প্রেম-বেদনা জীবন-দর্শন অনুভূতি-উপলব্ধি নিয়ে টুকরো ১১টি কাব্য।
জীবন থেকে নেওয়া টুকরো ও বিচ্ছিন্ন কিছু লেখাকে,
একত্রিত করে অনুভূতির কাব্য নিয়ে,
১/
মাঝে মাঝেই খুব গভীর রাতে নিজে নিজেই জেগে উঠি। কেউ নিশ্চয়ই জাগিয়ে দেয়, কিন্তু কে জাগায়?
তা দেখতে পাই না। অদ্ভূত রকমের ভালো লাগে।
যে ভালো লাগার জন্ম এই জগতে না। নিশ্চয়ই অন্য কোথাও অন্য কোনখানে।
কখনও সারা রাতই এক ধরনের ঘোরের মধ্যে কাটাই।
সেখানে, নিয়তী আমার সাথে নানান খুনসুটি করে,
আহ্লাদি করে ।
বেশীরভাগ সময়েই সে কোন শব্দ করে না।
অপলক ভাবে এক দৃস্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে ।
সেই দৃস্টিতে আনন্দ থাকে, অভিমান থাকে,
আর বেশী থাকে মায়া ।
আমি খুবই স্বার্থপরের মত একতরফা ভাবে
সেটা উপভোগ করি ।
নিয়তীকে কখনই আশ্বস্ত করিনা,
তাকে নিশ্চিন্ত করিনা ।
তাহলে যে তার নরম মায়া থেকে বঞ্চিত হয়ে যাবো ।
আমি যে খুবই স্বার্থপর ।
শুধু আমি জানি, আমি ঘুমাই না ।
তার জন্য কিন্তু আমার মোটেও অসহ্য লাগে না ।
বরং বলা যায় ভালই লাগে ।
শুধু ভাল না- একটা শান্তি শান্তি ভাব হয়।
কেন হয় কে জানে ।
এরকম অবস্থায় চুপটি করে বাইরে কোন এক
খোলা জায়গায় গিয়ে দাড়াই ।
কি যে বিষন্ন লাগে চারিদিক, কাউকে তা হাজার বছর ধরে বুঝিয়ে বলেও, বোঝাতে পারব না ।
চারিদিক কত মায়াময়, কত নির্জীব শান্ত ।
বুকের কোথাও যেন শীতল কিছু একটা,
বয়ে যায় নিরবে ।
এই বিশাল সম্রাজ্যের কোথাও খুজে পাচ্ছি না,
অনেক কাল আগে হারিয়ে যাওয়া আমার অজানা 'কিছু' ।
একা একা প্রাণ পনে খুজে বেড়াই,
নিরন্তর খুজে যাই ।
সেই "কিছু"টা যে কি তা যে আজও জানা হয়নি ।
কোনদিন কেউ জানবে না,
আমৃত্যু আমি কি খুজেছি ।
আমি নিজেও কি জানি ????????
৩/
প্রায়ই এমন যন্ত্রনায় পড়ি ।
কি করে কি করব বুঝতে পারি না ।
বিভিন্ন ক্যাটাগরির অনুভূতিগুলি চারপাশে
আবছাভাবে এলোমেলো ঘুরপাক খায় ।
দেখতে পারি, কিন্তু পরিস্কার বুঝতে পারি না ।
হয়ত কোন একটা বিষয়ে কিছু ভাবতে বসেছি নিবীড় ভাবে, অমনি ততক্ষনাৎ অন্য কোন বিষয়
এসে আমার চারপাশে ঘুরঘুর করছে ।
কিছুতেই আর আগের ভাবনায় মন স্থির করতে পারি না । অথচ দেখা যাচ্ছে আগের ভাবনার বিষয়টা খুবই ষ্পর্শকাতর, জীবনের গভীর বোধ ।
মাঝে মাঝে কিছুতেই বুঝতে পারি না -
আমি যা ভাবছি সেটা ঠিক,
নাকি চারপাশের বাস্তবতা ঠিক ?
আমার মন আমার বিবেক সর্বদাই আমার পাশে থেকে আমাকে বলছে- তুমি যা ভাবছ সেটা ঠিক !
