Ads

বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক জায়গা কোনটি, যেখানে পর্যটন নিষিদ্ধ? @মিঃ মধু

বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক জায়গা কোনটি, যেখানে পর্যটন নিষিদ্ধ?  @মিঃ_বুদ্ধিমান_গাধা®

বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক জায়গা কোনটি, যেখানে পর্যটন নিষিদ্ধ?

বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত উত্তর সেন্টিনেল দ্বীপে কেউ ভ্রমণ করতে গেলে জীবন নিয়ে ফিরে আসার সম্ভাবনা প্রায় নাই। স্নেক আইল্যান্ডের মতো অন্যান্য বিপজ্জনক দ্বীপের চেয়েও এ দ্বীপ পর্যটনের জন্য অনেক বেশি বিপজ্জনক। এখানে পৃথিবীর সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন আদিবাসী গোষ্ঠীর বসবাস যারা বহির্বিশ্ব থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। পৃথিবীতে আজও অনেক বিচ্ছিন্ন আদিবাসী গোষ্ঠী আছে যাদের কোনো না কোনোভাবে বহির্বিশ্বের মানুষের সাথে যোগাযোগ ঘটে। কিন্তু এখানকার সেন্টিনেলিজ আদিবাসীরা এতটাই হিংস্র আক্রমণাত্মক স্বভাবের যে তারা বাইরের কোনো মানুষকে তাদের দ্বীপের ত্রিসীমানায় ঘেঁষতে দেয় না। 
বহিরাগতদের জন্য এদের একটাই নীতি—হত্যা।


উত্তর সেন্টিনেল দ্বীপ ভারতের আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের একটি জঙ্গলময় আদিম দ্বীপ। 
পোর্ট ব্লেয়ার থেকে ৫০ কিলোমিটার পশ্চিমের এ দ্বীপে আনুমানিক ৫০ থেকে ৪০০ আদিবাসী মানুষের বসবাস। ১৯৫৬ সালের আদিবাসী সুরক্ষা আইন অনুযায়ী দ্বীপটি সুরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে। প্রায় ৬০ বর্গকিলোমিটারের বর্গাকার দ্বীপটিকে ভারতীয় নৌবাহিনী সুরক্ষা দিয়ে থাকে। বহিরাগতদের জন্য এই দ্বীপ ভ্রমণ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এমনকি এই দ্বীপের ৫ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে চলে আসা দণ্ডনীয় অপরাধ। 
পূর্ব অনুমোদন সাপেক্ষে কেবল গবেষক ও নৃবিজ্ঞানীরা বিশেষ ব্যবস্থায় 
এ দ্বীপে যাওয়ার অনুমতি পেতে পারেন।

   
বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক জায়গা কোনটি, যেখানে পর্যটন নিষিদ্ধ?  @মিঃ_বুদ্ধিমান_গাধা®

উত্তর সেন্টিনেল দ্বীপ
হাজার হাজার বছর ধরে সম্পূর্ণ জনবিচ্ছিন্ন এই দ্বীপ ঘিরে জনমনে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে অনেক আগে থেকেই। উঠেছে নানা প্রশ্নও। যেমন কেউ কেউ বলেন সেন্টিনেলিজরা আসলে হোমো সেপিয়েন্স কিনা। নাকি তাদের রক্তে বইছে নিয়ান্ডারথালের মতো কোনো মানবপ্রজাতির ডিএনএ। 
এমন প্রশ্ন আজগুবি কোনো প্রশ্ন নয়।

আন্দামানে আরো বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠী আছে যেমন জারাওয়া একটি। কিন্তু কোনো আদিবাসীই সেন্টিনেলিজদের মতো হাজার হাজার বছর ধরে গোটা পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকেনি। 
এমনকি ভারত সরকারও অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও এ দ্বীপ সম্পর্কে তেমন কিছু জানতে ব্যর্থ হয়েছে। 
ভারতীয় কোস্টগার্ড সদস্যরা এ দ্বীপের কাছাকাছি যায় না, দূর থেকে প্যাট্রোলিং করে। 
ভারত সরকার সেন্টিনেলিজদের বিচ্ছিন্ন থাকার মরণপণ ইচ্ছেকে স্বীকৃতি দিয়েছে। 
দ্বীপে কোনো ভারতীয় আইনকানুন বলবৎ নেই। নেই কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা কিম্বা নিয়ন্ত্রণ। 
এমনকি দ্বীপবাসীরা নরহত্যা করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। 
তাই কার্যত দ্বীপটি স্বাধীন ও স্বশাসিত।

