একজন নারী হিসেবে আপনি কিভাবে, পুরুষেদের অনিচ্ছাকৃত ছোয়া আর নোংরা ছোয়ার মাঝে পার্থক্য খুঁজে পান?
একজন নারী হিসেবে আপনি কিভাবে,
পুরুষেদের অনিচ্ছাকৃত ছোয়া আর নোংরা ছোয়ার মাঝে পার্থক্য খুঁজে পান?
বিষয়টি এমন যে সোজা সহজ কথায় বলে বোঝানো যাবে না।যতই হোক অনুভুতির কথা তো। ভাষায় প্রকাশ বেশ কষ্টকর হয়।তাই কিছু উদাহরণ দেব।
যেহেতু স্পর্শের ব্যাপারে মেয়েদের ছোট থেকেই অন্য মানসিকতায় বড় হতে হয়,
তাই সাধারণত এই বিষয়ে মেয়েদের একটা ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় তৈরি হয়ে যায়। আমরা তাকানো,
স্পর্শ বা বাচনভঙ্গী থেকেও অনেক কিছু বুঝতে শিখে যাই।
দয়া করে আবার ভাববেন না আমি নারীকে দেবী বানাতে চাইছি, যে আমরা এমনি এমনি সব বুঝে যাই।না, তা নয়। এটাকে বরং মেয়েদের Defence Mechanism বলতে পারেন।
কারণ ওই যে ছোট থেকে শুনতে অভ্যস্ত হয়ে যাই আমরা— যাই ঘটুক না কেন সব আমাদের দোষ।
যে সমাজে ধর্ষিতাকে নিজের পোশাক, সময়ের হিসাব ( রাত না দিন ),
বন্ধুদের লিঙ্গ নিয়ে প্রশ্ন বাণে ঝাঁজরা করে দেওয়া হয় সেখানে আমরা মেয়েরা সব সময়ই,
এমনকি অবচেতন মনেও নিজেদের বাঁচানোর মরিয়া চেষ্টা করতেই থাকি।
আমি কি করে বুঝি কোন স্পর্শ ইচ্ছাকৃত আর কোনটা নয়ঃ
উদাহরণ ১ঃ
অফিসের সময় কলকাতার বাস। প্রচণ্ড ভিড়।তিলধারণের জায়গা নেই।
উদাহরণ ১ঃ
অফিসের সময় কলকাতার বাস। প্রচণ্ড ভিড়।তিলধারণের জায়গা নেই।
মহিলা সিটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। পিছনে একজন পুরুষ দাঁড়িয়ে। লক্ষ্য করেছিলাম,
উনি ওঠার পরে এদিকে না এসে অন্যদিকে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।
এমন কি আমার দিকে পেছন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টাও করেছিলেন।
কিন্তু না পেরে অগত্যা একই ভাবে দাঁড়িয়েছেন। হঠাৎ বাসে ব্রেক দেওয়ার ফলে উনি এসে পড়লেন আমার ওপরে।তাল সামলে বুঝলাম ওনার হাত কিন্তু বাসের রড চ্যুত হয়নি।
আচমকা ঝাঁকুনিতে একটু হুমড়ি খেয়ে পড়েই আবার উঠে দাঁড়িয়েছেন।
সামলানোর চেষ্টার ফলে আমার পিঠে ওনার বুকটুকু একবার হয়ত ছুঁয়ে গেছিল।
আর যাতে পুরো আমার ঘাড়ে এসে না পড়েন তাই আমার কাঁধে একটা হাত দিয়ে সামাল দিয়েছেন। দাঁড়ানোর সাথে সাথে হাত তুলে দোষ না করেও "দুঃখিত, কিছু মনে করবেন না" বলেছেন।
আমার অনুভবঃ ভদ্র সভ্য মার্জিত ব্যক্তি।অনিচ্ছাকৃত ছোঁয়া।
আমার অনুভবঃ ভদ্র সভ্য মার্জিত ব্যক্তি।অনিচ্ছাকৃত ছোঁয়া।
উদাহরণ ২ঃ
পরিস্থিতি একই। পুরুষটি উঠেই আমার পিছনে এসে দাঁড়ালেন। কোনো ব্রেক দেওয়ার পরিস্থিতি হয়নি। দিব্যি শান্তিতে বাস এগিয়ে চলেছে। উনি এগিয়ে আসছেন ক্রমশ।
পরিস্থিতি একই। পুরুষটি উঠেই আমার পিছনে এসে দাঁড়ালেন। কোনো ব্রেক দেওয়ার পরিস্থিতি হয়নি। দিব্যি শান্তিতে বাস এগিয়ে চলেছে। উনি এগিয়ে আসছেন ক্রমশ।
