতই ওকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেল। ওর পরিবার থেকে মুরুব্বিরা এসে বার বার অনুরোধ করল, আমি যেন এই কেইস তুলে নিই।
ভেতরে ভেতরে আমিও চিন্তা করতাম, আচ্ছা, আমার স্বামী কি আসলেই জালেম? ও কি কোনদিন নিজে থেকে আমার গায়ে হাত তুলেছে? আমি যদি ওকে এত কথা না শোনাতাম, তাহলে কি ও আমার গায়ে সেদিন হাত তুলতো?
আমার বাবা মা আমাকে বুঝিয়েছিল, আমি যদি এতকিছুর পর ফিরে যাই, তাহলে ও ভাববে,
আমি বুঝি অসহায়। আমাকে আরো পেয়ে বসবে। আমার উপর ইচ্ছামত ছড়ি ঘুরাবে। একবার গায়ে হাত তুলেছে মানে বার বার একই কাজ করবে। কাজেই নিজে থেকে ফিরে যাওয়ার তো প্রশ্নই আসে না।
কিন্তু আমার মনের ভেতর কে যেন চিৎকার করে বলতো, ও তো এমন লোক না। ও যেদিন আমার গায়ে হাত তুলেছিল, সেদিনই হাটু জোর হয়ে আমার কাছে মাফ চেয়েছে। এসব ভেবে ভেবে আমি মামলা তুলে নিলাম। তবে ওর কাছে ফেরত গেলাম না।
কিছুদিন পর দুই পরিবার থেকে বিচার-সালিশ হল। সবার কাছে ও দোষী প্রমাণিত হল।
সবাই ওকে নানা কথা বোঝাল, উপদেশ দিল। তারপর আবার সংসার শুরু করলাম।
এর পরের কয়েক মাস ভালোই চলছিল,
কিন্তু হুট করে আবার কী একটা নিয়ে আমাদের ঝগড়া বেধে গেল। ব্যস, কাপড়চোপড় গুছিয়ে আবার আমি বাপের বাড়ি গিয়ে উঠলাম।
এর মধ্যে শুনলাম ও নাকি খুব অসুস্থ !
আমি বাসায় ফিরতে চাইলে আমার পরিবার বললো, এভাবে একটা ঝগড়ার পর একা একা ফিরলে সেটা ভালো দেখায় না।
আর আমার বোনদের কথা ছিল, ওসব অসুস্থ-টসুস্থ কিছু না, সব বাহানা!
আমরা চাচ্ছিলাম ঐ পক্ষ থেকে কিছু আত্মীয়-স্বজন এসে ওর ভুল স্বীকার করে আমাকে হাতে পায়ে ধরে নিয়ে যাক।
কিন্তু এবার কেউই আসলো না।
এরও কিছুদিন পর ও আমাকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিল। ডিভোর্স লেটার দেখে আমাদের পরিবারের সবাই খুব খেপে গেল।
কতবড় সাহস, মেয়েকে এত কষ্টে রেখেছে, তার উপর ডিভোর্স লেটার পাঠায়। সবার কথায় আমার কাছেও মনে হলো ঠিকই তো, কত বড় সাহস! আমাকে ডিভোর্স দিতে চায়? ওর সব ভুলগুলো চোখের উপর ভাসতে লাগলো। মা বাবা মনে করিয়ে দিলো, ও হলো সেই ছেলে যে কিনা আমার গায়েও হাত তুলেছে।
প্রতিশোধের আগুনে জ্বলতে জ্বলতে আমিও ঠিক করলাম, এবার ডিভোর্সই দেব। কে চায় এমন ফালতু লোকের সংসার করতে? কোর্টে গিয়েও ওকে হেনস্থা করার চেষ্টা করলাম। আমার মাসিক খরচ বাড়িয়ে একটা আকাশছোঁয়া অংক দাবি করলাম! আমি চাচ্ছিলাম ওর যেন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়। যেন নিজে থেকে আমার কাছে এসে আবার সংসার করতে চায়।
আসলে ডিভোর্স হোক আমি কখনোই চাই নি৷
কিন্তু জিদ আমাকে খেয়ে নিচ্ছিল। আগ বাড়িয়ে ওকে ডিভোর্স তুলে নিতে বলা আমার পক্ষে অসম্ভব!
ওর কাছে ছোট হওয়া আমি মানতেই পারি নি।
কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার, ও আমার আকাশছোঁয়া সমস্ত দাবি মেনে নিলো। আমাদের ছেলেকে আমি পেয়ে গেলাম। ভরণপোষণ, মাসিক খরচ, ওর সম্পত্তি সব! বিনিময়ে ও পেলো শুধু ডিভোর্স।
আমাদের ডিভোর্স হয়েছে আজ সাড়ে তিন বছর।
ও আবারও বিয়ে করেছে। সুখেই আছে বোঝা যায়। আসলে ওর মতো নির্ঝঞ্ঝাট স্বামীকে নিয়ে মেয়েরা হয়তো সুখেই থাকবে।
এখন আমার নিজের কথা ভেবে আফসোস হয়। মানুষের মুখের কথা কখনো কখনো ছুরির চেয়েও ধারালো হতে পারে। ও আমাকে একবার থাপ্পড় মেরেছিল ঠিকই, কিন্তু আমি কথার তীরে ওকে ছিন্নবিছিন্ন করে ফেলতাম।
শারীরিক নির্যাতন করি নি সত্যি,
কিন্তু মানসিকভাবে কষ্ট দিতাম। এসব কথা আমার মা বাবাকে কখনোই বলা হয় নি।
নিজের দোষের কথা মানুষ কতটাই বা বলে!
মাঝে মাঝে ভাবি, ইশ, আমার পরিবার যদি একটু নিজে থেকে বুঝে আমাকে সংসার করার উপদেশ দিতো। যখন আমি ওর কাছে ফিরে যেতে চাইতাম, তখন ওর খারাপটা না বলে যদি একটু ভালো দিকগুলোর কথা মনে করাতো! আমি যদি নিজের জিদ নিয়ে পড়ে না থেকে, একটু ওর কাছে নত হতাম! তাহলে হয়তো আজ আমাকে এই দিন দেখা লাগতো না।
ডিভোর্সের আগে শ্বশুর বাড়ি জেলখানা মনে হতো,
ডিভোর্সের পরে এখন নিজের বাড়িই দোজখের মত লাগছে।
আজ আমার ভাইবোন বন্ধুবান্ধব সবার নিজেদের সংসার আছ। কিন্তু ছোট্ট ভুলে আমার সব শেষ হয়ে গেছে তাই দোয়া করি আর কারো সাথে যেন এমন না হয়।
স্ট্যাটাসঃ---১৬ প্রায় প্রতিদিনই সেহরিতে আমার ঘুম ভাঙতো কান্নার শব্দে! আম্মুর কান্নার শব্দে। আম্মু আমার রুমে এসে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তেন। তারপর মোনাজাতে কাঁদতেন। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না! কী মায়া সেই কান্নায়! কাঁদবেন বলেই হয়তো আমার রুমে আসতেন। আব্বুর ঘুম ভাঙাতে চাইতেন না। আমার রুম বললেও আসলে ভুল হবে। তখন আমার নিজের কোনো রুম ছিলো না। আমাদের ড্রইংরুমে একটা বেড ছিলো, সেখানেই আমি ঘুমাতাম।
প্রচন্ড ঠান্ডায় অন্ধকার রুমে সাদা ধবধবে লেপের নিচে শুয়ে শুয়ে আমি বোকার মতো আম্মুর কান্না শুনতাম।
আম্মু মোনাজাতে কী বলছেন বোঝার চেষ্টা করতাম। কিন্তু শুধু 'ইয়া আল্লাহ... ইয়া মাবুদ...' ছাড়া কিছুই বুঝতে পারতাম না! আল্লাহর কাছে আম্মুর কী অনুনয়! কী বিনয়! কী আকুতি! সেই মোনাজাতে এতো দরদ থাকতো আমি কিছু না বুঝেও মন খারাপ করতাম! বুকটা ফাঁকা হয়ে যেতো! মনে মনে ভাবতাম আহা আম্মুর এতো কষ্ট?! আম্মু এতো কাঁদে!