যতদূর জানা যায়, সমুদ্রতলে দ্বীপটির চারপাশ প্রবাল প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। এখানকার জলসীমায় হাঙ্গর, লুপ্তপ্রায় কাঁকড়া, কচ্ছপসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণীর অস্তিত্ব রয়েছে। ঘন জঙ্গলময় দ্বীপটির বুনো দাঁতাল ও বিভিন্ন প্রজাতির পাখপাখালি সেন্টিনেলিজদের খাদ্যের অন্যতম উৎস। তারা যেমন বাইরের লোকদের নিজেদের দ্বীপে ভিড়তে দেয় না, তেমনি নিজেরাও দ্বীপ ছেড়ে অন্য কোথাও যায় না। 
এজন্য তারা গভীর সমুদ্রে চলাচলের উপযোগী নৌযান বানাতে শেখেনি। 
ছোট্ট যে ডিঙি নৌকা (Canoe) তারা বানায় তা কেবল অগভীর পানিতে চলাচলের উপযোগী।

দ্বীপের কাছে যদি ভুলক্রমেও কোনো মানুষ পৌঁছে, দ্বীপবাসী তাকে হত্যা করে। 
একবার একটি জাহাজ দ্বীপের কাছাকাছি আটকে পড়ায় যাত্রীরা দ্বীপের উপকূলে আশ্রয় নিয়েছিল। সেন্টিনেলিজরা তাদের তীর ছুঁড়ে হত্যা করা শুরু করে। পরে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে বাকিদের উদ্ধার করা হয়। ২০০৬ সালে দুই ভারতীয় জেলে মাছ ধরতে ধরতে নৌকা নিয়ে দ্বীপটির কাছে চলে আসে। 
সেন্টিনেলিজরা তাদের মেরে উপকূলে ফেলে রাখে।

জন অ্যালেন চৌ নামক এই আমেরিকান যুবক ২০১৮ সালে খ্রিস্ট ধর্ম প্রচার করতে দ্বীপটিতে গিয়েছিলেন।
তিনি ওয়াটারপ্রুফ বাইবেল, অনেক উপহার আর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে দ্বীপে রওনা হন। 
২৫,০০০ রুপিতে দুজন জেলেকে ভাড়া করে দ্বীপের কাছাকাছি যেতেই দ্বীপবাসীরা তাকে কাছে না আসতে সতর্ক করে দেয় এবং তার দিকে তীর ছুড়তে থাকে। সেদিন তিনি আর কাছে না গেলেও পরদিন আবার যান। তিনি জেলেদেরকে বিদায় করে দিয়ে ছোট্ট ডিঙি বেয়ে একাকী দ্বীপে পৌঁছেন এবং সেন্টিনেলিজরা তাকে যথারীতি হত্যা করে ফেলে রাখে। অনেক চেষ্টা করেও কর্তৃপক্ষ চৌয়ের মৃতদেহ উদ্ধার করতে পারেনি।

এরকম আরো অনেক অতিউৎসাহী মানুষ দ্বীপে অভিযান চালাতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছে। 
২০০৪ সালের ভয়াবহ সমুদ্র সুনামির পর ভারতীয় কোস্টগার্ডদের একটি হেলিকপ্টার উত্তর সেন্টিনেল দ্বীপের আকাশে চক্কর দেয়। উদ্দেশ্য দ্বীপবাসীরা ঠিকঠাক আছে কিনা তা আকাশ পথে পর্যবেক্ষণ করা। 
স্থলপথে তো আর এই ভিআইপিদের খোঁজখবর নেওয়ার সুযোগ নেই। 
হেলিকপ্টারের প্রতি সেন্টিনেলিজদের প্রতিক্রিয়াটা দেখুন একবার।


তারা দল বেঁধে হেলিকপ্টারের দিকে তীর, পাথর আর বর্শা ছুঁড়তে থাকে।

তবে সবটাই ব্যর্থতার ইতিহাস নয়। ১৯৯১ সালে এক অসীম সাহসী নারী নৃবিজ্ঞানী সেন্টিনেলিজদের সাথে শান্তিপূর্ণ যোগাযোগ স্থাপনে সক্ষম হন।

