Ads

সচেতন ও অবচেতন মন কি? এটা কিভাবে কাজ করে‌??

 মানুষের মন আসলে কিভাবে কাজ করে !

আল্লাহ তায়ালার প্রত্যেকটা সৃষ্টির দিকে তাঁকিয়ে সব সময় আমার মন হাজার হাজার প্রশ্ন জুড়ে দেয়। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে আশ্চর্য সৃষ্টি আমার কাছে মনে হয় তা হল "মানুষের মন"। যার কোন সংজ্ঞায় কেউ কোন সঠিক ভাবে এখনো সংজ্ঞায়িত করতে পেরেছে বলে আমার মনে হয় না। যিনি যতটুকু জ্ঞানের অধিকারী তিনি ততটুকুই ব্যাখ্যা করতে পেরেছেন, এবং অবশ্যই তিনি এই বিশ্ব ব্রক্ষান্ডের সৃষ্টিকর্তার তুলনায় একটা অনু পরিমান জ্ঞান ও আহরণ করতে পারেন নি, তাই তার পক্ষে কতটুকুই বা ব্যাখ্যা করা সম্ভব।

  • যাই হোক আমার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জ্ঞানে নানা ধরণের পড়াশুনা করার চেষ্টা করে যতটুকু আমি আবার বিশ্বে নন্দিত জ্ঞানীদের কাছে থেকে পেয়েছি তাই একটু লিপিবদ্ধ করে রাখার চেষ্টা করছি মাত্র।

  • আমি যখন মন খারাপ করে থাকি তখন আমার সারা শরীরে, কাজে কর্মে, আচার ব্যবহারে সকল কিছুতে প্রভাব ফেলতে থাকে এবং আমার আশে পাশের সকল মানুষ গুলো কিন্তু অনায়াসে স্থির করে ফেলতে পারে আমাদের মনের অবস্থান। আমাদের দুগ্ধপোষ্য শিশু ও আপনার মনের অবস্থান পড়তে পারে এবং একটু খেয়াল করলে দেখবেন আমাদের গৃহপালিত পশু পাখির উপরে ও এর প্রভাব পড়তে থাকে। একটা কুকুর, বিড়ালের সাথে ও আপনি রাগান্বিত অবস্থায় আই-কন্টাক্ট করে দেখবেন, এবং তাকে আদরের চোঁখে তাকিয়ে দেখবেন, ঐ অবলা জীব টা পর্যন্ত আপনার মনের অবস্থা পড়ে ফেলবে।
  • আবার ঠিক আপনার সবচেয়ে কাছের বন্ধু কিভাবে আপনাকে ছুরিকাঘাত করে ফেলছে তা কিন্তু আপনি তার সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা থেকেও ঠাওর করতে পারবেন না। কিভাবে আপনার প্রিয়তম স্বামী আপনার সাথে প্রতারণা করেই যাচ্ছে একই ছাদের নিচে বসবাস করে ও আপনি বুঝতেই পারবেন না।
  • আবার আপনার অসুস্থতার খবর আপনার মা ২০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করে ও কেন যেন ঠিকই টের পেয়ে যাবেই। তার মন আনচান করতে শুরু করে দিবে আপনার কিছু হলে। আমাদের সকলের মন ধুকপুক করতে থাকলেই আমরা কিন্তু বিচলিত হয়ে পড়ি কোথায় থেকে যে কোন বিপদের খবর আসছে।
  • উপরোক্ত তিনটি ঘটনাই তিন ধরণের পরিস্থিতিতে তিন ভাবে আপনাকে বিচলিত করে এবং দেখুন কি রকম গোলমেলে প্রত্যেকটা ঘটনা। একবার আপনি টের পাচ্ছেন আর একবার আপনি টেরই পাচ্ছেন না। আমরা তাই হয়ত বলি পাগল মন !
  • পবিত্র কোরআনে মানুষের নাফস বা অন্তরিন্দ্রিয়কে কয়েক ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে রয়েছে পশুপ্রবৃত্তি। এটি মানুষকে ইন্দ্রিয়পরায়ণতা ও কাম-লালসায় উদ্বুদ্ধ করে। কোরআনের পরিভাষায় একে ‘নাফসে আম্মারা’ বলা হয়েছে। এর পরবর্তী পর্যায়ে রয়েছে ‘নাফসে লাওয়ামাহ’। অর্থাৎ যে মনোবৃত্তির কারণে মানুষের মনে অপরাধের জন্য অনুশোচনা জাগ্রত হয় এবং এর ফলে তাওবার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়। আর তৃতীয় পর্যায় হলো ‘নাফসে মুতমায়িন্নাহ’। এটি হচ্ছে সর্বোচ্চ পর্যায়। এই স্তরে কেবল নবী-রাসুল ও অলি-আউলিয়ারা পৌঁছতে পারেন। এই স্তরে উপনীত হওয়ার পর মানুষ অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতিতেও আল্লাহর রহমতের ব্যাপারে নিরাশ হয় না।

