ফেইসবুকে স্যাড রোমান্টিক স্ট্যাটাস এর বিশাল কালেকশান--০৩ @মিঃ মধু
ফেইসবুকে স্যাড রোমান্টিক স্ট্যাটাস এর বিশাল কালেকশান--০৩
স্ট্যাটাসঃ- ০১"শুধুমাত্র পারফেক্ট হয়নি বলে আজ যাকে ছেড়ে দিতে চাচ্ছেন, সেই মানুষটাকে ঠিকই অন্যকেউ পারফেক্ট বানিয়ে নিবে... তখন সহ্য করে থাকতে পারবেন তো !!
.
যে মানুষটাকে দেখে বোকাসোকা কিংবা ক্ষেত মনে হয়, সেই মানুষটাই কোনো একদিন নিজেকে অনায়াসে বদলে ফেলবে... আপনি তার জীবনে থাকুন কিংবা না থাকুন, কেউ না কেউ ঠিকই তার জীবন থেকে যাবে... আপনার কাছে যে অসম্পূর্ণ, অন্য কারো কাছে সে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে !!
.
প্রতিটা মানুষেরই নিজস্ব কিছু খুঁত থাকে, কমতি থাকে, দুর্বলতা থাকে... জন্ম থেকেই কেউ পারফেক্ট হয়ে আসে না... মানুষকে পারফেক্ট বানিয়ে নিতে হয়... আজ যাকে পারফেক্ট মনে হয়নি, সেই মানুষটাও কোনো ঠিকই একদিন পারফেক্ট হয়ে উঠবে !!
.
পরিপূর্ণ কারো পাবার আশায় আপনি শুধু একের পর এক সম্পর্কে জড়াতে পারবেন ঠিকই, কিন্তু পরিপূর্ণ হয়ে কাউকেই পাবেন না... কারণ কোনো মানুষই পরিপূর্ণ হয় না... যে মানুষটাকে দেখে পরিপূর্ণ কিংবা পারফেক্ট মনে হবে, খোঁজ নিলে জানতে পারবেন সেই মানুষটারও কোথাও না কোথাও কমতি আছে !!
.
প্রিয় মানুষটার একটু কমতি না থাকলে মানায় না... একটু খুঁত কিংবা দুর্বলতা না থাকলে মানায় না... ঐটুকু কমতি কিংবা দুর্বলতাই মানুষটাকে সুন্দর করে রাখে... মায়ায় আবদ্ধ করে রাখে... অপরদিকে পরিপূর্ণ কাউকে ভালোবাসার মতো কিছু থাকে না... কারণ সে আগে থেকেই পরিপূর্ণ !!
.
জীবনে কাউকে পরিপূর্ণ পাওয়ার মাঝে কোনো সার্থকতা থাকে না... বরং পরিপূর্ণ কাউকে পাওয়া আর না পাওয়া একই কথা... কারো জীবনে পাশে থেকে, কারো খুঁত কিংবা দুর্বলতাগুলোকে ভালোবেসে নিজের মতো করে মানিয়ে নেয়াটাই হলো সম্পর্কের সার্থকতা !!
.
এই মুহূর্তে যে মানুষটা আপনার সাথে আছে, সে যেমনই হোক তাকে আগলে রাখুন, ধরে রাখুন... তার অপরিপূর্ণতা কিংবা দুর্বলতাকে আঘাত না দিয়ে ভালোবাসতে শিখুন... একদিন আপনার ভালোবাসাই তাকে আপনার মতো করে পরিপূর্ণ কিংবা পারফেক্ট করে তুলবে... শুধু একটু অপেক্ষা মাত্র !!"
স্ট্যাটাসঃ- ০২ "ভালোবাসার মানুষটাকে মাঝেমধ্যে সময় দিতে হয়... একা থাকতে দিতে হয়... কেউ তোমাকে ভালোবাসে বিধায় এটা নয় যে, সব সময় তোমাকে নিয়েই মেতে থাকবে !!
.
তোমাকে ভালো রাখতে চাইলে আগে তার নিজেকে ভালো রাখতে হবে... নিজেকে ভালো রাখতে হলে তার নিজেকে সময় দিতে হয়... যদি তোমাকে ভালো রাখতে গিয়ে নিজেকেই যদি ভালো রাখতে না পারে তাহলে তোমাকেও সে ভালো রাখতে পারবে না... এর জন্য তুমিই দায়ী থাকবে !!
.
প্রতিটা মানুষেরই ব্যক্তিগত একটা জীবন থাকে... ঠিক তেমনি তোমার প্রিয় মানুষটারও নিজের আলাদা একটা জগৎ আছে... তুমি তার এক পৃথিবী হতে পারো তবে তার ব্যক্তিগত জগতে তুমি খুব একটা অধিকার দেখাতে পারো না !!
.
মানুষ ভালোবাসে ভালো থাকার জন্য... হাজারো মানুষের ভিরে কেউ তোমাকে বেছে নিয়েছে তোমার সাথে ভালো থাকার জন্য... এখানে মানুষটা কিভাবে তোমার সাথে ভালো থাকতে পারবে সেটা তার উপর ছেড়ে দাও... মানুষটা নিজেই তার ভালো থাকা খুঁজে নিবে !!
.
কেউ যদি তোমার সাথেই সর্বদা মেতে থাকে তাহলে তার পরিবার কিংবা বন্ধুদের থেকেও তার দুরত্ব বেড়ে যায়... যার জন্য তুমিই দায়ী... তাই মাঝেমধ্যে মানুষটাকে তার মতো করেই থাকতে দিতে হয়... যাতে শুধু তোমার সাথে নয়, বরং সবার সাথেই তার সম্পর্ক ভালো থাকে !!
.
তোমার প্রিয় মানুষটার উপর সম্পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রাখা উচিত... দিনের কোনো একটা নির্দিষ্ট সময় যদি তোমার সাথে কথা বলতে না পারে, তারমানে এটা নয় যে তোমাকে ভুলে গিয়েছে কিংবা অন্য কারো সাথে কথা বলেছে... অনেক সময় ব্যস্ততার কারণেও এমনটা হয় !!
.
প্রিয় মানুষটার মনে নিজেকে মেলে ধরতে চাইলে মানুষটাকে তোমাকে অনুভব করার সুযোগ দিতে হয়... স্পেস দিতে হয়... সর্বোপরি মানুষটার সাথে ভালো আচরণ করতে হয়... তার ইচ্ছা অনিচ্ছাকে গুরুত্ব দিতে হয়... তাহলেই মানুষটার মনে তুমি জায়গা নিতে পারবে !!
.
কেউ তোমাকে নিয়ে যদি সারাক্ষণ মেতে থাকে এতে সঠিক ভালোবাসা প্রকাশ পায় না... বরং কেউ শত ব্যস্ততার পরেও তোমার নিয়মিত খোঁজ রাখছে, কথা বলছে, তাহলে ঐ মানুষটাই তোমাকে সত্যিই ভালোবাসে... ভালোবাসায় পাগলামি থাকবে ঠিকই তবে অতিরিক্ত পাগলামি সম্পর্কটাকে হাসির খোরাক বানিয়ে দেয় !!"
স্ট্যাটাসঃ- ০৩ "জীবনে এমন একটা মানুষ থাকা দরকার যার কাছে নিজেকে খুচরো পয়সার মতো জমা করে রাখা যায়... অন্তত দিনশেষে মনের সব কথাগুলো কাউকে ভরসা করে বলা যায় !!
.
মানুষ কথা বলতে বলতে কখনো মরে যায় না... মানুষ ছটফট করে মরে যায় যখন সে কাউকে নিজের মনের কথাগুলো বলতে পারে না... মানুষ যতটা ডিপ্রেশনে ভোগে, তারচেয়ে বেশি ভোগে একাকীত্বে !!
.
ডিপ্রেশন একটা সময় নিজে নিজে কাটিয়ে ওঠা যায়, কিন্তু একাকীত্ব কখনো নিজে নিজে কাটিয়ে ওঠা যায় না... একাকীত্ব দূর করার জন্য হলেও কাউকে দরকার পরে যার কাছে সে নিজেকে ফিরে পাবে !!
.
চুপ করে থাকা মানে এই নয় যে ভালো নেই... মাঝেমধ্যে কথা বলতে ইচ্ছা হয় না... কেউ একজন মন খারাপটুকু বুঝে নিক... একাকীত্বের ছায়া হোক... রাত জাগার কারণ হোক... শুধু নীরবতাটুকু ভেঙে না দিক, কথা না বলুক !!
.
প্রচন্ড ডিপ্রেশনে মানুষ একজোড়া ভরসা পাবার মতো হাত খুঁজে... একটা বিশ্বাস করার মতো মন খুঁজে... কারণ সে চায় যত খারাপ সময় আসুক না কেনো কেউ একজন তাকে বলুক ভয় নেই আমি তো আছি !!
.
জীবনে একটা নিজের মানুষ থাকা দরকার... যার সাথে অন্য কারো কারোর যোগাযোগ থাকবে না... অন্য কারোর গল্প তাকে স্পর্শ করতে পারবে না... মানুষটা থাকবে একান্তই নিজের !!
.
এই সাড়ে সাতশো কোটি মানুষের মধ্যে যার একটা একান্তই নিজের মানুষ আছে সেই মানুষটা কখনো একা নয়... তাকে কখনো একাকীত্ব স্পর্শ করতে পারে না... সে সবথেকে বড় ভাগ্যবান কিংবা ভাগ্যবতী !!"
স্ট্যাটাসঃ- ০৪ "ছেড়ে যাওয়া ভুল মানুষটার জন্য আপনি এখনো মন খারাপ করে বসে আছেন। অথচ খেয়াল করলে দেখবেন ঐ মানুষটাই নতুন কাউকে নিয়ে দিব্যি সময় পার করে যাচ্ছে !!
.
আপনি যতদিন মন খারাপ করে বসে থাকবেন ঐ মানুষটা ততদিন আপনাকে নিয়ে হাসাহাসি করবে... মনে মনে বলবে আপনি আসলেই বোকা... সেইসাথে এটাও ভেবে নিবে আপনাকে ছেড়ে দিয়ে সে দিব্যি ভালো কাজ করেছে !!
.
যে ছেড়ে চলে যায় সে ভুল মানুষ, তার জন্য মন খারাপ করে থাকার কোনো মানেই হয় না... একজন ভুল মানুষের জন্য মন খারাপ করে থাকা মানে নিজেকে আরো ছোট করে রাখা... নিজেকে আরো কষ্ট দেয়া... নিজেকে আরো অপমানিত করা !!
.
অথচ আপনার উচিত মন খারাপ না করে নিজেকে শক্ত করে গড়ে নেয়া... আপনি যখন নিজেজে শক্ত করে নতুন করে গড়ে নিবেন, নতুন কাউকে নিয়ে ভালো থাকতে শিখবেন, ঠিক তখনই আপনাকে ছেড়ে যাওয়া মানুষটাই আপনাকে দেখে আফসোস করবে !!
.
আপনি সারাজীবন মন খারাপ করে থাকলেও কেউ আফসোস করবে না, কষ্ট পাবে না, যদি আপনি নিজেকে শক্ত না করেন... মন খারাপ করে থাকলে কারো মনের আফসোসের কারণ হওয়া যায় না... আফসোসের কারণ হতে হলে আপনার যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হয় !!
.
আপনি মন খারাপ করে থাকলে কেউ আপনাকে ভালোবাসতে আসবে না... কারণ আপনি ভালো থাকতে না পারলে অন্য কাউকে ভালো রাখতে পারবেন না... ভুল মানুষ ছেড়ে নিজেকে ভালোবাসুন, একটু আশেপাশে ঘুরে ফিরে তাকান দেখবেন অনেকেই আপনাকে ভালোবাসার জন্য বসে আছে !!
.
