একজন নীতুর আত্মজীবনী মূলক টুকরো গল্প।
জীবন থেকে নেওয়া টুকরো ও বিচ্ছিন্ন কিছু
অনুভূতির কাব্য নিয়ে একজন নিতুর গল্প।
যার মধ্যে লুকিয়ে আছে জীবনের নানান বাঁকের,
নানান পথের, দর্শণ উপলব্ধি ও মোটিভেশান।
১/
নিতু শুয়ে আছে, বেশ আরাম করেই শুয়ে আছে । রাত ১০টা ৩৩ বাজে দেয়াল ঘড়িতে।এমন কোন রাত নয়, তবু মনে হচ্ছে অনেক রাত ।
সারাদিনের আলস্যের জন্যই হয়ত এরকম হয়েছে , ছুটির দিনেই যত অলসতা পেয়ে বসে।
নিতু ছোট একটা চাকরি করে । খুবই আরামদায়ক চাকরি, কোন ঝামেলা নাই ।
যাকে বলে নির্ঝঞ্জাট । আজ নতুন বছরের প্রথম দিন বলে, সে ছুটি পেয়েছে ।
আজ সারাদিনই তাই নিতু বাসায় ।
আগের সময় থাকলে চাকরীর দরকার হত না ।
কিন্তু এখন নিতুর এই চাকরিটার খুবই দরকার ।
তাদের সময় এখন খুবই খারাপ । যাকে বলে, জাচ্ছে-তাই অবস্থা ।
অবস্থা এতটা খারাপ হত না, মাহমুদের চাকরি থাকলে । গত কয়েক মাস মাহমুদের কাজ নেই । কি একটা ব্যাবসা করবে করবে করেও এখনও শুরু করতে পারেনি । অবশ্য এ নিয়ে নিতুর কোন অভিযোগ নেই । কোন রকম বিচলিত হতে দেখা যায় না তাকে ।
অথচ তার খুবই বিচলিত হওয়ার কথা ছিল !
নিতু লেপটা আরেকটু টেনে নিয়ে প্রায় মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে । শীত তেমন নেই , তবুও আয়েশ করে শোয়া আর কি ।
মাহমুদ গলার স্বর নিচু করে বলল- 'কি ঘুমিয়ে পড়ছো নাকি' ?
- 'না, ঘুমবো কেন এমনিতেই শুয়ে পড়লাম' ।
- 'অবশ্য ঘুম আসলে ঘুমিয়ে পড়, তোমার তো আর কিছু করার নাই' ।
নিতু আর কিছু বললো না । মাহমুদের কথায় কোন অনুযোগ নেই । বরং কোথায় যেন আরো তটস্থ !
থাক , সে যা করে করুক ।
ওটা নিয়ে ভাবার সময় নাই । নিতু এখন চোখ বুজে শুধুই পার্থের কথা ভাববে । পার্থের সাথে আজ অনেক কথা হয়েছে । অল্প সময়ই কথা হয়েছে, কিন্তু নিতুর কাছে মনে হয় অনন্তকাল ধরে কথা বলছে । পার্থের সাথে কথা বললেই নিতু শরীরের ভিতর দিয়ে শীতল একটা স্রোত বয়ে যায় । কেন এমন হয় কে জানে ।
পার্থের সাথে নিতুর পরিচয় মাহমুদের সাথে বিয়ে হওয়ারও প্রায় দুই বছর আগে থেকে ।
নিতুর সবকিছুই সাজানো-গোছানো ছিল পার্থের জন্য । কত আনন্দ-বেদনার কাব্য দিয়ে ঘেরা দিনগুলিই না গেছে । বর্তমানের দিনলিপি তো তার হওয়ার কথা ছিল না । তার বর্তমানের দিনলিপি হওয়ার কথা তো ছিল পার্থকে ঘিরে । এক ঝড়ো বাতাস এসে সব উড়িয়ে নিয়ে গেল ।
কেন এমন হল, কেন এমন হবে ?
বাতির সুইচ অফ করার শব্দে নিতু লেপের ভিতর থেকে মাথা বের করল । কটা বাজে বোঝা যাচ্ছে না । তবে রাত এক'টার কাছাকাছি হবে, মাহমুদ রোজ রাত এক'টা-দুই'টা পর্যন্ত জেগে থাকে । মাহমুদ বাতি নিভিয়ে খুব আস্তে করে লেপের ভিতরে ঢুকে গেল । নিতুকে ডাকল না, নিতুর গায়ে হাত দিল না । কোন রকম চাওয়া পাওয়ার হিসাব ছাড়াই ঘুমিয়ে পড়ল ।
এমনিতে মাহমুদ খুবই শান্ত স্বভাবের । নরম ভদ্র একজন মানুষ । নিতুর সাথে অধিকার জোড় খাটিয়ে কিছু করার মানুষ সে না ।
বাইরে থেকে যে'ই দেখে মুগ্ধ হয়ে যায় নিতুদের দাম্পত্য জীবন দেখে । সংসারে কোন উচ্চবাক্য নেই । কোন চেচামেচি নেই । কারও কোন অভিযোগ নেই ।
নিতুর প্রায়ই আক্ষেপ হয়, এমন একজন মানুষের সাথে এতদিন থেকেও কেন মানুষটার জন্য তার ভিতরে কোন জায়গা নেই ।
কেন মানুষটার জন্য মোটেও মন কেমন কেমন করে না ?
একজন নীতুর আত্মজীবনী
২।
সিএনজি তে চড়লেই নিতুর দম বন্ধ হয়ে আসে, নিঃশ্বাষ নিতে কস্ট হয় । নিতুর কাছে মনে হয়, সে একটা বন্ধ খাঁচার মধ্যে আটকে আছে । আর তার চারদিকে পৃথিবীটা লাটিমের মত ঘুরছে । ঘুরতে ঘুরতে তার বন্ধ খাঁচার উপড়ে হুরমুর করে ভেঙ্গে পরবে । সে খাঁচার ভেতর থেকে বের হওয়ার প্রাণপন চেস্টা করছে, কিছুতেই পারছে না ।
সারাদিনের আলস্যের জন্যই হয়ত এরকম হয়েছে , ছুটির দিনেই যত অলসতা পেয়ে বসে।
নিতু ছোট একটা চাকরি করে । খুবই আরামদায়ক চাকরি, কোন ঝামেলা নাই ।
যাকে বলে নির্ঝঞ্জাট । আজ নতুন বছরের প্রথম দিন বলে, সে ছুটি পেয়েছে ।
আজ সারাদিনই তাই নিতু বাসায় ।
আগের সময় থাকলে চাকরীর দরকার হত না ।
কিন্তু এখন নিতুর এই চাকরিটার খুবই দরকার ।
তাদের সময় এখন খুবই খারাপ । যাকে বলে, জাচ্ছে-তাই অবস্থা ।
অবস্থা এতটা খারাপ হত না, মাহমুদের চাকরি থাকলে । গত কয়েক মাস মাহমুদের কাজ নেই । কি একটা ব্যাবসা করবে করবে করেও এখনও শুরু করতে পারেনি । অবশ্য এ নিয়ে নিতুর কোন অভিযোগ নেই । কোন রকম বিচলিত হতে দেখা যায় না তাকে ।
অথচ তার খুবই বিচলিত হওয়ার কথা ছিল !