স্মরণ রাখতে হবে, দুটি বিপরীত বস্তু—দেহ ও মনের সমন্বয়ে মানুষের সৃষ্টি। দেহ মাটির তৈরি। আর রুহ ও আত্মা আল্লাহর হুকুম বা নূরের তৈরি। মাটি নিম্নগামী। আর রুহ ঊর্ধ্বগামী। মাটির বৈশিষ্ট্য যখন মানুষের মধ্যে প্রবল হয়, তখন সে মনুষ্যত্বটুকুও হারিয়ে ফেলে। বরং চতুষ্পদ জন্তুর চেয়েও নিকৃষ্ট হয়ে যায়। অন্যদিকে আত্মার শক্তি যখন তার মধ্যে প্রবল হয়, তখন সে ‘মারেফতে এলাহি’ (স্রষ্টার সন্ধান) অর্জনে সক্ষম হয়। এমনকি উত্কর্ষে সে ফেরেশতাকুলকেও ছাড়িয়ে যায়। সুফি সাধকরা বলে থাকেন, চারটি পদ্ধতি অবলম্বন করে মানব মনকে পরিশোধন করা যায়, আত্মশুদ্ধি লাভ করা যায়।

  • এক - কম ঘুমানো।
  • দুই - কম আহার করা।
  • তিন - কথা কম বলা।
  • চার - মানুষের সঙ্গে কম মেলামেশা করা।

  • মানুষের মন নিয়ে কাজ করা মনোবিদদের মতে, স্বপ্নের প্রকৃতি নির্ভর করে বয়স, স্বাস্থ্য, পেশা ও সামাজিক মর্যাদার উপরে। স্বপ্ন সবার আসতে পারে। স্বপ্নকে ভাল ভাবে জানতে গেলে, তাই যে মানুষটি স্বপ্ন দেখছেন তাঁকে ভাল ভাবে জানতে হবে। তবে স্বপ্ন নিয়ে কাজ কিন্তু একে বারেই হাল আমলের নয়। প্রাচীন গ্রিসে, মিশরে স্বপ্নের রহস্যময়তা নিয়ে ভাবনাচিন্তার হদিস মেলে। যেমন, অ্যারিস্টটল, না কি বিশ্বাস করতেন স্বপ্ন হল দৈহিক শর্তের বিচ্যুতি। আবার, সেই সময়ে কোথাও কোথাও বিশ্বাস করা হত, শুধু অসুস্থ মানুষই স্বপ্ন দেখে। তবে সেই সব কাজের সঙ্গে অবশ্য স্বপ্ন নিয়ে আধুনিক কাজের কোনও মিল নেই।
  • স্বপ্ন নিয়ে কথা শুরু হলেই বলতে হবে সিগমন্ড ফ্রয়েডের কথা। স্বপ্ন নিয়ে তিনি দীর্ঘ গবেষণা করেছেন। ফ্রয়েডের মতে, স্বপ্ন হল ‘মানসিক ক্রিয়া, প্রতিক্রিয়ার ফসল’। ফ্রয়েড মানব-মনকে সচেতন, অর্ধচেতন এবং অবচেতন— এই তিন ভাগে ভাগ করেছিলেন। তাঁর মতে, ঘুম হল জীবনের অপরিহার্য প্রক্রিয়া বা মানসিক অবস্থা। এই অবস্থায় মানুষের অবচেতন মন, আগে ভাবনাচিন্তা করা বিষয়গুলি বা পুরনো ঘটে যাওয়া ঘটনাক্রম দেখে থাকে। কেমন হয় সেই দেখা? অনেকটা সিনেমার পর্দায় ফেলা আলোকিত ছবির মতো। এবং মানুষ তখন এই প্রক্রিয়াটিকে আসল বলে মনে করেন।