বুঝলাম আমার পশ্চাতদেশে ওনার নিম্নাঙ্গ স্পর্শ করছে। আমিই একটু এগিয়ে গেলাম কোনো রকমে। উনিও এগিয়ে এলেন। ক্রমশ উনি শক্ত। আমার বিরক্তি শুরু।
ভিড়ের মধ্যেই কোনও ভাবে এদিক ওদিক সরার চেষ্টা করছি। উনিও ঠিক একই ভঙ্গিমায় সরছেন। নিজে নিজেই হঠাৎ করে এমন ঘাড়ে পড়ছেন যেন বাসচালকের দোষ।
এবার বাধ্য হয়ে যেই সরব হলাম, ওনার বক্তব্য - " ভিড়ে একটু আধটু তো গায়ে গা লাগবেই।
তাতে কি গায়ে ফোসকা পড়ে গেল? বাসে চাপেন কেন? ট্যাক্সি নিতে পারেন তো।"
মানে চোরের মায়ের বড় গলা।
আমার অনুভবঃ ঘেন্না, বিরক্তি, রাগ, অসহায়তা।
আমার অনুভবঃ ঘেন্না, বিরক্তি, রাগ, অসহায়তা।
অসভ্য, ইতর, অভদ্র, বিকৃতকাম ব্যক্তি। ইচ্ছাকৃত ছোঁয়া।
উদাহরণ ৩ঃ
অটোতে উঠে দেখলাম একজন স্বাস্থ্যবান পুরুষ বসে।
উদাহরণ ৩ঃ
অটোতে উঠে দেখলাম একজন স্বাস্থ্যবান পুরুষ বসে।
আমরা মেয়েরা উঠে বসতেই উনি যথা সম্ভব সংকুচিত হয়ে বসার জায়গা দিলেন।
একটু এগিয়ে বসলেন সিটে। যাতে পাশের জনের সাথে শারীরিক স্পর্শ যথা সম্ভব কম হয়।
আমাদের বসার কোনও অসুবিধা হল না। জায়গা কম সেটার জন্য স্পর্শ হবেই, কিন্তু তা অস্বস্তিকর না।
আমার অনুভবঃ ভদ্র সভ্য মার্জিত ব্যক্তি।অনিচ্ছাকৃত ছোঁয়া।
উদাহরণ ৪ঃ
অটোতে উঠতে গিয়ে দেখলাম একজন পুরুষ বসে। আমরাও উঠলাম, পাশে বসলাম। উনি নির্বিকার। বসার পর বুঝলাম উনি খুব আয়েস করে পা ছড়িয়ে বসে।
আমার অনুভবঃ ভদ্র সভ্য মার্জিত ব্যক্তি।অনিচ্ছাকৃত ছোঁয়া।
উদাহরণ ৪ঃ
অটোতে উঠতে গিয়ে দেখলাম একজন পুরুষ বসে। আমরাও উঠলাম, পাশে বসলাম। উনি নির্বিকার। বসার পর বুঝলাম উনি খুব আয়েস করে পা ছড়িয়ে বসে।
পাশে বসার পর লক্ষ্য করতে লাগলাম পায়ে পায়ে একটা অস্বস্তিকর ছোঁয়া,
সাথে ওনার কুনুই আমার পেটে খোঁচা দিচ্ছে। কিন্তু ওনার কোনো বোধ নেই যেন,
আমরা অস্বস্তিতে যত সংকুচিত হচ্ছি, উনি তত হেলে গায়ে পড়ছেন।
অথচ অনায়াসে উনি সোজা হয়ে বসলেই কোনো অসুবিধা হয়না।
আমার অনুভবঃ বিরক্তি, রাগ। অসভ্য, ইতর, অভদ্র, বিকৃতকাম ব্যক্তি। ইচ্ছাকৃত ছোঁয়া।
আশাকরি ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই যে কি করে আমরা মেয়েরা ইচ্ছাকৃত স্পর্শ ও অনিচ্ছাকৃত স্পর্শের মধ্যে পার্থক্য করতে পারি।
আমার অনুভবঃ বিরক্তি, রাগ। অসভ্য, ইতর, অভদ্র, বিকৃতকাম ব্যক্তি। ইচ্ছাকৃত ছোঁয়া।
আশাকরি ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই যে কি করে আমরা মেয়েরা ইচ্ছাকৃত স্পর্শ ও অনিচ্ছাকৃত স্পর্শের মধ্যে পার্থক্য করতে পারি।
মানুষের ব্যবহার, মুখের ভাষা, শারীরিক ভাষা — স্পষ্ট করে দেয় কি উদ্দেশ্য নিয়ে স্পর্শ করা হচ্ছে।
নারীরা পুরুষদের নোংরা উদ্দেশ্যে ছুঁতে পারেন কিনা?