নিতু লেপটা আরেকটু টেনে নিয়ে প্রায় মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে । শীত তেমন নেই , তবুও আয়েশ করে শোয়া আর কি ।
মাহমুদ গলার স্বর নিচু করে বলল- 'কি ঘুমিয়ে পড়ছো নাকি' ?
- 'না, ঘুমবো কেন এমনিতেই শুয়ে পড়লাম' ।
- 'অবশ্য ঘুম আসলে ঘুমিয়ে পড়, তোমার তো আর কিছু করার নাই' ।
নিতু আর কিছু বললো না । মাহমুদের কথায় কোন অনুযোগ নেই । বরং কোথায় যেন আরো তটস্থ !
থাক , সে যা করে করুক ।
ওটা নিয়ে ভাবার সময় নাই । নিতু এখন চোখ বুজে শুধুই পার্থের কথা ভাববে । পার্থের সাথে আজ অনেক কথা হয়েছে । অল্প সময়ই কথা হয়েছে, কিন্তু নিতুর কাছে মনে হয় অনন্তকাল ধরে কথা বলছে । পার্থের সাথে কথা বললেই নিতু শরীরের ভিতর দিয়ে শীতল একটা স্রোত বয়ে যায় । কেন এমন হয় কে জানে ।
পার্থের সাথে নিতুর পরিচয় মাহমুদের সাথে বিয়ে হওয়ারও প্রায় দুই বছর আগে থেকে ।
নিতুর সবকিছুই সাজানো-গোছানো ছিল পার্থের জন্য । কত আনন্দ-বেদনার কাব্য দিয়ে ঘেরা দিনগুলিই না গেছে । বর্তমানের দিনলিপি তো তার হওয়ার কথা ছিল না । তার বর্তমানের দিনলিপি হওয়ার কথা তো ছিল পার্থকে ঘিরে । এক ঝড়ো বাতাস এসে সব উড়িয়ে নিয়ে গেল ।
কেন এমন হল, কেন এমন হবে ?
বাতির সুইচ অফ করার শব্দে নিতু লেপের ভিতর থেকে মাথা বের করল । কটা বাজে বোঝা যাচ্ছে না । তবে রাত এক'টার কাছাকাছি হবে, মাহমুদ রোজ রাত এক'টা-দুই'টা পর্যন্ত জেগে থাকে । মাহমুদ বাতি নিভিয়ে খুব আস্তে করে লেপের ভিতরে ঢুকে গেল । নিতুকে ডাকল না, নিতুর গায়ে হাত দিল না । কোন রকম চাওয়া পাওয়ার হিসাব ছাড়াই ঘুমিয়ে পড়ল ।
এমনিতে মাহমুদ খুবই শান্ত স্বভাবের । নরম ভদ্র একজন মানুষ । নিতুর সাথে অধিকার জোড় খাটিয়ে কিছু করার মানুষ সে না ।
বাইরে থেকে যে'ই দেখে মুগ্ধ হয়ে যায় নিতুদের দাম্পত্য জীবন দেখে । সংসারে কোন উচ্চবাক্য নেই । কোন চেচামেচি নেই । কারও কোন অভিযোগ নেই ।
নিতুর প্রায়ই আক্ষেপ হয়, এমন একজন মানুষের সাথে এতদিন থেকেও কেন মানুষটার জন্য তার ভিতরে কোন জায়গা নেই ।
কেন মানুষটার জন্য মোটেও মন কেমন কেমন করে না ?
একজন নীতুর আত্মজীবনী
২।
সিএনজি তে চড়লেই নিতুর দম বন্ধ হয়ে আসে, নিঃশ্বাষ নিতে কস্ট হয় । নিতুর কাছে মনে হয়, সে একটা বন্ধ খাঁচার মধ্যে আটকে আছে । আর তার চারদিকে পৃথিবীটা লাটিমের মত ঘুরছে । ঘুরতে ঘুরতে তার বন্ধ খাঁচার উপড়ে হুরমুর করে ভেঙ্গে পরবে । সে খাঁচার ভেতর থেকে বের হওয়ার প্রাণপন চেস্টা করছে, কিছুতেই পারছে না ।
এক্ষুনি বুঝি সব শেষ হয়ে যাবে ।
অথচ তেমনটি হওয়ার কোনই কারন নাই । সিএনজি খুবই শান্ত একটি বাহন !
সব মানুষ নিশ্চিন্তে এই বাহনটা চড়ছে, কেবল নিতুই এই সব উদ্ভট চিন্তা করে । তার বেলায় উল্টো ঘটে ।
অবশ্য নিতুর বেশীর ভাগ ব্যাপারগুলো উল্টো ঘটে । হয়ত কোন বাড়িতে কস্টের কোন ব্যাপার ঘটেছে, সবাই কান্নাকাটিতে ব্যাস্ত ।
অথচ তেমনটি হওয়ার কোনই কারন নাই । সিএনজি খুবই শান্ত একটি বাহন !
