Ads

একটি করুন ও অসমাপ্ত বিচ্ছেদের কাব্য। #মিঃ_বুদ্ধিমান_গাধা®️

     
একটি করুন ও অসমাপ্ত বিচ্ছেদের কাব্য।  #মিঃ_বুদ্ধিমান_গাধা®️



   
অসমাপ্ত বিচ্ছেদের কাব্য 


রফিক সাহেব বাড়ান্দায় এসেছেন। সবে সন্ধ্যে হয়েছে, এরই মধ্যে অন্ধকেরে ভরে গেছে। 
এত দ্রুত এত অন্ধকার হলো কি করে কে জানে। সন্ধ্যের এই সময়টা রফিক সাহেবের কাছে বেশ পছন্দের। এই সময়ে মানুষের মনে অদ্ভূত একধরনের শিহরণ হয়।
তিনি অফিস থেকে এসে আগে এখানে কিছু সময় নিজের মতো করে কাটান, 
ব্যাপারটা বাসার সকলেরই জানা । 

তিনি একটা চেয়ার টেনে একেবারে কোনার দিকে গিয়ে বসেছেন। পুরো বাসার মধ্যে এই জায়গাটা তার অসম্ভব প্রিয়। তার জীবনের শেষ অংশের সমস্ত আনন্দ-বেদনার স্বাক্ষী হয়ে থাকছে এই বাড়ান্দা। সুযোগ পেলেই তিনি এখানে ছুটে আসেন কোহিনুরের সাথে কথা বলতে। যতবারই সে এখানে এসে বসে, ততবারই কহিনুরের কাছে যানতে চায় তার ভূল কি ছিলো? সে অনেক ভেবেও সেই ভূল বের করতে পারেনি। অথচ, তার গোছানো জীবন ঠিকই এবরোথেবড়ো হয়েছে ।

বাড়ান্দার এখান থেকে সামনে যতদুর দেখা যায় পুরোটাই খালি জায়গা, অর্থাৎ কোন দালান বাড়ি নেই। বিভিন্ন রকমের গাছপালায় ভর্তি, অনেক গাছ সে নিজেও চেনে না। ছোট একটা পুকুর আছে, তার ঘাট আবার বাধাঁনো। মাঝে মাঝে জায়গাটাকে তার স্বপ্নের মতো লাগে। যেনো রফিক সাহেবের কথা চিন্তা করেই এভাবে নকশা করা হয়েছে!
অন্য তিন দিকেই প্রচুর বাড়িঘর দালান আরও নানান জঞ্জাল।
রফিক সাহেবের ব্যাপারটা বেশ রহস্যজনক লাগে। 
ঢাকা শহরে তো এমন হওয়ার কথা না, কেমন করে এটা সম্ভব হলো কে জানে।

চা'য়ের জন্য রেহানাকে বলে এসেছেন, কতক্ষন লাগবে চা আসতে কে জানে। এমনও হতে পারে আজ আর চা আসবেই না। অথচ রফিক সাহেবের এখন খুব চায়ের পিপাসা পেয়েছে। সে খুব খেয়াল করে দেখেছে, তার যখনই চায়ের খুব নেশা হয়, বেছে বেছে তখনই সে চা পায় না। আজও নিশ্চয়ই তার ব্যাতিক্রম হবে না ।

তখনই, রেহানা দু-কাপ চা নিয়ে বাড়ান্দায় এসেছে। স্বামির হাতে এক কাপ দিয়ে নিজে এক কাপ নিলেন। একটা চেয়ার টেনে স্বামির পাশে বসলেন। হালকা বাতাস আসছে, বেশ একটা অন্য রকম পরিবেশ।
রফিক সাহেবের মনটা আরও খারাপ হয়ে গেলো। তার মনের একটা অংশ চেয়েছে. রাহানা না এলেই ভালো হয়। সে কিছু সময় একা থাকতে চায়।
তার মন আজ বিষাদে পরিপূর্ণ। এমনিতে কাউকে কিচ্ছু বুঝতে দেয়না সে। রেহানার দিকে না তাকিয়ে সে চায়ের কাপ নিয়েছে। তার মানে ইঙ্গিতে বলে দেওয়া, রেহানা যেনো এখানে না থাকে।

রেহানা রফিক সাহেবের দ্বিতীয় স্ত্রী। মানুষ হিসেবে ভালো মহিলা, শুধু ভালো না বেশ ভালো।
নিতুকে কখনও খারাপ জেনেছে বলে সে দেখেনি ।
তবুও তার বুকের কোথাও একটা কাটা বেধেঁ আছে। যা শুধু সেই টের পায়, আর কেউ না।

