মাহমুদের ঈদ এবং আরও কয়েকটি ভিন্ন গল্প। @মিঃ মধু
"ঈদ" শব্দটা মাহমুদের কাছে অনেকটাই অর্থহীন!
আজ থেকে নয়, অনেককাল আগে থেকেই।
কেনো যেনো তার কাছে মনে হয়, এটা এক ধরনের মানসিক অত্যাচার!
অবশ্য এটা একান্তই তার নিজের অভিমত।
কারও কারও জীবনের সঙ্গে এই শব্দ'টা মিশে থাকে আশা ও স্বপ্ন ভঙ্গের গল্প হয়ে।
মাহমুদ তখন খুবই ছোট, সবেমাত্র কৈশোরে পা দিয়েছে। দিন তারিখ কিছুই মনে থাকার কথা না।
কিন্তু গল্পটা অবিকল মনে আছে। কে যেনো বলেছিলো, শিশুকালে মনজগত এলোমেলো করা ঘটনা
কখনও হৃদয় থেকে মোছে না। তাড়িয়ে বেরায় বেলা শেষ অবদি।
মাহমুদেরও বেলায় তেমনই হয়েছে।
সে গল্প মনে হলে এখনও মাহমুদ অবচেতন নিজের মধ্যে কুঁকড়ে যায়।
মাহমুদের বাবা প্রচন্ড বদরাগী। বেশ শক্ত সামর্থ, দীর্ঘদেহি মোটা ধরনের মানুষ।
এত ভারি একজন মানুষ, কিন্তু স্নেহ মমতা ব্যাপারটার সাথে তার হয়তো পরিচয় ছিলো না।
পরিচয় থাকলে নিশ্চয়ই মাহমুদের জীবনটা অন্যরকম হতে পারতো ।
সেই সময়ে এক ঈদের দিন ভোরে মাহমুদ ঘুম থেকে উঠে, এক বুক অভিমান নিয়ে খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলো। তার পকেটে তখন দুই টাকা। অনেক আগে থেকে বেশ কস্ট করে জমিয়েছিলো। বাসা থেকে বেরিয়ে যাবার সময় একবার পিছনে তাকিয়ে শুধু এটুকু দেখেছে তার মা দরজার সামনে এসে দাড়িয়ে তার চলে যাওয়া দেখছে। কিন্তু কিছুই বলেনি।
কেনো মা কিছু বলেনি, এর উত্তর আজও সে ভেবে পায়না। সত্যিকারের ভালবাসা কেমন হওয়া উচিত?????
তাদের এলাকা ছেড়ে সে চলে এসেছে অন্য এক এলাকায়, যদিও এই আলাকা তার চেনা, তবে অনেটাই দুরে। সে এসে বসেছে বৈকালী ট্রেন জংশনের ছাউণিতে।
আসার পথে সে দেখেছে, তারই বয়সি ছোট ছোট ছেলেরা বাবার হাত ধরে ঈদ গাঁয়ের দিকে যাচ্ছে।
ছোটাছুটি করছে কেউ কেউ।
সে শুকনো মুখে শুধু দেখেছে, কাউকে কিছু বলেনি। অবশ্য কয়েকজন বয়স্ক মানুষ তার দিকে আড় চোখে তাখিয়ে দেখেছে। মাহমুদ গা করেনি। সে ভেবে রেখেছে, কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে সমস্ত শক্তি দিয়ে তার ভিতরের যন্ত্রনা আজ বের করবে।
সে ততক্ষনাত চেস্টা করলো তার বাবার হাত ধরে ঈদ গাঁ, বা অন্য কোথাও যাওয়ার ঘটনা মনে করতে পারে কি না। কিন্তু অনেক খুঁজেও তেমন কোন ঘটনা তার মনে পড়লো না।
ঠিক সন্ধ্যে পর্যন্ত মাহমুদ সেদিন জংশনের ছাউনিতে বসেছিলো। সারাদিন সে তেমন কিছুই করেনি, শুধু একই জায়গায় বসে থেকেছে। কি করবে সে? তার তো করার কিছু নেই। খুব ইচ্ছে করছিলো চিৎকার করে কাঁদবে। সেটাও সম্ভব হয়নি।
মানুষ জিজ্ঞেস করলে সে কি জবাব দেবে?