কিন্তু তাই বলে চারপাশের বাস্তবতাকে এড়াবো কি করে ? চারপাশের এতসব কর্মজজ্ঞ এত জীবন ব্যাবস্থা সবতো মিথ্যা হতে পাড়ে না ।
আবার, পাশাপাশি দুটো সত্য
একসঙ্গেও চলতে পারে না !
জানি না, কিচ্ছু জানি না ।
কোন কিছু জানতে চাইও না ।
চারপাশের বাস্তবতা যেমন থাকে থাকুক,
তা নিয়ে আমার কোন মাথাব্যাথা নাই--
আমি আমার ভাবনাতেই থাকবো !!
৪/
মেয়েটার চাহনি, হৃদয়ের কোথায় যেন হাতুরী পেটায়
খুব অল্প সময়ের জন্য হলেও।
তার কথা বলা শুনলে, সময় দাড়িয়ে থাকে এক পায়ে, থমকে যায় সাথে অন্য কিছুও ।
তার হাসি, কাঁচের চুড়ির রিনিঝিনি শব্দের মত ঝরে, সমগ্র চেতনার কোথাও একটা হাহাকার তৈরী করে । ক্ষনিকের জন্য হলেও হৃদয়টা হু হু করে উঠে।
কোন এক অজানা প্রাপ্তির জন্য।
প্রায় মানুষকেই কখনও না কখনওএমন অবস্থার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় । আমাকেও যেতে হয় ।
মাঝে মধ্যেই পথে দেখা কোন রমনীকে, নিজের ভিতরে তিল তিল করে গড়ে তোলা মায়াবিনী নিয়তির সাথে মিল খুজে পাওয়া যায় ।
একমুহূর্তের জন্য হলেও অনুভবে তাকে ছুয়ে দেই ।
তাকে নিয়ে ঘুরে আসি সবচেয়ে একান্ত আপন জায়গায় । তাকে নিয়ে বসে থাকি অঝোরধারায় বৃস্টি পরা কোন রাতে টিনের দোচালা ঘরের নিচে,
ফুলকি ফোটা জোছনার রাতে কোন তেপান্তরে খালি মাঠে বিচরণ করি শুধু তাকে নিয়েই ।
এই সমস্ত কান্ডকারকানা গুলো ঘটে কয়েক মুহূর্তের ভিতরে ।
আহা, এমন একটা রমনীর হাতদুটি কেন আমি ধরতে পারবো না ?
কেন, বাকি পথটুকু তার সাথে চলার অধিকার আমাকে দেওয়া হবে না ?
তার, কাঁচের চুড়ির রিনিঝিনি শব্দের মত হাসি সারাজীবনের জন্য শুধুমাত্র আমাকেই শুনতে দেওয়া হলে প্রকৃতির কি তাতে খুব ক্ষতি হয়ে যাবে ?
মেয়ে পটানোর অস্থির থেরাপী ২০২২
৫/
এইসব অদ্ভুদ ভাবনা প্রায়ই আমার হয় ।
খুবই বাজে ভাবনা, যার কোন মানেই হয়না ।
তবুও আমার এমন অনুভূতি হয় ।
কেন হয় কে জানে ।
পথে চলতে গেলে নানান রকম রমনীদের দেখা পাওয়া যায় । এদের দেখার সাথে সাথে তিব্রগতিতে ভিতরে কিছু একটা বেজে উঠে আমার অজান্তেই ।
খুব অল্প সময়ের জন্য এটা হয় । চোখের পাতা উপর নিচ হতে যতক্ষন তার চেয়েও কম হবে ।
কেন এটা হয় ? আমার জানা নাই ।
এইসব রমনীদের সবার ব্যাপারে একই রকম উপলব্ধি হয়না। ভিন্ন ভিন্ন জনের বেলায় উপলব্ধিও ভিন্ন ভিন্ন হয়
কোন রমনী শুধু একপলক তাকানোর মত সুন্দর, এর বেশী নয় । এক পলকের বেশী দেখতে গেলেই তার মধ্যে আর সেই সুন্দর থাকে না ।
কেউ আছে , যার শুধু কাছাকাছি থাকতে ইচ্ছে করে । তাকে দেখবো না, তাকে কিছু বলবো না।
শুধুই তার কাছে কাছে থাকবো ।
কারো মুখের দিকে তাকালে,
ভিতরে কিছু একটা ভেঙ্গেচুড়ে চুরমার হয়ে যায়!