আচ্ছা, আমি কেনো এভাবে মোনাজাতে কাঁদতে পারি না!? নিজেকে নিজে বুঝাতাম মনে হয় আমি ছোটো মানুষ তাই! বড়ো হলে নিশ্চয়ই আমিও আম্মুর মতো কাঁদতে পারবো! আম্মুকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য উঠবো কি না, আম্মুর কাছে যেয়ে বসবো কি না এসব ভাবতে ভাবতে আম্মুর ডাক পড়তো 'ওঠো আম্মু! সেহরির সময় হয়ে গেছে।"
আশেপাশের মসজিদ থেকে মাইকে শোনা যেতো "তাড়াতাড়ি উঠি যাউক্কা (তাড়াতাড়ি উঠে যান), আর মাত্র ত্রিশ মিনিট বাকী!" তাও উঠতাম না।
ক্লাস থ্রিতে পড়া ছোটো ভাই মাঝে মাঝে আমার সাথে ঘুমাতো। আমি লেপটা আরো শক্ত করে ছোটো ভাইকে পেঁচিয়ে দিতাম! এতো হাড় কাঁপানো ঠান্ডা ছিলো তখন সিলেটে!
তারপর শুয়ে শুয়ে শুনতাম আব্বু উঠেছেন, আব্বুকে ওযুর জন্য গরম পানি দেওয়া হচ্ছে কিন্তু আব্বু বার বার লজ্জিত স্বরে বলছে না না আমি নিজেই নিয়ে নিবো! ওযু শেষে গামছা খুঁজছেন। আমার আব্বু কখনো তোয়ালে ব্যবহার করতেন না। তাঁর সেই বিখ্যাত পাবনা বা কুষ্টিয়ার সুতি গামছাই ছিলো নিত্যসংগী। রান্নাঘর থেকে খুটখুট শব্দ আসছে। আম্মু আমাদের মোর্শেদাকে বলছে জগে কুসুম কুসুম গরম পানি ভরাতে, টেবিলটা একটু মুছে দিতে, গতরাতের তরকারিটা গরম করতে...
ভাগ্যিস ঐ সময় আমার ফোন ছিলো না। তা না হলে এসব কিছুই শোনা হতো না, শুয়ে শুয়ে ফোন টিপতাম! আর আম্মু এসে নির্ঘাত চিল্লাচিল্লা শুরু করে দিতো 'সেহরীতে উঠেও ফোন! খেতে আসো!"
সবশেষে আব্বু আসতেন ডাকতে। 'কাব্যমনি আসো!' আব্বু ডাকা মানেই ফাইনাল ডাক। এখন আর শুয়ে থাকা যাবে না। আমার উঠতে হবে! মাইকে শুনছি আর মাত্র পনেরো মিনিট বাকী! ঠান্ডায় উঠতে কষ্ট হতো আব্বু বুঝতেন। "লেপ দিয়ে বালিশ পর্যন্ত ঢেকে রাখো তাহলে তোমার বিছানা আর ঠান্ডা হবে না! -আব্বুর টিপস!
রানীর মতো বিছানা থেকে উঠতাম। কোনো দায় নাই, দায়িত্ব নাই! সব রেডিমেট! যেয়ে খালি খাবো। ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে হাতের কাছে চাদর কিংবা একটা দু'টা সোয়েটার গায়ে জড়িয়ে খেতে বসতাম। আমরা না আসলে আব্বু কখনো শুরু করতেন না। খাওয়ার সময় আব্বু শুধু আমার দিকে গরম পানি এগিয়ে দিতেন। আমি একদমই খেতে চাইতাম না। গরম পানি খেতে আমার একদমই ভালো লাগতো না। আব্বু বুঝাতেন গরম না তো, এটা 'ওয়ার্ম ওয়াটার'! মনে মনে বলতাম ঐ একই কথা তো আব্বু!
আমরা তিনজন মিলে সেহরি করতাম। আমার ছোটোভাই তখনো সব রোজা করতো না। ক্লাস থ্রি-ফোরে পড়তো, সারা বছর অসুস্থ থাকতো। তাই তার বিশেষ ছাড়! আম্মু তাঁর ফোলা ফোলা চোখ নিয়ে আমাদের সাথে বসতেন কিন্তু কখনো খেতেন না। আম্মুর কাজই ছিলো 'কাব্য, আরেকটু ভাত নাও!, "কাব্যর আব্বু দুধ -ভাত খাবে?", "এই মোর্শেদা আরেক পিছ মাছ নিয়ে যা".... সবার শেষে আম্মু দুই গ্লাস পানি খেতেন। আর যদি বাসায় দই থাকতো খুব বেশি হলে দুই চামচ দই খেতেন। এটাই ওনার সেহরি। আম্মু সেহরিতে কখনো খেতে পারেন না।
আমি আড়চোখে আম্মুকে দেখতাম কে বলবে এই মহিলা এতোক্ষন মোনাজাতে কেঁদেছেন। আম্মু কাঁদলেই চোখ ফুলে গোল্লা গোল্লা হয়ে যেতো, নাক গাল লাল হয়ে যায়! মানুষ বুঝতো। আমার আবার ম্যালা দু:খ ছিলো! কারন আমি কাঁদলে আমার চোখ ফুলতো না, নাক লাল হতো না! কেউ যদি বুঝতেই না পারলো আমি কেঁদেছি তাহলে এই জীবনে কেঁদে কী লাভ, বলেন!?
মাঝে মাঝে আমার ভাই সেহরির শেষ দিকে টর্নেডোর গতিতে হামলা দিতো- 'আমাকে কেনো তোমরা ডাকলা না!? আমি রোজা রাখবো!" বলেই কান্না! দেখা গেল আযান দিয়ে দিয়েছে সেই কখন আর আম্মু কাতিবকে দুধ ভাত খাওয়ায় দিচ্ছেন, ভাইয়ের সেহরি! ও একটা কথা, দুধ-ভাত কিন্তু আমাদের বাসায় সুপার হিট খাবার ছিলো! আব্বু, আমার ছোটো ভাই, আমার পছন্দের খাবার। আর শুধু দুধ-ভাত হলেই হতো না একটা কলা থাকা ছিল মাস্ট! কলা না থাকলে দুধ-ভাত খাওয়া ক্যান্সেল।
সারাদিন শেষে আমরা আবার সবাই ইফতার করতে বসতাম। আযানের ৫/৭ মিনিট আগে আমাদের রুলস ছিলো মোনাজাত করার। কোনোদিন আব্বু করতেন, কোনোদিন আম্মু। কিন্তু আব্বু সবসময়ই আম্মুকে বলতেন তুমি সুন্দর করে বলো, তুমিই করো! আমিও কয়েকদিন করেছি। কিন্তু লজ্জায় আল্লাহর কাছে কী চাই সবাইকে শোনাতে চাইতাম না! আমার সবসময় একটাই চাওয়া ছিলো -আল্লাহ আমি যেনো এবার পরীক্ষায় খুব ভালো রেজাল্ট করতে পারি! আব্বু-আম্মুকে যেনো অনেক খুশি করতে পারি! যেহেতু তখন বেশিরভাগ রোজার আগেই বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হয়ে যেতো তাই পুরা রোজা জুড়ে আমার কমন দোয়া এটাই ছিল! আমার ছোটোভাই তখনও বিশেষ মূল্যহ্রাসে ছিলো! তাকে হাজার চেষ্টা করেও কেউ মোনাজাত ধরাতে পারেনি।
আব্বু-আম্মু দুজনই সাহিত্যের মানুষ। মোনজাতও সেইভাবে করতেন। আমি মুগ্ধ হয়ে শুনতাম! এতো সুন্দর সুন্দর কথা আব্বু -আম্মু বলতেন আমরা শুধু আমীন আমীন বলতাম। মনে হতো এই মোনাজাত অনন্তকাল চললেও আমরা ইফতার সামনে নিয়ে বসে থাকবো...! দাদা-দাদি, নানা-নানিসহ আমাদের পূর্বপুরুষ, আত্নীয়-স্বজন, পাড়া- প্রতিবেশি, বন্ধু-বান্ধবী- কলিগ থেকে শুরু করে দেশের - বিদেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, ইহকাল, পরকাল কোনো বিষয়ই বাদ যেতো না। আমি মনে মনে ভাবতাম মোনাজাতে এতো কিছু কীভাবে মনে রাখেন!
আমার আম্মু ভীষন আবেগপ্রবণ, আবার কাঁদতেন... কিন্তু এই কান্না সেই শেষরাতের কান্নার মতো হতো না... এই কান্না আমরা সবাই শুনতাম কিন্তু শেষরাতের সেই কান্না শুধু উপরওয়ালাই জানতেন...
আজ এতো বছর পর কতো কিছুই বদলে গেছে... বিয়ে হয়েছে, মা হয়েছি। সেহরিতে সবার আগে উঠি, তারপর সবাইকে ডাকি। এখন আর বিছানায় অলসতায় উঠি উঠি করি না, মাইকে বলতেও শুনি না 'তাড়াতাড়ি উঠি যাউক্কা আর পনেরো মিনিট বাকী!"