সব মানুষ নিশ্চিন্তে এই বাহনটা চড়ছে, কেবল নিতুই এই সব উদ্ভট চিন্তা করে । তার বেলায় উল্টো ঘটে ।
অবশ্য নিতুর বেশীর ভাগ ব্যাপারগুলো উল্টো ঘটে । হয়ত কোন বাড়িতে কস্টের কোন ব্যাপার ঘটেছে, সবাই কান্নাকাটিতে ব্যাস্ত ।
সেখানে কোন কারন ছাড়াই নিতুর হাসি পায় । তাকে কোন একটা আড়াল খুজে নিতে হয়, খানিক্ষন হেসে আসার জন্য ।
হেসে এসে তাকে মুখ কালো করে বসে থাকতে হয় পরিবেশ স্বাভাবিক রাখার জন্য ।
তেমনি কোথাও হয়ত আনন্দে হাসাহাসির ধুম পড়ে গেছে । অথচ কেবল সে একাই চুপ থেকে,
শুন্য দৃস্টিতে থাকে এবং একসময় চোখে জল টলমল করে । কেন এরকম হয় কে জানে ।
অবাক ব্যাপার হল আজ তার সেরকম উদ্ভট কোন চিন্তা তার মাথায় এলো না । দম বন্ধ অনুভব হয়নি ।
অবাক ব্যাপার হল আজ তার সেরকম উদ্ভট কোন চিন্তা তার মাথায় এলো না । দম বন্ধ অনুভব হয়নি ।
বরং আজ তার বেশ ফুরফুরেই লাগছে । সে গ্রিলের ফাকা দিয়ে বাহির দেখছ । খুব আগ্রহ নিয়েই দেখছে ।
বেশ একটা শান্তি শান্তি ভাব হচ্ছে ।
অথচ শান্তি অনুভব করার মত তেমন কিছু ঘটেনি । বরং তার রাগে গা জ্বলে যাওয়ার কথা ।
অথচ শান্তি অনুভব করার মত তেমন কিছু ঘটেনি । বরং তার রাগে গা জ্বলে যাওয়ার কথা ।
কিন্তু তার মোটেও রাগ হচ্ছে না ।
কেন রাগ হচ্ছে না ? কে জানে ।
কেন রাগ হচ্ছে না ? কে জানে ।
আজ পার্থের সাথে কথা বলার পর থেকেই নিতুর সব কেমন এলোমেলো লাগছে । কিছু একটা নরবড়ে মনে হচ্ছে ।
সে'ই কিছুটা কি ? নিতু আজকাল লক্ষ করেছে- পার্থের কথা-বার্তার ধরন আর আগের মত নেই । লক্ষহীন কথাই বেশী বলে । নিতু কিছুতেই বুঝতে পারে না, পার্থ মূল প্রসঙ্গ এড়িয়ে যেতে চায় কেন ? উদ্দেশ্যহীন কথা বলেই সময় পার করে দেয় । সময়ের স্থায়িত্তেও ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে । পার্থের কথা-বার্তায় কিছুতেই নিতু নিশ্চিত হতে পারে না যে, সে কোন লক্ষ সামনে রেখে চলছে । অথচ নিতু একটা স্থির লক্ষের দিকেই তাকিয়ে আছে ।
পার্থ কি তার অবস্থান থেকে আস্তে আস্তে সরে যাচ্ছে ? থাক নিতু আপাতত এর থেকে বেশী ভাবতে চায় না ।
এর থেকে বেশী ভাবা নিতুর পক্ষে সম্ভবও নয় ।
সিএনজি চলছে তিব্র গতিতে । পিছনে সুন্দরী মেয়ে বসা থাকলে নাকি রিক্সা বা সিএনজির ড্রাইভার'দের গতি বেড়ে যায়, বলে লোক মুখে সে শুনেছে । আজ কি সেরকম কোন ব্যাপার হয়েছে । অবশ্য নিতু সুন্দরী । শুধু সুন্দরী না বেশ সুন্দরী । একবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার এর এক ছেলে বলেছিল; তার মুখে নাকি প্রচন্ড মায়া আছে ।
তার মুখের দিকে তাকালে নাকি বুকের ভেতর হিম হয়ে যায় !
তার মুকের দিকে তাকালে বুকের ভিতর হিম হয়ে যাওয়ার কি আছে? নিতু আজও তা উদ্ধার করতে পারেনি ।
নিতু মনে মনে চাইছে রাস্তায় বড় একটা জ্যাম বাধুক । কিহবে এত তারাতারি বাসায় গিয়ে । বাসায় করার মত কোন কাজ তার নেই । নিশ্চয়ই মাহমুদ সব করে রেখেছে ।
তার মুকের দিকে তাকালে বুকের ভিতর হিম হয়ে যাওয়ার কি আছে? নিতু আজও তা উদ্ধার করতে পারেনি ।
নিতু মনে মনে চাইছে রাস্তায় বড় একটা জ্যাম বাধুক । কিহবে এত তারাতারি বাসায় গিয়ে । বাসায় করার মত কোন কাজ তার নেই । নিশ্চয়ই মাহমুদ সব করে রেখেছে ।
আজ অফিসে তার খুব মাথে ধরেছিল, মাথা ছিড়ে যায় অবস্থা । নতুন চাকরী, তুবুও কোনভাবে ম্যানেজ করে দুই ঘন্টা আগে যাওয়ার ব্যাবস্থা করেছে । সব গুছিয়ে অফিস থেকে সে বের হবে, তখনই লক্ষ করল তার মাথা ধরা নেই ।
হাল্কা হয়ে গেছে মাথা ।
আবার কি থেকে যাবে অফিসে? নিতু ধীর পায়ে রাস্তার দিকেই পা বাড়াল ।
নিতুরা এই শহরে এসেছে মাত্র তিন মাস হলো। নতুনই বলা যায় । এখনও পথ ঘাট কিছুই তেমন চেনা হয়নি ।
আবার কি থেকে যাবে অফিসে? নিতু ধীর পায়ে রাস্তার দিকেই পা বাড়াল ।
নিতুরা এই শহরে এসেছে মাত্র তিন মাস হলো। নতুনই বলা যায় । এখনও পথ ঘাট কিছুই তেমন চেনা হয়নি ।
শুধু দুটো জায়গা সে পরিস্কার চেনে অফিস' আর বাসার কাছের তিন রাস্তার মোড় । এখন কোথাও ঘুড়তে বের হয়নি । কোনকিছু দেখা হয়নি । অথচ দেখার মত এ শহরে অনেক কিছুই আছে ।
অবশ্য মাহমুদ বেশ কয়েকবার বলেছিল ; 'নিতু চল, আমরা কোথাও থেকে বেড়িয়ে আসি ।
কত কি যে আছে এখানে তুমি দেখে শেষ করতে পারবে না । তোমার ভাল লাগবে' ।