  • ফ্রয়েডের তত্ত্ব অনুসারে, মানুষ যখন গভীর ঘুমে থাকে, তখন সে স্বপ্ন দেখে না। গভীর ঘুম ও হালকা ঘুমের মাঝের সময়ই মানুষের স্বপ্ন দেখার সময়। ঘুমের মধ্যে এই সময়কে ‘রেইম স্লিপ’ নাম দেওয়া হয়েছে। এই ‘রেইম স্লিপ’-ই হল স্বপ্ন দেখার প্রকৃত সময়। এই সময়ে চোখের ভিতরে অক্ষিগোলকের দ্রুত সঞ্চালন হয়। একে ‘র্যাপিড আই মুভমেন্ট’ বলে। ঘুম গভীর হওয়ার আগে পর্যন্ত মানুষ স্বপ্ন দেখে যেতে পারে। আবার গাঢ় ঘুম, পাতলা হয়ে এলে মানুষ স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। ঘুম যখন গভীর হয়ে আসে, তখন অক্ষিগোলকের সঞ্চালন ক্রমেই স্থির হয়ে আসে। একে ‘সেইম’ বা স্বপ্নহীন স্তর বলে।
  • ফ্রয়েড মনে করতেন, ‘স্বপ্ন হল ঘুমের অভিভাবক’।কিন্তু মানুষ স্বপ্নে যা দেখে তাকে কী ভাবে ব্যাখ্যা করা যায়? এ ক্ষেত্রে ফ্রয়েডের তত্ত্বকে যৌন প্রতীক নির্ভর তত্ত্ব বলে। ফ্রয়েডের সঙ্গে ছ’বছর কাজ করেছিলেন সুইস মনোবিদ কার্ল গুস্তাভ জুং। স্বপ্ন নিয়ে প্রায় আশি হাজার মানুষের উপরে গবেষণা চালিয়েছিলেন তিনি। তাঁদের মতে, দৈনন্দিন জীবনে দেখা পুরুষ ও স্ত্রী লিঙ্গের প্রতীকগুলি স্বপ্নের মাধ্যমে অবচেতন মনে ঘুরে ফিরে আসে। ফ্রয়েডের মতে এর কারণ, বিপরীত লিঙ্গের প্রতি তীব্র আকর্ষণ।
  • ফ্রয়েড দাবি করেছিলেন, প্রত্যেক মানুষের স্বপ্ন কম-বেশি তাঁর ‘লিবিডো’-র দ্বারা প্রভাবিত। স্বপ্নে দেখা প্রতিটি প্রতীক মানুষের কাছে বয়ে নিয়ে আসে নির্দিষ্ট তাৎপর্য। বিভিন্ন চাহিদা, ইচ্ছে যা নানা সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় কারণে বাধা পেয়েছিল তারা স্বপ্নে ফিরে আসে। পরে গবেষণায় দেখা গিয়েছে, শিশুদের শ্রেণিকক্ষে ভয় দেখানো, বড়দের মানসিক দুশ্চিন্তা, প্রেমে সন্দেহ, পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাস, কঠিন ও জটিল দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা, ব্যর্থ কামনার প্রতি প্রবল আকর্ষণ— ইত্যাদি মানুষের ঘুমের রেইম স্তরে স্বপ্নের মাধ্যমে বার বার ফিরে আসে।
  • অনেক সময়ে সদ্য শেষ হওয়া কোনও কাজের অনুষঙ্গেও স্বপ্নে আসতে পারে। ফ্রয়েডের তত্ত্বে রয়েছে, অনেক সময়ে আমরা ঘুমের মধ্যে হাত-পা ছুড়ি। কিন্তু ঘুম ভাঙলে স্বাভাবিক হয়ে যাই। ঘুমের সময়ে মস্তিষ্ক এবং শরীর বিশ্রামে থাকে। শরীর বিশ্রামে থাকলেও, যদি মস্তিষ্ক সক্রিয় হয়ে ওঠে তবে এই সব ঘটতে পারে। প্রত্যেক মানুষই কমবেশি স্বপ্ন দেখেন। তবে শিশুরা বেশি স্বপ্ন দেখে, কারণ তারা বেশি ঘুমোয়।

মানুষের মন আসলে কিভাবে কাজ করে !

  • মনকে ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না। আজ পর্যন্ত কোনো বিজ্ঞানী মনকে ধরতে বা ছুঁতে পারেননি। কোন ল্যাবরেটরিতে টেস্ট টিউবে ভরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে পারেননি। তবে মনের কার্যপ্রণালী সম্পর্কে আদি যুগের সাধকরা যেমন সচেতন ছিলেন তেমনি বর্তমান যুগের বিজ্ঞানীরাও সচেতন। হাজার বছরের পর্যবেক্ষণ-পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাঁরা একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন, তাহলো মন মানুষের সকল শক্তির উৎস।
  • মনের এই শক্তি-রহস্যকে যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে পারলেই এই শক্তিকে আমরা পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারব। এক সময় বিজ্ঞান মনে করত মানুষ হচ্ছে বস্তুর সমষ্টি, যা কোন না কোনভাবে চিন্তা করতে শিখেছে। আর এখন বিজ্ঞান মনে করে মানুষ চেতনা বা তথ্যের সমষ্টি যাকে কেন্দ্র করে দেহ গঠিত হয়েছে। মানুষ সম্পর্কে বিজ্ঞানের ধারণা পরিবর্তনের মূলে রয়েছে জেনেটিক গবেষণায় অভাবনীয় অগ্রগতি।
  • দৃষ্টিভঙ্গি, লক্ষ্য বা প্রোগ্রাম দ্বারাই মন নিয়ন্ত্রিত আর মস্তিষ্ক পরিচালিত হয়। মস্তিষ্কের কাজের ফলাফলও নিরূপিত হয় এই দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রোগ্রাম দ্বারা। দৃষ্টিভঙ্গি বা প্রোগ্রাম দু’ধরনের। এক. আত্মবিনাশী বা নেতিবাচক। দুই. আত্মবিকাশী বা ইতিবাচক। আত্মবিনাশী প্রোগ্রাম ধীরে ধীরে একজন মানুষকে অবক্ষয় ও ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। আর আত্মবিকাশী প্রোগ্রাম মেধা ও প্রতিভাকে বিকশিত করে। জীবনে আনে প্রশান্তি প্রাচুর্য ও সাফল্য।
  • অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, আমাদের অধিকাংশের চিন্তা-জগতের শতকরা ৭০-৮০ ভাগই দখল করে রাখে রাগ, ক্ষোভ, ঘৃণা, দুঃখ, অনুতাপ, অনুশোচনা, কুচিন্তা, দুশ্চিন্তা, বিষণ্নতা, হতাশা ও নেতিবাচক চিন্তারূপী আত্মবিনাশী প্রোগ্রাম। এই আত্মবিনাশী প্রোগ্রাম অধিকাংশ মানুষের জীবনকেই ধীরে ধীরে করুণ পরিণতির দিকে নিয়ে যায়।
  • আমরা যদি এই প্রক্রিয়াকে উল্টে দিতে পারি অর্থাৎ ৭০-৮০ ভাগ চিন্তাকেই আত্মবিকাশী ইতিবাচক চিন্তায় পরিণত করতে পারি, তাহলেই আমরা মনের শক্তিকে ফলপ্রসূভাবে কাজে লাগাতে পারব। ইতিবাচক চিন্তাকে একবার ৭০ ভাগে উন্নীত করতে পারলে নেতিবাচক চিন্তা ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে এগিয়ে যাবে। এরপরও যদি কিছু অবশিষ্ট থাকে তবে তার প্রভাব এতই হ্রাস পাবে যে, তা ইতিবাচক চিন্তার প্রাধান্যের কারণে আপনার জন্যে ক্ষতিকর কিছু করতে পারবে না।