প্রতিদিন চোখে ভাসে ঐ যে আম্মু তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ছেন আবার মনে হয় আম্মুর কান্নার শব্দ শুনছি... আমাদের সিলেটের টিলাগড়ের সেই ছোট্ট বাসাটা, যে বাসায় নিজের কোনো রুম ছিলো না... কিন্তু কী শান্তি ছিলো... সেহরিতে ওযুর পানি নিয়ে আব্বুর বিনয়ী কণ্ঠস্বর... সেহরিতে না ডাকায় ছোটোভাইয়ের গগনবিদারী কান্না... বুকটা ভারী হয়ে আসে... শেষ রাতে কীসের যেনো হাহাকারে নি:শ্বাস নিতে কষ্ট হয়... চারিদিকে শূন্যতা আর শূন্যতা...
আবিষ্কার করি, আমি আসলেই অনেক বড়ো হয়ে গেছি -
তাই আজ আমিও আম্মুর মতো না হলেও মোনাজাতে অনেক কাঁদতে পারি...
(খাদিজা তুল কোবরা কাব্য)
ধন্যবাদ সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য।
ধন্যবাদান্তেঃ------
মওদুদ আহমেদ মধু (মিঃ মধু)
দৃশ্যমান_জীবনের_অদৃশ্য_কাব্য
কত কথা বলেছি, যা কিছু কোনোদিন কাউকে বলিনি, সব সবটা বলেছি….
কিন্তু মানুষটা আল্টিমেটলি যখন বিচ্ছিরিভাবে ছেড়ে যায়, তখন স্রেফ দুদিন মনখারাপ হয়, জ্বর আসে, ভাত খাওয়ার সময় গলা ধরে আসে, রাতে ঘুম পায় না, কান্না পায়, কিন্তু তারপর আর একটুও মনে থাকে না...
তার কাছে আসাও মনে থাকে না, ছেড়ে যাওয়াও মনে থাকে না, এমনকি তার দেওয়া উপহার দেখলেও খুব আবছা কিছু স্মৃতি মনে পড়ে, ভালো করে তার মুখটাও আর মনে পড়ে না....
কিছু মানুষ জড়িয়ে পড়তে জানে না, তাই তারা ছেড়ে যাওয়ার পরও তেমন কোনো আক্ষেপ থাকে না, তাদের ফিরে আসার অপেক্ষাও না....
খুব সহজেই কিছু মানুষকে আমরা ভুলে যাই, তারা আমাদের অভিমানে, অভিযোগে, প্রার্থনায়, কোথাওই থাকে না....।
স্ট্যাটাসঃ---১২
#আমরা_ভীষণ_সাদামাটা_ও_অযোগ্য ।
কিছু মানুষের প্রতি চূড়ান্ত শারীরিক আকর্ষণবোধ জন্মালেও আমরা কখনোই তাদেরকে কাছে পাওয়ার স্বপ্ন দেখি না....
আমরা কিছু মানুষকে কোনোদিন ভুলেও স্পর্শ করার স্বপ্ন দেখি না। আমরা তাদেরকে সবসময় দূর থেকে ভালোবাসি, শ্রদ্ধা করি, ইনফ্যাক্ট তাদেরকে সামনে থেকে দেখার দুরন্ত ইচ্ছেটাকেও চেপে রাখি ভীষণ ভাবে.....
কিছু মানুষের প্রতি শারীরিক আকর্ষণের থেকেও বেশি মানসিক আকর্ষণ বোধ কাজ করে আমাদের ভেতরে....
মাঝেমধ্যে শুধু মনে হয় মানুষটাকে যদি একবার সামনে থেকে দেখতে পেতাম, তাহলে গোটাজীবনটা ওই মানুষটার নামে লিখে দিতাম.....
মাঝেমধ্যে মনে হয় মানুষটার সাথে যদি একটা মুহূর্ত দূর থেকেও কাটাতে পারতাম, তাহলেও আমাদের জীবনটা স্বার্থক হতো...
বেশি কিছু চাইতাম না, মানুষটার সাথে একটা সাদামাটা বিকেল কাটাতে চাইতাম....
কোনো একটা নদীর পাড়ে বসে আমাদের জীবনে ঘটে যাওয়া দুই একটা খারাপ ঘটনার কথা যদি শোনাতে পারতাম মানুষটাকে। অতীতের স্মৃতি মনে করতে করতে গলাটা ভারী হয়ে গেলে, চোখের কোনটা ভিজে উঠলে মানুষটা আমাদের দিকে একটা রুমাল এগিয়ে দিতো....
মায়ের দিব্যি কেটে বলছি, ওই রুমালটুকু নিয়েই আমরা ফিরে আসতাম ঘরে....
কিংবা মানুষটার সাথে জীবনে একবার হলেও পাহাড়ে যেতে চাইতাম। একটা সূর্য ওঠা ভোরের সাক্ষী থাকতাম আমরা দুজনেই, মানুষটাকে ন্যূনতম ছোঁয়ার চেষ্টা করতাম না...
শুধু দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখতাম রোদের প্রথম আলো যখন মানুষটার মুখে এসে পড়ে, তখন কাকে বেশি পবিত্র লাগে, ওই মানুষটাকে নাকি রোদের আলোটাকে?
মানুষটার কয়েকটা ছবি তুলে নিতাম লুকিয়ে লুকিয়ে, তারপর সারাজীবন আগলে আগলে মানুষটাকে জমিয়ে রাখতাম বুকের ভেতর। খুব কান্না পেলে ছবিটা দেখে কাঁদতাম, খুব আনন্দ হলে ছবিটার সাথে কথা বলতাম, খুব রাগ হলে ছবিটার সামনে চুপচাপ বসতাম....
কিংবা কোনো একটা বৃষ্টির দিনে আমরা দুজন পাশাপাশি বসে থাকতাম চোখে চোখ রেখে, ওই মুহূর্তটুকু আমরা লুকিয়ে বাঁচিয়ে রাখতাম....
ওই মুহূর্তটুকু কেড়ে নেওয়ার অধিকার কারোর কোনোদিন থাকতো না....
হ্যাঁ, সারাজীবন আমরা কিছু মানুষকে এভাবেই দূর থেকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে থাকতাম, এভাবেই মানুষটাকে ভালোবাসায়, অভিমানে, প্রার্থনায় রেখে দিতাম....
আসলে আমরা ভীষণ সাধারণ, দামি গিফ্টস দেওয়ার টাকা নেই আমাদের কাছে, বিশাল কিছু ল্যাভিস লাইফ আমরা কেউই লিড করি না, রাতের বেলা আমাদের ঘরে এখনো লোডশেডিং হয়, গরম লাগলে এখনো ছাদে মাদুর পেতে শুই....
কাছের মানুষটাকে দামি রেস্টুরেন্টে খাওয়ানোর মতো প্রিভিলেজড আমরা নই, এখনো আমরা সেদ্ধ ডালভাত খাই রোজ সকালে....
ডিগ্রি ফিগ্রী তেমন বিশাল নেই, সাধারণ চাকরি করি, দেখতেও অসাধারণ নই আমরা....
আমরা ভিড়ে মিশে যাওয়া লোক, আমাদের দিকে কারোর চোখ আটকে যায় না....
আমাদের দেখে কেউ কবিতা লেখে না, আমাদের জন্য কেউ শোবার ঘরে সুগন্ধি ফুল সাজিয়ে রাখে না....
আমরা ভীষণ সাদামাটা, আমাদের মতো মানুষদের যোগ্যতা খুবই কম হয়, যাঁকে আমরা ভালোবাসি, তাঁকে ছোঁয়ার অধিকার আমাদের থাকে না....
যাঁদের আমরা ভালোবাসি, আমরা তাঁদের কাছে চিরকালই অযোগ্য হয়েই থেকে যাই....
ভালোবাসার মানুষকে জীবনে না রাখতে পারাও একটা অভিশাপ.....
আর সেই অভিশাপটা আমরা চিরকাল বহন করি স্বগর্বে...।
স্ট্যাটাসঃ---১৩
#কিছু_প্রেম_অভিশাপ_হয়ে_যায় ।
যেসব ছেলে মেয়েরা তাদের প্রেমিক প্রেমিকাকে অত্যন্ত সন্দেহ করে, সবসময় নিজের হাতের মুঠোয় রাখতে চায়, সারাক্ষণ নজরদারি চালায় তাদের প্রেমিক প্রেমিকা কোথায় কি করছে! কার সাথে মিশছে, কতক্ষন ফেসবুকে অনলাইন আছে, রাতে কটা অবধি জেগে আছে বারবার চেক করে....