নিতু বলেছে ; 'ইচ্ছে করছে না' ।
মাহমুদ আর কথা বাড়ায়নি । মাহমুদ কোন কিছুতেই বাড়াবাড়ি করে না ।
নিতু বলেছে ; 'ইচ্ছে করছে না' ।
মাহমুদ আর কথা বাড়ায়নি । মাহমুদ কোন কিছুতেই বাড়াবাড়ি করে না ।
নিতুর ইচ্ছার বাইরে কোন কিছুই করতে পারে না ।
'
'
ইচ্ছে করছে না, কথাটা সত্য না । খুবই ইচ্ছে করে । ঘুরে বেড়ানো নিতুর খুবই পছন্দ । একবার কলেজের এক প্রোগ্রামে তিন মাস কাপ্তাই বেড়িয়েছিল পরিবারের কোন আপনজন ছাড়া ।
তবুও সে বলেছে, ইচ্ছে করছে না ।
কেন বলেছে সে জানে না ।
তবুও সে বলেছে, ইচ্ছে করছে না ।
কেন বলেছে সে জানে না ।
চার'টা পয়ত্রিশ বাজে । রাস্তা না চিনলেও নিতু বুঝতে পারছে বাসার কাছাকাছি চলে এসেছে ।
মাহমুদ নিশ্চয়ই তিন রাস্তার মোড়ে দাড়িয়ে আছে তার জন্য । প্রতিদিন নিতুর অফিস থেকে ফেরার সময় মাহমুদ মোড়ে দাড়িয়ে থাকবে । অফিসে যাওয়া, এবং অফিস থেকে বাসার মোড় পর্যন্ত আসা এতখানি পথ নিতু একা সংগ্রাম করতে পারে । অথচ তিন রাস্তার মোড় থেকে নিতুকে একা যেতে হয়নি । মাহমুদ নিয়মিত অপেক্ষা করেছে ।
মাহমুদ নিশ্চয়ই তিন রাস্তার মোড়ে দাড়িয়ে আছে তার জন্য । প্রতিদিন নিতুর অফিস থেকে ফেরার সময় মাহমুদ মোড়ে দাড়িয়ে থাকবে । অফিসে যাওয়া, এবং অফিস থেকে বাসার মোড় পর্যন্ত আসা এতখানি পথ নিতু একা সংগ্রাম করতে পারে । অথচ তিন রাস্তার মোড় থেকে নিতুকে একা যেতে হয়নি । মাহমুদ নিয়মিত অপেক্ষা করেছে ।
ভাবখানা এমন যে, এই পথটুকু যেনো সে আর যেতে পারবে না ।
নিতু কতবার বলেছে 'এই ঠান্ডা বাতাসে তোমার ওখানে দাড়িয়ে অপেক্ষা করার দরকার নাই ।
কি হয় দাড়িয়ে থেকে ? কাল থেকে আর দাড়িয়ে থাকবা না' ।
মাহমুদ প্রতিবারই বলেছে ; 'আচ্ছা' ।
পরের দিন যথারিতী সেই একই অবস্থা ।
আজ মাহমুদ কে কঠিন করে কিছু বলতে হবে ।
একজন নীতুর আত্মজীবনী
৩।
তিন রাস্তার মোড়ে নেমে নিতু বেশ কয়েকবার এদিক-সেদিক তাকালো । আশেপাশে কোথাও হয়ত নিশ্চয়ই মাহমুদ দাড়িয়ে আছে এবং এক্ষুনি এসে নিশ্চুপে পিছনে দাড়িয়ে 'এ্যাই' বলে মৃদু স্বরে একটা ডাক দিবে । অন্য কোন কথা বলবে না । অন্য কোন কথা কি বলা যায় না ।
আশ্চর্য একটা মানুষ, অন্য কিছু না বলে সে শুধু 'এ্যাই' বলে একটা ডাক দেবে । অথচ কত নামেই সে ইচ্ছে করলে ডাকতে পারে । আর কিছু না হোক অন্তত নিতু বলেও ডাকতে পারে, তা না । কিসের এত ভয় মাহমুদের ? কেন সে কোন অধিকার খাটায় না ?
নিতু তাকে তো কখনও নিষেধ করেনি ।
মাহমুদের কোন দেখা পাওয়া গেলো না । অবশ্য মাহমুদের এই অসময়ে না থাকারই কথা, সে তো আর জানেনা যে নিতু আজ এত তারাতারি ফিরবে । এই শেষ বেলায় কি মাহমুদ বাসায় বসে আছে ? না, এখন বাসায় থাকার কথা না । হয়ত কোথাও বের হয়েছে খুবই সস্তার মধ্যে কিছু একটা কিনে নিতুকে চমকে দেওয়ার জন্য । আচ্ছা মাহমুদের কি আজকের বিশেষ দিনটার কথা মনে আছে ?
নিতু বাসার দিকে বেশ খানিকটা পথ পেড়িয়ে এসেছে । ভেবেছে হয়ত এর মধ্যে মাহমুদের দেখা পাবে। আজ তাহলে সত্যিই মাহমুদ আসেনি ।
মাহমুদ প্রতিবারই বলেছে ; 'আচ্ছা' ।
পরের দিন যথারিতী সেই একই অবস্থা ।
আজ মাহমুদ কে কঠিন করে কিছু বলতে হবে ।
একজন নীতুর আত্মজীবনী
৩।
তিন রাস্তার মোড়ে নেমে নিতু বেশ কয়েকবার এদিক-সেদিক তাকালো । আশেপাশে কোথাও হয়ত নিশ্চয়ই মাহমুদ দাড়িয়ে আছে এবং এক্ষুনি এসে নিশ্চুপে পিছনে দাড়িয়ে 'এ্যাই' বলে মৃদু স্বরে একটা ডাক দিবে । অন্য কোন কথা বলবে না । অন্য কোন কথা কি বলা যায় না ।
আশ্চর্য একটা মানুষ, অন্য কিছু না বলে সে শুধু 'এ্যাই' বলে একটা ডাক দেবে । অথচ কত নামেই সে ইচ্ছে করলে ডাকতে পারে । আর কিছু না হোক অন্তত নিতু বলেও ডাকতে পারে, তা না । কিসের এত ভয় মাহমুদের ? কেন সে কোন অধিকার খাটায় না ?
নিতু তাকে তো কখনও নিষেধ করেনি ।
মাহমুদের কোন দেখা পাওয়া গেলো না । অবশ্য মাহমুদের এই অসময়ে না থাকারই কথা, সে তো আর জানেনা যে নিতু আজ এত তারাতারি ফিরবে । এই শেষ বেলায় কি মাহমুদ বাসায় বসে আছে ? না, এখন বাসায় থাকার কথা না । হয়ত কোথাও বের হয়েছে খুবই সস্তার মধ্যে কিছু একটা কিনে নিতুকে চমকে দেওয়ার জন্য । আচ্ছা মাহমুদের কি আজকের বিশেষ দিনটার কথা মনে আছে ?