সে কিভাবে বলবে-- এই ঈদে তার বাবা তাকে একটা সুতাও কিনে দেয়নি। শুধু এই ঈদে কেনো, কোনো ঈদেই তাদের নতুন কাপড় কিনে দেওয়া হয়না খুব একটা। গতকালও তাকে প্রচন্ড মার খেতে হয়েছে সামান্য অজুহাতে। মাহমুদ নিজে নিজে অনেক ভেবেছে, কেনো তার বাবা কোন উৎসব বা ঈদে তাদের নতুন কাপড় কিনে দেয়না।
অথচ, তাদের চেয়েও দরিদ্র এমন বাবা'রা কত কিছু করে ছেলের জন্য। ঈদে সাথে করে মার্কেটে নিয়ে যায়, না চাইলেও অনেক জিনিস নিজ থেকে কিনে দেয় সেইসব বাবা'রা। এসব মাহমুদ খুব তিক্ষ্মভাবে খেয়াল করে। কেন বাবার আদর স্নেহ সে পায়না, তার বয়সি সব ছেলেরা বাবার কাছে বায়না করতে পারলে, সে কেনো তার বাবার কাছে বায়না তো দুরে থাক কোন সাধারণ কথা বলারও সাহস করতে পারেনা । মাহমুদ এর কোন উত্তর বের করতে পারেনি।
সেদিন মাহমুদ বাসায় ফিরেছে মাগরিবের আজানের পরপর। যেনো কিছুই হয়নি এমন ভঙ্গিতে সে ঘরে ঢুকেছে। হাত মুখ ধুয়ে খাবার ক্ষেতে বসেছে, মাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে হয়নি, খাবার কি আছে?
বাড়া ছিলো সে শুধু নিয়ে খেয়েছে। মা শুধু একবার পাশে এসে কিছুসময় বসেছিলো, কিছুই জিজ্ঞেস করেনি। জিজ্ঞেস না করাতে ভালোই হয়েছে, সে কি উত্তর দিতো? সে তো বলতে পারতো না, "তোমরা আমার উপড় অবিচার করছো, আমাকে চুর্ণ করে দিয়েছো" । বাবা সে সময় বাসায় ছিলো কিনা, সে জানে না। সে বাবার খোঁজ করার মোটেই প্রয়োজন মনে করেনি। বরং বাবা সামনে না থাকা মানে মাহমুদের জন্য স্বস্তি, বাবা সামনে থাকা মানে তার জন্য কারবালার মতো অবস্থা ।
বহুবছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু সেদিনের সেই ঈদের দিনের যে রং ছিলো এতবছরও তা একই রকম রয়ে গেছে। এতটুকু পরিবর্তন হয়নি। সেদিন কেউ বুঝতেও পারেনি "এই অনাদর অবহেলা ছোট্ট মাহমুদের মনোজগতে কত বড় আঘাত করেছে? বাকি জীবনে এর দুঃস্বহ প্রভাব তাকে বয়ে বেড়াতে হবে" ।
এরপর থেকে যতগুলি ঈদ এসেছে, মাহমুদকে কখনও ষ্পর্শ করেনি। আজ সেই বাবা নেই, মাও নেই। কিন্তু তাদের অযন্তের রেশ রয়ে গেছে।
সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার, বাবা-মা যতদিন ছিলো এই সময়ের মধ্যে তাদের নিয়ে কোন আনন্দময় ঘটনা মাহমুদের জীবনে নেই।
মাহমুদের অজান্তেই কিছু নিয়ম তৈরী হয়েছে-
কারো সাথে ঈদের কোলাকুলি না করা, ঈদের শুভেচ্ছা না জানানো, ঈদ নিয়ে কোনরকম কোন আয়োজন বা আলোচনায় না থাকা। অবশ্য সে বুঝতে পারে, এসব অযৌক্তিক অসামাজিক। যে কেউ এসব অনিয়ম শুনলে তাকে লজ্জায় পড়তে হবে। তবুও সে এখনও এটাই ধরে রেখেছে। তার কেবল মনে হয়, থাক না দু-একজন নিয়মের বাইরে।
তাতে করে খুব একটা ক্ষতি নিশ্চয়ই হবেনা সমাজের।
সত্যিকারের ভালবাসা কেমন হওয়া উচিত?????