  • আত্মবিনাশী চিন্তার বিনাশ সাধন প্রথমে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। এমন কি নেতিবাচক ও ইতিবাচক চিন্তার অনুপাত ৫০:৫০ করাও মনে হতে পারে দুঃসাধ্য। কারণ আমরা নেতিবাচক চিন্তায় এমন অভ্যস্ত হয়ে গেছি যে, এটা আমাদের চরিত্রের অঙ্গে পরিণত হয়েছে। তবুও একটু সচেতন প্রচেষ্টা চালালে ধাপে ধাপে আপনি এই নেতিবাচক চিন্তাকে নির্মূল করতে পারবেন। একবার এ প্রক্রিয়া শুরু করলে আপনার কাছে তা এত সুন্দর ও মজার মনে হবে যে আপনি তাকে যুক্তিসঙ্গত পরিণতির দিকে নিয়ে যাবেন।
  • মন ও মস্তিষ্কের বিচিত্র সম্পর্ক আর এ দুয়ের পারস্পরিক প্রভাব নিয়ে বিশ্বজুড়ে পরিচালিত হয়েছে অসংখ্য গবেষণা। এ গবেষণায় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের প্রফেসর ও ম্যাসাচুসেট্স জেনারেল হাসপাতালের মাইন্ড বডি ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা ডা. হার্বাট বেনসন। এ বিষয়ে তার রয়েছে ১৭৫ টি গবেষণা-প্রতিবেদন এবং ১১টি বই। যার মধ্যে দু’টি উল্লেখযোগ্য বই হচ্ছে ‘ট্রেইন ইয়োর ব্রেন চেঞ্জ ইয়োর মাইন্ড’ ও ‘দি মাইন্ড বডি ইফেক্ট’।
  • মন যেহেতু মস্তিষ্ক ও মাস্তিষ্কের কাজকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে, নিরাময় ও সুস্থতার জন্যে এই মন নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব তাই অনেক বেশি। সাধারণভাবে আমরা অধিকাংশ মানুষই মনকে আমাদের কথা শোনতে পারি না, মনের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারি না, সেক্ষেত্রে অবস্থাটি দাঁড়ায় ‘মনের আমি’, আর একজন সত্যিকারের জ্ঞানী, তিনিই শুধু বলতে পারেন- ‘আমার মন’।
  • মন ও দেহ আসলে মানুষের জন্মসূত্রেই অবিচ্ছেদ্য আর পরস্পরিক সম্পর্কযুক্ত। একে চাইলেও আলাদা করা যায় না। দেহ ও মন পরস্পর স্নায়ুগুচ্ছ ও বার্তাবাহক রাসায়নিক অণু (নিউরোট্রান্সমিটার) দ্বারা সারাক্ষণ সংযোগ রেখে চলছে। বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত আমাদের দেহে প্রায় ৬০ ধরনের বার্তাবাহক রাসায়নিক অণু আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছেন। মন ও দেহের মধ্যে যোগসূত্র হিসেবে কাজ করে ব্রেনের হাইপোথ্যালামাস। এই হাইপোথ্যালামাস বার্তাবাহক রাসায়নিক অণু নিঃসরণের মাধ্যমে দৈহিক অবস্থাকে প্রভাবিত করে। যেমন, কোনো কারণে আপনি মনে ভীষণ কষ্ট পেলেন। আপনজন কষ্ট দিয়েছে। আপনি কিছুতেই ভুলতে পারছেন না। কষ্ট ধীরে ধীরে বেড়েই চলছে।