কি ভাঙ্গে কে বলবে ।
কিছু মুখ দেখলে হৃদয়টা হু হু করে উঠে অজানা কোন অপ্রাপ্তির বেদনায় ।
কোন কোন মুখ দেখে কিছু সময়ের জন্য থেমে যেতে ইচ্ছে হয় থেমে যেতে হয় । সমস্ত অন্তরাত্তা জুড়ে সব কিছু নিরব হয়ে যায় ।
কিছু কিছু মুখে লেখা থাকে , আমি জনম জনম কাঁদিব । ইচ্ছে হয় নিশ্চুপে কিছু সময় তার জন্য কাঁদি ।
তার হাত ধরবো না, তার কথা শুনবো না,
শুধু একটু তার জন্যই কাঁদবো ।
কেন কাঁদবো, কে সে ??
আমার কেন যেন মনে হয়, মানুষ হিসেবে এতটুক অনুভূতি হওয়াটা দোষের কিছু নয় ।
এবং তা হতেই পারে । কারন হৃদয়ের উপর নিয়ন্ত্রনের ক্ষমতা প্রকৃতি মানুষকে দেয়নি ।
কেন দেয়নি ? দিলে বড় ভাল হত ।
তবে এর বেশী আর যাওয়া বোধহয় ঠিকনা ।
খুব অল্প কয়েক মুহূর্তের হৃদয়ের আভ্যন্তরীন এই এলোমেলো ঝড়ের মধ্যেও একরকম প্রাপ্তি আছে ! সেটুকু প্রাপ্তি নিয়েই সন্তুস্টি থাকা উচিৎ ।
আমি সন্তুস্টি থাকি ।
কেন এর বেশী যাওয়া যায় না ?
কেন যেতে দেওয়া হয় না ??
৬/
এক জলের যে কত রুপ, এই বাংলায় ।
কত রুপে যে আমাদের চোখে ধরা দেয় ।
তার কি হিসেব আছে ?
সাগরের জলের আছে চিরন্তন এক আবেদন, পর্থিবীতে এমন কোন হৃদয় আছ , যাকে সাগরের জল ছুয়ে যায়নি ?
বাংলার নদী জল, সেতো কত হৃদয়কে হুহু করে কাঁদিয়েছে, কত হৃদয়কে করেছে নিরুদ্দেশ ।
নদীর জলের কাছে গেলে অনেকেই আজও নিজেকে হারীয়ে ফেলে ।
কোন নির্জন দিগন্ত বরাবর, খোলা দীঘির কালো জলে কি এক অজানা রহস্য দাঁনা বেধে থাকে ।
চিরচেনা, অথচ কখনও কখনও অচেনা অলৌকিকের মত অদ্ভূত মনে হয় ।
দীঘীর কাছে গেলে, নিজেকে আর বাস্তব জগতের কেউ মনে হয় না । সঞ্চিত সব বেদনা বুক চিরে বেরিয়ে আসতে চায় ।
বাড়ির পেছনের ছোট্ট শান্ত পুকুরের জলে,
যখন ভরা পূর্ণিমার রাতে জোছনার সাদা আলো
পড়ে চিকচিক করে ।
তখন নিজেকে মোটেই সামলাতে পারি না ।
সন্তর্পনে দরজা খুলে বেরিয়ে এসে চুপটি করে বসে থাকি পুকুরে ঘাটে ।
অন্যরকম এক সুখের খেলা চলে আত্মার অন্তরালে । হৃদয়ের গভীর গহীনের কোন এক জায়গা থেকে উঠে আসে।
করুণ কান্নার আওয়াজ ।
কে কাঁদে ?