আপনার জীবন থেকে একজন ভুল মানুষ চলে যাওয়া মানেই হলো সঠিক মানুষটার আসার পথ তৈরি হয়ে যাওয়া... ভুল মানুষ নিয়ে আপনি কিছুক্ষণ থাকতে পারবেন কিন্তু সারাজীবন ভুল মানুষটাকে নিয়ে থাকতে পারবেন না, সে আজ হোক বা কাল আপনাকে ছেড়ে যাবেই !!
.
তাই কখনো কারোর জন্য ভেঙে পড়বেন না... আপনার সাথে যেমনটা ঘটবে ঠিক যে আপনাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে তার সাথেও তেমনটাই হবে... শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র... আপনি শুধু অপেক্ষা করে করুন, শেষ হাসিটা আপনিই হাসবেন !!"
স্ট্যাটাসঃ- ০৫ হারিয়ে গেছে সে কোন এক মেঘলাদিনে -
বৃষ্টির সাথে ঝড়ো হাওয়া হয়ে-!
রোদ্রের সাথে কোন এক ভোর ব্যালায় কুয়াশা হয়ে
কোন এক শেষ বিকেলে গোধুলিলগনে।
হারিয়ে গেছে সে কোন এক আমাবস্যার রাতে
ভয়ংকার কালো অন্ধকার হয়ে -!
ঘনকালো মেঘের আরালে কোন এক বর্ষা কালে
কোন এক অচেনা নদীর স্রোতের সাথে।
হারিয়ে গেছে সে কোন এক প্রাচিন যুগে
হারিয়ে যাওয়া সভ্যতা হয়ে।
মহাকালের সাথে কোন এক ভয়ানক দিনে
গন্তব্য হীন কোন এক পথের সাথে..!!
স্ট্যাটাসঃ- ০৬ প্রতারনার গল্পের প্রতারকগুলোর মতোই
একজন তোমার প্রিয় মানুষ গুলো!
আবেগ প্রকাশ করে সিমপ্যাথি পাওয়া যায়, ভালোবাসা না! চোখের জ্বলে কখনো সম্পর্ক বেধে রাখা যায় না বরং সে সম্পর্ক আরো অবহেলায় জর্জরিত হয়ে যায়.!
তুমি কেঁদে কেঁদে তার মন নরম করতে চাইছ, তুমি তোমার দূর্বল জায়গা গুলো তাকে সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছো, আত্মসম্মানবোধটাকে গলা টিপে মেরে ফেলছো শুধু তার কারনে!
তুমি ভাবছো একদিন হয়তো সে তোমার এই বোকা বোকা অনুভুতি গুলো বুঝবে, একদিন হয়তো সে আবার আগের মতো হয়ে যাবে, তাইতো এত এত অপমানের পরও তুমি তাকেই ফিরে পেতে চাইছো.!
তোমার এই ভালোবাসাময় ব্যাপারগুলো তার কাছে নিতান্তই সস্তা আবেগ, তুমি যতোই না খেয়ে থাকো, যতোই হাত কাটো, যতোই কেঁদে কেঁদে গাল লাল করে ফেলো তাতে তার কিছু আসে যায় না.!
বিলিভ মি, সে কখনো তোমার এই অনুভুতিগুলো বুঝবে না, কখনোই না.! চলে যাওয়া মানুষটা বেশিরভাগ সময়ই ফিরে আসে.! তুমি হয়তো ভাবছো, সে তোমার ভালোবাসার টানে ফিরে এসেছে.! না সে তোমার ভালোবাসার টানে ফিরে আসেনি.!সে ফিরে এসেছে তোমাকে আগের থেকে আরো বেশি কষ্ট দিতে.!
হ্যাঁ, তোমার ভালোবাসাটা স্পেশাল.! কিন্তু তুমি যাকে ভালোবাসো সেই মানুষটা তোমার চারপাশে ঘটে যাওয়া প্রতারনার গল্পের প্রতারকগুলোর মতোই একজন তোমার প্রিয় মানুষ গুলো!
তুমি যতো দূর্বল হবে, যতো স্যাক্রিফাইজ করবে সে ততো তোমাকে অবহেলা করবে.!তার দেয়া প্রতিটা কষ্ট নিরবে মেনে নিয়ে তুমি তার সিমপ্যাথি পাবে, ভালোবাসা না.!
৫০ বার কল মেসেজ দিয়ে একবার রেসপন্স পেয়ে তুমি খুশিতে লাফাচ্ছো.! মনে রেখো, এটা ভালোবাসা না, এটা তোমার অনুভুতির বিনিময়ে পাওয়া ছোট্ট একটা সিমপ্যাথি.!
একসময় বার বার চেষ্টা করেও তার সাথে কথা বলতে পারবে না.! হঠাৎই হয়তো একদিন বিরক্ত হয়ে সে তোমার নম্বরটা ব্লকলিস্টে রেখে দিয়ে দেবে,
তুমি সেদিন চিৎকার করেও কাঁদতে পারবে না.! দুমড়ে মুচড়ে ভিতরে ভিতরে শেষ হয়ে যাবে। তাতেও তার কিছু আসবে যাবে না.!
প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না" এই হৃদয়বিদারক কথাটার মর্ম সে কখনোই বুঝবে না.!
তাই তোমার এই অমূল্য ভালোবাসা, অমূল্য চোখের জল, অমূল্য অনুভূতি গুলো সেখানেই প্রকাশ করো যেখানে তুমি গুরুত্ব পাও.!
যে মানুষটার জন্য তোমার আত্মসম্মান হারাতে হয়, সেই মানুষটা আর যাই হোক তোমাকে ডির্জাব করে না!
স্ট্যাটাসঃ- ০৭ আপনজন
লেখাঃ মিনহাজ মাহমুদ
-বছর তিনেক আগে পতিতালয়ের এক মেয়েকে বিয়ে করেছিলাম।
বিয়ের প্রথম রাতে বরের মুখে এমন কথা শুনে জান্নাত অবাকের শেষ প্রান্তে পৌছালো । তারপর চোখ বড় বড় করে বলল
-এভাবে না , খোলাসা করে বলেন !
মিনহাজ একটু দম নিয়ে বলতে শুরু করলো ।
মাঝে মাঝে পতিতালয়ে যাওয়া ছিল আমার গভীর অভ্যাস । এক প্রকার নেশা হয়ে গেছিলো । নতুন শরীরের গন্ধ আমাকে খুব টানতো । বাবার অর্থের কোনো সমস্যা ছিল না । তাই এসবে কোনো মাথা ব্যাথাও ছিল না । বন্ধুদের সাথে মদের আড্ডার সকল বিলই আমার পকেট থেকে যেত ।
এর মাঝে যাওয়া আসাই নিষিদ্ধ পল্লীর এক মেয়েকে খুব ভালো লেগে যায় । তার সাথে নিয়ম করে প্রতিদিন দেখা করতাম । এক পর্যায়ে আমি ছাড়া সে আর কোনো কাস্টুমার ধরতো না । দুজনের মাঝেই এক অদৃশ্য সুপ্ত মায়ার জন্ম নিয়েছিল । সত্যিই বলতে মেয়েটিকে খুব ভালোবেসে ফেলেছিলাম । ওর নাম ছিল মেঘা । নামের মতো ওর চেহারাটাও বেশ মায়াবী ছিল । চোখে কাজল দিলে আমি ওর থেকে চোখ ফেরাতে পারতাম না । বাবা মাকে ওর কথা বলেছিলাম । কিন্তু তারা একবারেই না করে দিয়েছিল । আমিও জানতাম এমনটাই হবে । তাই আগাম প্রস্তুতি নিয়েছিলাম । পালিয়ে যাওয়ার প্ল্যান ছিল ।
মা বাবার বিপক্ষে যেয়ে মেঘাকে বিয়ে করলাম । মেঘা সব পরিবেশে অভ্যস্ত ছিল আমি জানি । ও কারো দেখে ভয় পেত না । সব পাল্টা জবাব দিত । মেয়েটি নিষিদ্ধ পল্লীর হলেও ওর মাঝে এক সত্য নৈতিকতার ছায়া দেখেছিলাম । পালিয়ে যাওয়ার প্ল্যান বাদ করে বাড়িতে আসলাম মেঘাকে সাথে নিয়ে । এটা অবশ্য মেঘাই বলেছিল ।
ওর কথাতে সম্মতি দিয়েছিলাম । কিন্তু বাড়ি থেকে আমাকে কোনো ভাবেই মেনে নিতে চাইনি । বাড়িতে মেঘাকে সবার সামনে উপস্থাপন করতেই , সবাই আমার উপর রাগন্বিত হলো । আমাকে আর মেঘাকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার কথা বলে । তখন মেঘা জবাব দেয়
-আপনার ছেলে কথায় যাবে না যাবে সেটা তার ব্যপার । আপনাদের ইচ্ছা হলে তাড়িয়ে দেন । তবে আমি এই বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাচ্ছি না । যেহেতু আপনার ছেলে আমাকে বিয়ে করেছে , সেই সূত্রে আমি এই বাড়ির বউ । আর এখানে আমার অধিকার আছে । আমি আমার অধিকার থেকে একটুও বঞ্চিত হতে রাজি নই । এখন যদি আপনাদের ইচ্ছা হয় ছেলেকে তাড়িয়ে দেন । যা ইচ্ছা করতে পারেন ।
মায়ের সাথে মেঘার বেশ তর্কাতর্কি চলল। মা এক পর্যায়ে বললেন
-দেখ মিনহাজ দেখ ! কাকে বিয়ে করেছিস । মান সম্মান বলে আর কিছু রাখলি না । এই মেয়ের না আছে ভদ্রতা , না আছে সুশিক্ষা । দেশে কি মেয়ের অভাব ছিল ! শেষমেশ একটা নর্তকীকে বিয়ে করলি ! তোর রুচি এত লোপ পেয়েছে , আমার ভাবতেই ঘৃণা হচ্ছে ।
মায়ের কথা শুনে মেঘা তখন বেশ জোর গলায় বলল
-আমাকে নর্তকী বলেন আর পতিতা বলেন ! আমি কিন্তু এখন এই বাড়ির বউ । আপনার ছেলের বউ । সেই ক্ষেত্রে একটু ভেবে বলবেন । কিছুক্ষণ আগে আমার একটা পরিচয় ছিল ! এখন আমার জীবনে নতুন একটা পরিচয় আছে ।
আর আমাকে যদি যথাযথ অধিকার না দেওয়া হয় তাহলে আমি সরাসরি ক্যাস করে দেব ।
বাবা এবার মুখ খুললেন ।
-ক্যাস করতে কত টাকা লাগে জানো ? শুধু ক্যাস করলেই হয় না , ক্যাস চালানোর জন্য টাকা প্রয়োজন ।
-পুলিশরা যে খুব একটা চরিত্রবান এটা আপনাকে কে বলেছে ? টাকা নাই , দেহ তো আছে ! এক রাত একটু ফষ্টিনষ্টি করলেই টাকা ছাড়া আমার কথায় নাচবে ।
মা বিশাল রাগন্বিত চেহারা নিয়ে বললেন
-ছিঃ ছিঃ ! বেয়াদপ মেয়ে । বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তাও জানেনা !