সারাদিন ফোনের ভেতর চিপকে থাকে, অন্য কোনো বন্ধু ফোন করলে ভয়ঙ্কর ভাবে নিজের প্রেমিক প্রেমিকাকে অপমান করে, রাগ করে, অভিমানে ফেটে পড়ে।
সবসময় "আদর করো, চুমু দাও, একটু ভালোবাসো" এই কথাগুলোই ঘ্যানঘ্যান করে বলতে থাকে, তাদের সাথে একটা সময়ের পর প্রেম করার ইচ্ছেটাই মরে যায়....
আমার প্যানপ্যানানি টাইপের প্রেম কোনোদিন পছন্দ নয়, যেখানে একটা মানুষ একটা মানুষের জন্য চুপচাপ অপেক্ষা করতে জানে না, যেখানে একটা মানুষ একটা মানুষকে ব্যক্তিগত জায়গা দেয় না, যেখানে একটা মানুষ একটা মানুষকে ছাড়তে জানে না, একজন অপরজনের স্বাধীনতায় বারবার হস্তক্ষেপ করে,
একটা মানুষ একটা মানুষকে বিশ্বাস করে না, সারাটাক্ষণ নিজের ঘেরাটোপের মধ্যে রাখে, বন্দিশালায় বন্দি করে রাখে, সেখানে আর যাই হোক প্রেম হতে পারে না, ভালোবাসা ধীরে ধীরে মরে যায়...
পজেসিভনেস একটা সময় পর্যন্ত ভালো লাগে, তারপর আর নয়...
প্রেম একটা খোলামেলা ছাদের মতো, যেখানে স্বেচ্ছায় দুটো মানুষ মাদুর পেতে খানিক বসতে পারে, গল্প করতে পারে, বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতে পারে, রাষ্ট্রদেশসমাজযৌনতাসম্পর্কসুখদুঃখবন্ধুবান্ধব নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে পারে....
বৃষ্টিতে গা ভিজিয়ে ঠায় বসে একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারে, একে অপরের ভুল ত্রুটি গুলো ধীরে ধীরে শুধরে দিতে পারে। প্রখর রোদে বেরিয়ে একসঙ্গে মিলে বাজারটা করতে পারে, একে অপরের অসুবিধে, সমস্যায় পাশে থাকতে পারে...
.
এরকম খোলামেলা মানুষের সাথে প্রেম করলে মানুষ নিজেকে উন্নত করতে শেখে...
যে মানুষটা পাশে থাকলে একটা আলসেমি ল্যাদখোর জীবন ভুলে আমাদের ভেতর দারুণ একটা জেদ কাজ করে, সারাটা দিন প্রচুর কাজ করেও ক্লান্তি আসে না চোখে মুখে, রাতের খাবারটা বেড়ে যে মানুষটা অপেক্ষা করতে জানে....
সেই মানুষটাকে পাশে পেলে জীবনটা সুন্দর হয়ে ওঠে....
নাচ শেখার যে ইচ্ছেটা মরে গিয়েছিল ভেতর ভেতর, সেই ইচ্ছেটাকে জাগিয়ে তুলতে পারে যে মানুষটা, সাঁতার কাটতে ভয় পাওয়া মানুষটাকে যে মানুষটা হাত ধরে জলে নামাতে পারে, পাহাড়ে উঠতে ভয় পাওয়া মানুষটাকে যে পাহাড়ে উঠিয়ে সূর্য ছোঁয়াতে পারে,
রান্না না জানা মানুষটাকে যে মানুষটা হাতে ধরে রান্না শেখাতে পারে, খুব অগোছালো জীবন যাপন করা মানুষটাকে যে মানুষটা ভোরবেলায় ঘুম থেকে উঠিয়ে কুয়াশা ভেজা ঘাসে হাঁটতে শেখায়,
সেরকম মানুষের সাথে ভালোবেসে সংসার করা হলো সৌভাগ্যের ব্যাপার, সবার কপালে জোটে না....।
স্ট্যাটাসঃ---১৪
দুইদিন টিউশনি করানোর পর তৃতীয় দিন ছাত্রীর মা আমায় ডেকে আমার হাতে একটা খাম দিয়ে বললো,
- কাল থেকে তোমার আর আমার মেয়েকে পড়াতে হবে না। তুমি দুই দিন আমার মেয়েকে পড়িয়েছো। আমি তোমাকে ১ মাসেরই টাকা দিলাম।
আমি অবাক হয়ে ছাত্রীর মাকে বললাম,
-- আন্টি কিছু মনে না করলে জানতে পারি আমার অপরাধটা কি?
আন্টি অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বললো,
- না, তোমার কোন অপরাধ নেই। এমনিতেই তোমাকে আসতে হবে না।
আমি তখন ছাত্রীর মাকে বললাম,
-- আন্টি আমি আপনার মেয়েকে ১ মাস পড়াই। তারপর যদি আপনার মনে হয় আমি আপনার মেয়েকে ঠিক মত পড়াতে পারছি না; তখন না হয় আমাকে বাদ দিয়ে দিবেন। আমার আপত্তি থাকবেনা।
এইবার ছাত্রীর মা আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
- আসলে আমার মেয়ে তোমার কাছে পড়তে চাচ্ছে না। শুধু ভালো পড়ালেই হয় না একটু দেখতে শুনতেও ভালো হতে হয়। তোমায় দেখলে না কি আমার মেয়ে ভয় পেয়ে যায়...
আমি আন্টির হাতে খাম দিয়ে বললাম,
-- টিউশনি করাতে হলে যে ফর্সা ভালো চেহারার অধিকারী হতে হয় তা আগে জানতাম না। যদি জানতাম তাহলে বিশ্বাস করেন আমি আপনার মেয়েকে পড়াতে আসতাম না...
ছাত্রীর বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় হাটছি আর কলেজ জীবনের কথা ভাবছি। কলেজে একবার একটা অনুষ্ঠানের উপস্থাপনার জন্য স্যার ভালো একজন উপস্থাপক খুঁজছিলেন। আমি সবার সামনে হাত তুলে বলেছিলাম,
- স্যার, আমি ভালো উপস্থাপনা করতে পারি। স্কুলে পড়ার সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমি উপস্থাপনা করতাম..
স্যার আমার ভালো করে দেখে হাসতে হাসতে বলেছিলো,
-- তোর মত কাউয়া(কাক) যদি উপস্থাপনা করে তাহলে অনুষ্ঠানে যে কয়জন মানুষ আসবে সেই মানুষগুলোও পালাবে...
স্যারের এই এক কথাতে রাতারাতি আমার নাম আবুল বাশার পিয়াস থেকে "কাউয়া বাশার পিয়াস" হয়ে গিয়েছিলো। তখন আর কেউ আমায় আবুল বাশার পিয়াস নামে চিনতো না। সবাই চিনতো "কাউয়া পিয়াস" নামে...
কয়েকদিন আগে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকা যাচ্ছিলাম। আমার পাশের সিটে বসেছিলো সুন্দরী একটা মেয়ে। আমি যখন আমার সিটে বসতে যাবো তখনি মেয়েটা নাক মুখ ওড়না দিয়ে চেপে ধরলো। বাস কিছু দূর যাবার পরেই মেয়েটা বাসের কন্ট্রাক্টরকে ডেকে বললো,
- আমায় এই সিটটা পাল্টে দেন তো। আমি অন্য কোথাও বসবো।
বাসের কন্ট্রাক্টর আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে তাকালো। তারপর মেয়েটাকে বললো,
-- আপা, এই লোকটা কি আপনার সাথে অসভ্যতামি করেছে? যদি কোনোরকম কিছু করে থাকে তাহলে বলেন। আমি এখনি লোকটাকে বাস থেকে নামিয়ে দিতেছি। কন্ট্রাক্টরের মুখ থেকে এমন কথা শুনে বাসের অন্য সব যাত্রীরা আমার উপর ক্ষেপে উঠলো। একজন লোক চিৎকার করে বললো,
~ অবশ্যই নোংরামি করেছে। তা না হলে আপা সিট ছেড়ে উঠতে যাবে কেন।
এক ভদ্রমহিলা মুখ বাঁকিয়ে বললো,
~ চেহারা দেখেই বুঝা যায় বদমাইশ টাইপ। এইসব কুলাঙ্গারদের জন্য মেয়েদের রাস্তাঘাটে চলাচলই এখন দায় হয়ে পড়েছে।
এমন একটা অবস্থা হয়ে পড়েছিলো যে বাসের সবাই মিলে এখন আমায় মারতে আসবে। আমি বহু কষ্টে সবাইকে থামিয়ে দিয়ে মেয়েটাকে বললাম,
-- আপনি আমার ছোট বোনের মত। আমি কি আপনার সাথে কোন নোংরামি করেছি?