নিতু বাসার দিকে বেশ খানিকটা পথ পেড়িয়ে এসেছে । ভেবেছে হয়ত এর মধ্যে মাহমুদের দেখা পাবে। আজ তাহলে সত্যিই মাহমুদ আসেনি ।
বাসার দিকে কেন যেন নিতুর যেতে ইচ্ছে করছে না । খালি রাস্তায় কিছুক্ষন হাটলে কেমন হয় ? উদ্দেশ্যহীন এলোমেলো হাটা । যার কোন গন্তব্য থাকবে না । কে জানে হয়ত গন্তব্যহীন চলার মধ্যেই থাকে আসল গন্তব্য !
এটা শুধুই নিতুর নিজের অনূভুতি, অন্য কারও সাথে নাও মিলতে পারে ।
সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে । নিতু মাথায় কাপড় টেনে উল্টো দিকে হাটা আরম্ব করল, নিতু ঠিক করল আজকের বিশেষ দিনে সে এই শহরের রাস্তায় একা একা কিছু সময় হাটবে ।
এটা শুধুই নিতুর নিজের অনূভুতি, অন্য কারও সাথে নাও মিলতে পারে ।
সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে । নিতু মাথায় কাপড় টেনে উল্টো দিকে হাটা আরম্ব করল, নিতু ঠিক করল আজকের বিশেষ দিনে সে এই শহরের রাস্তায় একা একা কিছু সময় হাটবে ।
অন্য এক অভিজ্ঞতায় আজকের জন্মদিন'টা সে স্বরনীয় করে রাখবে । হোক না জীবনে কিছু ব্যাতিক্রম। জীবনের কতকিছুই তো পরিকল্পনা মাফিক হয় না ।
নিতুর এবারের জন্মদিন'টাও না হয় সেরকম হয়েই থাক । তাছাড়া জীবনে সবকিছুই যে সাজানো গোছানো থাকবে, তারই বা কি মানে আছে । কিছু কিছু থাক না এলোমেলো !
খুবই অবাক ব্যাপার হলো, আজ নিতুর জন্মদিন । অথচ পার্থ সেটা নিয়ে একটা কথাও বলেনি ।
নিতুর এবারের জন্মদিন'টাও না হয় সেরকম হয়েই থাক । তাছাড়া জীবনে সবকিছুই যে সাজানো গোছানো থাকবে, তারই বা কি মানে আছে । কিছু কিছু থাক না এলোমেলো !
খুবই অবাক ব্যাপার হলো, আজ নিতুর জন্মদিন । অথচ পার্থ সেটা নিয়ে একটা কথাও বলেনি ।
নিতু আকারে ইঙিতে অনেকবার বুঝিয়েছে, কিন্তু পার্থ সেদিকে একেবারেই যায়নি ।
নিতু কিছুতেই ভেবে পাচ্ছে না কেন এরকম হলো ?
তার জন্মদিনের কথা কি পার্থ জানে না, নাকি ইচ্ছে করেই জন্মদিনের কথা এড়িয়ে গেছে ।
কেন পার্থ তার জন্মদিনের কথা এড়িয়ে যাবে ?
অথচ কত আশা নিয়ে সে আজকে দিনটা শুরু করেছে । সকালে খুব যত্ন করে চোখে কাজল দিয়েছ ।
চোখে কাজল দিলে নাকি নিতুকে ভয়ংকর সুন্দর লাগে ।
অথচ কত আশা নিয়ে সে আজকে দিনটা শুরু করেছে । সকালে খুব যত্ন করে চোখে কাজল দিয়েছ ।
চোখে কাজল দিলে নাকি নিতুকে ভয়ংকর সুন্দর লাগে ।
সুন্দর আবার ভয়ংকর কিভাবে লাগে, নিতুর মাথায় কিছুতেই তা ঢোকে না ।
সাজগোজের ব্যাপারে মাহমুদের আগ্রহের কোন সিমা নাই । কোন কারনে হয়ত নিতুর মেজাজ খুব খারাপ হয়ে আছে, এর মধ্যেই মাহমুদ এসে বলবে-
'এ্যাই চোখে একটু কাজল দেওনা । কাজল দিলে তোমাকে ভয়ংকর সুন্দর লাগে ' ।
নিতু খেই খেই করে উঠে;
'যাও বলছি আমার সামনে থেকে যাও, আমি কি জঙ্গলের পশু আমাকে ভয়ংকর দেখাবে' মাহমুদ তখন মুখ কালো করে বসে থাকে আর কোন কথা বাড়ায় না ।
সাজগোজের ব্যাপারে মাহমুদের আগ্রহের কোন সিমা নাই । কোন কারনে হয়ত নিতুর মেজাজ খুব খারাপ হয়ে আছে, এর মধ্যেই মাহমুদ এসে বলবে-
'এ্যাই চোখে একটু কাজল দেওনা । কাজল দিলে তোমাকে ভয়ংকর সুন্দর লাগে ' ।
নিতু খেই খেই করে উঠে;
'যাও বলছি আমার সামনে থেকে যাও, আমি কি জঙ্গলের পশু আমাকে ভয়ংকর দেখাবে' মাহমুদ তখন মুখ কালো করে বসে থাকে আর কোন কথা বাড়ায় না ।
খুবই অবাক ব্যাপার, খানিক পরেই নিতুর চোখে পানি এসে যাবে । আহা, মানুষটা একটু কাজল'ই তো দিতে বলেছে আর কিছু তো সে বলেনি । চেচামেচি না করে নিতু চোখে একটু কাজল দিলেই পারত ।
অবশ্য, মাহমুদের কথায় নিতু কখনই চোখে কাজল দেয়নি । মাহমুদের কথা ভেবে নিতুর চোখে কাজল দিতে ইচ্ছে করে না, সাজতে ইচ্ছে করে না । কিছুই করতে ইচ্ছে করে না । এতসব না করার পিছনে কোন কারনও থাকে না । কিন্তু নিতুর ইচ্ছে করে না । কেন ইচ্ছে করে না কে জানে ।
অবশ্য, মাহমুদের কথায় নিতু কখনই চোখে কাজল দেয়নি । মাহমুদের কথা ভেবে নিতুর চোখে কাজল দিতে ইচ্ছে করে না, সাজতে ইচ্ছে করে না । কিছুই করতে ইচ্ছে করে না । এতসব না করার পিছনে কোন কারনও থাকে না । কিন্তু নিতুর ইচ্ছে করে না । কেন ইচ্ছে করে না কে জানে ।
শুধু পার্থের কথা ভেবেই আজ নিতু সেজেছে। এটাকে ঠিক সাঁজ বলা যায় না । কিন্তু নিতুর কাছে সাঁজ বলতে এটুকুই ।
ছোট একটা টিপও দিয়েছে। শেষ সময়ে দিবেনা দিবেনা করে কয়েকগাছি কাচেঁড় চূড়ি হাতে দিয়ে অফিসে বের হয়েছে ।
যদিও পার্থ এসবের কিছুই দেখবে না । তবুও পর্থের কথা ভেবে সাজতে তার ভাল লাগে ।
ছোট একটা টিপও দিয়েছে। শেষ সময়ে দিবেনা দিবেনা করে কয়েকগাছি কাচেঁড় চূড়ি হাতে দিয়ে অফিসে বের হয়েছে ।
যদিও পার্থ এসবের কিছুই দেখবে না । তবুও পর্থের কথা ভেবে সাজতে তার ভাল লাগে ।
শুধু ভাল লাগে না, শান্তি শান্তি লাগে ।
পার্থ আজকের দিনে কি কথা বলবে, কি জানতে চাইবে, নিতুর মনে হয়েছে সবই সে জানে । নিতু মনে মনে সব উত্তর রেডি করে রেখেছিল, নিতু নিজে যে বিশেষ কথাটা আজ বলবে, সেটাও গুছিয়ে রেখেছিল ।
যার জন্য প্রস্তুত থাকা হয় তা ঘটে না । তার বেলাও আজ ঘটেনি । জন্মদিন নিয়ে নিতুর মনে মনে করা সব আয়োজন বৃথা গেছে ।
আসলেই কি বৃথা গেছে ?