নিতু' রফিক সাহেবের প্রথম স্ত্রীর মেয়ে। যৌবনে প্রথম বাবা অনুভূতি পেয়েছেন নিতুকে দিয়ে। তার বড় কলিজার ধন নিতু। মেয়েটা বড় অভিমানি হয়েছে। কেন এত অভিমানি হয়েছে তা রফিক সাহেব ঠিক জানেনা। হতে পারে মেয়েটা তারই ধারা পেয়েছে। সে নিজেও প্রচন্ড রকম অভিমানী। তার অভিমানের বেশীর ভাগগুলির ই কোন কারন থাকে না। অকারন অভিমান তার যদি থাকে তাহলে তার মেয়ের থাকবে না সেটা কি করে হয় ।

রেহানার সংসারে তার একটি ছেলে, নাম রায়হান। ছেলেটা একটু অবশ্য চঞ্চল তার মধ্যেই কোথায় যেনো শান্ত। মাঝে মাঝে তিনি ছেলেকে চিনতেই পারেন না। রায়াহান কথা বলবে গম্ভীর হয়ে। যেনো রাজ্যের দ্বায়িত্ব মাথায় নিয়ে বসে থাকা কোন পরিনত মানুষ। রফিক সাহেব গোপনে গোপনে প্রায়ই মুগ্ধ হন ছেলে মেয়ে দুটির সার্বিক কর্মকান্ডে। অবশ্য তিনি সেটা বুঝতে দেন না কাউকেই।
তিনি সংসার বড় করেনি, কখনই তার সেরকম ইচ্ছেও ছিলো না। সব সময় তার এমনটাই চাওয়া ছিলো। 

একটা ব্যাপার বেশ আনন্দের সেটা হলো, বিধাতা তার এই স্বপ্নটা পূরণ করেছেন। তবুও কেন যেনো তিনি ঠিক সস্তি অনুভব করেন না। বূকের একটা খচখচ থেকেই যাই। সবচেয়ে বেশী বিচলীত থাকেন তার মেয়ে নিতুকে নিয়ে, নিতুর জীবনের ভিতরে তিনি একটা মোটা দাগ ফেলে দিয়েছেন। যদিও এটা তর্কের ব্যাপার যে, এর জন্য দায়ী তিনি নাকি কোহিনূর। তারপরে নিজের অভ্যন্তরে নিজেকেই তিনি দায়ী করেন মেয়েটার জগতকে এলোমেলো করে দেওয়ার জন্য ।

রফিক সাহেব মোটামুটি নিশ্চিত! কোহিনুর থাকলে আজ এমন হতো না। সবকিছুই অন্যরকম হতো।
সাজানো গোছানো। ঘর দোর সাজানো গোছানো নয়, হৃদয়ের ভীতরটা সাজানো গোছানো।
তিনি এটা ভেবে বেশী বিচলীত হন, যে তার বড় ধরনের কোন ত্রুটি না থাকা সত্তেও কোহিনূর চলে গিয়েছিলো। তার নিজের চোখে তেমন কারন ধরা পড়েনি, কিন্তু কোহিনুর চলে যাওয়ার ব্যাপারে অনড় ছিলো। তার মানে হচ্ছে, তার অবশ্যই গুরুতর কোন অপরাধ ছিলো। তাহলে তিনি নিজে সেটা ধরতে পারলেন না কেনো ??


তিনি অবশ্য সব ঘটনা ভূলে যেতে চেয়েছেন, তবুও যতবারই তিনি মেয়েটার মুখের দিকে তাকান বা মেয়ের কথা ভাবেন ততবার তার সেই দৃশ্যটাই চোখে ভাসেঃ-
এক রাতে তিনি ঢাকা থেকে বাড়িতে এলেন। নিজের বাড়িতে নয় সরাসরি কোহিনুরে বাড়িতে। আগের রাতেই প্রচন্ড রকমের কথা কাটাকাটি হয়েছে কোহিনুরের সাথে। কথা কাটাকাটি থেকে এক পর্যায়ে সেটা ক্রোধে পরিনত হয়েছে। এটা ঠিক সেদিন তিনি অনেকটাই দুর্ব্যাবহার করেছেন। 
তার পরিস্কার মনে আছে সেদিন তিনি প্রচন্ড আগ্রাসি হয়ে গিয়েছিলেন । সেদিনের মতো এতটা ভয়ঙ্গকর আচরণ আগে কেউ দেখেনি, তিনি নিজেও দেখেননি। নিজেই বেশ অবাক হয়েছিলেন তিনি।
সেই রাতে কোহিনুরকে বেশ নিস্তেজ লেগেছে।।



 মওদুদ আহমেদ মধু 
#_মিঃ_বুদ্ধিমান_গাধা®





No comments

Powered by Blogger.