মেয়েটা মাথা নিচু করে বললো,
- না।
আমি তখন বাসের যাত্রীদের বললাম,
-- ভাই আমার অপরাধ কি জানেন? আমার অপরাধ হলো আমি দেখতে কালো। আপনাদের মত সাদা চামড়ার কিছু মানুষ মনে করে আমাদের মত কালো মানুষের গা থেকে গন্ধ বের হয়। আপনাদের ধারণা পৃথিবীর সমস্ত খারাপ মানুষ কালোই হয়৷
যে ভদ্রমহিলা আমায় বদমাইশ, কুলাঙ্গার বলেছিলো সেই মহিলার কাছে গিয়ে বললাম,
-- আপনি আমার চেহারা দেখেই বুঝে গেলেন আমি বদমাইশ। বিশ্বাস করেন আমি কোনো বদমাইশি করছি তো দূরের কথা আজ পর্যন্ত কোনো মেয়ের দিকে খারাপ দৃষ্টিতে তাকাছি পর্যন্ত না। কিন্তু কেন জানি না এই মুহূর্তে আপনার সাথেই আমার বদমাইশি করতে ইচ্ছে করছে...।
নিউমার্কেট এসেছিলাম কিছু শপিং করতে। এমন সময় আমার রুমমেট রাকিব ফোন দিয়ে বললো,
- মেসে আসার সময় দোকান থেকে আমার জন্য একটা ফেয়ার এন্ড হ্যান্ডসাম ক্রিম নিয়ে আসিস তো। আমি তোকে পরে টাকা দিয়ে দিবো।
রাকিবের কথা মতন কসমেটিকসের দোকানে গিয়ে ক্রিমের কথা বলতেই দোকানের ছেলেটা আমায় দেখে মুচকি হাসলো। তারপর আমার হাতে ক্রিমটা দিতে দিতে বললো,
- শুধু শুধু ভাই টাকা গুলো জলে ফেলবেন। আপনার যে কালার আপনাকে যদি ৩ দিন ৩ রাত হুইল পাউডার দিয়ে পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয়; তবুও আপনার কালারের বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হবে না।
দোকানের ছেলেটার কথা শুনে মনে হচ্ছিলো ওর গালে একটা সজোরে থাপ্পড় মারি কিন্তু ওরই বা কি দোষ। দোষ তো আমার বাবা মার। কারণ উনারা আমাকে জন্ম দিয়েছে।
দোকান থেকে বের হয়েই মাকে ফোন দিলাম। মা ফোনটা রিসিভ করতেই আমি মাকে বললাম,
-- মা, শুনেছি বাবা মা কোনো পাপ করলে তার দায়ভার কিছুটা সন্তানের উপর এসে পড়ে৷ তোমরা কি কোনো পাপ করেছিলে যার ফল স্বরূপ তোমাদের ঘরে আমার মত একটা কালো ছেলে জন্ম নিলো।
মা আমার কথা শুনে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
-তুই আবার তোর গায়ের রঙ কালো দেখে মন খারাপ করছিস? তুই কালো দেখে কি হয়েছে। তুই আমার কাছে সোনার টুকরো ছেলে।
মা কেঁদে দিয়েছিলো দেখে আমি মাকে হাসানোর জন্য বললাম,
-- দেখলে মা তুমিও আমায় তেমন ভালোবাসো না। যদি ভালোবাসতে তাহলে সোনার টুকরো না বলে হীরের টুকরো বলতে।
আমার কথা শুনে মা হাসতে হাসতে বললো,
- তুই আমার কোহীনূর হীরার টুকরো ছেলে...
সবাই আমাকে কালো বলে দূরে সরিয়ে রাখলেও মা বাবার দোয়া সবসময় আমার সাথেই ছিলো। আর সে জন্যই হয়তো আমি খুব ভালো একটা চাকরি পেয়েছি। চাকরি পাওয়ার পর থেকেই আমার উপর বাবা মা অত্যাচার করা শুধু করলো বিয়ের জন্য। আমিও বিয়ে করবো বলে রাজি হয়েছি তবে একটা শর্ত দিয়েছি। বিয়ে করলে আমি কালো কোন মেয়েকেই করবো।
আজ মেয়ে দেখতে যাবো। মাকে ডেকে বললাম,
- মেয়ে কালো তো?
মা বললো,
-- আমি মেয়েকে এর আগেও দেখেছি। মেয়ের গায়ের রঙ কালোই। কিন্তু আজ আমরা দেখতে যাবো বলে মেক-আপ করে হয়তো সুন্দরী হয়ে যাবে। তবে চিন্তা করিস না। মুখ ধোঁয়ার পর মেয়ে আবার কালো হয়ে যাবে...
আমরা ড্রয়িং রুমে বসে আছি মেয়ে দেখার জন্য। কিছুক্ষণ পর মেয়ে আসলো। মেয়েকে দেখেই কয়েক মিনিটের জন্য আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। একটা মেয়ে কি করে এত সুন্দর হতে পারে। ভালো করে মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি মুখে কোন মেকাপ নেই। শুধু চোখে হালকা একটু কাজল আছে। মেয়ে দেখা শেষ হলে আমি মাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে বললাম,
-- মা, তুমি না বলেছিলে মেয়ে কালো। এই মেয়ে তো দেখছি বেজায় সুন্দরী। শুধু সুন্দর না ভয়ংকর রকম সুন্দরী। তোমায় আগেই বলেছিলাম আমি, নিজে যেমন ঠিক তেমন মেয়েই বিয়ে করবো।
আমার কথা শুনে মা বললো,
-আরে মেয়ে সুন্দর না। মেক-আপ করেছে তো তাই সুন্দর লাগছে।
আমি মায়ের হাতটা ধরে বললাম,
-- কেন শুধু শুধু মিথ্যা বলছো মা। মেয়ে কোনো মেক-আপ করে নি। এত সুন্দর একটা মেয়ে।হয়তো ও চাইবে ওর হাজবেন্ড যেন খুব সুদর্শন হয়। আমার সাথে বিয়ে হলে দেখা যাবে মেয়েটার লাইফটাই নষ্ট হয়ে গেছে। আমার সাথে একটা সেলফি তুলতে পারবে না। বান্ধবীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে লজ্জা পাবে। একসাথে ঘুরতে লাজ্জা পাবে।
আমার কথা শুনে মা কাঁদতে কাঁদতে বললো,
- তুই কালো হয়েছিস দেখে কি একটা সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করতে পারবি না?
আমি মাকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
-- না পারি না মা। একটা সুন্দরী মেয়ে কখনোই একটা কালো ছেলেকে বিয়ে করতে চায় না। যদি কখনো বিয়ে করতে রাজি হয় তাহলে ভেবে নিবে হয় মেয়েটা বাবা মায়ের চাপে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে। নয়তো কালো ছেলেটার খুব ভালো ক্যারিয়ার আছে সেজন্য রাজি হয়েছে...
দুপুরে অফিসে বসে কাজ করছি। এমন সময় একটা অচেনা নাম্বার থেকে কল আসলো। আমি ফোনটা রিসিভ করতেই অপর প্রান্ত থেকে একটা মেয়ে বললো,
- আমি শ্রাবণী। কাল আপনারা যে মেয়েটাকে দেখতে গিয়েছিলেন আমিই সেই মেয়ে।
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
--আপনি আমায় হঠাৎ ফোন দিলেন যে?
মেয়েটি তখন বললো,
- আমি আপনার অফিসের নিচে। দয়া করে একটু আসবেন? আপনার সাথে আমার জরুরী কিছু কথা আছে....
একটা রেস্টুরেন্টে আমি আর মেয়েটি বসে আছি। রেস্টুরেন্টের অনেকেই আমাদের হা করে দেখছে। আমি চেয়েছিলাম রেস্টুরেন্ট বাদে অন্য কোথাও বসতে কিন্তু মেয়েটিই আমায় জোর করে এইখানে নিয়ে আসলো।
কফির মগে মেয়েটি চুমুক দিতে দিতে আমায় বললো,
-- সত্যি বলতে আপনাকে আমার প্রথম দেখাতে ভালো লাগে নি। কিন্তু আড়লে যখন আপনি আপনার মায়ের সাথে কথা বলছিলেন আমি আপনার সব কথা শুনে নিয়েছিলাম। তারপর থেকেই আপনাকে প্রচন্ড ভালোবেসে ফেলেছি। ১ মিনিটের কথা শুনে যে কাউকে ভালোবেসে ফেলা যায় সেটা যদি আমার সাথে না ঘটতো তাহলে আমি হয়তো কখনোই বিশ্বাস করতাম না।
আমি মাথা নিচু করে বললাম,
-- তারমানে আপনি আমায় করুণা করছেন?