সমাপ্তঃ-------
সম্পূর্ণ লেখাগুলো পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ধন্যবাদান্তেঃ------
মওদুদ আহমেদ মধু
আরও কয়েটি অদ্ভূত গল্প
বহুকাল আগে এক ঝুম বৃষ্টির আঁধার সন্ধ্যায়, এই হৃদয় একাকীত্ব অনুভব করেছিলো। এই মন উদাসী হয়েছিলো। অদৃশ্য অষ্পর্শী অশরীরী কিছুর জন্য এই হৃদয় হাহাকার করেছিলো, জানালার ওপাশে ভরা পুকুরে যখন শো শো বাতাস আর তিব্র বৃষ্টির ঝাপটায় সবকিছুই ঝাপসা, তখন তার মধ্যে মেহেদী দেখেছে কেউ একজন পুকুরের পানিতে মনের আনন্দে সাঁতার কাটছে। বৃষ্টির প্রলয়ঙ্কারী শব্দ ছাপিয়ে ভেসে আসছে তার খিলখিল করা ঝর্নার মতো হাসির শব্দ, সে স্পষ্ট দেখেছে তার হাতভর্তি ছিলো বাহারী রঙের চুড়ি, লম্বা কালো চুলের জন্য তার আশেপাশের অনেকটা জায়গা কালো দেখাচ্ছিলো। সাঁতার কাঁটার ফাঁকে ফাঁকে মেহেদীকে ইশারায় ডাকতো। মেহেদীর খুব ইচ্ছে করেছিলো যাওয়ার জন্য। কি করে যাবে, যাওয়ার জন্য উঠে দাড়ালেই দেখে পুকুরে কিছুই নেই। শুধু বাতাসের ঝাপটা ও বৃষ্টির ভারী ফোটায় অদ্ভুত পুকুরের দৃশ্য। কিছুসময় পরে আবার সে হাজির। মেহেদী সেদিন খুব অস্থির হয়েছিলো, সে তৎক্ষনাৎ তার একটা নাম দিয়েছিলো, নিয়তি।
সবে কৈশোরে পা দেয়া মেহেদী , সেই ঝুম বৃষ্টির আলো আঁধারির মধ্যে দেখতে পেয়েছিলো নতুন
এক জগতকে। অদৃশ্য অশরীরি কেউ তাকে নিয়ে গিয়েছিলো ভিষণ গভীর বেদনা বিষাদ এর মিশেলে অন্যরকম সুখে ভরা সে জগতে।
যদিও সেই বয়সে, তার এত গভীর বিষয়ে বোঝার কথা না। কিন্তু কিভাবে কিভাবে জেনো মেহেদী সেদিন তা বুঝেছিলো, এবং বেশ ভালোভাবেই বুঝেছিলো। সে আসলে আরও অনেক কিছুই বোঝে, কিন্তু কাউকে বলে না, বা বলতে পারে না। অথবা বললেও কেউ বুঝবে না, উলটো তাকে সন্দেহজনক দৃষ্টিতে দেখবে।
মেহেদী চিরচেনা এই জগতের মানবসম্পর্ক, জীবনব্যবস্থা, মানবজীবনের প্রথা রীতিনীতি
এসবের বিপরীত দিকের চিত্রটা বেশী অনুভব করতো। মেহেদী খুব গভীর বিস্ময়ে লক্ষ্য করতো মানবজীবনের চেনা সম্পর্কগুলো আসলে এক ধরনের ফাঁপা বেলুনের মতো। যা যেকোনো সামান্য খোঁচায় নিশ্চহ্ন হয়ে যায়। মানুষ প্রতিটা মুহুর্তেরই মুখোশের মধ্যে থেকে জীবন পার করে।
এসব সে কখনই মেনে নিতে পারতো না। সে সকলের মধ্যে থেকেও ঠিকই যোযন জোযন দুরত্ব রেখে থাকতো।
সেই ছোট্ট বয়সে দেখা ঝুম বৃষ্টির আঁধারময় সন্ধ্যা তার পুরো মনোজগতে প্রভাব ফেলেছিলো।
সেই থেকেই শুরু হয়েছিলো অপার্থিবতার
প্রতি তার প্রেম।
আজও যেকোনো ঝুম বৃষ্টির সন্ধ্যারাতে তার মন উদাসী হয়, নিয়তির আহ্বানে সাড়া দিয়ে না পারার জন্য অভিমান হয়।
অষ্পর্শী নিয়তিকে আজও কি সে খুঁজে বেড়ায়??