-বাবার বয়সের মানুষও দুইশত টাকার টিকিটের বিনিময়ে আমার সাথে রাত কাটিয়েছে । কাদের সম্মান করবো ? এই সমাজের মানুষের আসল চেহারা গভীর রাতে দেখা যায় । তাদের কতশত মুখোশ ! সবাই রাতে মুখোশ খোলে না । কেউ কেউ দিনের আলোয় বুঝিয়ে দেয় সে কতটা ভালো মানুষ । বিপদে পড়লে কারো কাছে সাহায্যের জন্য যাবেন , সে আপনাকে ঠিক তার মুখোশের আড়ালের চেহারা দেখিয়ে দেবে ।
মেঘার সাথে আর তর্ক না করে মা বাবা রুমে চলে যায় । সেই থেকে আমরা নিজেদের বাড়িতেই থাকতাম । মা বাবা ঠিক মতো কথা বলতো না । মেঘা কথা বলতে চাইলেও তারা কথা বলতো না । আমার সাথেও তেমন কথা বলতো না । কিন্তু মেঘার সাথে আমার বোন অমিতার বেশ ভাব জমে যায় ।
মেঘার ব্যপারটা আত্মীয়রা জানার পর আমাদের সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করে অনেক কটু কথা শোনায় । মা এই জন্য সব চেয়ে বেশি রেগেছিলেন । তার বোনদের কাছেও কোনো সম্মান পেত না ।
মিনহাজ এবার থামলো । এক টানা অনেকক্ষণ কথা বলায় একটু হাপিয়ে উঠেছে । জান্নাত ঘড়িতে দেখলো
১২ টা ৫৪ মিনিট । মধ্য রাত বলা যায় । মধ্য রাতে কফি খাওয়া জান্নাতের একটা পুরনো অভ্যাস । কিন্তু এখন সে নিরুপায় । আজকে বিয়ে হয়েছে । এমন অদ্ভুত একটা কাজ করলে তা খারাপ দেখাবে । মধ্য রাতে কফি খাওয়া ! মিনহাজ ব্যপারটা কিভাবে নেবে এটা ভেবে জান্নাত কিছু বলতে পারছে না । মিনহাজ বলল
-আচ্ছা , ঘুমাও ! ঘুম পাচ্ছে খুব ।
জান্নাত বলল
-না , গল্পটা আজ রাতে শেষ না করে ঘুমাবো না । আপনি বরং জিরিয়ে নিন । আমি ঝটপট কফি করে নিয়ে আসি । কফি খেতে খেতে বাকি কথা হবে ।
মিনহাজ জান্নাতকে রান্নাঘর দেখিয়ে দিয়ে বেলকনিতে এসে দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট ধরালো । অর্ধেক সিগারেট শেষ না হতেই জান্নাত এসে হাজির ।
-উঁহুঁ , ধূমপান করা চলবে না । ফেলেন বলছি ।
মিনহাজ সিগারেটটা অ্যাসট্রেতে ফেলে জান্নাতের হাত থেকে কফির মগটা নিল । গরম কফির মগে চুমুক দিয়ে জান্নাত বলল
-তারপর কি হলো বলেন ?
-আগামীকাল বলি ?
জান্নাত কপট রাগ দেখিয়ে বলল
-বললাম তো আজই বলতে হবে !
মিনহাজ ব্যপারটা এড়িয়ে যেয়ে বলল
-আপনার যে মধ্য রাতে কফি খাওয়ার নেশা আছে এটা বললেই পারতেন ।
-আপনি কিভাবে জানলেন ?
-অমিতা বলেছে ।
জান্নাত খানিকটা লজ্জা পেল । ইশ , অমিতা আর প্রেস্টিজ বলে কিছু রাখলো না ।
-জেনেই যেহেতু গেছেন আর লুকিয়ে লাভ কি ! আর আপনি কিন্তু খুব সাবধানে মেইন টপিক এড়িয়ে যাচ্ছেন ।
মিনহাজ হেসে দিয়ে বলল
-না শুনে ছাড়বেন না দেখছি । তবে শোনেন ,
মেঘার সাথে মা বাবাও আস্তে আস্তে মিশে গেছিলো প্রায় । মেঘার অসুস্থ এক মা আর ছোট বোন ছিল । তাদের সকল খরচ মেঘা দিত । কিন্তু বিয়ের পর মেঘা ওর পেশা ছেড়ে দেয় তাই এইগুলো আমি দিতাম ।
আমিও বাবার ব্যবসা দেখা শুরু করি । বিয়ে করেছি , আলাদা একটা চাপ সব সময় মাথায় ঘুরপাক খেত । মেঘার দরুনে সকল প্রকার নেশা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলাম । মদ্যপান থেকে শুরু করে সব নেশা চুকিয়ে একদম পারফেক্ট ছেলে হতে কেবলই শুরু করেছিলাম । আমার এই পরিবর্তন হওয়ায় বাবা মা মেঘার উপর একটু সন্তুষ্ট হয় । তাদের মাঝে দূরত্ব কমতে থাকে ।
প্রচণ্ড ভালোবাসার মধ্যে দিন কাটতে থাকে । কিন্তু এর মাঝে একটা ঝড় নেমে আসে আমাদের জীবনে । অফিসে কাজের জন্য আমি কয়েকদিন বাসার বাইরে যায় । এর মাঝে বাড়িতে ডাকাত হামলা করে । অমিতা ম্যাসে ছিল তাই ওর কোনো ক্ষতি হয়নি । ডাকাতেরা বাবা মাকে প্রচুর মারধর করে । সকল টাকা পয়সা সোনা যা ছিল সব নিয়ে যায় । পরের দিন আমি বাড়ি ফিরে জানতে পারি মা বাবা হসপিটালে । প্রতিবেশীদের কেউ একজন হাসপাতালে নিয়ে আসে । কোনো দরকারে আমাদের বাসায় গিয়েছিল । আর যেয়ে মা বাবাকে অজ্ঞান অবস্থায় পাই । আমার বা অমিতার এমনকি আমাদের কোনো আত্মীয়র সাথে যোগাযোগ করার কোনো ওয়ে তাদের কাছে ছিল না । আমি বাড়িতে এসে তাড়াতাড়ি হসপিটালে ছুটে যায় । তারপর সবাইকে খবর দিই ।
জান্নাত হঠাৎ বলল
-মেঘার কি হলো ? ওর কথা তো বললেন না !
মিনহাজ একটু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
-বাবা মা জ্ঞান ফেরার পর আমার সাথে যখন কথা বলল , তখন আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম । এই ডাকাত দলের সাথে নাকি মেঘার সম্পর্ক আছে । মেঘার সহায়তায় ওরা বাড়িতে প্রবেশ করে ।
জান্নাত বলল
-আপনি কি এটা বিশ্বাস করেছেন ?
-বিশ্বাস করতে পারিনি । তবে মা বাবার এই অবস্থার দিকে তাকিয়ে বিশ্বাস করেছি । মনে মনে মেঘাকে খুব ঘৃণা হয় ।
-মেঘার সাথে আর কখনও দেখা হয়েছে ?
-না !
মিনহাজ একটা সিগারেট ধরালো । সিগারেটের প্রচণ্ড নেশা চেপেছে । সিগারেট এখন অতীব প্রয়োজন মিনহাজের ।
-এমনও তো হতে পারে , মেঘা নয় ডাকাত দলের সাথে আপনার মা বাবার প্ল্যান ছিল ! তারাই মেঘাকে ওদের হাতে লেলিয়ে দিয়েছে । আপনার জীবন থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য ! আপনার বাবা মা উপরে মেনে নিলেও আদৌও কি মন থেকে মেঘাকে মেনে নিয়েছিল ?
জান্নাতের কথায় মিনহাজের হাত থেকে সিগারেটটা পরে গেল । মিনহাজ অবাক হয়ে বলল
-কে তুমি ?
স্ট্যাটাসঃ- ০৮ খুব কম বয়সেই বেশী বেশী ভাবতে শিখেছিলাম, ফলে সমস্যা সারাক্ষন ছায়ার মতো আমাকে ঘিরে আছে ।
একটা সমস্যা যখন আসে, তখন অসংখ সমস্যা আমার বাড়ির সামনে এসে জড়ো হয়
সকাল বেলা দ্বার খুলে দেখি অধির আগ্রহে তারা আমার জন্য অপেক্ষা করছে ।
তবুও আমি ভালোবাসি আমার আমিকে , ভালোবাসি ভাবতে , ভালোবাসি ভালোবাসতে ।
মানুষকে প্রচন্ড ভালোবাসার এক বিশাল ক্ষমতা বিধাতা আমাকে দিয়েছেন ,
কিন্তু ভালোবেসে ধরে রাখার ক্ষমতাটা দিতে, তিনি সম্ভবত ভূলে গেছেন ।
মাঝে মধ্যে নিজেকে বড্ড সেকেলে মনে হয়, মনের মধ্যে অকারনে মায়া পুষি, অসংখ মায়া ,
আর শুধু কস্ট পাই , মায়ার কস্ট বড় ভয়ংকর সবই বুঝি তার পরেও কস্ট পাই , এ আমার নিজস্ব পৃথিবী ।
স্ট্যাটাসঃ- ০৯ এই হলাম আমি!!
কেমন সেই আমি?? আমি নিজেও অবশ্য খূব একটা জানি না। প্রায়ই নিজেকে প্রশ্ন করি---
উত্তর যা পাই, তাতে নিজে সন্তুস্ট থাকি। কিন্তু জগত সন্তুস্ট থাকে না!
আমি অনুভূতিহীন, ভাবলেশহীন, উদ্দেশ্যহীন।
গন্তব্য কোথায় আমার জানা নাই!
পৃথিবীর মানুষের সাথে আমার কিছু পার্থক্য আছে!
জগতের বেশীরভাগ মানুষ যেখানে সমস্ত বিষন্ন্যতাকে চাপা দিয়ে জীবনের প্রাত্যহিক আনন্দে মেতে থাকে। তুচ্ছ সব বিষয় নিয়ে অপার আনন্দ উপভোগ করে। আমি সেখানে খুবই কৃপণ! কিছুতেই তুচ্ছতাকে তাচ্ছিল্য করে উড়িয়ে দিতে পারি না।
অতি নগন্য সুক্ষ্ম সব বিষয়গুলিকে মাথা থেকে কিছুতেই তারাতে পারি না। মাথার মধ্যে গেথেঁ থাকে।সকলে যা সহজ ভাবে গ্রহন করে, আমি কেনো যেনো মোটেই তা সহজ ভাবে নিতে পারি না। সহজের ভিতর থেকেই আমি বের করি বিশাল জটিলতা।
যেমন ধরা যাক;--
চারিদিক ভাসিয়ে যখন ঝুম বৃস্টি নামে, আমি তখন সমস্ত কোলাহল ছেড়ে কোন এক কোনে নিঃশ্বব্দে বসে অতি সাধারণ! বৃস্টির মধ্যে অসাধারণ কিছু খুজে দেখি। আমার হৃদয়ের কোনো একটা অংশ নিস্তব্ধ হয়ে থাকে। খালি হয়ে থাকে। আমি সেটা টের পাই, খুব পরিস্কারভাবে টের পাই। কিন্তু অবলিলায় এড়িয়ে যাই। কাউকে বুঝতে দেই না, আমার হিয়ার মাঝে কি ব্যাথা বাজে? আমি বিষন্নতাগুলি কাউকে দেখতে দিতে চাই না।
আধার ঘনিয়ে নামা বুক হু হু করা সন্ধ্যায় কোন নির্জনে আমি একা দাড়িয়ে থাকি। নিরবে নিভৃতে ভিতরে বাসা বেঁধে যায় আমার অতি পরিচিত বেদনা মাখানো সুখেরা।
দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ ঘাসের চাদর বিছানো কোন মাঠে নিজেকে বিলিয়ে দেই। গভীর রাতের ভরা জোছনায় আমি চঞ্চল হয়ে উঠি, এলোমেলো দ্বিকবিধিক হাটি। নির্জন ছায়াবিথীর কোন বন, কুল কুল রবে বয়ে যাওয়া নদী, ছায়া ঘেরা ঘাট বাধাঁনো কোন দিঘী আমাকে উতলা করে দেয়। আমি এক ধরনের উন্মাদ হয়ে যাই আনন্দে। এইসব কর্মকান্ডের মধ্যে অতি প্রাকৃত এক ধরনের বোধের জন্ম হয়। যে বোধের অর্থ বেশীরভাগ মানুষই বুঝতে পারে না। আমিও সেই বোধের অর্থ অন্য কাউকে বোঝাতে পারি না। ফলে সাধারণ ভাবেই সবার সাথে আমার একটা অদৃশ্য দুরত্ব তৈরী হয়।
এতকিছুর পরেও আমার ভিতরে কান্নার শব্দ শুনতে পাই, স্পস্ট শুনতে পাই। কে কাদেঁ ?