জগতের সমস্ত চাওয়া-পাওয়ার উর্ধে এই সুখ ।
সুযোগ পেলেই আমি জলের কাছে যাই,
নিজেকে বিলিয়ে দেই আনমনে ।
আমাকে ভালবেসে কাছে টেনে নেয় জল, জোছনা ।
আমার সমস্ত ব্যাথার কথা,
কস্টের কথা আমি ওদেরকেই বলি,
যা এই নিষ্ঠুর পৃথিবীকে হয়তো কোন দিনও বলা হত না
কি মিশে আছে এসব জলে ?
কেন হৃদয়টা এমন খালি খালি লাগে ??????
৭/
রাতে খুবই আলতো করে সজাগ হয়ে যাই, প্রায় রাতেই হয় এমন । ঠিক সজাগ না, আবার ঘুমও না।
ঘুম ও জাগ্রত'র মধ্যবর্তি একটা অবস্থা ।
সুন্দর একটা ঘোরের আবেশের মধ্যে বিচরন করি ।
ভালই লাগে, মিথ্যা করে হলেও একটুখানি শীতল অনুভুতির জন্ম হয় ।
অনেক সুখের সংসার! হবে আমাদের।
নিয়তি আমার পাশে পাশে থাকবে। বাগানের ফুল ভালবাসবে । বৃষ্টি থাকবে তার অনেক প্রিয়।
মাঝে মাঝে সে বৃষ্টিতে হাত বাড়িয়ে দিবে, আমি তার দিকে তাকিয়ে থাকবো।
সে আমার সাথে ছাদে যাবার বায়না করবে, বৃষ্টির দিনে কেন জানি একটু বেশি ভালবাসবে!!!!!!
আমি যখন অফিস থেকে আসবো, সে ভয় ভয় চোখে বলবে-চলো একটু বাইরে বেড়িয়ে আসি।
নিয়তি আমার উত্তর এর অপেক্ষা করববে না,
সে হালকা-আকাশী রঙ এর শাড়ি পরবে ।
আমি আড়াল রেখে তাকিয়ে থাকবো।
আমি তো বলেই দিবো চল যাই ।
রাস্তার হাল্কা সোডিয়াম আলোতে তাকে আরও বেশি আমার আমার লাগবে।
আমি শুধু তাকিয়ে থাকবো কোন কথা বলবো না।
মাঝে মাঝে নিয়তি আমার হাতে একটু চিমটি কাটবে ।
আমি তার দিকে তাকিয়ে একটু করে হাসবো।
রাতে যখন বিছানায় আসবো, সে ভেজা-ভেজা চুলে এসে বলবে এখনও ঘুমাওনি ?
আমি হেসেই বলবো “আমার তুমি তো এখনও আসোনি”
অফিস এ যাবার সময়- সব সময় টাই বেঁধে দেবে, একটু দেড়ি হলেই মুখ ভাড় করে বসে থাকবে ।
আমি এসে তার রাগ ভাঙ্গাবো ।
আমি যখন তাদের বাড়ি যাবো, তার বাবা-মা তো আমাকে পেয়েই শেষ।
অনেক গল্প করবো তাদের সাথে ।
তার বাবার সাথে বাজারে যাবো, বাজার করবো,
সে রান্না করবে, আমি এসে দুষ্টমি করবো।
তার মা এই সব দেখে লজ্জায় লাল হয়ে যাবে !
চিৎকার করে বলবো ভালবাসি,ভালবাসি,ভালবাসি...। হবে তো নিয়তি আমার… ?
কেন হবে না ?
না হয়ে কি থাকতে পারবে…???”