যার জন্য প্রস্তুত থাকা হয় তা ঘটে না । তার বেলাও আজ ঘটেনি । জন্মদিন নিয়ে নিতুর মনে মনে করা সব আয়োজন বৃথা গেছে ।
আসলেই কি বৃথা গেছে ?
নিতু বাসায় ঢুকেছে রাত ৮টা বেজে ২৫মিনিটে। মাহমুদ বাসায় নাই । কোন সমস্যা হলো নাতো মাহমুদের ?
নিতু লক্ষ করল, তার উদ্দিগ্ন লাগছে বেশ উদ্দিগ্ন লাগছে । মাহমুদ বাসায় নাই, এতে তার উদ্দিগ্ন হওয়ার কিছু নাই , কিন্তু নিতুর একটু খারাপ লাগছে । নিতু কি চেয়েছে যে মাহমুদ আজ তার জন্য বিশেষ কোন অপেক্ষায় থাকুক।
টেবিলের এক কোনায় দুটো গোলাপ ফুল, ন্যাতানো কুচকানো গোলাপ ফুল । পাশে কিছু ঔষধ ।
নিতু লক্ষ করল, তার উদ্দিগ্ন লাগছে বেশ উদ্দিগ্ন লাগছে । মাহমুদ বাসায় নাই, এতে তার উদ্দিগ্ন হওয়ার কিছু নাই , কিন্তু নিতুর একটু খারাপ লাগছে । নিতু কি চেয়েছে যে মাহমুদ আজ তার জন্য বিশেষ কোন অপেক্ষায় থাকুক।
টেবিলের এক কোনায় দুটো গোলাপ ফুল, ন্যাতানো কুচকানো গোলাপ ফুল । পাশে কিছু ঔষধ ।
ঔষধ চিনতে পেরেছে নিতুর ঠান্ডার ঔষধ । কিন্তু ফুল কিসের, কে ই বা এনেছে ?
নিতুর ঠোটের কোন হাসি, আজ সারাদিনে এই প্রথম সে হাসল । আজব একটা মানুষ, মুখে কোন কোন কথা বলবে না কিন্তু ভিতরে ভিতরে নানান কান্ডকারখানা করবে ।
কাউকে চমক দেখাতে তার উৎসাহের কোন কমতি নাই । নিতু ধরেই নিয়েছিল, তার জন্মদিনের খবর মাহমুদের মনে থাকবে না । অবশ্য মাহমুদের মনে থাকুক বা না থাকুক তা নিয়ে নিতুর মাথাব্যাথা ছিল না ।
নিতু ফুলগুলি হাতে নিলো, ন্যাতানো কুচকানো ফুল তবুও তার ভাল লাগছে ।
কাউকে চমক দেখাতে তার উৎসাহের কোন কমতি নাই । নিতু ধরেই নিয়েছিল, তার জন্মদিনের খবর মাহমুদের মনে থাকবে না । অবশ্য মাহমুদের মনে থাকুক বা না থাকুক তা নিয়ে নিতুর মাথাব্যাথা ছিল না ।
নিতু ফুলগুলি হাতে নিলো, ন্যাতানো কুচকানো ফুল তবুও তার ভাল লাগছে ।
মাহমুদ সারাদিন দৌড়ঝাপ করে কোত্থেকে এই ফুল জোগার করেছে কে জানে ।
মানুষটা কি কোনদিনও কাজের হবে না , টাকা খরচ করে কেউ এমন ফুল আনে ।
আগে এমন হতনা, আজকাল পার্থের এড়িয়ে যাওয়া আচড়নের পর থেকে নিতু প্রায়ই ভাবে, মাহমুদের প্রতি সে কি অবিচার করছে ?
মানুষটা কি কোনদিনও কাজের হবে না , টাকা খরচ করে কেউ এমন ফুল আনে ।
আগে এমন হতনা, আজকাল পার্থের এড়িয়ে যাওয়া আচড়নের পর থেকে নিতু প্রায়ই ভাবে, মাহমুদের প্রতি সে কি অবিচার করছে ?
সেদিন নিতু অফিসে যাওয়ার আগে কি কথায় বলেছে, ঠান্ডার সমস্যাটা আবার বেড়েছে । এত দামের ঔষধ খাওয়াও এখন সম্ভব না । কথাটাযে সে মাহমুদকে বলেছে তা না । সে বলার জন্যই বলেছে ।
রাতে মাহমুদ ঔষধ নিয়ে হাজির । নিতু হাতে নিয়ে দেখে সে যেটা খায় সেটা না, সেদিন নিতু বেশ চেচামেচি করেছিল ।
'এটা কি এনেছো,
রাতে মাহমুদ ঔষধ নিয়ে হাজির । নিতু হাতে নিয়ে দেখে সে যেটা খায় সেটা না, সেদিন নিতু বেশ চেচামেচি করেছিল ।
'এটা কি এনেছো,
তুমি জানোনা আমি কোনটা খাই ।
এজীবনে তুমি কি কিছু শিখবে না ।
দোকানদার এলেবেলে একটা কিছু বুঝিয়ে দিলেই আনতে হবে । এক কথা কতবার বলতে হবে তোমাকে' ।
অথচ এত বিরক্ত হওয়ার মত তেমন কিছুই মাহমুদ করেনি । নিতু অনুভব করেছে, মাহমুদ সেদিন বেশ মন খারাপ করেছে । আহা বেচারা !