আমি কর্নপাত করি না। এখন এসব খেয়াল করার সময় আমার নেই।
আমি অপেক্ষা করি--
কোন এক গভীর রাতে অদ্ভূত জোছনার ধবধবে সাদা আলোর রহস্যময় সময়ে কেউ একজন কোন এক অজানা থেকে আসবে।
কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলবে;
""এই শোণো, তোমার সঞ্চিত সমস্ত কান্না আমি নিতে এসেছি। তোমার লুকিয়ে রাখা সমস্ত বিষন্নতাগুলি আমাকে দিয়ে দাও। অনেককাল তুমি বয়ে বেরিয়েছো। আর তোমাকে আমি কোন চাপা ভার বহন করতে দেবো না"" ।
আমার কেনো যেনো মনে হয় সেই সময় আমার আসবে।
সত্যিই কি আসবে ??????????
স্ট্যাটাসঃ- ১০ সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার সময় পাশের দোকান থেকে ২টা ডিম আর একটা নুডুলসের প্যাকেট নিয়ে বাসায় ঢুকলাম। আপুর রুমের সামনে গিয়ে আমার বন্ধু রাকিবকে ফোন দিয়ে আপুকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলতে লাগলাম,,,
-- দেখ, তোর বোনের মত আমার বোন না। আমার বোনকে যদি রাত ১১টার সময়ও বলি আপু বিরিয়ানী খাবো আপু ঠিকিই আমার জন্য বিরিয়ানী রান্না করবে। এটা হলো ভাইয়ের প্রতি বড় বোনের ভালোবাসা। আমাদের ভাই বোনের ভালোবাসা দেখে কিছু শিখ কাজে লাগবে।
তারপর ফোনটা রেখে হাসি মুখে আপুর রুমে ঢুকলাম। আপু তখন টেবিলে বসে একমনে বইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি একটু কাশির আওয়াজ করতেই আপু আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
- আমাকে কি তোর গাড়ির টিউব মনে হয়, যে তুই আমাকে হাওয়া দিবি আর আমি ফুলবো? কয়েকদিন পর আমার পরীক্ষা এখন চোখের সামনে থেকে যা। আমি কোন নুডুলস রান্না করতে পারবো না।
আমি নুডুলসের প্যাকেট আর ডিমগুলো আপুর বিছানায় রাখতে রাখতে বললাম,
-- আমার ফ্রেশ হতে ১০ মিনিট লাগবে। ততক্ষণে হয়ে যাবে আশা করি।
আপু চিৎকার করে বললো,
- বান্দর,আমি বলেছি না আমি পারবো না...
আমি আর কিছু না বলে আপুর রুম থেকে বের হয়ে আসলাম। আমি জানি ঠিক ১০ মিনিট পর আমার জন্য আপু নুডুলস রান্না করে নিয়ে আসবে...।
পরদিন সকালে শ্রাবণীর(আমার গার্লফ্রেন্ড) সাথে দেখা করতে যাবো অথচ হাতে একটা টাকা নেই। আপুর রুমে গিয়ে দেখি আপু বেলকনিতে ফুলগাছে পানি দিচ্ছে। আমি আপুর পাশে এসে আপুকে বললাম,
-- আপু তুই জানিস আমি তকে কতটা ভালোবাসি?
আপু আমার দিকে বিরক্তিকর চোখে তাকিয়ে বললো,
- আমি তোর কোন ময়লা কাপড় চোপড় ধুঁতে পারবো না। আর আমার হাতে একটা টাকাও নেই।
আমি অসহায় দৃষ্টিতে আপুর দিকে তাকিয়ে বললাম,
-- তুই সব সময় আমায় ভুল বুঝিস। যায় হোক, তোকে একটা কথা বলতে এসেছি। গলির মোড়ে একটা লোক অর্কিডের চারাগাছ নিয়ে বসে আছে। একেকটা অর্কিডের চারা ১০০ টাকা মাত্র। যদি পারিস কিনে নিয়ে আয়। আর যাওয়ার সময় সাবধানে যাস কারণ পাশের বাসার আজিজ আংকেলের কুকুরটা রাস্তায় দৌড়াদৌড়ি করছে। তুই তো আবার কুকুর ভয় পাস...
আমার কথা শুনে আপু খুশিতে আত্মহারা হয়ে বললো,
- আমার সোনা ভাই, তুই একটু কিনে এনে দে।
আমি কুকুরটাকে প্রচন্ড ভয় পাই।
এই বলে আপু আমাকে ৫০০টাকার একটা নোট দিয়ে বললো,
- ৫টা চারা আনবি।
আমি পকেটে টাকাটা রাখতে রাখতে বললাম,
-- অসংখ্য ধন্যবাদ আপু ছোট ভাইয়ের প্রেমের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করার জন্য। তুই টাকাটা না দিলে আজকে শ্রাবণীকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে বসে দুইজন দুইজনের চোখের দিকে তাকিয়ে কফি খেতে পারতাম না।
আমার কথা শুনে আপু হাতে থাকা মগটা রাগে আছাড় মেরে বললো,
- তুই যদি অর্কিডের চারা না নিয়ে বাসায় ঢুকিস তাহলে কিন্তু তোর খবর আছে..।
ছাদে এসে দেখি আপু ছাদের রেলিং ধরে দূরে তাকিয়ে আছে। আমি কফির মগটা আপুর হাতে এগিয়ে দিয়ে বললাম,
-- আজকে আবার একটা মকবুল তকে দেখতে আসবে..
আপু কফির মগে চুমুক দিয়ে বললো,
- এই বার বুঝি বিয়েটা হয়েই যাবে রে। ছেলে ভালো জব করে বংশও না কি অনেক ভালো। অনেক টাকার মালিক না কি।
আমিও ছাদের রেলিং ধরে দূরের দিকে তাকিয়ে বললাম,
-- ভালো হলেই ভালো...
সন্ধ্যার পর আপুকে দেখতে আসলো পাত্র সহ আরো কয়েকজন। আপুকে দেখেই পাত্রের ছোট বোন মন্তব্য করলো,
~ মেয়ে সুন্দর কিন্তু নাকটা একটু বোঁচা।
এই কথাটা শুনে মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো। আব্বু হাসি মুখে ওদের সাথে কথা বলছে আর মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকিয়ে দেখছে।
পাত্রের বড় বোন বললো,
~তুমি অত্যাধিক ফর্সা। বেশি ফর্সা মেয়েদের দেখে মনে হয় রক্ত শূন্যতায় ভুগছে।
আমি কিছু বলতে যাবো তখনি খেয়াল করলাম মা আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে।
ছেলের মা তখন বললো,
~ মেয়ে আমাদের পছন্দ হয়েছে।
এই কথা শুনে বাবা মা খুশি হয়ে বললো,
~আলহামদুলিল্লাহ...
এমন সময় ছেলের বাবা বললো,
~আমাদের কোন ডিমান্ড নেই। আল্লাহ আমাদের অনেক দিয়েছেন। তবে শুনেছি চরপাড়াতে না কি আপনারা ৪ তলা একটা বাসা তৈরি করছেন। সেখান থেকে একটা ফ্ল্যাট ছেলেকে উপহার সরূপ দিয়ে দিলেন আর নতুন ফ্ল্যাট সাজাতে যে যে আসবাসপত্র লাগে সেগুলো দিলেন এই আর কি। এটাকে আবার যৌতুক মনে করেন না যে। এইগুলোতো আপনার মেয়েরি থাকবে..
না আর চুপ করে থাকা যায় না। আমি হাসতে হাসতে বললাম,
--হে অবশ্যই দিবো। তবে আমাদেরও একটা আবদার আছে।
ছেলের বাবা চমকে গিয়ে বললো,
~কি আবদার?
আমি তখন ছেলের বাবাকে বললাম,
- আমার বোনের পায়ের নুপূর থেকে শুরু করে মাথার টিকলি পর্যন্ত সব হীরার হতে হবে। আর যে ফ্ল্যাট আমার বোনকে দিবো সেই ফ্ল্যাটে আমার বোন আর ওর হাজবেন্ড বাদে অন্য কেউ থাকতে পারবে না। আর নিদিষ্ট একটা সময়ে আপনি আর আপনার স্ত্রী নিজেদের ইচ্ছায় বৃদ্ধাশ্রমে চলে যাবেন কারণ আপনাদের সেবা আমার বোন করতে পারবে না..
আমার মুখের কথা শুনে পাত্র রেগে গিয়ে বললো,
- তুমি আমাদের অপমান করছো না কি?
আমি মুচকি হেসে বললাম,
-- যাদের কোন মান সম্মান নেই তাদের কিভাবে অসম্মান করবো? আপনাদের মত কিছু ছোট লোক আছে যারা বিয়ের নামে মেয়ে পক্ষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভিক্ষা করে...
পাত্রীর ছোটবোনের দিকে তাকিয়ে বললাম,
-- আয়নায় আগে নিজের নাকটা দেখে পরে অন্য জনের নাক নিয়ে মন্তব্য করবেন। দেখে তো মনে হচ্ছে কেউ সজোরে ঘুষি মেরে নাক চেপ্টা করে দিয়েছে।
সব শেষে পাত্রের বড় বোনের দিকে তাকিয়ে বললাম,
-- কালো চামড়া ফর্সা করার জন্য নিজে তো ঠিকিই এক বস্তা ময়দা মেখে এসেছেন। আর এইখানে বলছেন বেশি ফর্সা মেয়েদের দেখে মনে হয় রক্ত শূন্যতায় ভুগছে...
আমার কথা শুনে পাত্র পক্ষ যখন রেগে চলে যাচ্ছে তখন আমি আপুর হাত থেকে দুইটা কাচের চুড়ি খুলে পাত্রের হাতে দিয়ে বললাম,
-- এতই যেহেতু টাকার দরকার এই চুড়িগুলো পরে রাস্তায় নেমে হাত তালি দেন দেখবেন ঠিকিই টাকা পাবেন...
রাত ১১টা বাজে। বাবা আমায় অনেকক্ষণ বকাঝকা করলো। আমার জন্য না কি আমার বোনের বিয়ে কোনদিন হবে না। আমি তখন বাবাকে বললাম,
-- বাবা, মানুষ শিক্ষিত আর ভালো জব করলেই ভালো মানুষ হয় না। বাবা হিসেবে তোমার যতটা দ্বায়িত্ব আছে তেমনি ভাই হিসেবেও আমার ঠিক ততটাই দ্বায়িত্ব আছে নিজের বোনকে সুখে রাখার। কোন ছোটলোকের কাছে বিয়ে দিয়ে আমি আমার বোনকে সারাজীবন কষ্ট পেতে দিবো না। আমি চাই আমার বোনকে এমন কেউ বিয়ে করুক যে আমার বোনকে সম্মান করবে। আমার বোনের চোখের জল ঠোঁটে আসার আগেই মুছে দিবে। যতদিন পর্যন্ত ঐ রকম ছেলে না পাবো ততদিন পর্যন্ত না হয় আমি আমার বোনকে মাথায় করে রাখবো...
বাবা মার রুম থেকে বের হয়ে দেখি আপু দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে কান্না করছে। আমি পকেট থেকে ফোনটা বের করে রাকিবকে ফোন দিয়ে বললাম,
-- আমার বোন তোর বোনের মত না। আমার এখন বিরিয়ানী খেতে ইচ্ছে হচ্ছে। আপুকে বললে আপু এখনি বিরিয়ানী রান্না করে দিবে...
আপু চোখের জল মুছতে মুছতে বললো,
- কুত্তা, আমি পারবো না এত রাতে বিরিয়ানী রান্না করতে। আমার কয়েকদিন পর পরীক্ষা...