৮/
প্রকৃতি মানব সম্প্রদায়কে নিয়ে কিছু খেলা খেলে থাকে।
আমারা চাই আর না চাই, খুশি হই আর না হই ।
তাতে তার কিছু যায় আসে না ।
--হাতের কাছে যা কিছু,
তা নিয়ে মানুষের কোন আগ্রহ থাকে না ।
মানুষের যত আকুতি, অনুভূতি, কল্পনা, যল্পনা,
হাহাকার সবই ঐ দুরের জিনিসের প্রতি ।
যা অনেকটা অস্পস্ট ঝাপসা- ধরা ছোয়া কখনও যায়,
তো আবার কখনও যায় না ।
মানুষের সমস্ত দুর্ণিবার আকর্ষন জমা থাকে অসম, অসম্ভব ব্যাপারগুলির জন্য ।
ভাবখানা এমন, কাছের জিনিস তো দেখা হয়েছে,
অথবা আস্তে-ধীরে দেখা যাবে ।
কিন্তু, ঐ যে ঐটা না জানি কি । আহা কি জানি কি ।
ব্যাপার'টা হলো- খুব কাছ থেকে "সুন্দর" কখনও
পরিপূর্ণ ফোটে না ।
সবচেয়ে সুন্দর জিনিসও সুন্দর থাকে না ।
কোন না কোন বিচ্যুতি থাকেই ।
সুন্দর পরিস্কার ফোটে সব সময় দুর থেকে ।
অসুন্দর হলেও, দুর থেকে কখনও কখনও তা অতীব সুন্দর লাগে ।
তাই কাছের প্রিয়'র ভিতরের সুন্দর'টা আর দেখা হয় না।
আর মানুষ তো চিরকালই সুন্দরের ( ভালবাসা, মায়া ) খোঁজ করে এসেছে ।
সুতরাং,
কাছের প্রিয়'টার সৌন্দর্য পরিপূর্ণ দেখতে হলে মাঝে মাঝে তা দুরে পাঠিয়ে তবে দেখতে হয় ।
প্রকৃতি প্রিয় জিনিষের সৌন্দর্য কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়তো রাখেনি !!!
কেন প্রকৃতি সে ব্যাবস্থা রাখেনি ?
কেন প্রকৃতি এমন খেলা খেলে ??
৯/
আমার নিজের ব্যাক্তিগত ধারনা, পৃথিবীর মানুষের মধ্যে - না পাওয়া, যাতনা, কস্ট, বেদনা, হাহাকার, যন্ত্রনা সবই সৃস্টিকর্তা ইচ্ছে করে রেখেছেন । জেনে বুঝে রেখেছেন ।
জীবনকে আরও সুন্দর, আরও উপভোগ্য,
আরও অনুভূতিপ্রবন করার জন্য ।
তিনি তো ইচ্ছে করলে মানুষকে একচ্ছত্র সুখ-
শান্তিতে পূর্ণ করে দিতে পারতেন ।
দুঃখ বলে কোন বিষয় তিনি নাও রাখতে পারতেন ।
সমগ্র দুনিয়ায় নিশ্চয়ই এমন মানুষ নেই,
যে একচ্ছত্র সুখের অধিকারী ।
কেন তিনি বেদনা ব্যাপার'টা রাখলেন ?
আপাত দৃস্টিতে যেটাকে আমরা সুখ সুখ বলে বুঝি,
সেটা আসলে সুখ নয় । সেটা হল জীবনের চাকা ।
সেখানে নিরন্তর ছুটে চলতে হয় চাকার উপড় ভর করে । কাজ-কর্ম দিয়ে আমাদের অন্য বাসস্থান সম্পদ জোগার করতে হয় জাগতিক বাধ্যবাদকতার জন্য ।
এর মধ্যে দিয়েই অন্তরালে ঘটে চলে নানান সব কান্ড, নিজের এবং চারপাশের পাওয়া না পাওয়ার হাজারো গল্প তৈরী হতে থাকে ।
কিন্তু চাকা ঘুরতে থাকারর জন্য সে গল্প অনুভব বা আমলে নেওয়ার ফুসরত আমাদের কখনও থাকে কখনও থাকে না ।
ভ্রমনের গাড়ি যখন কোথাও থামে, তখন যেমন আমারা নেমে যাই, আশেপাশে ঘুরে দেখি । ঐ কিছু সময় কোন পিছুটান না রেখে মুক্ত মনে নিজেকে ছেড়ে দেই ।
সেভাবে জীবনের ভ্রমনে মাঝে মাঝে কোন কোন গভীর রাতে ঘুম ভেঙ্গে যায়, পাওয়া না পাওয়ার সেই গল্পগুলি চোখের সামনে ভেসে উঠে । সবচেয়ে গভীর গল্পটার কথা ভেবে অন্তরের অনেক ভিতর থেকে কান্না উঠে আসে আমরা কাঁদি, আমি কাঁদি । গায়ের সমস্ত লোম দাড়িয়ে সেই কান্নাকে সমর্থন দেয় ।
যে কান্না সৃস্টিকর্তা ছাড়া আর কেউ দেখে না,
আর কেউ না ।
জীবনের আরও একটা রূপ চোখের সামনে ধরা দেয় । আরও কিছু নতুন অনুভূতির জন্ম দেয় ।
জীবনের বাঁকে এই বেদনাবোধ তিনি রখেছেন বলেই,
সেই কান্নার মধ্যেও থাকে অন্য এক ধরনের সুখ।
অন্য এক ধরনের আনন্দ ।
এই বিশেষ বেদনাবোধ না থাকলে কি,
এত বৈচিত্র্যময় হতো জীবন ?