অথচ এত বিরক্ত হওয়ার মত তেমন কিছুই মাহমুদ করেনি । নিতু অনুভব করেছে, মাহমুদ সেদিন বেশ মন খারাপ করেছে । আহা বেচারা !
নিতু খেয়াল করল আজকেও ভূল ঔষধ এনেছে । আনুক যা ইচ্ছে, নিতু এটাই খাবে । আজ কিছু বলবে না, মাহমুদ নিশ্চয়ই তার জন্য বিষ আনেনি ।
নিতু মনে মনে ঠিক করল, আজ গভীর রাতের কোন একসময় মাহমুদকে ঘুম থেকে ডেকে তুলবে । ধরা গলায় সে মাহমুদকে বলবে ' '
'এ্যাই দেখোতো আমার গায়ে কি একটা পোঁকা ঢুকেছে , একটু বের করে দাওতো'।
মাহমুদ চোখ ডলতে ডলতে হয়ত বলবে,
'কই কিছুই তো দেখছি না' ।
'ভাল করে দেখো, বুদ্ধি-শুদ্ধি কি সব খেয়েছো, জামার উপর দিয়ে কিভাবে দেখবে'?
মাহমুদ নিশ্চয়ই ভ্যাবাচেকা খেয়ে যাবে ।
একজন নীতুর আত্মজীবনী
৪ ।
দেখতে দেখতে প্রায় ছয় মাসে পড়লো, নিতুর চাকরির বয়স । এমন কোন বেশী বয়স না, তবুও নিতুর মনে হয় অনন্তকাল ধরে সে এই অফিসে আছে ।
এই ছয় মাসে অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়েছে, তার নিজের জীবনেও অনেক পরিবর্তন এসেছে ।
সাধারণ কোন পরিবর্তন নয়, বলা যায় ভয়ংকর রকমের পরিবতর্ন ।
নিতু মনে মনে ঠিক করল, আজ গভীর রাতের কোন একসময় মাহমুদকে ঘুম থেকে ডেকে তুলবে । ধরা গলায় সে মাহমুদকে বলবে ' '
'এ্যাই দেখোতো আমার গায়ে কি একটা পোঁকা ঢুকেছে , একটু বের করে দাওতো'।
মাহমুদ চোখ ডলতে ডলতে হয়ত বলবে,
'কই কিছুই তো দেখছি না' ।
'ভাল করে দেখো, বুদ্ধি-শুদ্ধি কি সব খেয়েছো, জামার উপর দিয়ে কিভাবে দেখবে'?
মাহমুদ নিশ্চয়ই ভ্যাবাচেকা খেয়ে যাবে ।
একজন নীতুর আত্মজীবনী
৪ ।
দেখতে দেখতে প্রায় ছয় মাসে পড়লো, নিতুর চাকরির বয়স । এমন কোন বেশী বয়স না, তবুও নিতুর মনে হয় অনন্তকাল ধরে সে এই অফিসে আছে ।
এই ছয় মাসে অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়েছে, তার নিজের জীবনেও অনেক পরিবর্তন এসেছে ।
সাধারণ কোন পরিবর্তন নয়, বলা যায় ভয়ংকর রকমের পরিবতর্ন ।
নিতু অবশ্য ব্যাপারটা স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছে, সেরকম তিব্রতা নিয়ে ভাবে না ।
মানুষ খুব ছোট সাধারণ পরিবতর্নে টালমাটাল হয়ে যায়, কিন্তু বড় পরিবর্তনে কেন যেন সব ঠিক থাকে !
মানুষ খুব ছোট সাধারণ পরিবতর্নে টালমাটাল হয়ে যায়, কিন্তু বড় পরিবর্তনে কেন যেন সব ঠিক থাকে !
অফিসে নিতুর ভাল একটা অবস্থান তৈরী হয়েছে, আগের চেয়ে গ্রহনযোগ্যতাও বেড়েছে কয়েকগুন ।
নিতুকে ছাড়া এখন যেন কোন কাজই হয় না, সবখানেই তার ডাক ।
এই অবস্থান যে নিতু নিজ যোগ্যতায় করেছে বিষয়টা সেরকমও না । তাছাড়া এত অল্প সময়ে তার এই অবস্থান হওয়ার কথাও নয় ।
এতে নিতুর আনন্দিত হওয়ার কথা, কিন্তু কেন যেন তার ভাল লাগেনা । আবার খুব একটা খারাপও লাগেনা ।
নিতু অবশ্য বুঝতে পারে, কেন অফিসে তার এত কদর ?
কেন তাকে নিয়ে এত টানাটানি !
অফিসে নিতুর জনপ্রিয়তা বেড়েছে গত তিনমাস ধরে, তার জীবনের সেই ভয়ংকর পরিবর্তন'টা অফিস জানার পর থেকেই ।
নিশ্চয়ই সহকর্মীদের মধ্যে তার ব্যাপারে আলগা কোন চাওয়া তৈরী হয়েছে !
নিতুকে ছাড়া এখন যেন কোন কাজই হয় না, সবখানেই তার ডাক ।
এই অবস্থান যে নিতু নিজ যোগ্যতায় করেছে বিষয়টা সেরকমও না । তাছাড়া এত অল্প সময়ে তার এই অবস্থান হওয়ার কথাও নয় ।
এতে নিতুর আনন্দিত হওয়ার কথা, কিন্তু কেন যেন তার ভাল লাগেনা । আবার খুব একটা খারাপও লাগেনা ।
নিতু অবশ্য বুঝতে পারে, কেন অফিসে তার এত কদর ?
কেন তাকে নিয়ে এত টানাটানি !
অফিসে নিতুর জনপ্রিয়তা বেড়েছে গত তিনমাস ধরে, তার জীবনের সেই ভয়ংকর পরিবর্তন'টা অফিস জানার পর থেকেই ।
নিশ্চয়ই সহকর্মীদের মধ্যে তার ব্যাপারে আলগা কোন চাওয়া তৈরী হয়েছে !
কিছু একটা কি তারা প্রত্যাশা করতে চায় ?