আমি কিছু না বলে মুচকি হেসে আমার রুমে চলে আসলাম। আমি জানি একটু পর আপু ঠিকিই আমার জন্য বিরিয়ানী রান্না করে নিয়ে আসবে..।
ধন্যবাদ সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য।
ধন্যবাদান্তেঃ------
মওদুদ আহমেদ মধু (মিঃ মধু)
দৃশ্যমান_জীবনের_অদৃশ্য_কাব্য
.
যে মানুষটাকে দেখে বোকাসোকা কিংবা ক্ষেত মনে হয়, সেই মানুষটাই কোনো একদিন নিজেকে অনায়াসে বদলে ফেলবে... আপনি তার জীবনে থাকুন কিংবা না থাকুন, কেউ না কেউ ঠিকই তার জীবন থেকে যাবে... আপনার কাছে যে অসম্পূর্ণ, অন্য কারো কাছে সে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে !!
.
প্রতিটা মানুষেরই নিজস্ব কিছু খুঁত থাকে, কমতি থাকে, দুর্বলতা থাকে... জন্ম থেকেই কেউ পারফেক্ট হয়ে আসে না... মানুষকে পারফেক্ট বানিয়ে নিতে হয়... আজ যাকে পারফেক্ট মনে হয়নি, সেই মানুষটাও কোনো ঠিকই একদিন পারফেক্ট হয়ে উঠবে !!
.
পরিপূর্ণ কারো পাবার আশায় আপনি শুধু একের পর এক সম্পর্কে জড়াতে পারবেন ঠিকই, কিন্তু পরিপূর্ণ হয়ে কাউকেই পাবেন না... কারণ কোনো মানুষই পরিপূর্ণ হয় না... যে মানুষটাকে দেখে পরিপূর্ণ কিংবা পারফেক্ট মনে হবে, খোঁজ নিলে জানতে পারবেন সেই মানুষটারও কোথাও না কোথাও কমতি আছে !!
.
প্রিয় মানুষটার একটু কমতি না থাকলে মানায় না... একটু খুঁত কিংবা দুর্বলতা না থাকলে মানায় না... ঐটুকু কমতি কিংবা দুর্বলতাই মানুষটাকে সুন্দর করে রাখে... মায়ায় আবদ্ধ করে রাখে... অপরদিকে পরিপূর্ণ কাউকে ভালোবাসার মতো কিছু থাকে না... কারণ সে আগে থেকেই পরিপূর্ণ !!
.
জীবনে কাউকে পরিপূর্ণ পাওয়ার মাঝে কোনো সার্থকতা থাকে না... বরং পরিপূর্ণ কাউকে পাওয়া আর না পাওয়া একই কথা... কারো জীবনে পাশে থেকে, কারো খুঁত কিংবা দুর্বলতাগুলোকে ভালোবেসে নিজের মতো করে মানিয়ে নেয়াটাই হলো সম্পর্কের সার্থকতা !!
.
এই মুহূর্তে যে মানুষটা আপনার সাথে আছে, সে যেমনই হোক তাকে আগলে রাখুন, ধরে রাখুন... তার অপরিপূর্ণতা কিংবা দুর্বলতাকে আঘাত না দিয়ে ভালোবাসতে শিখুন... একদিন আপনার ভালোবাসাই তাকে আপনার মতো করে পরিপূর্ণ কিংবা পারফেক্ট করে তুলবে... শুধু একটু অপেক্ষা মাত্র !!"
স্ট্যাটাসঃ- ০২ "ভালোবাসার মানুষটাকে মাঝেমধ্যে সময় দিতে হয়... একা থাকতে দিতে হয়... কেউ তোমাকে ভালোবাসে বিধায় এটা নয় যে, সব সময় তোমাকে নিয়েই মেতে থাকবে !!
.
তোমাকে ভালো রাখতে চাইলে আগে তার নিজেকে ভালো রাখতে হবে... নিজেকে ভালো রাখতে হলে তার নিজেকে সময় দিতে হয়... যদি তোমাকে ভালো রাখতে গিয়ে নিজেকেই যদি ভালো রাখতে না পারে তাহলে তোমাকেও সে ভালো রাখতে পারবে না... এর জন্য তুমিই দায়ী থাকবে !!
.
প্রতিটা মানুষেরই ব্যক্তিগত একটা জীবন থাকে... ঠিক তেমনি তোমার প্রিয় মানুষটারও নিজের আলাদা একটা জগৎ আছে... তুমি তার এক পৃথিবী হতে পারো তবে তার ব্যক্তিগত জগতে তুমি খুব একটা অধিকার দেখাতে পারো না !!
.
মানুষ ভালোবাসে ভালো থাকার জন্য... হাজারো মানুষের ভিরে কেউ তোমাকে বেছে নিয়েছে তোমার সাথে ভালো থাকার জন্য... এখানে মানুষটা কিভাবে তোমার সাথে ভালো থাকতে পারবে সেটা তার উপর ছেড়ে দাও... মানুষটা নিজেই তার ভালো থাকা খুঁজে নিবে !!
.
কেউ যদি তোমার সাথেই সর্বদা মেতে থাকে তাহলে তার পরিবার কিংবা বন্ধুদের থেকেও তার দুরত্ব বেড়ে যায়... যার জন্য তুমিই দায়ী... তাই মাঝেমধ্যে মানুষটাকে তার মতো করেই থাকতে দিতে হয়... যাতে শুধু তোমার সাথে নয়, বরং সবার সাথেই তার সম্পর্ক ভালো থাকে !!
.
তোমার প্রিয় মানুষটার উপর সম্পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রাখা উচিত... দিনের কোনো একটা নির্দিষ্ট সময় যদি তোমার সাথে কথা বলতে না পারে, তারমানে এটা নয় যে তোমাকে ভুলে গিয়েছে কিংবা অন্য কারো সাথে কথা বলেছে... অনেক সময় ব্যস্ততার কারণেও এমনটা হয় !!
.
প্রিয় মানুষটার মনে নিজেকে মেলে ধরতে চাইলে মানুষটাকে তোমাকে অনুভব করার সুযোগ দিতে হয়... স্পেস দিতে হয়... সর্বোপরি মানুষটার সাথে ভালো আচরণ করতে হয়... তার ইচ্ছা অনিচ্ছাকে গুরুত্ব দিতে হয়... তাহলেই মানুষটার মনে তুমি জায়গা নিতে পারবে !!
.
কেউ তোমাকে নিয়ে যদি সারাক্ষণ মেতে থাকে এতে সঠিক ভালোবাসা প্রকাশ পায় না... বরং কেউ শত ব্যস্ততার পরেও তোমার নিয়মিত খোঁজ রাখছে, কথা বলছে, তাহলে ঐ মানুষটাই তোমাকে সত্যিই ভালোবাসে... ভালোবাসায় পাগলামি থাকবে ঠিকই তবে অতিরিক্ত পাগলামি সম্পর্কটাকে হাসির খোরাক বানিয়ে দেয় !!"
স্ট্যাটাসঃ- ০৩ "জীবনে এমন একটা মানুষ থাকা দরকার যার কাছে নিজেকে খুচরো পয়সার মতো জমা করে রাখা যায়... অন্তত দিনশেষে মনের সব কথাগুলো কাউকে ভরসা করে বলা যায় !!
.
মানুষ কথা বলতে বলতে কখনো মরে যায় না... মানুষ ছটফট করে মরে যায় যখন সে কাউকে নিজের মনের কথাগুলো বলতে পারে না... মানুষ যতটা ডিপ্রেশনে ভোগে, তারচেয়ে বেশি ভোগে একাকীত্বে !!
.
ডিপ্রেশন একটা সময় নিজে নিজে কাটিয়ে ওঠা যায়, কিন্তু একাকীত্ব কখনো নিজে নিজে কাটিয়ে ওঠা যায় না... একাকীত্ব দূর করার জন্য হলেও কাউকে দরকার পরে যার কাছে সে নিজেকে ফিরে পাবে !!
.
চুপ করে থাকা মানে এই নয় যে ভালো নেই... মাঝেমধ্যে কথা বলতে ইচ্ছা হয় না... কেউ একজন মন খারাপটুকু বুঝে নিক... একাকীত্বের ছায়া হোক... রাত জাগার কারণ হোক... শুধু নীরবতাটুকু ভেঙে না দিক, কথা না বলুক !!
.
প্রচন্ড ডিপ্রেশনে মানুষ একজোড়া ভরসা পাবার মতো হাত খুঁজে... একটা বিশ্বাস করার মতো মন খুঁজে... কারণ সে চায় যত খারাপ সময় আসুক না কেনো কেউ একজন তাকে বলুক ভয় নেই আমি তো আছি !!
.
জীবনে একটা নিজের মানুষ থাকা দরকার... যার সাথে অন্য কারো কারোর যোগাযোগ থাকবে না... অন্য কারোর গল্প তাকে স্পর্শ করতে পারবে না... মানুষটা থাকবে একান্তই নিজের !!
.
এই সাড়ে সাতশো কোটি মানুষের মধ্যে যার একটা একান্তই নিজের মানুষ আছে সেই মানুষটা কখনো একা নয়... তাকে কখনো একাকীত্ব স্পর্শ করতে পারে না... সে সবথেকে বড় ভাগ্যবান কিংবা ভাগ্যবতী !!"
স্ট্যাটাসঃ- ০৪ "ছেড়ে যাওয়া ভুল মানুষটার জন্য আপনি এখনো মন খারাপ করে বসে আছেন। অথচ খেয়াল করলে দেখবেন ঐ মানুষটাই নতুন কাউকে নিয়ে দিব্যি সময় পার করে যাচ্ছে !!
.
আপনি যতদিন মন খারাপ করে বসে থাকবেন ঐ মানুষটা ততদিন আপনাকে নিয়ে হাসাহাসি করবে... মনে মনে বলবে আপনি আসলেই বোকা... সেইসাথে এটাও ভেবে নিবে আপনাকে ছেড়ে দিয়ে সে দিব্যি ভালো কাজ করেছে !!
.
যে ছেড়ে চলে যায় সে ভুল মানুষ, তার জন্য মন খারাপ করে থাকার কোনো মানেই হয় না... একজন ভুল মানুষের জন্য মন খারাপ করে থাকা মানে নিজেকে আরো ছোট করে রাখা... নিজেকে আরো কষ্ট দেয়া... নিজেকে আরো অপমানিত করা !!
.
অথচ আপনার উচিত মন খারাপ না করে নিজেকে শক্ত করে গড়ে নেয়া... আপনি যখন নিজেজে শক্ত করে নতুন করে গড়ে নিবেন, নতুন কাউকে নিয়ে ভালো থাকতে শিখবেন, ঠিক তখনই আপনাকে ছেড়ে যাওয়া মানুষটাই আপনাকে দেখে আফসোস করবে !!
.
আপনি সারাজীবন মন খারাপ করে থাকলেও কেউ আফসোস করবে না, কষ্ট পাবে না, যদি আপনি নিজেকে শক্ত না করেন... মন খারাপ করে থাকলে কারো মনের আফসোসের কারণ হওয়া যায় না... আফসোসের কারণ হতে হলে আপনার যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হয় !!
.
আপনি মন খারাপ করে থাকলে কেউ আপনাকে ভালোবাসতে আসবে না... কারণ আপনি ভালো থাকতে না পারলে অন্য কাউকে ভালো রাখতে পারবেন না... ভুল মানুষ ছেড়ে নিজেকে ভালোবাসুন, একটু আশেপাশে ঘুরে ফিরে তাকান দেখবেন অনেকেই আপনাকে ভালোবাসার জন্য বসে আছে !!
.
আপনার জীবন থেকে একজন ভুল মানুষ চলে যাওয়া মানেই হলো সঠিক মানুষটার আসার পথ তৈরি হয়ে যাওয়া... ভুল মানুষ নিয়ে আপনি কিছুক্ষণ থাকতে পারবেন কিন্তু সারাজীবন ভুল মানুষটাকে নিয়ে থাকতে পারবেন না, সে আজ হোক বা কাল আপনাকে ছেড়ে যাবেই !!