মেয়েটি কফির মগটা রেখে আমার হাতধরে বললো,
- আমায় একটাবার সুযোগ দাও। আমি তোমায় এতটাই ভালোবাসবো যে মেয়েদের সম্পর্কে তোমার ধারণাটাই পাল্টে দিবো....
ডাক্তারের চেম্বারের সামনে বসে আছি। এমন সময় দেখি ডাক্তারের চেম্বার থেকে আমার ছাত্রী পিহু আর ওর মা বের হচ্ছে। আমি আন্টিকে সালাম দিয়ে বললাম,
-- আন্টি আমায় চিনতে পেরেছেন? আমি আপনার মেয়েকে দুইদিন পড়িয়েছিলাম। কিন্তু ৩ দিনের দিন আমায় বের করে দিয়েছিলেন।
আন্টি তখন বললো,
- হ্যাঁ। চিনতে পেরেছি..
এমন সময় রুম থেকে শ্রাবণী এসে বললো,
- সরি সরি, আজ রোগীর খুব চাপ ছিলো তাই দেরি হয়ে গেলো। অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছো। তাই না?
আমি তখন আন্টিকে বললাম,
--আন্টি, আমার স্ত্রী শ্রাবণী।
আর শ্রাবণীকে বললাম,
- ও হলো পিহু। একসময় আমার ছাত্রী ছিলো।
শ্রাবণী মুচকি হেসে বললো,
-- হ্যাঁ আমি জানি ওর নাম পিহু। আমিও ওর ট্রিটমেন্ট করছি।
আন্টি আর পিহু আমাদের দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো। আমি হেঁটে যেতে যেতে শ্রাবণীকে বললাম,
-- পিহুর কি হয়েছে?
শ্রাবণী বললো,
- এক টিচারের সাথে ওর শারিরীক সম্পর্ক ছিলো। পরে প্রেগন্যান্ট হয়ে যায়। কোন ক্লিনিকে যেন এভরসন করিয়েছে। এখন বিয়ের পর আর বাচ্চা হচ্ছে না...
হঠাৎ শ্রাবণী দাঁড়িয়ে বললো,
- ঐ, এই টিচারটা তো কোনোভাবে তুমি নাতো?
আমি রেগে গিয়ে বললাম,
-- আমি কেন হতে যাবো?আমি কালো বলেই তো আমাকে ৩ দিনের দিন বের করেই দিয়েছিলো।
আমার কথা শুনে শ্রাবণী হাসতে হাসতে বললো,
- নীল শার্টে তোমায় খুব সুন্দর লাগছে।
আমি মাথা নিচু করে বললাম,
-- কাউয়ার মত লাগছে...
আমার কথা শুনে শ্রাবণী আমার হাত ছেড়ে দিয়ে বললো,
- যে ছেলে নিজে নিজেকে সম্মান করে না;তাকে মানুষে কিভাবে সম্মান করবে..
শ্রাবণী রাগ করে একা একা হাঁটছে। আর আমি ওর পিছু পিছু যাচ্ছি আর ভাবছি, কালো কলঙ্কের দাগ হলেও মাঝে মধ্যে কালোকে বাদে সাদাকে অসম্পূর্ণ লাগে..।
স্ট্যাটাসঃ---১৫
এক_ডিভোর্সি_নারীর_বাস্তব_জীবনী
ডিভোর্সের আগে শ্বশুর বাড়ি জেলখানা মনে হতো,
ডিভোর্সের পরে এখন নিজের বাড়িই দোজখের মত লাগছে। (বাণীতে ডিভোর্সি নারী)
পরিস্থিতি যেমনই হোক, ডিভোর্স কখনো সুখ দেয়না! কমপক্ষে কোন মেয়ে সুখী হতে পারে না।
জানিনা, আমি কেন লিখছি? হয়তো এজন্য কারণ, আমি চাই আর কেউ আমার মতো ভুল না করুক। হয়তো এজন্য কারণ, আমি চাই ঠুনকো কারণে সংসারগুলো ভেঙে না পড়ুক।
আমি ঊনিশ বছর বয়সী একজন নারী।
আমাদের বিয়ে হয়েছিল আমার পছন্দে।
সংসারও টিকে ছিল দের বছর। আমাদের একটা ছেলেও আছে, ওর বয়স এখন এক বছর।
আমার স্বামীর স্বভাব-চরিত্র সবই বেশ ভালোই ছিল। শুধু একটু জেদি । অবশ্য তাও সবসময় না, মাঝেমধ্যে। মানুষ ভাবে ওর বদ জেদের জন্যই বুঝি আজ এই অবস্থা। কিন্তু আমি জানি, আমাদের সমস্যার শুরুটা ওর দিক থেকে হয়নি।
সব সংসারেই তো টুকটাক কিছু সমস্যা থাকে। ওরকম আমাদের মধ্যেও মাঝেসাঝে ঝগড়া-ঝাটি হতো। কিন্তু ঝগড়া বাধলেই আমি তল্পিতল্পা গুছিয়ে বাপের বাড়ির দিকে হাঁটা দিতাম। বাপের বাড়িতে বোনরাও আসতো, আর ভাইরা তো ছিলই।
ওদের কাছে কেদেকেটে সব বলতাম। তখন সবাই ওকে ফোন করে কথা শোনাত। আমার ছোট বোন তো রীতিমত অপমান করত!
আমার কাছেও মনে হতো, ঠিকই আছে। কত বড় সাহস, আমার সাথে লাগতে আসে। আমাকে নিজের মতো চালাতে চায়। আমার মধ্যে কেমন একটা জেদ কাজ করতো।
ওর কাছে ছোট হব, ওর কাছে নিজের ভুল স্বীকার করব, মাফ চাইব, এটা ভাবতেই পারতাম না।
উল্টো বড় গলা করে বলতাম,“ডিভোর্স দাও! তোমার মতো লোকের সাথে কে সংসার করে?”
নাহ, ডিভোর্স আমি কখনোই মন থেকে চাই নি।
ওটা ছিল মুখের কথা।
ওর সামনে ছোট হওয়ার চাইতে ডিভোর্স চাওয়াই আমার কাছে সঠিক মনে হতো।
একদিনের কথা এখনও মনে পড়ে। সেদিন ছোট একটা ব্যাপার নিয়ে তর্ক করতে করতে দুজনেই খুব উত্তেজিত হয়ে পড়েছি। রাগে আমার শরীর কাঁপছে। যা মুখে আসছে তাই বলছি। তুই-তোকারি, গালিগালাজ, অপমান কিচ্ছু বাদ যায় নি।
এক পর্যায়ে সহ্যের বাধ ভেঙে ও আমার গায়ে হাত তুললো!
এর আগে কিংবা পরে কখনোই ও আমার গায়ে হাত তুলে নি। কিন্তু ঐ একটা থাপ্পড়, ওটাই যথেষ্ট ছিল।
আমি বাপের বাড়ি চলে গেলাম।
আর হ্যাঁ বরাবরের মতো এবারও নিজের দিকটা না বলে খালি ওর দিকটাই বলে গেলাম।
মানুষের দোষ দিয়ে আর কী লাভ! সবাইকে যা বলেছি, সেটার উপর ভিত্তি করেই তারা বিচার করেছে। পরিবারের সবাই বললো, এমন ছেলের সাথে সংসার করার কোনো দরকার নাই।
মামলা ঠুকে দাও।
আমি সবার পরামর্শে মামলা করলাম।
ওর নামে নারী নির্যাতনের কেইস করা হল।
খুব দ্রুতই ওকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেল। ওর পরিবার থেকে মুরুব্বিরা এসে বার বার অনুরোধ করল, আমি যেন এই কেইস তুলে নিই।
ভেতরে ভেতরে আমিও চিন্তা করতাম, আচ্ছা, আমার স্বামী কি আসলেই জালেম? ও কি কোনদিন নিজে থেকে আমার গায়ে হাত তুলেছে? আমি যদি ওকে এত কথা না শোনাতাম, তাহলে কি ও আমার গায়ে সেদিন হাত তুলতো?