সত্যিকারের ভালবাসা কেমন হওয়া উচিত?????
অস্তিত্বহীন তুমি, সেই ভালো সেই ভালোঃ-------
কিছু কিছু ভূল কিছু কিছু বোকামি কেনো যেনো ইচ্ছে করে বড্ড ইচ্ছে হয়। ক্ষতি হবে জেনেও বঞ্চিত হতে হবে জেনেও।
ভূল না করলে বা ঐসব গাধামি না করলে, যে লাভটুকু হতো। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেটা করেও মনে হয় তারথেকে বেশি লাভবান বা সুখ পাওয়া যায়। সেই সুখ সেই লাভ দৃশ্যমান নয়, কিন্তু, হৃদয়ের খুব কাছ ঘেসে তিব্র থেকে তীব্রতর ভাবে তা উপলব্ধি হয়।
প্রত্যেক নিঃশব্দতার একটা নিজস্ব শব্দ থাকে, প্রত্যেক শব্দের থাকে একটা পরিনতি। না বলে যা বলতে পেরেছি, বলে তা বোঝাতে পারিনি কোনোকালে।
আমি প্রায়ই নিয়ম করে আমার প্রিয় বাড়ান্দায় বসি গভীর রাতে। নিস্তব্ধ রাতের শব্দ শুনি। নিস্তব্ধ রাতের নিজস্ব একটা শব্দ থাকে, আমি সেটাই শুনি। শুনে শুনে প্রহর গুনি, আমার একলা পথের সিমানা দেখি। দোলনা চেয়ারে গা এলিয়ে চড়ুই ছানার কিচিরমিচির শুনি।
আমার দিনগুলো সব এলোমেলো ভাবনায় কাটে, রাতগুলো সব আমায় নিয়ে সাজে। আমার ভিতরে পরম মমতায় লালন করা যাতনাকে খোঁজে। আমার আমির প্রান্ত নিয়ে অবশেষে সামনে বসে।
ভিতরে বাইরে সমস্ত অন্তরজূড়ে অন্যকিছু আমার জমানো নেই। যা জমে আছে, তা হলো এক পৃথিবী ভারী বাতাস। আচমকা কোনো কোনো ক্ষনে সেই বাতাস আমায় ঝাকিয়ে দেয়, নাড়িয়ে দেয়। বরফ গলে জলের তোড়ে ভাসিয়ে নিয়ে যায় অজানা সুখের দেশে।
এরই মধ্যে ভাবি তোমাকে, বর্ষা বিকেল, আমি, আমাকে, আর সেই প্রথম ভালোবাসি বলা, যা ছিলো মনের কল্পনায়।
এভাবেই আমার বর্ষার বিকেলগুলো কেটে যায়। আষাঢ় শ্রাবণের পরে কত আগুনঝরা ফাগুন আসবে। তখন হাসিমুখ তুলে অভিমান কি ভূলে যাবে?
কিন্তু কি অদ্ভুত! আমার আগুনঝরা কৃষ্ণচূড়ার সন্ধ্যায় তুমি থাকো না। সুদীর্ঘ শীতের ভোরগুলোতে মনে হয়, এই বুঝি তুমি এলে।
আমার কি যেনো নেই, কি যেনো নেই বাক্যটা বোধহয় 'তুমি' নামক!