.
তাই কখনো কারোর জন্য ভেঙে পড়বেন না... আপনার সাথে যেমনটা ঘটবে ঠিক যে আপনাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে তার সাথেও তেমনটাই হবে... শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র... আপনি শুধু অপেক্ষা করে করুন, শেষ হাসিটা আপনিই হাসবেন !!"
স্ট্যাটাসঃ- ০৫ হারিয়ে গেছে সে কোন এক মেঘলাদিনে -
বৃষ্টির সাথে ঝড়ো হাওয়া হয়ে-!
রোদ্রের সাথে কোন এক ভোর ব্যালায় কুয়াশা হয়ে
কোন এক শেষ বিকেলে গোধুলিলগনে।
হারিয়ে গেছে সে কোন এক আমাবস্যার রাতে
ভয়ংকার কালো অন্ধকার হয়ে -!
ঘনকালো মেঘের আরালে কোন এক বর্ষা কালে
কোন এক অচেনা নদীর স্রোতের সাথে।
হারিয়ে গেছে সে কোন এক প্রাচিন যুগে
হারিয়ে যাওয়া সভ্যতা হয়ে।
মহাকালের সাথে কোন এক ভয়ানক দিনে
গন্তব্য হীন কোন এক পথের সাথে..!!
স্ট্যাটাসঃ- ০৬ প্রতারনার গল্পের প্রতারকগুলোর মতোই
একজন তোমার প্রিয় মানুষ গুলো!
আবেগ প্রকাশ করে সিমপ্যাথি পাওয়া যায়, ভালোবাসা না! চোখের জ্বলে কখনো সম্পর্ক বেধে রাখা যায় না বরং সে সম্পর্ক আরো অবহেলায় জর্জরিত হয়ে যায়.!
তুমি কেঁদে কেঁদে তার মন নরম করতে চাইছ, তুমি তোমার দূর্বল জায়গা গুলো তাকে সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছো, আত্মসম্মানবোধটাকে গলা টিপে মেরে ফেলছো শুধু তার কারনে!
তুমি ভাবছো একদিন হয়তো সে তোমার এই বোকা বোকা অনুভুতি গুলো বুঝবে, একদিন হয়তো সে আবার আগের মতো হয়ে যাবে, তাইতো এত এত অপমানের পরও তুমি তাকেই ফিরে পেতে চাইছো.!
তোমার এই ভালোবাসাময় ব্যাপারগুলো তার কাছে নিতান্তই সস্তা আবেগ, তুমি যতোই না খেয়ে থাকো, যতোই হাত কাটো, যতোই কেঁদে কেঁদে গাল লাল করে ফেলো তাতে তার কিছু আসে যায় না.!
বিলিভ মি, সে কখনো তোমার এই অনুভুতিগুলো বুঝবে না, কখনোই না.! চলে যাওয়া মানুষটা বেশিরভাগ সময়ই ফিরে আসে.! তুমি হয়তো ভাবছো, সে তোমার ভালোবাসার টানে ফিরে এসেছে.! না সে তোমার ভালোবাসার টানে ফিরে আসেনি.!সে ফিরে এসেছে তোমাকে আগের থেকে আরো বেশি কষ্ট দিতে.!
হ্যাঁ, তোমার ভালোবাসাটা স্পেশাল.! কিন্তু তুমি যাকে ভালোবাসো সেই মানুষটা তোমার চারপাশে ঘটে যাওয়া প্রতারনার গল্পের প্রতারকগুলোর মতোই একজন তোমার প্রিয় মানুষ গুলো!
তুমি যতো দূর্বল হবে, যতো স্যাক্রিফাইজ করবে সে ততো তোমাকে অবহেলা করবে.!তার দেয়া প্রতিটা কষ্ট নিরবে মেনে নিয়ে তুমি তার সিমপ্যাথি পাবে, ভালোবাসা না.!
৫০ বার কল মেসেজ দিয়ে একবার রেসপন্স পেয়ে তুমি খুশিতে লাফাচ্ছো.! মনে রেখো, এটা ভালোবাসা না, এটা তোমার অনুভুতির বিনিময়ে পাওয়া ছোট্ট একটা সিমপ্যাথি.!
একসময় বার বার চেষ্টা করেও তার সাথে কথা বলতে পারবে না.! হঠাৎই হয়তো একদিন বিরক্ত হয়ে সে তোমার নম্বরটা ব্লকলিস্টে রেখে দিয়ে দেবে,
তুমি সেদিন চিৎকার করেও কাঁদতে পারবে না.! দুমড়ে মুচড়ে ভিতরে ভিতরে শেষ হয়ে যাবে। তাতেও তার কিছু আসবে যাবে না.!
প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না" এই হৃদয়বিদারক কথাটার মর্ম সে কখনোই বুঝবে না.!
তাই তোমার এই অমূল্য ভালোবাসা, অমূল্য চোখের জল, অমূল্য অনুভূতি গুলো সেখানেই প্রকাশ করো যেখানে তুমি গুরুত্ব পাও.!
যে মানুষটার জন্য তোমার আত্মসম্মান হারাতে হয়, সেই মানুষটা আর যাই হোক তোমাকে ডির্জাব করে না!
স্ট্যাটাসঃ- ০৭ আপনজন
লেখাঃ মিনহাজ মাহমুদ
-বছর তিনেক আগে পতিতালয়ের এক মেয়েকে বিয়ে করেছিলাম।
বিয়ের প্রথম রাতে বরের মুখে এমন কথা শুনে জান্নাত অবাকের শেষ প্রান্তে পৌছালো । তারপর চোখ বড় বড় করে বলল
-এভাবে না , খোলাসা করে বলেন !
মিনহাজ একটু দম নিয়ে বলতে শুরু করলো ।
মাঝে মাঝে পতিতালয়ে যাওয়া ছিল আমার গভীর অভ্যাস । এক প্রকার নেশা হয়ে গেছিলো । নতুন শরীরের গন্ধ আমাকে খুব টানতো । বাবার অর্থের কোনো সমস্যা ছিল না । তাই এসবে কোনো মাথা ব্যাথাও ছিল না । বন্ধুদের সাথে মদের আড্ডার সকল বিলই আমার পকেট থেকে যেত ।
এর মাঝে যাওয়া আসাই নিষিদ্ধ পল্লীর এক মেয়েকে খুব ভালো লেগে যায় । তার সাথে নিয়ম করে প্রতিদিন দেখা করতাম । এক পর্যায়ে আমি ছাড়া সে আর কোনো কাস্টুমার ধরতো না । দুজনের মাঝেই এক অদৃশ্য সুপ্ত মায়ার জন্ম নিয়েছিল । সত্যিই বলতে মেয়েটিকে খুব ভালোবেসে ফেলেছিলাম । ওর নাম ছিল মেঘা । নামের মতো ওর চেহারাটাও বেশ মায়াবী ছিল । চোখে কাজল দিলে আমি ওর থেকে চোখ ফেরাতে পারতাম না । বাবা মাকে ওর কথা বলেছিলাম । কিন্তু তারা একবারেই না করে দিয়েছিল । আমিও জানতাম এমনটাই হবে । তাই আগাম প্রস্তুতি নিয়েছিলাম । পালিয়ে যাওয়ার প্ল্যান ছিল ।
মা বাবার বিপক্ষে যেয়ে মেঘাকে বিয়ে করলাম । মেঘা সব পরিবেশে অভ্যস্ত ছিল আমি জানি । ও কারো দেখে ভয় পেত না । সব পাল্টা জবাব দিত । মেয়েটি নিষিদ্ধ পল্লীর হলেও ওর মাঝে এক সত্য নৈতিকতার ছায়া দেখেছিলাম । পালিয়ে যাওয়ার প্ল্যান বাদ করে বাড়িতে আসলাম মেঘাকে সাথে নিয়ে । এটা অবশ্য মেঘাই বলেছিল ।
ওর কথাতে সম্মতি দিয়েছিলাম । কিন্তু বাড়ি থেকে আমাকে কোনো ভাবেই মেনে নিতে চাইনি । বাড়িতে মেঘাকে সবার সামনে উপস্থাপন করতেই , সবাই আমার উপর রাগন্বিত হলো । আমাকে আর মেঘাকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার কথা বলে । তখন মেঘা জবাব দেয়
-আপনার ছেলে কথায় যাবে না যাবে সেটা তার ব্যপার । আপনাদের ইচ্ছা হলে তাড়িয়ে দেন । তবে আমি এই বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাচ্ছি না । যেহেতু আপনার ছেলে আমাকে বিয়ে করেছে , সেই সূত্রে আমি এই বাড়ির বউ । আর এখানে আমার অধিকার আছে । আমি আমার অধিকার থেকে একটুও বঞ্চিত হতে রাজি নই । এখন যদি আপনাদের ইচ্ছা হয় ছেলেকে তাড়িয়ে দেন । যা ইচ্ছা করতে পারেন ।
মায়ের সাথে মেঘার বেশ তর্কাতর্কি চলল। মা এক পর্যায়ে বললেন
-দেখ মিনহাজ দেখ ! কাকে বিয়ে করেছিস । মান সম্মান বলে আর কিছু রাখলি না । এই মেয়ের না আছে ভদ্রতা , না আছে সুশিক্ষা । দেশে কি মেয়ের অভাব ছিল ! শেষমেশ একটা নর্তকীকে বিয়ে করলি ! তোর রুচি এত লোপ পেয়েছে , আমার ভাবতেই ঘৃণা হচ্ছে ।
মায়ের কথা শুনে মেঘা তখন বেশ জোর গলায় বলল
-আমাকে নর্তকী বলেন আর পতিতা বলেন ! আমি কিন্তু এখন এই বাড়ির বউ । আপনার ছেলের বউ । সেই ক্ষেত্রে একটু ভেবে বলবেন । কিছুক্ষণ আগে আমার একটা পরিচয় ছিল ! এখন আমার জীবনে নতুন একটা পরিচয় আছে ।
আর আমাকে যদি যথাযথ অধিকার না দেওয়া হয় তাহলে আমি সরাসরি ক্যাস করে দেব ।
বাবা এবার মুখ খুললেন ।
-ক্যাস করতে কত টাকা লাগে জানো ? শুধু ক্যাস করলেই হয় না , ক্যাস চালানোর জন্য টাকা প্রয়োজন ।
-পুলিশরা যে খুব একটা চরিত্রবান এটা আপনাকে কে বলেছে ? টাকা নাই , দেহ তো আছে ! এক রাত একটু ফষ্টিনষ্টি করলেই টাকা ছাড়া আমার কথায় নাচবে ।
মা বিশাল রাগন্বিত চেহারা নিয়ে বললেন
-ছিঃ ছিঃ ! বেয়াদপ মেয়ে । বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তাও জানেনা !