১০/
এসো আমরা নীপবনে যাই, এই নতুনকে বরণ করে।
হাতে-হাত, নয়নে-নয়ন রেখে ভেসে যাই
ভালবাসার দেশে ।
এই অন্তর্মূখি, অলস, অভিমানী ছেলেটা
কি বলল- না বলল , তানিয়ে না ভাবলেও চলবে ।
আমার জগৎ আমার মতো থাকুক না ।
আমি এই ছন্নছাড়া গন্তব্যহীন জীবন'টাই ভালবাসি ।
আমার যতটুকু প্রয়োজন তা আমার সঙ্গেই আছে ।
ফুসফুসে আছে বিশুদ্ধ বাতাস,
হৃদয়ে আছে অফুরন্ত শক্তি ।
আমি সকালে উঠে কখোনই ভাবতে বসিনা,
দিনটা আমার কেমন কাটবে ?
অথবা, কে আমাকে কস্ট দেবে এসব আর কি।
আমার দৃস্টিতে জীবনটা এক অমূল্য সম্পদ ।
যার একটা মূহুর্ত বাজে খরচ কারা বোকামী !
কাল কি হবে, আজ তা ভেবে কি লাভ?
চলার পথে যাই ঘটুক, তাকে হেয় করার কিছু নেই ।
কারন, এর প্রতিটি মূহুর্তই মূল্যবান ।
এটাই আমার পৃথিবী ।
সত্যিকার পৃথিবীটা কেমন তা নিয়ে,
আমার মাথা ব্যাথা নেই ।
মানুষকে যেভাবে দেখতে ভালবাসি,
আমি সেই ভাবেই আঁকি ।
যদিও জানি মানুষ সে রকম নয় ,
আমি নিজেও তেমন নই ।
কিন্তু আমার সে রকম হতে ইচ্ছে করে ।
কাজেই আমি ধরে নিয়েছি অন্যদেরও তাই হতে ইচ্ছে করে ।
সত্যি হচ্ছে, অন্যদের সে ইচ্ছা করবে না।
কেন কেউ বুঝতে চাইছে না,
মাথা খারপ একটা ছেলের থাকুক না কিছু,
উদ্ভট কান্ড-কারখানা।
সত্যিকার পৃথিবীর সাথে সেটাকে,
মেলানো'র কি কোন খুব দরকারআছে ???
১১/
এই হলাম আমি!!
কেমন সেই আমি??
আমি নিজেও অবশ্য খূব একটা জানি না।
প্রায়ই নিজেকে প্রশ্ন করি---
উত্তর যা পাই, তাতে নিজে সন্তুস্ট থাকি।
কিন্তু জগত সন্তুস্ট থাকে না!
আমি অনুভূতিহীন, ভাবলেশহীন, উদ্দেশ্যহীন।
গন্তব্য কোথায় আমার জানা নাই!
পৃথিবীর মানুষের সাথে আমার কিছু পার্থক্য আছে!