আমার বাবা মা আমাকে বুঝিয়েছিল, আমি যদি এতকিছুর পর ফিরে যাই, তাহলে ও ভাববে,
আমি বুঝি অসহায়। আমাকে আরো পেয়ে বসবে। আমার উপর ইচ্ছামত ছড়ি ঘুরাবে। একবার গায়ে হাত তুলেছে মানে বার বার একই কাজ করবে। কাজেই নিজে থেকে ফিরে যাওয়ার তো প্রশ্নই আসে না।
কিন্তু আমার মনের ভেতর কে যেন চিৎকার করে বলতো, ও তো এমন লোক না। ও যেদিন আমার গায়ে হাত তুলেছিল, সেদিনই হাটু জোর হয়ে আমার কাছে মাফ চেয়েছে। এসব ভেবে ভেবে আমি মামলা তুলে নিলাম। তবে ওর কাছে ফেরত গেলাম না।
কিছুদিন পর দুই পরিবার থেকে বিচার-সালিশ হল। সবার কাছে ও দোষী প্রমাণিত হল।
সবাই ওকে নানা কথা বোঝাল, উপদেশ দিল। তারপর আবার সংসার শুরু করলাম।
এর পরের কয়েক মাস ভালোই চলছিল,
কিন্তু হুট করে আবার কী একটা নিয়ে আমাদের ঝগড়া বেধে গেল। ব্যস, কাপড়চোপড় গুছিয়ে আবার আমি বাপের বাড়ি গিয়ে উঠলাম।
এর মধ্যে শুনলাম ও নাকি খুব অসুস্থ !
আমি বাসায় ফিরতে চাইলে আমার পরিবার বললো, এভাবে একটা ঝগড়ার পর একা একা ফিরলে সেটা ভালো দেখায় না।
আর আমার বোনদের কথা ছিল, ওসব অসুস্থ-টসুস্থ কিছু না, সব বাহানা!
আমরা চাচ্ছিলাম ঐ পক্ষ থেকে কিছু আত্মীয়-স্বজন এসে ওর ভুল স্বীকার করে আমাকে হাতে পায়ে ধরে নিয়ে যাক।
কিন্তু এবার কেউই আসলো না।
এরও কিছুদিন পর ও আমাকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিল। ডিভোর্স লেটার দেখে আমাদের পরিবারের সবাই খুব খেপে গেল।
কতবড় সাহস, মেয়েকে এত কষ্টে রেখেছে, তার উপর ডিভোর্স লেটার পাঠায়। সবার কথায় আমার কাছেও মনে হলো ঠিকই তো, কত বড় সাহস! আমাকে ডিভোর্স দিতে চায়? ওর সব ভুলগুলো চোখের উপর ভাসতে লাগলো। মা বাবা মনে করিয়ে দিলো, ও হলো সেই ছেলে যে কিনা আমার গায়েও হাত তুলেছে।
প্রতিশোধের আগুনে জ্বলতে জ্বলতে আমিও ঠিক করলাম, এবার ডিভোর্সই দেব। কে চায় এমন ফালতু লোকের সংসার করতে? কোর্টে গিয়েও ওকে হেনস্থা করার চেষ্টা করলাম। আমার মাসিক খরচ বাড়িয়ে একটা আকাশছোঁয়া অংক দাবি করলাম! আমি চাচ্ছিলাম ওর যেন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়। যেন নিজে থেকে আমার কাছে এসে আবার সংসার করতে চায়।
আসলে ডিভোর্স হোক আমি কখনোই চাই নি৷
কিন্তু জিদ আমাকে খেয়ে নিচ্ছিল। আগ বাড়িয়ে ওকে ডিভোর্স তুলে নিতে বলা আমার পক্ষে অসম্ভব!
ওর কাছে ছোট হওয়া আমি মানতেই পারি নি।
কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার, ও আমার আকাশছোঁয়া সমস্ত দাবি মেনে নিলো। আমাদের ছেলেকে আমি পেয়ে গেলাম। ভরণপোষণ, মাসিক খরচ, ওর সম্পত্তি সব! বিনিময়ে ও পেলো শুধু ডিভোর্স।
আমাদের ডিভোর্স হয়েছে আজ সাড়ে তিন বছর।
ও আবারও বিয়ে করেছে। সুখেই আছে বোঝা যায়। আসলে ওর মতো নির্ঝঞ্ঝাট স্বামীকে নিয়ে মেয়েরা হয়তো সুখেই থাকবে।
এখন আমার নিজের কথা ভেবে আফসোস হয়। মানুষের মুখের কথা কখনো কখনো ছুরির চেয়েও ধারালো হতে পারে। ও আমাকে একবার থাপ্পড় মেরেছিল ঠিকই, কিন্তু আমি কথার তীরে ওকে ছিন্নবিছিন্ন করে ফেলতাম।
শারীরিক নির্যাতন করি নি সত্যি,
কিন্তু মানসিকভাবে কষ্ট দিতাম। এসব কথা আমার মা বাবাকে কখনোই বলা হয় নি।
নিজের দোষের কথা মানুষ কতটাই বা বলে!
মাঝে মাঝে ভাবি, ইশ, আমার পরিবার যদি একটু নিজে থেকে বুঝে আমাকে সংসার করার উপদেশ দিতো। যখন আমি ওর কাছে ফিরে যেতে চাইতাম, তখন ওর খারাপটা না বলে যদি একটু ভালো দিকগুলোর কথা মনে করাতো! আমি যদি নিজের জিদ নিয়ে পড়ে না থেকে, একটু ওর কাছে নত হতাম! তাহলে হয়তো আজ আমাকে এই দিন দেখা লাগতো না।
ডিভোর্সের আগে শ্বশুর বাড়ি জেলখানা মনে হতো,
ডিভোর্সের পরে এখন নিজের বাড়িই দোজখের মত লাগছে।
আজ আমার ভাইবোন বন্ধুবান্ধব সবার নিজেদের সংসার আছ। কিন্তু ছোট্ট ভুলে আমার সব শেষ হয়ে গেছে তাই দোয়া করি আর কারো সাথে যেন এমন না হয়।
স্ট্যাটাসঃ---১৬ প্রায় প্রতিদিনই সেহরিতে আমার ঘুম ভাঙতো কান্নার শব্দে! আম্মুর কান্নার শব্দে। আম্মু আমার রুমে এসে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তেন। তারপর মোনাজাতে কাঁদতেন। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না! কী মায়া সেই কান্নায়! কাঁদবেন বলেই হয়তো আমার রুমে আসতেন। আব্বুর ঘুম ভাঙাতে চাইতেন না। আমার রুম বললেও আসলে ভুল হবে। তখন আমার নিজের কোনো রুম ছিলো না। আমাদের ড্রইংরুমে একটা বেড ছিলো, সেখানেই আমি ঘুমাতাম।
প্রচন্ড ঠান্ডায় অন্ধকার রুমে সাদা ধবধবে লেপের নিচে শুয়ে শুয়ে আমি বোকার মতো আম্মুর কান্না শুনতাম।
আম্মু মোনাজাতে কী বলছেন বোঝার চেষ্টা করতাম। কিন্তু শুধু 'ইয়া আল্লাহ... ইয়া মাবুদ...' ছাড়া কিছুই বুঝতে পারতাম না! আল্লাহর কাছে আম্মুর কী অনুনয়! কী বিনয়! কী আকুতি! সেই মোনাজাতে এতো দরদ থাকতো আমি কিছু না বুঝেও মন খারাপ করতাম! বুকটা ফাঁকা হয়ে যেতো! মনে মনে ভাবতাম আহা আম্মুর এতো কষ্ট?! আম্মু এতো কাঁদে!
আচ্ছা, আমি কেনো এভাবে মোনাজাতে কাঁদতে পারি না!? নিজেকে নিজে বুঝাতাম মনে হয় আমি ছোটো মানুষ তাই! বড়ো হলে নিশ্চয়ই আমিও আম্মুর মতো কাঁদতে পারবো! আম্মুকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য উঠবো কি না, আম্মুর কাছে যেয়ে বসবো কি না এসব ভাবতে ভাবতে আম্মুর ডাক পড়তো 'ওঠো আম্মু! সেহরির সময় হয়ে গেছে।"
আশেপাশের মসজিদ থেকে মাইকে শোনা যেতো "তাড়াতাড়ি উঠি যাউক্কা (তাড়াতাড়ি উঠে যান), আর মাত্র ত্রিশ মিনিট বাকী!" তাও উঠতাম না।
ক্লাস থ্রিতে পড়া ছোটো ভাই মাঝে মাঝে আমার সাথে ঘুমাতো। আমি লেপটা আরো শক্ত করে ছোটো ভাইকে পেঁচিয়ে দিতাম! এতো হাড় কাঁপানো ঠান্ডা ছিলো তখন সিলেটে!
তারপর শুয়ে শুয়ে শুনতাম আব্বু উঠেছেন, আব্বুকে ওযুর জন্য গরম পানি দেওয়া হচ্ছে কিন্তু আব্বু বার বার লজ্জিত স্বরে বলছে না না আমি নিজেই নিয়ে নিবো! ওযু শেষে গামছা খুঁজছেন। আমার আব্বু কখনো তোয়ালে ব্যবহার করতেন না। তাঁর সেই বিখ্যাত পাবনা বা কুষ্টিয়ার সুতি গামছাই ছিলো নিত্যসংগী। রান্নাঘর থেকে খুটখুট শব্দ আসছে। আম্মু আমাদের মোর্শেদাকে বলছে জগে কুসুম কুসুম গরম পানি ভরাতে, টেবিলটা একটু মুছে দিতে, গতরাতের তরকারিটা গরম করতে...
