Ads

জীবন থেকে নেওয়া বাস্তব- আত্ম গল্পঃ-------------- #মিঃ_বুদ্ধিমান_গাধা®️

জীবন থেকে নেওয়া বাস্তব- আত্ম গল্পঃ-------------- #মিঃ_বুদ্ধিমান_গাধা®️



জীবন থেকে নেওয়া বাস্তব- আত্ম গল্পঃ------ #মিঃ_বুদ্ধিমান_গাধা®️


বাস্তব- আত্ম গল্পঃ--------------

নৌকা চলছে ধীর গতীতে, শীতের শেষ বিকেল, চারিদিকে নিরাবতা ।
মিহি শব্দে দু-একটা ট্রলার যাচ্ছে দুর থেকে । আমি একেবারে নৌকার সামনে বসে আছি, 
অন্য সবাই ছাউনির ভিতরে ।
গ্রামে এটাকে বলে ছাইয়া নৌকা, 
ছাউনি আছে- 
তাই এই নাম ।
নদীর পানি শান্ত কোমল, শুধু এগিয়ে চলার জন্য সামনের দিকটায় পানির আঘাতে ছলাত ছলাত শব্দ হচ্ছে ।
আমি তাকিয়ে আছি সেই দিকটায় , অন্যরকম এক অনুভূতি দোলা লাগছে প্রাণে , যেন আদর করে কেউ ডাকছে- আয় আয় আয় ।

বেড়াতে গ্রামে যাচ্ছি, নানা বাড়ি । 
বাস থেকে নেমে নদীর পথ ।
লম্বা পথ প্রায় আধা ঘন্টা লাগে। বাড়িতে যাওয়ার এই সময়টুকুই আমার সব থেকে প্রিয় । বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দে মন-হৃদয় আচ্ছন্ন থাকে, পাশাপাশি তীব্র একটা বেদনাও অনুভূত হয় । কেন হয় কে জানে ।

দূরে নদীর পাড়ে আমার প্রিয়তমা নানী দাড়িয়ে আছে ,
নদীর কাছাকাছি নানার বাড়ি ।
পরিস্কার দেখতে পাচ্ছিনা তবে বুঝতে পারছি নানী আমার আনন্দে অস্থির হয়ে আছে ।
এই নানী আমার জীবনের পরমতম এক ধন , আমার আত্মা ।
জীবনের সবটুকু আনন্দের অনুভূতি এই নানীর কাছেই পেয়েছি।
মা-বাবা ছিল নামে মাত্র, গভীর হৃদয়ের স্নেহ মমতার আস্বাদ পেয়েছি আমার নানীর কাছে,
 (আজ অবদি )  ।

নৌকা ঘাটে ভেরা মাত্র নানী প্রায় উড়ে এসে আমাকে কোলে নিলেন।
'ও ম্যাবাই তুমি কেমন আছো' ।
নানি আদর করে ম্যাবাই ( মিয়া ভাই ) ডাকে ।
আমার একটু অস্বস্তি লাগছে, কেমন একটা শব্দ 'ম্যাবাই' । আমি এখন বড় হয়েছি না, এই শব্দটা বাদ দিলে কি ক্ষতি ।
আশেপাশের বাড়ি থেকে প্রচুর লোকজন এসেছে আমাদের দেখতে ।
অন্য কে কি করছে, নানীর সেদিকে কোন খেয়াল নেই । তিনি আমাকে নিয়ে বাড়ির দিকে হাটা দিলেন

অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করলাম, আমার পরম ভালবাসার নানীর বুকে এসেও কেন যেন ঠিক স্বস্তি পাচ্ছি না , কি যেন নেই নেই মনে হচ্ছে।
আমার চোখ এদিক সেদিক কিছু একটা খুজছে , কোথায় সে ?