অবশ্য এটা নিতুর একান্তই নিজস্ব ধারনা । এমনটা নাও হতে পারে, আবার হতেও পারে ।
সত্যিই যদি তেমন কোন পরিস্থিতি কখনও আসে, নিতু তখন কি করবে তা সে জানে না । আর জানলেও লাভ হবে না । কারন ভেবে রাখা কোন কিছু সময়ের কালে কাজে আসে না । তখন কি হবে তখনই দেখা যাবে ।
এলোমেলো পথে হাটলে কিছু তিক্ততা তো সইতেই হবে।হোকনা কিছু এলোমেলো, সবারই যে সব কিছু ঠিক থাকবে তারই বা কি মানে আছে ।
মজার ব্যাপার হলো, অফিসে তার কদর যতটা বেড়েছে অপর দিকে অফিসের প্রতি তার নিজের আগ্রহ ততটাই কমেছে । কোন কাজেই আর প্রথম সময়ের মত আনন্দ খুজে পায় না । নিষঃপ্রাণ লাগে সবকিছু ।
কিছু অজানা অদৃশ্য প্রত্যাশার গন্ধ সে ভালভাবেই টের পাচ্ছে । এমন কৃত্রিমতা তো সে চায়নি, কেন এমন হয়ে গেলো পরিবেশ ?
এতটা কৃত্রিম লাগতো না নিতুর কাছে, যদি পার্থের সাথে যোগাযোগ ঠিক থাকতো ।
নিতু কিছুতেই বুঝতে পারে না, প্রকৃতি কেন তার সাথেই এমন করবে ? কেন তার পরিকল্পনা মতো কিছুই হবে না ।
সত্যিই যদি তেমন কোন পরিস্থিতি কখনও আসে, নিতু তখন কি করবে তা সে জানে না । আর জানলেও লাভ হবে না । কারন ভেবে রাখা কোন কিছু সময়ের কালে কাজে আসে না । তখন কি হবে তখনই দেখা যাবে ।
এলোমেলো পথে হাটলে কিছু তিক্ততা তো সইতেই হবে।হোকনা কিছু এলোমেলো, সবারই যে সব কিছু ঠিক থাকবে তারই বা কি মানে আছে ।
মজার ব্যাপার হলো, অফিসে তার কদর যতটা বেড়েছে অপর দিকে অফিসের প্রতি তার নিজের আগ্রহ ততটাই কমেছে । কোন কাজেই আর প্রথম সময়ের মত আনন্দ খুজে পায় না । নিষঃপ্রাণ লাগে সবকিছু ।
কিছু অজানা অদৃশ্য প্রত্যাশার গন্ধ সে ভালভাবেই টের পাচ্ছে । এমন কৃত্রিমতা তো সে চায়নি, কেন এমন হয়ে গেলো পরিবেশ ?
এতটা কৃত্রিম লাগতো না নিতুর কাছে, যদি পার্থের সাথে যোগাযোগ ঠিক থাকতো ।
নিতু কিছুতেই বুঝতে পারে না, প্রকৃতি কেন তার সাথেই এমন করবে ? কেন তার পরিকল্পনা মতো কিছুই হবে না ।
সে কি এতই ভূল কিছু করেছে ?
মাহমুদের ব্যাপারে যা ঘটে গেছে তাতে তার কি করার ছিলো । সে তো চেয়েছিলোই সব ঠিক-ঠাক থাক ।
পর্থকে হৃদয়ের অতি গোপনে রেখে, বর্তমানের সবকিছুই সে ধরে রাখতে চেয়েছিলো শত কস্ট সত্ত্বেও।
একা একজন মানুষ হয়ে আর কত দিকে সে সামাল দেবে । এতদিনের কাছের একজন মানুষ হয়েও পার্থের চরিত্রটা আজও তার কাছে স্পস্ট হলো না ।
ফেইসবুকে পার্থের উপস্থিতি বন্ধ হয়েছে আগেই । নিতুর সাথে পার্থের চ্যাটিং এখন একেবারেই হয় না ।
পার্থের কোন এক কাজিন নাকি মেসেজগুলি দেখে ফেলেছে সে জন্য । এত ভিতু হয় পুরূষ মানুষ ?
মাহমুদের ব্যাপারে যা ঘটে গেছে তাতে তার কি করার ছিলো । সে তো চেয়েছিলোই সব ঠিক-ঠাক থাক ।
পর্থকে হৃদয়ের অতি গোপনে রেখে, বর্তমানের সবকিছুই সে ধরে রাখতে চেয়েছিলো শত কস্ট সত্ত্বেও।
একা একজন মানুষ হয়ে আর কত দিকে সে সামাল দেবে । এতদিনের কাছের একজন মানুষ হয়েও পার্থের চরিত্রটা আজও তার কাছে স্পস্ট হলো না ।
ফেইসবুকে পার্থের উপস্থিতি বন্ধ হয়েছে আগেই । নিতুর সাথে পার্থের চ্যাটিং এখন একেবারেই হয় না ।
পার্থের কোন এক কাজিন নাকি মেসেজগুলি দেখে ফেলেছে সে জন্য । এত ভিতু হয় পুরূষ মানুষ ?
অবশ্য পার্থের ভিতুর ব্যাপারটা নিতু আগে থেকেই জানতো ।
ফোন নাম্বার নিতুর কাছে আছে । ইচ্ছে করলে সে ফোন দিতে পারে । কিন্তু সে নিজে থেকে এখন আর ফোন দেয়না ইচ্ছে করেই দেয় না । কি হবে ফোন দিয়ে, যে মানুষ তার এই দুর্দিনে আড়ালে আড়ালে সতর্ক হয়ে এড়িয়ে চলে, তাকে ফোন দিয়ে কিইবা ভরসা করা যাবে।
আজকাল নিতুকে বেশ অস্বস্তিতে পেয়ে বসেছে ।
কিছুতেই সে স্থির হতে পারছে না । এত অস্থিরতা যে কোথায় তাও সে ধরতে পারছে না । অথচ সারাক্ষন সারা সময় তাকে অভিনয় করতে হচ্ছে স্বাভাবিক ঝামেলাহীন মানুষের ।
এমনভাবে চলতে হচ্ছে যেন, তার মতো নির্ঝঞ্জাট মানুষ আর নেই । গা হাত-পা ঝাড়া একজন মানুষ নিতু ।
আজকাল নিতুকে বেশ অস্বস্তিতে পেয়ে বসেছে ।
কিছুতেই সে স্থির হতে পারছে না । এত অস্থিরতা যে কোথায় তাও সে ধরতে পারছে না । অথচ সারাক্ষন সারা সময় তাকে অভিনয় করতে হচ্ছে স্বাভাবিক ঝামেলাহীন মানুষের ।
এমনভাবে চলতে হচ্ছে যেন, তার মতো নির্ঝঞ্জাট মানুষ আর নেই । গা হাত-পা ঝাড়া একজন মানুষ নিতু ।
মওদুদ আহমেদ মধু
No comments