অথচ কি আশ্চর্য, অনাদিকাল থেকেই তোমার কোনো শারীরিক অস্তিত্ব আমার কাছে ছিলো না।
তুমি অশরীরী, তুমি আমার কাল্পনিক প্রশ্রয়।
তারপরেও আমি রোদ্দুর খুঁজি, আমি তোমাকে খুঁজি।
অবশ্য তুমি কোনোকালে না এলে সেটা বোধহয় আমার জন্য আরও ভালো হবে।
বিষাদ অভিমানেরা অন্তরের অতি গোপনে জমা থাক, একটু করে কুড়ে কুড়ে এ হৃদয় খেয়ে নিঃশ্বেষ করে ফেলুক। জীবনের শেষ সিমায় পৌছে এই সঞ্চয় ভেবে দু-চোখ ভরে জল আসুক।
সেই ভালো সেই ভালো।
সত্যিকারের ভালবাসা কেমন হওয়া উচিত?????
আষাঢ়ের একঠি নির্জন রাতঃ---
প্রিয় সময়গুলি আসে সাধারণত অসময়ে,
বিষয় যেটাই হোক। আমার প্রিয়'রা একটু বেশী অসময়েই আমার কাছে আসে।
কয়েকদিন ধরে তিব্র গরমে প্রান যায় যায়। মনে মনে অনেক বকা দিয়েও বৃস্টি বাবুর দেখা পাচ্ছিলাম না। প্রায় আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম এই যাত্রায় বুঝি আর ওর দেখা পাবো না। কোন ব্যাপারে যখন আমি হাল ছেড়ে দেই, ঠিক তখন সেটা ধেয়ে আসে আমার বরাবর।
গতকাল রাতে শুয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি এবং শুয়েও পড়েছি। বাবু ঠিক তখনই ধেয়ে আসল আমার দিকে! কোথা থেকে হঠাৎ দমকা বাতাস সাথে শোশো আওয়াজ শুরু হতে লাগল। আচমকা সবকিছু উলট-পালট হয়ে যাবার অবস্থা। ২:৩০ মি: এর দিকে শুরু হলো মুষল ধারে বৃস্টি। সেকি বৃস্টি,
যেন এখনই এই পৃথিবীকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে।
অন্য কে কি করলো দেখার সময় নাই, আমি দমকার গতিতে উঠে পড়লাম। দরজা খোলার সময়ও কি পাবো না; আমাকে ছাড়াই তো দেখছি শেষ হয়ে যাবে।
সোজা বাইরে নেমে পড়লাম কোনদিকে না তাকিয়ে। আশেপাশে সব জনশুন্য।
কোথাও কাউকে দেখা গেলো না। শুধুই আমি একা। এত রাতে অবশ্য কাউকে দেখারও কথা নয়।
অবাক করা বিষয় হলো, সাধারণ সময়ে বৃস্টিতে ভিজার যে অভিজ্ঞতা থাকে, সেটার সাথে এই সময়ের মধ্যে কোন মিল পাওয়া গেল না। কোন মিল না।
নিজেকে খুলে দিয়ে, মেলে দিয়ে - বৃস্টির হাতেই দিলাম সপে।
বিচিত্র সব শব্দ হতে থাকলো আকাশে, প্রতিটা শব্দের সাথেই একবার করে চমকে উঠি। ভয়ে নয়, ভিন্ন এক শিহরনে। কিছুক্ষন পরপর আবার বিজলী চমকাচ্ছে, বিজলীর প্রতি এক ঝলক আলোতে সম্পূর্ণ অন্য এক নিজেকে দেখলাম। বিষ্ময়ে হতবাক হলাম প্রতিবারেই। চিরচেনা চারপাশটাকে আর চিনতে পারলাম না।
আমি অবচেতন মনে প্রায়ই একধরনের একান্ত সুখময় কিছু অন্তিম জগতের দৃশ্যপট আকিঁ হৃদয় ক্যানভাসে। কিন্তু তা অত পরিস্কার থাকেনা, কেমন যেন ঝাপসা ঝাপসা থাকে।
কাল সেই অন্তিম জগতই বোধহয় পরিস্কার রুপে আমার কাছে এসেছে আমাকে শান্ত করতে।
ভাসিয়ে দিয়েছি আমার সমস্ত অপুর্ণতাকে, ভেসে গিয়েছি আমার গোপন কুঠরীতে জমিয়ে রাখা বেদনা মাখা সুখগুলির কাছে। কতক্ষন ভিজেছি জানি না।
তবে ভেজা শেষ ঘরে ঢুকে দেখি দেয়াল ঘড়িতে পৌনে চারটা বাজে মাত্র!