জগতের বেশীরভাগ মানুষ যেখানে সমস্ত বিষন্ন্যতাকে চাপা দিয়ে জীবনের প্রাত্যহিক আনন্দে মেতে থাকে।
তুচ্ছ সব বিষয় নিয়ে অপার আনন্দ উপভোগ করে। আমি সেখানে খুবই কৃপণ! কিছুতেই তুচ্ছতাকে তাচ্ছিল্য করে উড়িয়ে দিতে পারি না।
অতি নগন্য সুক্ষ্ম সব বিষয়গুলিকে মাথা থেকে কিছুতেই তারাতে পারি না। মাথার মধ্যে গেথেঁ থাকে।সকলে যা সহজ ভাবে গ্রহন করে, আমি কেনো যেনো মোটেই তা সহজ ভাবে নিতে পারি না। সহজের ভিতর থেকেই আমি বের করি বিশাল জটিলতা।
যেমন ধরা যাক;--
চারিদিক ভাসিয়ে যখন ঝুম বৃস্টি নামে, আমি তখন সমস্ত কোলাহল ছেড়ে কোন এক কোনে নিঃশ্বব্দে বসে অতি সাধারণ! বৃস্টির মধ্যে অসাধারণ কিছু খুজে দেখি। আমার হৃদয়ের কোনো একটা অংশ নিস্তব্ধ হয়ে থাকে।
খালি হয়ে থাকে। আমি সেটা টের পাই, খুব পরিস্কারভাবে টের পাই। কিন্তু অবলিলায় এড়িয়ে যাই। কাউকে বুঝতে দেই না, আমার হিয়ার মাঝে কি ব্যাথা বাজে?
আমি বিষন্নতাগুলি কাউকে দেখতে দিতে চাই না।
আধার ঘনিয়ে নামা বুক হু হু করা সন্ধ্যায় কোন নির্জনে আমি একা দাড়িয়ে থাকি। নিরবে নিভৃতে ভিতরে বাসা বেঁধে যায় আমার অতি পরিচিত বেদনা মাখানো সুখেরা।
দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ ঘাসের চাদর বিছানো কোন মাঠে নিজেকে বিলিয়ে দেই। গভীর রাতের ভরা জোছনায় আমি চঞ্চল হয়ে উঠি, এলোমেলো দ্বিকবিধিক হাটি। নির্জন ছায়াবিথীর কোন বন, কুল কুল রবে বয়ে যাওয়া নদী, ছায়া ঘেরা ঘাট বাধাঁনো কোন দিঘী আমাকে উতলা করে দেয়। আমি এক ধরনের উন্মাদ হয়ে যাই আনন্দে।
এইসব কর্মকান্ডের মধ্যে অতি প্রাকৃত এক ধরনের বোধের জন্ম হয়। যে বোধের অর্থ বেশীরভাগ মানুষই বুঝতে পারে না। আমিও সেই বোধের অর্থ অন্য কাউকে বোঝাতে পারি না। ফলে সাধারণ ভাবেই সবার সাথে আমার একটা অদৃশ্য দুরত্ব তৈরী হয়।
এতকিছুর পরেও আমার ভিতরে কান্নার শব্দ শুনতে পাই, স্পস্ট শুনতে পাই। কে কাদেঁ ?
আমি কর্নপাত করি না।
এখন এসব খেয়াল করার সময় আমার নেই।
আমি অপেক্ষা করি--
কোন এক গভীর রাতে অদ্ভূত জোছনার ধবধবে সাদা আলোর রহস্যময় সময়ে কেউ একজন কোন এক অজানা থেকে আসবে।
কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলবে;
""এই শোণো, তোমার সঞ্চিত সমস্ত কান্না আমি নিতে এসেছি। তোমার লুকিয়ে রাখা সমস্ত বিষন্নতাগুলি আমাকে দিয়ে দাও। অনেককাল তুমি বয়ে বেরিয়েছো। আর তোমাকে আমি কোন চাপা ভার বহন করতে দেবো না"" ।
আমার কেনো যেনো মনে হয় সেই সময় আমার আসবে।
সত্যিই কি আসবে ??????????
সমাপ্তঃ-----
লেখায় ও ধন্যবাদান্তেঃ---
মওদুদ আহমেদ মধু
#_মিঃ_বুদ্ধিমান_গাধা®️
No comments