-বাবার বয়সের মানুষও দুইশত টাকার টিকিটের বিনিময়ে আমার সাথে রাত কাটিয়েছে । কাদের সম্মান করবো ? এই সমাজের মানুষের আসল চেহারা গভীর রাতে দেখা যায় । তাদের কতশত মুখোশ ! সবাই রাতে মুখোশ খোলে না । কেউ কেউ দিনের আলোয় বুঝিয়ে দেয় সে কতটা ভালো মানুষ । বিপদে পড়লে কারো কাছে সাহায্যের জন্য যাবেন , সে আপনাকে ঠিক তার মুখোশের আড়ালের চেহারা দেখিয়ে দেবে ।
মেঘার সাথে আর তর্ক না করে মা বাবা রুমে চলে যায় । সেই থেকে আমরা নিজেদের বাড়িতেই থাকতাম । মা বাবা ঠিক মতো কথা বলতো না । মেঘা কথা বলতে চাইলেও তারা কথা বলতো না । আমার সাথেও তেমন কথা বলতো না । কিন্তু মেঘার সাথে আমার বোন অমিতার বেশ ভাব জমে যায় ।
মেঘার ব্যপারটা আত্মীয়রা জানার পর আমাদের সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করে অনেক কটু কথা শোনায় । মা এই জন্য সব চেয়ে বেশি রেগেছিলেন । তার বোনদের কাছেও কোনো সম্মান পেত না ।
মিনহাজ এবার থামলো । এক টানা অনেকক্ষণ কথা বলায় একটু হাপিয়ে উঠেছে । জান্নাত ঘড়িতে দেখলো
১২ টা ৫৪ মিনিট । মধ্য রাত বলা যায় । মধ্য রাতে কফি খাওয়া জান্নাতের একটা পুরনো অভ্যাস । কিন্তু এখন সে নিরুপায় । আজকে বিয়ে হয়েছে । এমন অদ্ভুত একটা কাজ করলে তা খারাপ দেখাবে । মধ্য রাতে কফি খাওয়া ! মিনহাজ ব্যপারটা কিভাবে নেবে এটা ভেবে জান্নাত কিছু বলতে পারছে না । মিনহাজ বলল
-আচ্ছা , ঘুমাও ! ঘুম পাচ্ছে খুব ।
জান্নাত বলল
-না , গল্পটা আজ রাতে শেষ না করে ঘুমাবো না । আপনি বরং জিরিয়ে নিন । আমি ঝটপট কফি করে নিয়ে আসি । কফি খেতে খেতে বাকি কথা হবে ।
মিনহাজ জান্নাতকে রান্নাঘর দেখিয়ে দিয়ে বেলকনিতে এসে দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট ধরালো । অর্ধেক সিগারেট শেষ না হতেই জান্নাত এসে হাজির ।
-উঁহুঁ , ধূমপান করা চলবে না । ফেলেন বলছি ।
মিনহাজ সিগারেটটা অ্যাসট্রেতে ফেলে জান্নাতের হাত থেকে কফির মগটা নিল । গরম কফির মগে চুমুক দিয়ে জান্নাত বলল
-তারপর কি হলো বলেন ?
-আগামীকাল বলি ?
জান্নাত কপট রাগ দেখিয়ে বলল
-বললাম তো আজই বলতে হবে !
মিনহাজ ব্যপারটা এড়িয়ে যেয়ে বলল
-আপনার যে মধ্য রাতে কফি খাওয়ার নেশা আছে এটা বললেই পারতেন ।
-আপনি কিভাবে জানলেন ?
-অমিতা বলেছে ।
জান্নাত খানিকটা লজ্জা পেল । ইশ , অমিতা আর প্রেস্টিজ বলে কিছু রাখলো না ।
-জেনেই যেহেতু গেছেন আর লুকিয়ে লাভ কি ! আর আপনি কিন্তু খুব সাবধানে মেইন টপিক এড়িয়ে যাচ্ছেন ।
মিনহাজ হেসে দিয়ে বলল
-না শুনে ছাড়বেন না দেখছি । তবে শোনেন ,
মেঘার সাথে মা বাবাও আস্তে আস্তে মিশে গেছিলো প্রায় । মেঘার অসুস্থ এক মা আর ছোট বোন ছিল । তাদের সকল খরচ মেঘা দিত । কিন্তু বিয়ের পর মেঘা ওর পেশা ছেড়ে দেয় তাই এইগুলো আমি দিতাম ।
আমিও বাবার ব্যবসা দেখা শুরু করি । বিয়ে করেছি , আলাদা একটা চাপ সব সময় মাথায় ঘুরপাক খেত । মেঘার দরুনে সকল প্রকার নেশা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলাম । মদ্যপান থেকে শুরু করে সব নেশা চুকিয়ে একদম পারফেক্ট ছেলে হতে কেবলই শুরু করেছিলাম । আমার এই পরিবর্তন হওয়ায় বাবা মা মেঘার উপর একটু সন্তুষ্ট হয় । তাদের মাঝে দূরত্ব কমতে থাকে ।
প্রচণ্ড ভালোবাসার মধ্যে দিন কাটতে থাকে । কিন্তু এর মাঝে একটা ঝড় নেমে আসে আমাদের জীবনে । অফিসে কাজের জন্য আমি কয়েকদিন বাসার বাইরে যায় । এর মাঝে বাড়িতে ডাকাত হামলা করে । অমিতা ম্যাসে ছিল তাই ওর কোনো ক্ষতি হয়নি । ডাকাতেরা বাবা মাকে প্রচুর মারধর করে । সকল টাকা পয়সা সোনা যা ছিল সব নিয়ে যায় । পরের দিন আমি বাড়ি ফিরে জানতে পারি মা বাবা হসপিটালে । প্রতিবেশীদের কেউ একজন হাসপাতালে নিয়ে আসে । কোনো দরকারে আমাদের বাসায় গিয়েছিল । আর যেয়ে মা বাবাকে অজ্ঞান অবস্থায় পাই । আমার বা অমিতার এমনকি আমাদের কোনো আত্মীয়র সাথে যোগাযোগ করার কোনো ওয়ে তাদের কাছে ছিল না । আমি বাড়িতে এসে তাড়াতাড়ি হসপিটালে ছুটে যায় । তারপর সবাইকে খবর দিই ।
জান্নাত হঠাৎ বলল
-মেঘার কি হলো ? ওর কথা তো বললেন না !
মিনহাজ একটু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
-বাবা মা জ্ঞান ফেরার পর আমার সাথে যখন কথা বলল , তখন আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম । এই ডাকাত দলের সাথে নাকি মেঘার সম্পর্ক আছে । মেঘার সহায়তায় ওরা বাড়িতে প্রবেশ করে ।
জান্নাত বলল
-আপনি কি এটা বিশ্বাস করেছেন ?
-বিশ্বাস করতে পারিনি । তবে মা বাবার এই অবস্থার দিকে তাকিয়ে বিশ্বাস করেছি । মনে মনে মেঘাকে খুব ঘৃণা হয় ।
-মেঘার সাথে আর কখনও দেখা হয়েছে ?
-না !
মিনহাজ একটা সিগারেট ধরালো । সিগারেটের প্রচণ্ড নেশা চেপেছে । সিগারেট এখন অতীব প্রয়োজন মিনহাজের ।
-এমনও তো হতে পারে , মেঘা নয় ডাকাত দলের সাথে আপনার মা বাবার প্ল্যান ছিল ! তারাই মেঘাকে ওদের হাতে লেলিয়ে দিয়েছে । আপনার জীবন থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য ! আপনার বাবা মা উপরে মেনে নিলেও আদৌও কি মন থেকে মেঘাকে মেনে নিয়েছিল ?
জান্নাতের কথায় মিনহাজের হাত থেকে সিগারেটটা পরে গেল । মিনহাজ অবাক হয়ে বলল
-কে তুমি ?
স্ট্যাটাসঃ- ০৮ খুব কম বয়সেই বেশী বেশী ভাবতে শিখেছিলাম, ফলে সমস্যা সারাক্ষন ছায়ার মতো আমাকে ঘিরে আছে ।
একটা সমস্যা যখন আসে, তখন অসংখ সমস্যা আমার বাড়ির সামনে এসে জড়ো হয়
সকাল বেলা দ্বার খুলে দেখি অধির আগ্রহে তারা আমার জন্য অপেক্ষা করছে ।
তবুও আমি ভালোবাসি আমার আমিকে , ভালোবাসি ভাবতে , ভালোবাসি ভালোবাসতে ।
মানুষকে প্রচন্ড ভালোবাসার এক বিশাল ক্ষমতা বিধাতা আমাকে দিয়েছেন ,
কিন্তু ভালোবেসে ধরে রাখার ক্ষমতাটা দিতে, তিনি সম্ভবত ভূলে গেছেন ।
মাঝে মধ্যে নিজেকে বড্ড সেকেলে মনে হয়, মনের মধ্যে অকারনে মায়া পুষি, অসংখ মায়া ,
আর শুধু কস্ট পাই , মায়ার কস্ট বড় ভয়ংকর সবই বুঝি তার পরেও কস্ট পাই , এ আমার নিজস্ব পৃথিবী ।
স্ট্যাটাসঃ- ০৯ এই হলাম আমি!!
কেমন সেই আমি?? আমি নিজেও অবশ্য খূব একটা জানি না। প্রায়ই নিজেকে প্রশ্ন করি---
উত্তর যা পাই, তাতে নিজে সন্তুস্ট থাকি। কিন্তু জগত সন্তুস্ট থাকে না!
আমি অনুভূতিহীন, ভাবলেশহীন, উদ্দেশ্যহীন।
গন্তব্য কোথায় আমার জানা নাই!
পৃথিবীর মানুষের সাথে আমার কিছু পার্থক্য আছে!
জগতের বেশীরভাগ মানুষ যেখানে সমস্ত বিষন্ন্যতাকে চাপা দিয়ে জীবনের প্রাত্যহিক আনন্দে মেতে থাকে। তুচ্ছ সব বিষয় নিয়ে অপার আনন্দ উপভোগ করে। আমি সেখানে খুবই কৃপণ! কিছুতেই তুচ্ছতাকে তাচ্ছিল্য করে উড়িয়ে দিতে পারি না।
অতি নগন্য সুক্ষ্ম সব বিষয়গুলিকে মাথা থেকে কিছুতেই তারাতে পারি না। মাথার মধ্যে গেথেঁ থাকে।সকলে যা সহজ ভাবে গ্রহন করে, আমি কেনো যেনো মোটেই তা সহজ ভাবে নিতে পারি না। সহজের ভিতর থেকেই আমি বের করি বিশাল জটিলতা।
যেমন ধরা যাক;--
চারিদিক ভাসিয়ে যখন ঝুম বৃস্টি নামে, আমি তখন সমস্ত কোলাহল ছেড়ে কোন এক কোনে নিঃশ্বব্দে বসে অতি সাধারণ! বৃস্টির মধ্যে অসাধারণ কিছু খুজে দেখি। আমার হৃদয়ের কোনো একটা অংশ নিস্তব্ধ হয়ে থাকে। খালি হয়ে থাকে। আমি সেটা টের পাই, খুব পরিস্কারভাবে টের পাই। কিন্তু অবলিলায় এড়িয়ে যাই। কাউকে বুঝতে দেই না, আমার হিয়ার মাঝে কি ব্যাথা বাজে? আমি বিষন্নতাগুলি কাউকে দেখতে দিতে চাই না।
আধার ঘনিয়ে নামা বুক হু হু করা সন্ধ্যায় কোন নির্জনে আমি একা দাড়িয়ে থাকি। নিরবে নিভৃতে ভিতরে বাসা বেঁধে যায় আমার অতি পরিচিত বেদনা মাখানো সুখেরা।
দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ ঘাসের চাদর বিছানো কোন মাঠে নিজেকে বিলিয়ে দেই। গভীর রাতের ভরা জোছনায় আমি চঞ্চল হয়ে উঠি, এলোমেলো দ্বিকবিধিক হাটি। নির্জন ছায়াবিথীর কোন বন, কুল কুল রবে বয়ে যাওয়া নদী, ছায়া ঘেরা ঘাট বাধাঁনো কোন দিঘী আমাকে উতলা করে দেয়। আমি এক ধরনের উন্মাদ হয়ে যাই আনন্দে। এইসব কর্মকান্ডের মধ্যে অতি প্রাকৃত এক ধরনের বোধের জন্ম হয়। যে বোধের অর্থ বেশীরভাগ মানুষই বুঝতে পারে না। আমিও সেই বোধের অর্থ অন্য কাউকে বোঝাতে পারি না। ফলে সাধারণ ভাবেই সবার সাথে আমার একটা অদৃশ্য দুরত্ব তৈরী হয়।
এতকিছুর পরেও আমার ভিতরে কান্নার শব্দ শুনতে পাই, স্পস্ট শুনতে পাই। কে কাদেঁ ?