সত্যি বলছি, এ এক অন্যরকম আনন্দ, যে আনন্দে মেশান আছে খুবই ছোট ছোট কিন্ত বেশ ভারী কিছু বেদনা। যে বেদনার হয়ত মৌলিক কোন কারন নেই! আবার কে জানে হয়ত আছে, এবং বেশ জড়েসোড়েই আছে।
জানিনা, কিছু জানি না, কোন কারনকেও এখন আর খুঁজি না।
শুধু জানি এই আনন্দ-বেদনার কাব্যের কাছেই আমি যেতে চাই। বারবার যেতে চাই। যে বেদনার জন্ম এই জগতে নয়! অন্য কোন ভুবনে।
সত্যিকারের ভালবাসা কেমন হওয়া উচিত?????
কাছ থেকে আমার দেখা একটা ভিন্ন গল্পঃ-----
এক বাবা তার সন্তানকে নিজের আঙুলের ছাপ দিয়ে সিম কার্ড কিনে দিতে রাজি হয়নি।
বলেছে,, "আমি পারবো না, তুমি অন্য কাউকে গিয়ে ধরো"!
কি সর্ননাশ! একজন বাবা যদি এই দ্বায়িত্ব না নেয়, তবে আর কে থাকবে জগতে যে তার আঙুলের ছাপ দিয়ে সিম কিনে দেবে??
ব্যাপার হলো, কোনো এক আশ্চর্য কারনে ভোটার আইডি কার্ডের সাথে তার আঙ্গুলের ছাপের মিল নেই। এজন্য প্রায়ই তাকে নানান সমস্যায় পড়তে হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো সিম কার্ড কেনা নিয়ে।
এ কারনেই তাকে অন্যের কাছে ধরনা দিতে হয়।
উপায়ান্তর না পেয়ে বাবাকে গিয়ে বলে একটা সিম কার্ড কিনে দেওয়ার জন্য। তখন তার ঐ সিমটি খুবই প্রয়োজন ছিলো।
পারিবারিক সামাজিক রাষ্ট্রীয় যেসব অসঙ্গতি থাকলে একটা ছেলেকে খারাপ বলা যায়, ঐ ছেলের সেরকম কোনো কর্মকান্ডই ছিলো না। যা ছিলো তা হলো,,, ছেলেটা হেয়ালী, ইমোশনাল, এবং একরোখা।
সবথেকে বাজে ব্যার্থতা ছিলো, কামাই রোজগারে বেশ দুর্বল। শক্ত কোন অর্থ উপার্জনের সক্ষমতা নাই। তার এই একরোখা স্বভাবের জন্য কোনো কর্মেই সে বেশীদিন স্থায়ী হতে পারেনি।
কিন্তু, সে ছেলের নীতিবোধ ছিলো প্রবল, নিজস্ব ব্যাক্তিত্ত্বকে বিকিয়ে দেওয়ার ঘোর বিরোধী। বিবেকবোধের বাইরে গিয়ে কোনো কাজ সে করেছে বলে তার জানা নাই।
মজার ব্যাপার হলো, তার পরিবার তার এই লুকায়িত বৈশিষ্ট্যের দিকে কোনোকালেই কর্নপাত করেনি। কেনো করেনি, সে এক বিরাট রহস্য।
তারা বিচার করেছে অর্থ উপার্জনের সক্ষমতাকে বিবেচনা করে। নিখাদ ভালোবাসা যাকে বলে, তেমন কিছু, ঐ বাবার কাছ থেকে বোঝার পর থকে উপভোগ করেনি।
ন্যায়নীতি বিবেক লালন করেও কিভাবে কিভাবে জেনো তার উপড়েই দুর্যোগ নেমে আসে অন্য সবার থেকে বেশী। এর উপড়ে, উপার্জনে দূর্বল হওয়াতে পরিবার থেকে যথেস্ট হেনস্তা হয়েছে। এর প্রভাবস্বরূপ বাইরেও তাকে থাকতে হয়েছে বিপর্যস্ত।
সত্যিকারের ভালবাসা কেমন হওয়া উচিত?????