শুরুটা হয়েছে আগের বছর ।
এরকমই এক পৌষ মাসে নানা বাড়ি গেছি । যেতে রাত হয়েছিল ।
কাকতালীয় ভাবে সেদিন ছিল পূর্ণীমা , আকাশে ধবধবে সাদা আলো,
গ্রামের পথ - গা কেমন ছম ছম করছিল । কি মনে করে ঘরে না ঢুকে
সবাই বাড়ির উঠোনে দাড়িয়ে পড়লো । আমিও দাড়িয়ে আছি ।
কি যে অদ্ভুত লাগছে চারিদিক। সব অন্যরকম হয়ে গেলো ।

পরীর মত একটা মেয়ে পাশে এসে বলল কেমন আছেন ভাইয়া ?
আমি তাকিয়ে আছি, আশ্চর্য রকমের সুন্দর একটা মেয়ে ।
এতক্ষন খেয়াল করিনি । চাঁদের মায়াময় আলো ওর মুখে লেগেই কি এমন মায়াবী লাগছে, চেনা লাগছে তবুও চিনতে পারছি না । বললাম কে তুমি ?
পাশ থেকে ছোট খালা বলল, ও নিয়তি, চিনতে পারিসনি ?
ছোট খালা মুচকি মুচকি হাসছে । ছোট খালা আমার দু বছরের বড় ।
আমরা একসাথে অনেক মজা করি , বন্ধুর মত ।
কিন্তু, হাসার কি হলো । একটা মানুষকে চিনতে পারছি না- এতে হাসির কি আছে ? ।
বললাম কোথায় থাকে ও ?
কোথায় আবার থাকবে, ওদের বাসায় থাকে।
চার-পাঁচ বছর পর গ্রামে আসিস । চিনবি কি করে ?
আগেরবার যখন এলি তখন ও ওর মামার বাড়ি ছিল
আবার খালার হাসি ।
আমি চুপ করে রইলাম । পরিবেশ পাল্টে যাচ্ছে, দ্রুতই পাল্টাচ্ছে ।
মেয়েটা মাত্রাতিরিক্ত সুন্দর, জোছনার সাদা আলো ওর মুখ পড়ে
অন্য রকম একটা মাত্রা দিয়েছে, যা শুধুই অনুভব করা যায় প্রকাশ করা যায় না । নাকি আমার দৃস্টিভ্রম !

মেয়েদের এত সুন্দর হওয়া ঠিক না । তাতে কিছু পুরুষের হৃদয়ে ক্ষতের সৃস্টি হয়।
অথচ, সেই ক্ষতের কারন সুন্দরী মেয়েটা কোনদিন জানতেও পারে না ।
উল্টো মেয়েটাকে সারা জীবন পার করতে হয় অনুভূতিহীন, রসহীন কোন মানুষের সাথে !

সবাই একে একে ঘরের ভিতরে যাচ্ছে , আমাকেও ডাকলো ।
কিন্তু আমার এখন ঘরে যেতে ইচ্ছা করছে না। কি আছে ঘরে ?
ছোটা খালা এবার নীচু গলায় বলল, চল ভিতরে চল
আমি, শান্ত অথচ তীব্র গলায় বললাম আমি ভিতরে যাব না ।
ছোট খালা কটমট করে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে চলে গেল ।
কি ভাবলো কে জানে । ভাবুক যা ইচ্ছা ।
আমি এখান থেকে কোথাও যাব না ।
পৃথীবি রসাতলে গেলেও আমি এখান থেকে যাচ্ছি না
মনে মনে শুধু প্রার্থনা করছিঃ খোদা, তুমি আমার সমস্ত কিছুর বিনিময়ে এই মেয়েটাকে এখানে দাড় করিয়ে রাখো । আমি আর কিছু চাই না ।
নিয়তি এখনো দাড়িয়ে আছে । জোছনার আলো আরও গাঢ় হচ্ছে ।
পৃথিবীটাকে সম্পূর্ণ অন্যরকম লাগছে । ঘরের চালের উপড়ে গাছের ডালপালার উকিঝুকি, কাছে কোথাও কিছু একটা ডাকছে ।
বাকি সময়টা নিয়তির সাথে তেমন কোন কথা হয়নি

অথচ, কত কথাই হতে পারতো । কে জানে, কথা না বলে হয়ত বলা হয়েছে অনেক গভীর কথা ।
শুধু মনে হয়েছে এই মেয়েটা আমার পাশাপাশি থাকলে, জগতের কোন অশুভ আমাকে ষ্পর্শ করতে পারবে না ।



 মওদুদ আহমেদ মধু 
#_মিঃ_বুদ্ধিমান_গাধা®


No comments

Powered by Blogger.