Ads

প্রেম আসলে কী? এবং মানুষ সুখে না থাকার প্রধান কারণ কী ? @মিঃ মধু

                                                                                                                প্রেম-ভালোবাসার গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, বাণী, মোটিভেশান, 


প্রেম আসলে কী? এবং মানুষ সুখে না থাকার কারণ কী ?
 
প্রেম আসলে কী? এবং মানুষ সুখে না থাকার প্রধান কারণ কী ?  @মিঃ মধু


প্রেম আসলে কী?

প্রেম -একটি মানসিক রোগের নাম.

তথাকথিত প্রেম নামের জৈবিক আসক্তির কবলে পড়ে কত তরুণ-তরুণী যে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, 
জীবনের সম্ভাবনাকে নষ্ট করেছে, নিজের এবং পরিবারের জীবনে বিপর্যয় ডেকে এনেছে তার ইয়ত্তা নেই ।

কিন্তু কেন ? প্রেম মানুষকে অন্ধ করে, প্রেম মানুষকে পাগল করে- এ কথাগুলো অনেকদিন ধরেই ছিলো গল্প-কবিতা-উপন্যাসের কথা । কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে সম্প্রতি বিজ্ঞানও এই একই সুরে কথা বলছে । ইদানীং নানা বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, মানসিকভাবে অসুস্থ হলে মানুষের মস্তিষ্কে যে, 
রাসায়নিক অবস্থা দেখা যায়, প্রেমে পড়লেও সেই একই অবস্থা হয় ।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিনের ফেব্রুয়ারি ২০০৬ সংখ্যায় 'লাভ দ্যা কেমিক্যাল রি-একশন' শিরোনামের এক বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় । ইতালির পিসা ইউনিভার্সিটির মনোবিগ্গানের অধ্যাপিকা ডোনাটেল মারাজিতি তার সহকর্মীদের নিয়ে ২৪ জন নারী-পুরুষের ওপর এক জরিপ চালান । 
এদের মধ্যে সবাই গত ৬ মাসের মধ্যে প্রেমে পড়েছে এবং প্রতিদিন অন্তত ৪ ঘন্টা সময় এরা বাস্তবে প্রেমিক/প্রেমিকার সাথে কাটায়- নয়তো মনে মনে চিন্তা করে । 
এদের সাথে তুলনা করার জন্যে বেছে নেয়া হয় আরো দুটো গ্রুপ । একটি গ্রুপ অবসেসিভ কমপালসিভ ডিসঅর্ডার (ওসিডি) নামে এক মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত । আরেকটি গ্রুপ এই দুটো থেকেই মুক্ত, 
অর্থাত্‍ তারা প্রেমেও পড়েনি এবং মানসিকভাবেও অসুস্থ নয় । 'সত্যিকারের ভালবাসা' বলতে কী বোঝায়?
  
প্রেম আসলে কী? এবং মানুষ সুখে না থাকার প্রধান কারণ কী ?  @মিঃ মধু


পরীক্ষায় দেখা গেল, প্রেমে পড়া আর মানসিকভাবে অসুস্থ- দুই গ্রুপের মানুষের মস্তিষ্কেই সেরেটনিনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে শতকরা ৪০ ভাগ কম । সেরেটনিন হলো মস্তিষ্কের এমন এক নিউরোট্রান্সমিটার যার পরিমাণ কমে গেলেই বিষন্নতা, অবসাদ, খিটখিটে মেজাজ এবং ওসিডির মতো মানসিক রোগ দেখা দেয় । সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, প্রেমে পড়লেও একই অবস্থা হয় । কাজেই যৌক্তিকভাবেই বলা যায়, প্রেমে পড়লে মানুষ আর মানসিকভাবে সুস্থ থাকে না । তার বিচার বুদ্ধি লোপ পায় এবং সে অন্ধ আবেগে ঝাঁপিয়ে পড়ে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়।

তবে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এ আবেগের স্থায়িত্ব আবার খুবই কম । আজকে যাকে না পেলে বাঁচবো না বলে মনে হচ্ছে, বছর না ঘুরতেই মনে হতে পারে যে, তাকে না ছাড়লে বাঁচবো না । ৬ মাস আগেও যে চেহারাটা দেখার জন্যে অস্থির হতো মন, এখন সে চেহারাটাই হতে পারে সবচেয়ে অসহ্য দৃশ্য ।


এর কারণ কি ? বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এর পেছনে আছে ডোপামাইন নামে এক নিউরোট্রান্সমিটারের ভূমিকা । প্রেমিক বা প্রেমিকাকে দেখলে মস্তিষ্কের একটি বিশেষ অংশ এই ডোপামাইন দ্বারা উদ্দীপ্ত হয় । এর প্রভাবে শরীর-মনে তখন সৃষ্টি হতে পারে বাঁধভাঙা আনন্দ, অসাধারণ প্রাণশক্তি, গভীর মনোযোগ ও সীমাহীন অনুপ্রেরণা । এ জন্যেই হয়তো যারা সদ্য প্রেমে পড়ে, হঠাত্‍ করেই তাদের মধ্যে এক ধরনের বেয়াড়া, একগুঁয়ে, দুঃসাহসী চরিত্র ফুটে ওঠে । ঘর ছাড়বে, সিংহাসন ছাড়বে, জীবন দেবে; তবু প্রেম ছাড়বে না- এমনই এক বেয়াড়াপনা দেখা যায় তাদের মধ্যে । 
বিজ্ঞানীরা বলেন, মাদকাসক্তির সাথে এ অবস্থাটার খুব মিল রয়েছে ।