ঐ বাবা'র পাঁচ সন্তান। একদম ছোটোটা বাদে বাকি তিনজন বেশ মোটা অঙ্কের অর্থ আয় করে। দুজন থাকে বিদেশে, একজন দেশে ব্যাবসা করে। বলা যায় টাকার পাহাড়। সবথেকে অবাক ব্যাপার বিদেশের এবং দেশের ব্যাবসার টাকা সব একত্রে ঘরে আসা শুরু করার পর থেকে এই ছেলের উপড় দুর্যোগটা আরো বেশী পরিমানে নেমেছে। কখনও কখনও তার মনে হতো, "সে আসলে এ ঘরের ছেলে নয়! অপরিচিত কেউ, ভূলক্রমে চলে এসেছে। নিশ্চয়ই সে একদিন তার আসল ঠিকানায় যেতে পারবে"!
যে সময়টাতে সে তার বাবার কাছে একটা সিম কিনে দিতে বলেছিলো, তখন তার চারদিকে ঘোর অমানিষা! এই জলজ্যান্ত মা-বাবা-ভাই'রা চোখের সামনের থাকার পরও তার মনে হচ্ছিলো তার চারপাশে কোথাও কেউ নেই, সে বড় একা।
বুকের ভিতর পুরোটা ফাকা। যেটা হওয়ার কথা পৃথিবীর সবথেকে নির্ভরতা থাকার জায়গা, অথচ সেখানেই আজ সে অসহায় বোধ করছে। তাহলে সহায় বোধ করার জায়গা বিধাতা এই দুনিয়ার কোথায় রেখেছেন তা সে জানে না।
পরিবারের বিশেষ করে বাবা মায়ের অবজ্ঞা পেতে পেতে এক সময় সে নিজেকে পুরোপুরি গুটিয়ে ফেললো। সে ধরেই নিয়েছে ; এই পরিবারে বিনিময় ছাড়া কোনো অধিকার সে পাবে না। ভালোবাসা বিশ্বাস এখানে খুবই ঠুনকো!
চলমান এই বিধ্বস্ত সময়ের কিছু বছর আগে সে বেশ স্বাবলম্বী ছিলো, অনেক টাকা আয় করতো। অনেক টাকা বলতে, সেই সময়ে পরিবারে একমাত্র সে'ই আয় করতো। বাবা ছিলো অবসরপ্রাপ্ত। ফলে যে টাকা আয় করতো পরিবারের জন্য ওটাই ছিলো পর্বত সমান। তার পরিস্কার মনে আছে, ঘরে তাকে বেশ খাতির যত্ন করা হতো। একেবারে যাকে বলে জামাই আদর। যদিও সে এখনও কারো জামাই হতে পারেনি। তবে জামাইকে কিভাবে আপ্যায়ন করা হয় তার কিছুটা ধারনা তখন সে পেয়েছিলো। বিপরীতে তখন অন্য ভাইদের দিকে মা বাবা ফিরেও খেয়াল করতো না, কে কখন খেয়েছে কিছু লাগবে কিনা এসব। অন্য সবাই ছিলো আর্থিকভাবে অসচ্ছল।
সত্যিকারের ভালবাসা কেমন হওয়া উচিত?????