  • আপনি কষ্ট পেলেন, এটি মনের বিষয়। এই কষ্টের তথ্য অবচেতন মনের মাধ্যমে আপনার ব্রেনের হাইপোথ্যালামাসে পৌঁছে গেল। তখন কী ঘটে? হাইপোথ্যালামাস থেকে কষ্টের বার্তাবাহক রাসায়নিত অনু নিঃসৃত হয় এবং তা আপনার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গে এবং হৃদযন্ত্রে। তেমনিভাবে রাগ ক্ষোভ দুঃখ হতাশা বিষন্নতার মতো নেতিবাচক আবেগের প্রতিক্রিয়াতেও একই ধরনের বার্তাবাহক রাসায়নিক অণু শরীরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত করে হৃৎপিণ্ডকেও। যার অন্যতম পরিণতি করোনরি হৃদরোগ। মুক্ত মনের বিশ্বাস হচ্ছে সকল সাফল্য, সকল অর্জনের ভিত্তিত। বিশ্বাসই রোগ নিরাময় করে, মেধাকে বিকশিত করে, যোগ্যতাকে কাজে লাগায়, দক্ষতা সৃষ্টি করে। ব্যর্থতাকে সাফল্যে আর অশান্তিকে প্রশান্তিতে রূপান্তরিত করে।
  • নিয়ত হচ্ছে মনের বাগান। নিয়ত মনকে নিয়ন্ত্রণ করে, দেহকে সঠিক পথে পরিচালিত করে, দেহ-মনে নতুন বাস্তবতার জন্ম দেয়। দেহ হচ্ছে আত্মার বহিরাবরণ। দেহের সীমাবদ্ধতা আছে; মনের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। মন হচ্ছে বিশুদ্ধ শক্তি। মনোগত দৃষ্টিভঙ্গির উপরই এর প্রকাশিত রূপ নির্ভর করে। প্রশান্ত মন নিরাময় প্রক্রিয়াকে বেগবান করে। মনের সুখ দেহের অসুখকে সবসময় ভাসিয়ে নিয়ে যায়। প্রতিটি মানুষ বড় হতে পারে তার জীবনের মনছবি বা স্বপ্নের সমান।