জারাওয়া আদিবাসীর সাথে নৃবিজ্ঞানী মধুমালা চট্টোপাধ্যায়


তিনি ও তাঁর দল অনেক কলাকৌশল করে সেন্টিনেলিজদের সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ করেছিলেন। 
সেসময় প্রচুর নারিকেল উপহার হিসেবে পানিতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। দ্বীপবাসী পুরুষরা সেগুলো পানি থেকে তুলে নিতে ব্যস্ত থাকে। এক পর্যায়ে তিনি তাদের হাতে পর্যন্ত নারিকেল তুলে দিতে সক্ষম হন। 
নারী বলে সেন্টিনেলিজরা তাঁকে বড় হুমকি হিসেবে বিবেচনা করেনি। ভারতীয় এই নারী নৃবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নিবেদিত প্রাণ। তিনি ৬ বছর আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের বিভিন্ন আদিবাসী নৃগোষ্ঠীর উপর গবেষণা করেছেন। এক্ষেত্রে আরেক নৃবিজ্ঞানী ত্রিলোকনাথ পণ্ডিতের নাম স্মর্তব্য।

বহিরাগতদের প্রতি সেন্টিনেলিজদের এত আক্রোশ কেন? কেন তারা বহিরাগতদের বাগে পেলেই হত্যা করে? এর অনেক কারণ আছে নিশ্চয়ই। সেসব কারণ সবটা জানাও সম্ভব নয়। একটা কারণ—সেন্টিনেলিজদের অতিমাত্রায় পরদেশী ভীতি (Xenophobia)। সেই ভীতি থেকে তারা বহিরাগতদের প্রতি হিংস্র হয়ে ওঠে। আরেকটা কারণ হতে পারে তারা যে বাদবাকি পৃথিবীর রোগবালাইয়ের প্রতি খুবই সংবেদনশীল, 
সেটা তারা ভালোভাবে জেনে গেছে। আধুনিক মানুষের মধ্যে সর্দিকাশির মতো যে অতিসাধারণ অসুখ আছে, তার বিরুদ্ধেও তাদের শরীরে কোনো রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠেনি। 
অর্থাৎ আমাদের সংস্পর্শ তাদের নিশ্চিত মৃত্যুর কারণ হতে পারে। একবার যদি আমাদের কোনো সংক্রামক রোগ তাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, তবে পুরো আদিবাসী গোষ্ঠীটির বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া অসম্ভব কিছু নয়। 
এসব বিবেচনায় ভারত সরকার তাদের সুরক্ষায় মনোযোগী হয়েছে।

১৮৮০ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ রাজকীয় নৌবাহিনীর অ্যাডমিরাল মরিস পোর্টম্যান অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত জাহাজ নিয়ে উত্তর সেন্টিনেল দ্বীপে অভিযান চালান। তিনি তখন আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের প্রশাসনিক কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন। পোর্টম্যানের রিপোর্ট থেকে দ্বীপের জীববৈচিত্র্য, সংস্কৃতি ও মানুষ সম্পর্কে আধুনিক বিশ্ব কিছুটা হলেও জানতে পারে। যাইহোক, তিনি কৌতুহলবশত সেন্টিনেলিজদের ১ দম্পতি ও ৪ শিশুসহ মোট ৬ জনকে অপহরণ করে পোর্ট ব্লেয়ারে নিয়ে আসেন। এর পরপরই দম্পতি দুইজন ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং মারা যান। পরে ৪ শিশুকে অনেক উপহার দিয়ে পুনরায় দ্বীপে ফিরিয়ে দিয়ে আসা হয়। 
অবশ্য পোর্টম্যান তাদের সাথে ছবি তোলার সুযোগ হাতছাড়া করেননি।


তো আপনার কি ইচ্ছে করছে সেন্টিনেলিজদের ছোট্ট আদিম দুনিয়ায় একটু ভ্রমণ করে আসার? 
আমার কিন্তু মাঝে মাঝেই ইচ্ছে করে।

ধন্যবাদ সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য। 
    ধন্যবাদান্তেঃ------
    মওদুদ আহমেদ মধু 

No comments

Powered by Blogger.