আচমকা এক ঝড়ে তার সেই অবস্থান পড়ে যায়।
সম্পূর্ণ বেকার হয়ে পড়ে, হাতে জমানো টাকা-পয়সাও ছিলো না। এরই মধ্যে অন্য ভাইদের অবস্থান পাকা হতে শুরু করে। শেষ সম্বল বিনিয়োগ করে মা বাবা দুজনকে বিদেশে পাঠিয়েছে। একজনকে মূলধন দিয়েছে ব্যাবসা করার জন্য। তারাও অল্পদিনে সেই বিনিয়োগের ফিডব্যাক দিতে শুরু করলো। ফলস্রুতিতে মা বাবাও সময়ের সাথে তাল রেখে তাদের সু-দৃষ্টি তার থেকে সরিয়ে উপার্জনওয়ালাদের দিকে দেয়। পরিবর্তিত এই সময়টাই বেশী দীর্ঘায়িত হয়।
বাবা যখন বললেন,,,, "পারবো না, তুমি অন্যদিকে দেখো"! প্রথম কয়েক মূহুর্ত তার মনে হয়েছে সে ভূল শুনেছে! খানিকক্ষণ পর আবারও যখন একই উত্তর আসলো, তখন সে নিজেকে কিছুসময়ের জন্য পরিচয়হীন ভেবেছিলো। নিশ্চয়ই সে অপরিচিত কেউ! এই বাবা নামক মানুষটার আঙ্গুলের ছাপ ব্যাবহার করে সিম কিনে সে হয়তো অপ্রীতিকর কিছু করে বসবে! বয়স্ক এই বাবার সর্বনাশও করে ফেলতে পারে! এজন্যই এই বাবা ঝুকি নেয়নি! উদ্বিগ্ন বোধ করেছে!!
অতঃপর ভাদ্র মাসের এক হৃদয় হু হু করা বিকেলে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে ঘর থেকে সে বেরিয়ে পড়েছে অজানার উদ্দেশ্যে। গন্তন্য কোথায় ত তার জানা ছিলো না।
এখন সেই ছেলেটা( ইউনুস ভাই) বিমান বাহিনীর বেসামরিক লেভেলে ভালো একটা পদে জব করে।
বেশ ভালোই আছে। মা বাবা ভাইরা কে কোথায় কিভাবে আছে সে জানে না। আদৌ সেই মা বাবা বেচেঁ আছে কিনা তাও সে জানে না। কেউ তার খবর নেয়নি, সেও কারো খবর নেয়নি।
• এই সমাজে তথাকথিত একটা প্রথা প্রচলিত আছে,,,,
মা বাবা,, মানেই ভালোবাসা ও বিশ্বাসের শেকড়!!!
খুব তিক্ষ্মভাবে লক্ষ্য করলে দেকজা যাবে এট ধারনা একেবারেই ভূল!
হয়তো, সার্বজনীন ভাবে না। কিন্তু, আনাচে কানাচে আড়ালে নিড়লে গভীর দৃস্টি রাখলে দেখা যাবে,,,
প্রচলিত ধারনার বিপরীত বহু বিষাদময় গল্প মুকজ থুবড়ে পড়ে আছে। ব্যাতিক্রম যে আছে, এবং সেটার আবেদন যে আরো বেশী হৃদয়গ্রাহী তা কেউ বুঝতে চায় না।
অনেকেই বলে থাকে,, ব্যাতিক্রম উদাহরণ হতে পারে না! কিন্তু জনাব, ব্যাতিক্রমের ভিকটিম যে হয়,, আপনার সমাজে যেসমস্ত বড় বড় উদাহরনই থাকনা কেনো, তাতে ঐ ভিকটিমের কিচ্ছু যায় আসে না।
তার পৃথিবীটা ফাঁকা'ই থাকে। তাত ভূবন তার মত করেই বিষাদময় থেকে যাবে। আপনাদের কোনো প্রথা দিয়ে তার ভিতরের শুন্যতা পূরণ হবে না।
সমাপ্তঃ-------
সম্পূর্ণ লেখাগুলো পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ধন্যবাদান্তেঃ------
মওদুদ আহমেদ মধু
No comments