দ্য ইন্টারপ্রিটেশন অব ড্রিমস।

  • ১৮৯৯ সাল। ভিয়েনায় প্রকাশিত হলো একটি বই, দ্য ইন্টারপ্রিটেশন অব ড্রিমস। মানুষের মন আসলে কিভাবে কাজ করে, সেটা বোঝার ক্ষেত্রে এক বিপ্লব ঘটিয়ে দিল এই বই। সাইকো-অ্যানালিসিস বা মনোসমীক্ষণের জনক সিগমন্ড ফ্রয়েড বইটির লেখক।
  • ১৯৩৮ সালে এক সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন ফ্রয়েড। সেখানে তিনি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছিলেন তার এই তত্ত্বের বিস্তারিত। ততদিনে সিগমন্ড ফ্রয়েড মনোসমীক্ষণের জনক হিসেবে বিখ্যাত হয়ে গেছেন।
  • কিন্তু নিজের বইতে যখন প্রথম তিনি এই ধারণা প্রকাশ করেন, সেটি কিন্তু সেরকম সাড়া ফেলতে পারেনি। তিনি বলেছিলেন, "আমি কাজ শুরু করি একজন নিউরোলজিষ্ট হিসেবে। যারা নানা রকম স্নায়ুরোগে ভুগছে, তাদের চিকিৎসা করতাম আমি। মানুষের অবচেতন মন এবং সহজাত প্রবৃত্তি সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আমি জানতে পারি। আমার জানা এসব নতুন তথ্য থেকে বিজ্ঞানের এক নতুন শাখা তৈরি হলো। এর নাম দেয়া হলো সাইকোএনালিসিস। মনোবিজ্ঞানের এক নতুন শাখা।"
  • সাইকো-এনালিসিস নিয়ে সিগমন্ড ফ্রয়েড তাঁর কাজ শুরু করেন ১৮৯০ সালে। মানবদেহের ক্ষেত্রে চিকিৎসাবিজ্ঞান যে কাজটা করেছে, মানুষের মনোজগত বুঝতে অনেকটা সেরকম একটা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি তিনি গড়ে তুলতে চাইছিলেন। এ বিষয়ে তাঁর প্রথম প্রকাশিত গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনার নাম ছিল, ট্রাম ড্রইটাং, বা দ্য ইন্টারপ্রিটেশন অব ড্রিমস। অর্থাৎ মানুষ ঘুমের মধ্যে যে স্বপ্ন দেখে, তার ব্যাখ্যা। ১৮৯৯ সালের ৪ঠা নভেম্বর ভিয়েনায় বইটি প্রকাশিত হলো।
  • লন্ডনের গোল্ডস্মিথ কলেজের সাহিত্যের অধ্যাপক এবং মনোবিশ্লেষক যশ কোহেনের মতে, ইন্টারপ্রিটেশন অব ড্রিমস' বইটি সাইকোএনালিসিস বা মনোসমীক্ষণের ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে এখনো।
  • "একজন মনোবিশ্লেষক হিসেবে এটাই ফ্রয়েডের লেখা প্রথম বই। সাইকোএনালিসিসের তত্ত্ব এবং এর ব্যবহারিক প্রয়োগের প্রাথমিক ধারণা তিনি এই বইতে তুলে ধরেছেন। তিনি এই বইতে বলছেন, স্বপ্ন হচ্ছে মানুষের অবচেতন মনের গভীরে যাওয়ার বড় রাস্তা। অবচেতন মনে কি ঘটছে, তার প্রতিফলন হচ্ছে স্বপ্ন।"
  • "সিগমন্ড ফ্রয়েড খুব দীর্ঘ এবং নিদারুণ যন্ত্রণাময় একটা সময় পার করে এসেছেন তখন। কিভাবে মানুষের 'কনশাসনেস' বা 'চেতনা' কাজ করে, তার একটা নতুন তত্ত্ব দাঁড় করানোর চেষ্টা করছিলেন তিনি। আমাদের মনোজগতে নিত্যদিন যেসব ঘটে, যেমন ঘুমের মধ্যে আমরা যে স্বপ্ন দেখি, সেগুলো বিশ্লেষণ করছিলেন তিনি। তার মতে, স্বপ্নের মাধ্যমে আমাদের অবচেতন মনই আসলে কথা বলছে আমাদের সঙ্গে। ফ্রয়েডের ধারণা, আমাদের স্বাভাবিক জীবনে যেসব আকাঙ্খা, তাড়না, অনুভূতি, চিন্তা আমরা প্রকাশ করতে পারি না, ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্নের মাধ্যমে সেসব প্রকাশ পায়।"
  • তাঁর এই তত্ত্ব প্রমাণের লক্ষ্যে ফ্রয়েড মানুষের স্বপ্ন বিশ্লেষণ করা শুরু করলেন। কিন্তু তার রোগীদের কাছ থেকে যেসব স্বপ্নের বর্ণনা তিনি শুনতেন, সেসব তো ছিল মনোবৈকল্যে ভোগা মানুষের স্বপ্ন। কাজেই এসবকে তো আর গবেষণার উদাহারণ হিসেবে বিবেচনা করা যায় না। তখন তিনি তার বন্ধুদের শরণাপন্ন হলেন। কিন্তু তার বন্ধুরা নিজেদের স্বপ্নের বিশদ বর্ণনা দিতে রাজী হলো না। শেষ পর্যন্ত ফ্রয়েডকে নিজের স্বপ্ন বিশ্লেষণের ওপরই নির্ভর করতে হলো।