ভাগ্যিস ঐ সময় আমার ফোন ছিলো না। তা না হলে এসব কিছুই শোনা হতো না, শুয়ে শুয়ে ফোন টিপতাম! আর আম্মু এসে নির্ঘাত চিল্লাচিল্লা শুরু করে দিতো 'সেহরীতে উঠেও ফোন! খেতে আসো!"
সবশেষে আব্বু আসতেন ডাকতে। 'কাব্যমনি আসো!' আব্বু ডাকা মানেই ফাইনাল ডাক। এখন আর শুয়ে থাকা যাবে না। আমার উঠতে হবে! মাইকে শুনছি আর মাত্র পনেরো মিনিট বাকী! ঠান্ডায় উঠতে কষ্ট হতো আব্বু বুঝতেন। "লেপ দিয়ে বালিশ পর্যন্ত ঢেকে রাখো তাহলে তোমার বিছানা আর ঠান্ডা হবে না! -আব্বুর টিপস!
রানীর মতো বিছানা থেকে উঠতাম। কোনো দায় নাই, দায়িত্ব নাই! সব রেডিমেট! যেয়ে খালি খাবো। ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে হাতের কাছে চাদর কিংবা একটা দু'টা সোয়েটার গায়ে জড়িয়ে খেতে বসতাম। আমরা না আসলে আব্বু কখনো শুরু করতেন না। খাওয়ার সময় আব্বু শুধু আমার দিকে গরম পানি এগিয়ে দিতেন। আমি একদমই খেতে চাইতাম না। গরম পানি খেতে আমার একদমই ভালো লাগতো না। আব্বু বুঝাতেন গরম না তো, এটা 'ওয়ার্ম ওয়াটার'! মনে মনে বলতাম ঐ একই কথা তো আব্বু!
আমরা তিনজন মিলে সেহরি করতাম। আমার ছোটোভাই তখনো সব রোজা করতো না। ক্লাস থ্রি-ফোরে পড়তো, সারা বছর অসুস্থ থাকতো। তাই তার বিশেষ ছাড়! আম্মু তাঁর ফোলা ফোলা চোখ নিয়ে আমাদের সাথে বসতেন কিন্তু কখনো খেতেন না। আম্মুর কাজই ছিলো 'কাব্য, আরেকটু ভাত নাও!, "কাব্যর আব্বু দুধ -ভাত খাবে?", "এই মোর্শেদা আরেক পিছ মাছ নিয়ে যা".... সবার শেষে আম্মু দুই গ্লাস পানি খেতেন। আর যদি বাসায় দই থাকতো খুব বেশি হলে দুই চামচ দই খেতেন। এটাই ওনার সেহরি। আম্মু সেহরিতে কখনো খেতে পারেন না।
আমি আড়চোখে আম্মুকে দেখতাম কে বলবে এই মহিলা এতোক্ষন মোনাজাতে কেঁদেছেন। আম্মু কাঁদলেই চোখ ফুলে গোল্লা গোল্লা হয়ে যেতো, নাক গাল লাল হয়ে যায়! মানুষ বুঝতো। আমার আবার ম্যালা দু:খ ছিলো! কারন আমি কাঁদলে আমার চোখ ফুলতো না, নাক লাল হতো না! কেউ যদি বুঝতেই না পারলো আমি কেঁদেছি তাহলে এই জীবনে কেঁদে কী লাভ, বলেন!?
মাঝে মাঝে আমার ভাই সেহরির শেষ দিকে টর্নেডোর গতিতে হামলা দিতো- 'আমাকে কেনো তোমরা ডাকলা না!? আমি রোজা রাখবো!" বলেই কান্না! দেখা গেল আযান দিয়ে দিয়েছে সেই কখন আর আম্মু কাতিবকে দুধ ভাত খাওয়ায় দিচ্ছেন, ভাইয়ের সেহরি! ও একটা কথা, দুধ-ভাত কিন্তু আমাদের বাসায় সুপার হিট খাবার ছিলো! আব্বু, আমার ছোটো ভাই, আমার পছন্দের খাবার। আর শুধু দুধ-ভাত হলেই হতো না একটা কলা থাকা ছিল মাস্ট! কলা না থাকলে দুধ-ভাত খাওয়া ক্যান্সেল।
সারাদিন শেষে আমরা আবার সবাই ইফতার করতে বসতাম। আযানের ৫/৭ মিনিট আগে আমাদের রুলস ছিলো মোনাজাত করার। কোনোদিন আব্বু করতেন, কোনোদিন আম্মু। কিন্তু আব্বু সবসময়ই আম্মুকে বলতেন তুমি সুন্দর করে বলো, তুমিই করো! আমিও কয়েকদিন করেছি। কিন্তু লজ্জায় আল্লাহর কাছে কী চাই সবাইকে শোনাতে চাইতাম না! আমার সবসময় একটাই চাওয়া ছিলো -আল্লাহ আমি যেনো এবার পরীক্ষায় খুব ভালো রেজাল্ট করতে পারি! আব্বু-আম্মুকে যেনো অনেক খুশি করতে পারি! যেহেতু তখন বেশিরভাগ রোজার আগেই বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হয়ে যেতো তাই পুরা রোজা জুড়ে আমার কমন দোয়া এটাই ছিল! আমার ছোটোভাই তখনও বিশেষ মূল্যহ্রাসে ছিলো! তাকে হাজার চেষ্টা করেও কেউ মোনাজাত ধরাতে পারেনি।
আব্বু-আম্মু দুজনই সাহিত্যের মানুষ। মোনজাতও সেইভাবে করতেন। আমি মুগ্ধ হয়ে শুনতাম! এতো সুন্দর সুন্দর কথা আব্বু -আম্মু বলতেন আমরা শুধু আমীন আমীন বলতাম। মনে হতো এই মোনাজাত অনন্তকাল চললেও আমরা ইফতার সামনে নিয়ে বসে থাকবো...! দাদা-দাদি, নানা-নানিসহ আমাদের পূর্বপুরুষ, আত্নীয়-স্বজন, পাড়া- প্রতিবেশি, বন্ধু-বান্ধবী- কলিগ থেকে শুরু করে দেশের - বিদেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, ইহকাল, পরকাল কোনো বিষয়ই বাদ যেতো না। আমি মনে মনে ভাবতাম মোনাজাতে এতো কিছু কীভাবে মনে রাখেন!
আমার আম্মু ভীষন আবেগপ্রবণ, আবার কাঁদতেন... কিন্তু এই কান্না সেই শেষরাতের কান্নার মতো হতো না... এই কান্না আমরা সবাই শুনতাম কিন্তু শেষরাতের সেই কান্না শুধু উপরওয়ালাই জানতেন...
আজ এতো বছর পর কতো কিছুই বদলে গেছে... বিয়ে হয়েছে, মা হয়েছি। সেহরিতে সবার আগে উঠি, তারপর সবাইকে ডাকি। এখন আর বিছানায় অলসতায় উঠি উঠি করি না, মাইকে বলতেও শুনি না 'তাড়াতাড়ি উঠি যাউক্কা আর পনেরো মিনিট বাকী!"
প্রতিদিন চোখে ভাসে ঐ যে আম্মু তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ছেন আবার মনে হয় আম্মুর কান্নার শব্দ শুনছি... আমাদের সিলেটের টিলাগড়ের সেই ছোট্ট বাসাটা, যে বাসায় নিজের কোনো রুম ছিলো না... কিন্তু কী শান্তি ছিলো... সেহরিতে ওযুর পানি নিয়ে আব্বুর বিনয়ী কণ্ঠস্বর... সেহরিতে না ডাকায় ছোটোভাইয়ের গগনবিদারী কান্না... বুকটা ভারী হয়ে আসে... শেষ রাতে কীসের যেনো হাহাকারে নি:শ্বাস নিতে কষ্ট হয়... চারিদিকে শূন্যতা আর শূন্যতা...
আবিষ্কার করি, আমি আসলেই অনেক বড়ো হয়ে গেছি -
তাই আজ আমিও আম্মুর মতো না হলেও মোনাজাতে অনেক কাঁদতে পারি...
(খাদিজা তুল কোবরা কাব্য)
ধন্যবাদ সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য।
ধন্যবাদান্তেঃ------
মওদুদ আহমেদ মধু (মিঃ মধু)
দৃশ্যমান_জীবনের_অদৃশ্য_কাব্য
No comments