পারেন। ছুঁয়ে দেন। মানসিক বিকৃতি লিঙ্গ নির্ভর হয় না। তা নারী-পুরুষ উভয়েই বিদ্যমান।
পারেন। ছুঁয়ে দেন। মানসিক বিকৃতি লিঙ্গ নির্ভর হয় না। তা নারী-পুরুষ উভয়েই বিদ্যমান।
ঠিক যেভাবে, যে উদ্দেশ্যে পুরুষ নারীকে স্পর্শ করেন, সেই একই রকমভাবে ও একই উদ্দেশ্যে নারীও পুরুষকে স্পর্শ করতে পারেন। কামনা বাসনা এগুলো তো শুধু পুরুষেরই থাকবে নারীর থাকবে না ,
তা নয়। বিকৃত হলেই যে নারীর ক্ষেত্রে বাদ যাবে তাও নয়। এখানেও একটা ঘটনা বলি।
কলেজের ঘটনা। একটা ছেলে ছিল। খুব শান্ত, ভদ্র, মার্জিত, পড়াশোনায় মনযোগী, মেধাবী।
কলেজের ঘটনা। একটা ছেলে ছিল। খুব শান্ত, ভদ্র, মার্জিত, পড়াশোনায় মনযোগী, মেধাবী।
একটা মেয়ে ছিল অভদ্র, অমার্জিত, কলেজে ভর্তি হতে হয় বলে হয়েছিল।প্রায়ই আমরা দেখতাম ছেলেটা ক্লাসে বসে আছে, হঠাৎ করে কোথা থেকে মেয়েটা এসে সবার সামনে ওর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ত। গাল টিপত, জামা ধরে টানত, হাত ধরত, পাশে বসে গলা জড়িয়ে ধরত।সোনা, মনা, জানু —
এই সব অদ্ভুত নামে ডাকত। এক কথায় উৎপাত করত।
ছেলেটা অসম্ভব শান্ত বলে এবং আক্রমনকারী যেহেতু মেয়ে, তাই ভদ্র ভাবেই বারবার বারণ করত,
দূরে সরে যেত।আমরাও বারণ করতাম বিরক্ত করতে। কিন্তু 'চোরা না শোনে ধর্মের কথা'।
উল্টে মেয়েটা সবাইকে বলে বেড়াত, " ও তো আমার বর জানিস না?
ওকে ওরকম করতে আমার হেব্বি লাগে।গালগুলো লাল লাল হয়ে যায়। দারুন সেক্সি ব্যাপার।" এইভাবেই উত্যক্ত করে যেতে লাগল। কিন্তু সব কিছুর একটা শেষ হয়।
একদিন ক্লাসের মাঝে একই রকমের জোর জবরদস্তি করার সময় তা অশ্লীলতার পর্যায়ে চলে যাওয়ায় ছেলেটা বাধ্য হয়ে এক চড় মেরে বসে।এই ঘটনা হয়ত অনেক দূর গড়াত কিন্তু আমরা ছেলেটার সমর্থনে থাকায় তা থেমে যায়। মেয়েটাকে এক মাসের জন্য সাসপেন্ড করা হয়।
ছেলেটাকে দেখেছিলাম একই রকম যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যেতে ঠিক যেভাবে মেয়েরা কুঁকড়ে যায়।
কথা বলতে পারত না বহুদিন। স্বাভাবিক হতে অনেক সময় লেগেছিল। মেয়েদের সাথে কথাও বলত না। মেয়েটা যখন ফিরে এলো কলেজে তখন বিশেষ পরিবর্তন হয়নি।
শুধু ওই ছেলেটাকে বিরক্ত করা বন্ধ করেছিল। কিন্তু ওর কার্যাবলী শুনতাম।
ঠিক মেয়েরা বাসে যে ধরনের স্পর্শে বিরক্ত হয় সেই সব কিছুই মেয়েটা বাসে করত।
পার্থক্য ছেলেরা হয়ত সেটা বড়াই করে বলে না। মেয়ে বলে ও কলেজে এসে সেগুলো বলত।
তাই আমরা জানতে পারতাম। ওর কাছে গর্বের ব্যাপার হলেও আমরা বুঝতাম তা আসলে এক ধরনের মানসিক অসুস্থতা।
খারাপ স্পর্শ নারী বা পুরুষ — সবার ক্ষেত্রেই ঘটতে পারে।
খারাপ স্পর্শ নারী বা পুরুষ — সবার ক্ষেত্রেই ঘটতে পারে।
হতে পারে নারীদের ক্ষেত্রে এই ধরনের ঘটনা তুলনামূলকভাবে বেশি।
কিন্তু পুরুষদের ক্ষেত্রে বিরল না। ইদানিং কালে পুরুষরাও সমানভাবেই হয়ত আক্রান্ত হচ্ছেন।
ঘটনার প্রকাশ কম হয়। মেয়েদের ক্ষেত্রে এই ধরনের ঘটনার গ্রহণযোগ্যতা বেশি ।
পুরুষদের ক্ষেত্রে পুরুষরাই বিশ্বাস করেন না।সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গীর পার্থক্য একমাত্র দায়ী।
তবে অন্যায় সব ক্ষেত্রেই সমান। নারী বা পুরুষ যাই হোন না কেন শোষিতের যন্ত্রণাও সমান।
ধন্যবাদান্তেঃ------
মওদুদ আহমেদ মধু
#_মিঃ_বুদ্ধিমান_গাধা®
ধন্যবাদান্তেঃ------
মওদুদ আহমেদ মধু
#_মিঃ_বুদ্ধিমান_গাধা®
No comments