  • এরকম একটি স্বপ্নের বর্ণনা তিনি তাঁর সাক্ষাৎকারে দিয়েছিলেন। "আমার গায়ে ঠিকমত কাপড়চোপড় নেই। নীচতলার ফ্ল্যাট থেকে সিঁড়ি বেয়ে আমি উপরের ফ্ল্যাটে যাচ্ছিলাম। উপরে উঠার সময় আমি একেকবারে তিনটে করে সিঁড়ির ধাপ টপকাচ্ছিলাম। এত দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে উঠতে পেরে আমি খুবই খুশি। হঠাৎ খেয়াল করলাম, একটা কাজের মেয়ে সিঁড়ি ভেঙ্গে নীচে নামছে, অর্থাৎ আমার দিকে। আমি খুব লজ্জা পেলাম, এবং তাড়াতাড়ি চলে যাওয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু এরপরই আমার মনে হলো আমি যেন থমকে গেছি, আমি যে আঠার মতো আটকে আছি সিঁড়ির সঙ্গে, সেখান থেকে নড়ার শক্তি আমার নেই।"
  • যশ কোহেন বলছেন, "গল্পে বা বাস্তব জীবনে যখন আমরা স্বপ্নের বর্ণনা দেই, তখন কিন্তু আমরা তার মধ্যে এক ধরণের কৃত্রিম ধারাবাহিকতা তৈরির চেষ্টা করি। কিন্তু ফ্রয়েডের একটা বড় অর্জন হচ্ছে, যেভাবে তিনি এই স্বপ্নকে অবিকল বর্ণনা করেছেন। এটার মধ্যে যে কোন ধারাবাহিকতা নেই, স্বপ্ন যে অসংলগ্ন, এর মধ্যে যে অনেক অপ্রত্যাশিত ব্যাপার আছে, সেগুলো তিনি সততার সঙ্গে তুলে ধরেছেন।"
  • ইন্টারপ্রিটেশন অব ড্রিমস প্রকাশের পর বইটি মোটেই বিক্রি হচ্ছিল না। প্রথম ছয়শো কপি বিক্রি হতে সময় লেগেছিল নয় বছর। ফ্রয়েড যেভাবে বইতে তার স্বপ্নে দেখা যৌনতা এবং সংঘাতকে অবচেতন মনের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখিয়েছেন, সেটা অনেক পাঠক মানতে পারেননি। সিগমন্ড ফ্রয়েড নিজেও সেটা স্বীকার করেছেন। "মানুষ আমার এসব তথ্য বিশ্বাস করছিল না এবং আমার দেয়া তত্ত্ব তাদের কাছে খুবই অরুচিকর মনে হচ্ছিল। সবাই অব্যাহতভাবে এর তীব্র বিরোধিতা করছিল।"
  • ইভা রোজেনফেল্ড ছিলেন ফ্রয়েডের মেয়ে অ্যানার বন্ধু। পরে তিনি ফ্রয়েডের রোগীও ছিলেন। ১৯৬৯ সালে এভান রোজেনফেল্ড বিবিসিকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, "আমার স্বামী যখন প্রথম আমাকে 'ইন্টারপ্রিটেশন অব ড্রিমস' বইটা পড়তে দিলেন, আমি বইটা পড়তে পড়তে একটা জায়গায় এলাম, যেখানে খুব যৌন উত্তেজক একটা স্বপ্নের বর্ণনা আছে। আমি বইটা ছুঁড়ে ফেলে দিলাম সোফার নীচে। আমি বললাম, আমি কখনোই এই বইটা পড়বো না।"
  • সিগমন্ড ফ্রয়েডকে কাছ থেকে ঘনিষ্ঠভাবে দেখার বিরল সুযোগ যারা পেয়েছিলেন, ইভা রোজেনফেল্ড ছিলেন তাদের একজন। কেমন লোক ছিলেন ফ্রয়েড? "ফ্রয়েড ছিলেন খুব সহজ এবং বিনয়ী একজন মানুষ। কিন্তু যখন তার কাজের প্রসঙ্গ আসতো, তখন কিন্তু আর তিনি বিনয়ী থাকতেন না। তার সঙ্গে সাধারণ কথাবার্তার কোন সুযোগ ছিল না। কেউ সাহস করতো না। অন্তত আমি কখনো সেই সাহস করিনি।"
  • সুইস মনোবিজ্ঞানী কার্ল ইয়াং ছিলেন ইন্টারপ্রিটেশন অব ড্রিমসের আরেক পাঠক। তিনি পরবর্তীকালে ফ্রয়েডের ভাবশিষ্যে পরিণত হন। ১৯৫৯ সালে বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, "১৯০০ সালে আমি ইন্টারপ্রিটেশন অব ড্রিমসের কিছু অংশ পড়েছিলাম। কিন্তু সেটা খুবই অল্প। তারপর ১৯০৭ সালে আমি ভিয়েনায় যাওয়ার পর তার সঙ্গে সামনাসামনি সাক্ষাৎ হয়। আমি দিন পনেরো ভিয়েনায় ছিলাম। তখন তার সঙ্গে এ বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। আমাদের এই আলোচনা বন্ধুত্বে গড়ায়। আমি তাকে পছন্দ করতাম। তবে তিনি জটিল প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। আমি খুব শীঘ্রই বুঝতে পারলাম যে তিনি যদি কোন চিন্তায় উপনীত হতেন, সেটাই ছিল চূড়ান্ত, এ নিয়ে আর কোন তর্ক চলতো না।"
  • ইন্টারপ্রিটেনশন অব ড্রিমস বইতে ফ্রয়েড যে তত্ত্বের সূচনা করলেন, তার ওপরই ভিত্তি করেই গড়ে উঠলো আধুনিক সাইকো-এনালিসিস বা মনোসমীক্ষণ। তাঁর এই তত্ত্বকে ঘিরে বিরাট আগ্রহ তৈরি হলো বিংশ শতাব্দীতে। এটি মানুষের মনোজগত অধ্যায়নের জন্য এটি হয়ে উঠলো মূলধারার এক শাস্ত্র। "হঠাৎ করে ফ্রয়েডের সাইকো-এনালিসিস চলে এলো সব কিছুতে। সব বই, পত্রিকায়, সিনেমায়, সবকিছুতেই সাইকো-এনালিসিস। বিখ্যাত শিল্পীদের মতো ফ্রয়েড যেন হয়ে উঠলেন আধুনিক মানুষের গুরু।