আমি কর্নপাত করি না। এখন এসব খেয়াল করার সময় আমার নেই।
আমি অপেক্ষা করি--
কোন এক গভীর রাতে অদ্ভূত জোছনার ধবধবে সাদা আলোর রহস্যময় সময়ে কেউ একজন কোন এক অজানা থেকে আসবে।
কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলবে;
""এই শোণো, তোমার সঞ্চিত সমস্ত কান্না আমি নিতে এসেছি। তোমার লুকিয়ে রাখা সমস্ত বিষন্নতাগুলি আমাকে দিয়ে দাও। অনেককাল তুমি বয়ে বেরিয়েছো। আর তোমাকে আমি কোন চাপা ভার বহন করতে দেবো না"" ।
আমার কেনো যেনো মনে হয় সেই সময় আমার আসবে।
সত্যিই কি আসবে ??????????
স্ট্যাটাসঃ- ১০ সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার সময় পাশের দোকান থেকে ২টা ডিম আর একটা নুডুলসের প্যাকেট নিয়ে বাসায় ঢুকলাম। আপুর রুমের সামনে গিয়ে আমার বন্ধু রাকিবকে ফোন দিয়ে আপুকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলতে লাগলাম,,,
-- দেখ, তোর বোনের মত আমার বোন না। আমার বোনকে যদি রাত ১১টার সময়ও বলি আপু বিরিয়ানী খাবো আপু ঠিকিই আমার জন্য বিরিয়ানী রান্না করবে। এটা হলো ভাইয়ের প্রতি বড় বোনের ভালোবাসা। আমাদের ভাই বোনের ভালোবাসা দেখে কিছু শিখ কাজে লাগবে।
তারপর ফোনটা রেখে হাসি মুখে আপুর রুমে ঢুকলাম। আপু তখন টেবিলে বসে একমনে বইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি একটু কাশির আওয়াজ করতেই আপু আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
- আমাকে কি তোর গাড়ির টিউব মনে হয়, যে তুই আমাকে হাওয়া দিবি আর আমি ফুলবো? কয়েকদিন পর আমার পরীক্ষা এখন চোখের সামনে থেকে যা। আমি কোন নুডুলস রান্না করতে পারবো না।
আমি নুডুলসের প্যাকেট আর ডিমগুলো আপুর বিছানায় রাখতে রাখতে বললাম,
-- আমার ফ্রেশ হতে ১০ মিনিট লাগবে। ততক্ষণে হয়ে যাবে আশা করি।
আপু চিৎকার করে বললো,
- বান্দর,আমি বলেছি না আমি পারবো না...
আমি আর কিছু না বলে আপুর রুম থেকে বের হয়ে আসলাম। আমি জানি ঠিক ১০ মিনিট পর আমার জন্য আপু নুডুলস রান্না করে নিয়ে আসবে...।
পরদিন সকালে শ্রাবণীর(আমার গার্লফ্রেন্ড) সাথে দেখা করতে যাবো অথচ হাতে একটা টাকা নেই। আপুর রুমে গিয়ে দেখি আপু বেলকনিতে ফুলগাছে পানি দিচ্ছে। আমি আপুর পাশে এসে আপুকে বললাম,
-- আপু তুই জানিস আমি তকে কতটা ভালোবাসি?
আপু আমার দিকে বিরক্তিকর চোখে তাকিয়ে বললো,
- আমি তোর কোন ময়লা কাপড় চোপড় ধুঁতে পারবো না। আর আমার হাতে একটা টাকাও নেই।
আমি অসহায় দৃষ্টিতে আপুর দিকে তাকিয়ে বললাম,
-- তুই সব সময় আমায় ভুল বুঝিস। যায় হোক, তোকে একটা কথা বলতে এসেছি। গলির মোড়ে একটা লোক অর্কিডের চারাগাছ নিয়ে বসে আছে। একেকটা অর্কিডের চারা ১০০ টাকা মাত্র। যদি পারিস কিনে নিয়ে আয়। আর যাওয়ার সময় সাবধানে যাস কারণ পাশের বাসার আজিজ আংকেলের কুকুরটা রাস্তায় দৌড়াদৌড়ি করছে। তুই তো আবার কুকুর ভয় পাস...
আমার কথা শুনে আপু খুশিতে আত্মহারা হয়ে বললো,
- আমার সোনা ভাই, তুই একটু কিনে এনে দে।
আমি কুকুরটাকে প্রচন্ড ভয় পাই।
এই বলে আপু আমাকে ৫০০টাকার একটা নোট দিয়ে বললো,
- ৫টা চারা আনবি।
আমি পকেটে টাকাটা রাখতে রাখতে বললাম,
-- অসংখ্য ধন্যবাদ আপু ছোট ভাইয়ের প্রেমের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করার জন্য। তুই টাকাটা না দিলে আজকে শ্রাবণীকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে বসে দুইজন দুইজনের চোখের দিকে তাকিয়ে কফি খেতে পারতাম না।
আমার কথা শুনে আপু হাতে থাকা মগটা রাগে আছাড় মেরে বললো,
- তুই যদি অর্কিডের চারা না নিয়ে বাসায় ঢুকিস তাহলে কিন্তু তোর খবর আছে..।
ছাদে এসে দেখি আপু ছাদের রেলিং ধরে দূরে তাকিয়ে আছে। আমি কফির মগটা আপুর হাতে এগিয়ে দিয়ে বললাম,
-- আজকে আবার একটা মকবুল তকে দেখতে আসবে..
আপু কফির মগে চুমুক দিয়ে বললো,
- এই বার বুঝি বিয়েটা হয়েই যাবে রে। ছেলে ভালো জব করে বংশও না কি অনেক ভালো। অনেক টাকার মালিক না কি।
আমিও ছাদের রেলিং ধরে দূরের দিকে তাকিয়ে বললাম,
-- ভালো হলেই ভালো...
সন্ধ্যার পর আপুকে দেখতে আসলো পাত্র সহ আরো কয়েকজন। আপুকে দেখেই পাত্রের ছোট বোন মন্তব্য করলো,
~ মেয়ে সুন্দর কিন্তু নাকটা একটু বোঁচা।
এই কথাটা শুনে মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো। আব্বু হাসি মুখে ওদের সাথে কথা বলছে আর মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকিয়ে দেখছে।
পাত্রের বড় বোন বললো,
~তুমি অত্যাধিক ফর্সা। বেশি ফর্সা মেয়েদের দেখে মনে হয় রক্ত শূন্যতায় ভুগছে।
আমি কিছু বলতে যাবো তখনি খেয়াল করলাম মা আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে।
ছেলের মা তখন বললো,
~ মেয়ে আমাদের পছন্দ হয়েছে।
এই কথা শুনে বাবা মা খুশি হয়ে বললো,
~আলহামদুলিল্লাহ...
এমন সময় ছেলের বাবা বললো,
~আমাদের কোন ডিমান্ড নেই। আল্লাহ আমাদের অনেক দিয়েছেন। তবে শুনেছি চরপাড়াতে না কি আপনারা ৪ তলা একটা বাসা তৈরি করছেন। সেখান থেকে একটা ফ্ল্যাট ছেলেকে উপহার সরূপ দিয়ে দিলেন আর নতুন ফ্ল্যাট সাজাতে যে যে আসবাসপত্র লাগে সেগুলো দিলেন এই আর কি। এটাকে আবার যৌতুক মনে করেন না যে। এইগুলোতো আপনার মেয়েরি থাকবে..
না আর চুপ করে থাকা যায় না। আমি হাসতে হাসতে বললাম,
--হে অবশ্যই দিবো। তবে আমাদেরও একটা আবদার আছে।
ছেলের বাবা চমকে গিয়ে বললো,
~কি আবদার?
আমি তখন ছেলের বাবাকে বললাম,
- আমার বোনের পায়ের নুপূর থেকে শুরু করে মাথার টিকলি পর্যন্ত সব হীরার হতে হবে। আর যে ফ্ল্যাট আমার বোনকে দিবো সেই ফ্ল্যাটে আমার বোন আর ওর হাজবেন্ড বাদে অন্য কেউ থাকতে পারবে না। আর নিদিষ্ট একটা সময়ে আপনি আর আপনার স্ত্রী নিজেদের ইচ্ছায় বৃদ্ধাশ্রমে চলে যাবেন কারণ আপনাদের সেবা আমার বোন করতে পারবে না..
আমার মুখের কথা শুনে পাত্র রেগে গিয়ে বললো,
- তুমি আমাদের অপমান করছো না কি?
আমি মুচকি হেসে বললাম,
-- যাদের কোন মান সম্মান নেই তাদের কিভাবে অসম্মান করবো? আপনাদের মত কিছু ছোট লোক আছে যারা বিয়ের নামে মেয়ে পক্ষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভিক্ষা করে...
পাত্রীর ছোটবোনের দিকে তাকিয়ে বললাম,
-- আয়নায় আগে নিজের নাকটা দেখে পরে অন্য জনের নাক নিয়ে মন্তব্য করবেন। দেখে তো মনে হচ্ছে কেউ সজোরে ঘুষি মেরে নাক চেপ্টা করে দিয়েছে।
সব শেষে পাত্রের বড় বোনের দিকে তাকিয়ে বললাম,
-- কালো চামড়া ফর্সা করার জন্য নিজে তো ঠিকিই এক বস্তা ময়দা মেখে এসেছেন। আর এইখানে বলছেন বেশি ফর্সা মেয়েদের দেখে মনে হয় রক্ত শূন্যতায় ভুগছে...
আমার কথা শুনে পাত্র পক্ষ যখন রেগে চলে যাচ্ছে তখন আমি আপুর হাত থেকে দুইটা কাচের চুড়ি খুলে পাত্রের হাতে দিয়ে বললাম,
-- এতই যেহেতু টাকার দরকার এই চুড়িগুলো পরে রাস্তায় নেমে হাত তালি দেন দেখবেন ঠিকিই টাকা পাবেন...
রাত ১১টা বাজে। বাবা আমায় অনেকক্ষণ বকাঝকা করলো। আমার জন্য না কি আমার বোনের বিয়ে কোনদিন হবে না। আমি তখন বাবাকে বললাম,
-- বাবা, মানুষ শিক্ষিত আর ভালো জব করলেই ভালো মানুষ হয় না। বাবা হিসেবে তোমার যতটা দ্বায়িত্ব আছে তেমনি ভাই হিসেবেও আমার ঠিক ততটাই দ্বায়িত্ব আছে নিজের বোনকে সুখে রাখার। কোন ছোটলোকের কাছে বিয়ে দিয়ে আমি আমার বোনকে সারাজীবন কষ্ট পেতে দিবো না। আমি চাই আমার বোনকে এমন কেউ বিয়ে করুক যে আমার বোনকে সম্মান করবে। আমার বোনের চোখের জল ঠোঁটে আসার আগেই মুছে দিবে। যতদিন পর্যন্ত ঐ রকম ছেলে না পাবো ততদিন পর্যন্ত না হয় আমি আমার বোনকে মাথায় করে রাখবো...
বাবা মার রুম থেকে বের হয়ে দেখি আপু দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে কান্না করছে। আমি পকেট থেকে ফোনটা বের করে রাকিবকে ফোন দিয়ে বললাম,
-- আমার বোন তোর বোনের মত না। আমার এখন বিরিয়ানী খেতে ইচ্ছে হচ্ছে। আপুকে বললে আপু এখনি বিরিয়ানী রান্না করে দিবে...
আপু চোখের জল মুছতে মুছতে বললো,
- কুত্তা, আমি পারবো না এত রাতে বিরিয়ানী রান্না করতে। আমার কয়েকদিন পর পরীক্ষা...
আমি কিছু না বলে মুচকি হেসে আমার রুমে চলে আসলাম। আমি জানি একটু পর আপু ঠিকিই আমার জন্য বিরিয়ানী রান্না করে নিয়ে আসবে..।
ধন্যবাদ সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য।
ধন্যবাদান্তেঃ------
মওদুদ আহমেদ মধু (মিঃ মধু)
দৃশ্যমান_জীবনের_অদৃশ্য_কাব্য
No comments