মাদকাসক্তদের কিন্তু মাদক গ্রহণের পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলে । কারণ মাদকের পরিমাণ যা-ই হোক না কেন ব্রেন তাতেই অভ্যস্ত হয়ে পড়ে । ফলে পরিমাণ না বাড়ালে তার নেশা হয় না । প্রেমের ক্ষেত্রেও তা-ই । তীব্র আবেগের আতিশয্য খুব বেশি সময় ধরে থাকেনা যদি না নতুন নতুন উত্তেজনা দেয়া না যায় । কিন্তু বাস্তব জীবনে তো আর তা সম্ভব নয় । ফলে অল্পতেই ঘোলাটে হয়ে যায় আবেগের রঙিন চশমা ।

                                                                                          বিষ্ময়কর প্রেমের গল্প"---  নিষিদ্ধ_নারীর_ভালোবাসা

আসলে স্বর্গীয়, পবিত্র ইত্যাদি নানারকম বিশেষণ যুক্ত করে যে প্রেমকে মহান বানানো চেষ্টা চলে তা যে স্রেফ বংশধারা রক্ষার জন্য নারী-পুরুষের জৈবিক চাহিদারই নামান্তর তা বিজ্ঞানীদের কথায় স্পষ্ট হয়েছে । গবেষণায় দেখা গেছে, পারস্পরিক আকর্ষণের ক্ষেত্রে একজন পুরুষ বা একজন নারী অবচেতনভাবেই এমন সঙ্গীকে পছন্দ করে, যে তাকে সুস্থ সবল একটি সন্তান উপহার দিতে পারবে । এক জরীপে দেখা গেছে, মহিলাদের কোমর ও হিপের বিশেষ গরন যা তাদের টেস্টোস্টেরন হরমোন উৎপাদন ক্ষমতা বেশি হওয়াকে নির্দেশ করে, তার ওপর নির্ভর করে কে কতটা আকর্ষণীয় হবে । আর নারী ও পুরুষের এ দুটো বৈশিষ্ট্যই তাদের সন্তান জন্মদানের সামর্থ্যকে সরাসরি প্রভাবিত করে ।

তাই বিজ্ঞানীদের পরামর্শ, প্রেমের পাগলামিকে আবেগের হাওয়া না দিয়ে ব্রেনের জৈব রাসায়নিক কার্যকরণ হিসেবেই দেখুন । তাহলে অন্তত আপনি এ দুর্দশা থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে পারবেন ।

    
প্রেম আসলে কী? এবং মানুষ সুখে না থাকার প্রধান কারণ কী ?  @মিঃ মধু

মানুষ সুখে না থাকার প্রধান কারণ কী ?


লিখাটা একটু বড় হয়ে যাবে, এজন্য আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। 
তবে যদি শেষ পর্যন্ত সাথে থাকেন, আপনাকে হতাশ করব না, 
আপনাকে সুখী হতে বা সুখী করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ।

★চলুন শুরু করি,

আমাদের এই সুন্দর পৃথিবীর কোথাও একজন মানুষ ও কি আছে, যিনি সুখী হতে চান না? আমরা সবাই সুখী হতে চাই, কিন্তু আমরা কি সুখী? চলুন কিছু ব্যক্তির কাল্পনিক সাক্ষাৎকার নিয়ে বিষয়টি জানার বুঝার চ্রেষ্টা করি,

প্রথম ব্যক্তি একজন প্রতিবন্ধী (অন্ধ ভিক্ষুক),

আমিঃ ভাই আপনি কি একজন সুখী মানুষ?

অন্ধ ব্যক্তিঃ আর কইয়েন না ভাই, আল্লায় দুনিয়াত পাঠাইল দুইটা চোঁখ ছাড়া, জন্ম দিল যে মা-বাপ, হেগোরে দেখতে পারলাম না। দুনিয়ায় আলো বাতাস কিচ্ছু দেখতে পারলাম না, চোখ নাই কাম কাজ করতাম পারি না, ভিক্ষা কইরা খাই, আমার থাইক্কা দুঃখী এই দুনিয়াত আর কেডা আছে?

দ্বিতীয় ব্যক্তি একজন দিনমজুর,

আমিঃ আচ্ছা ভাই আপনি কি একজন সুখী মানুষ?