মন কি এবং কিভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে অনেক রকম তত্ত্ব প্রচলিত আছে।

  • তবে মানুষের মনের প্রবৃত্তির কোনো কিছুই শরীর থেকে আলাদা নয়। বরং মানুষের মস্তিষ্ক থেকে উদ্ভূত শারীরবৃত্তিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মন গড়ে উঠে। এখান থেকেই মনে ভালো থাকা, মন্দ লাগার সূত্রপাত। সে হিসেব বলা যায়, মন একটি মূর্ত আধ্যাত্মিক ঐক্যের সম্বন্ধ। যা চিন্তা, অনুভুতি ও ইচ্ছা প্রভৃতি মানসিক প্রক্রিয়া বৈ অন্য কিছু নয়।
  • ইসলামি শরিয়তে মনের শুদ্ধতা ওস্বচ্ছতার বেশ গুরুত্ব রয়েছে। আধ্যাত্মিকতার চর্চা যারা করেন কিংবা সুফিবাদের অনুসারী তারা মনের নানা সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। তবে, অভিজ্ঞ আলেমরা সর্বোতভাবে মনের ১০টি রোগ চিহ্নিত করে তা থেকে বেচেঁ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন মুসলিম উম্মাহকে। তাদের মতে, মনে রোগ তো অনেকগুলোই আছে। কিন্তু মৌলিক রোগ ১০টি। সেগুলো হলো- লোভ, দীর্ঘ আশা, রাগ, মিথ্যা বলা, গিবত, কার্পণ্য, হিংসা, হিংসা, অহঙ্কার ও কীনা
  • এক. লোভ- দুনিয়ার লোভ।
  • দুই. দীর্ঘ আশা। আরবিতে বলা হয় আমাল। একটি বাড়ির মালিক হয়েছে, চলবে না, আরেকটি বাড়ির মালিক হতে হবে। এভাবে আশাকে দীর্ঘ করা। এটা মনের রোগ বিশেষ।
  • তিন. রাগ। সীমাহীন গোস্বা। এতো রাগী যে, রাগলে হিতাহিত জ্ঞান শূ্ণ্য হয়ে যায়। সে মানুষ না জানোয়ার, বোঝা যায় না। এক সাহাবি হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, আল্লাহর রাসূল! আমাকে কিছু উপদেশ দিন। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, রাগ করবে না। সে আবারও বলল, আল্লাহর রাসূল! আমাকে আরেকটি নসিহত করুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবারও বললেন, রাগ পরিত্যাগ করো। সাহাবি তৃতীয়বার অনুরোধ করার পরও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই জবাব দিলেন। তো যতবারই সাহাবি নসিহতের কথা বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই কথা বলেছেন- রাগ ছাড়, রাগ ছাড়।
  • চার. মিথ্যা বলা। মিথ্যা তো এখন অভ্যাস হয়ে গেছে আমাদের। আমরা কথায় কথায় মিথ্যা বলি। মিথ্যার আশ্রয় নিই। মিথ্যাকে বলা হয় গোনাহের জননী। ইচ্ছাকৃত মিথ্যা ও হাসি-ঠাট্টাচ্ছলে মিথ্যা একই।
  • পাচঁ. গিবত। এটা তো এখন খুব স্বাভাবিক বিষয়। পবিত্র কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা গিবত প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘তোমরা কী মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে?’ গিবত হলো মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার মতো। গিবতকে স্বাভাবিক আলাপচারিতা মনে না করা। কোনো অবস্থাতেই কেউ যেন আমার সামনে গিবত করতে না পারে- প্রত্যেক মুসলমানের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা দরকার। কেউ কারো সামনে গিবত করলে তাকে বলা, আমি নিয়ত করেছি, গিবত করব না। দোয়া করবেন, আমি যেন গিবত না করি, কারও গিবত না শুনি।
  • ছয়. কার্পণ্য, কৃপণতা। হাদিস বলা হয়েছে, কৃপণ জান্নাতে যেতে পারবে না। বড় বড় দান-খয়রাত করার দরকার নেই। ছোট ছোট দান-খয়রাত করা যেতে পারে। তবে যেন রিয়া (অহঙ্কার) না আসে।
  • সাত. হিংসা। হিংসা বলে, কারও মাঝে কোনো গুণ দেখে এ কামনা করা যে, এটা নষ্ট হয়ে যাক। তবে, কারো কোনো গুণ দেখে এমন আশা করা, তার মধ্যে যে গুণ আছে থাকুক, তবে আল্লাহ আমাকেও তা দান করো। এটা হিংসা নয়, এটাকে বলা হয় ঈর্ষা। ঈর্ষা জায়েজ, হিংসা হারাম। হাদিস শরিফে আছে, হিংসুক জান্নাতে যাবে না।
  • আট. রিয়া। অর্থ লোক দেখানো। মানুষে দেখুক। মানুষের সামনে নামাজ পড়ার সময় যদি নিয়ত করি যে, মানুষে দেখুক তাহলে এটা হবে রিয়া। এর প্রতিকার হলো, যে কাজে রিয়া আসে তা মানুষের সামনে বেশি বেশি করা তাহলে দেখা যাবে, কাজটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। আর অভ্যাস হয়ে গেলে তখন আর রিয়া থাকবে না। কাজটা থাকবে, কিন্তু রিয়া থাকবে না।
  • নয়. অহঙ্কার। নিজেকে বড় মনে করা। এর প্রতিকার হলো, নিজেকে সব সময় ছোট মনে করা। অহঙ্কার একমাত্র আল্লাহতায়ালার জন্য নির্ধারিত। কোনো বান্দার জন্য এটা শোভন নয়।
  • দশ. কীনা। কীনা হিংসার কাছাকাছি একটি বিষয়। কিনা হলো, মনে মনে জ্বলতে থাকা। কারো উন্নতি-সমৃদ্ধি দেখে এমনটা ভাবা যে, এ গুণটা তাকে কেন দেওয়া হলো? সে কেন এ জিনিসের মালিক হলো?
  • বর্ণিত রোগগুলোকে আলেমগণ রুহানি বা আধ্যাত্মিক রোগ বলে অভিহিত করেছেন। এখন বিবেচনা আপনাদের হাতে , আপনাদের এই সকল কিছু পড়াশুনা করে ভাল মন্দের বাছ বিচার করেই তো চলতে হবে তাই নয় কি ?

লেখাঃ—

Habibur Rahman

Smart Factory 4.0 Consultant for Textile Apparel Industries.

https://bd.linkedin.com/in/habibur-rahman-15b21b125?trk=article-ssr-frontend-pulse_publisher-author-card

No comments

Powered by Blogger.