দিনমজুরঃ আর কইয়েন না ভাই, আমার কপাল অ আবার সুখ!! আল্লায় দুনিয়াত পাঠাইল, পাঠাইল গরীব বানাইয়া, যা কামাই রুজি করি বউ পোলাপাইন লইয়া খাইতে চলতেই শেষ, পোলাপাইনরে লেখাপড়া করাইয়া ভালা একটা চাকরির ব্যবস্থা করাইতে পারলাম না, হেগো ভবিষ্যতের তো কোন কূল কিনারা অইলনা, আমার নিজের ও তো কোন একটা কূল কিনারা অইলনা, বুড়া বয়সে খাইমু কইত্তে? কেডা আমারে খাওয়াইব?

তৃতীয় ব্যক্তি নিম্নবিত্ত,(চাকুরীজিবী)

আমিঃ আচ্ছা ভাই আপনি কি একজন সুখী মানুষ?

নিম্নবিত্ত ব্যক্তিঃ আপনি দুনিয়াতে আর মানুষ খুজে পেলেন না? আমাকে আপনার সুখী মনে হল? যা বেতন পাই সেই টাকায় ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া, ফ্ল্যাট-ভাড়া, মা- বাবা, শশুর- শাশুড়ী আত্মীয় স্বজনদের পেছনেই খরচ হয়ে যায়। মাস শেষে কিছুই থাকে না। আমার বস কি সুন্দর, ঢাকা শহরে নিজের একটা বাড়ী বানাল, নিজের গাড়ী আছে, গাড়ি নিয়ে বউ-বাচ্চা নিয়ে এখানে সেখানে ঘুড়ে বেড়ায়, যখন যা মনে চায় তাই করতে পারে, তাদেরকে বলে সুখী.......

শেষ ব্যক্তি (নামীদামি একটা কোম্পানির মালিক)

আমিঃ স্যার, আপনি তো অনেক সুখে আছেন? আপনার তো আর কোন দুঃখ থাকতে পারে না। 
যথেষ্ট টাকা পয়সা আল্লাহ আপনাকে দান করেছে, যখন যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন,,,

কোম্পানির মালিকঃ বাবা তোমার ধারনাটা ভুল, করোনা, হরতাল, অবরোধ, শ্রমিক অসন্তোষ, পর্যাপ্ত অর্ডার নেই, ইত্যাদি নানা কারনে কোম্পানির ব্যাপক পরিমাণ টাকা প্রতিদিন লস হচ্ছে, ওদিকে ব্যাংক থেকে নেওয়া লোনের টাকার প্রতিদিন সুদ বাড়ছে। বড় ছেলেটা মাদকাসক্ত, মেয়েটার সংসারে শান্তি নাই, আমি নিজেও পেশারের রোগী, রাতে টেনশনে ভাল ঘুম হয়না ইত্যাদি ইত্যাদি নানা সমস্যায় আছি। মানুষ মনে করে আমি সুখি, আসলে আমি সুখে নাই। ইশ, আমিও যদি ওই রিকশা চালকগুলোর মত হতে পারতাম, কত ভাল হত!! সারা দিন কষ্ট করে ঠিক আছে, কিন্তু তাদের তো কোন টেনশন নেই, রাতে কোন রকম শুতে পারলেই হল, শান্তির ঘুম, এক ঘুমে রাত পার!!! যাক বাবা, তোমাকে সেটা বলে বুঝানো যাবে না।
   
প্রেম আসলে কী? এবং মানুষ সুখে না থাকার প্রধান কারণ কী ?  @মিঃ মধু


★★ লক্ষ করুন ভাই, আপনি নিশ্চয়ই আমার সাথে একমত হবেন যে, এটাই আমাদের আশেপাশের সমস্ত লোকজনের জীবনের বাস্তব চিত্র, আর আমরা এই সমস্ত কাল্পনিক সাক্ষাৎকারের উপর ভিত্তি করে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারি যে, পৃথিবীতে আসলে কেউ সুখী নয়! তাহলে কি পৃথিবীর কোথাও সুখ নেই? তাহলে পরম করুনাময়, অসীম দয়ালু সৃষ্টিকর্তা কি আমাদের দুঃখের অতল সাগরে ডুবিয়ে রেখেছেন? যদি আমাদেরকে দুঃখের অতল সাগরে ডুবিয়েই রাখেন তাহলে তিনি পরম দয়ালু বা দয়াময় কিভাবে হলেন? জ্বী ভাই, পরম করুনাময় এমন নিষ্ঠুর নয়। প্রশ্ন আসবে, তাহলে সুখ কোথায়?

আমরা সবাই তো সুখী হতে চাই, কিন্তু পারছি না কেন? আসলে আমরা প্রায় সকলেই একটা মারাত্মক ভুল করি। সেটা কি? চলুন একটু ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করি, জ্বী ভাই, মনে করুন আপনি এখন ঢাকায় আছেন, যাবেন চট্টগ্রাম। কিন্তু উঠে পড়লেন রাজশাহীর গাড়ীতে, তাহলে চট্টগ্রাম যেতে পারবেন তো? জানি উত্তরটা, না হবে। কিন্তু আমরা আমাদের বাস্তব জীবনে তাই করি, সুখ যেখানে আছে, তার ঠিক উল্টো দিকে আমরা সুখ খুঁজে বেড়াই। এজন্যই আমরা সুখী হতে পারছিনা। যদি আমরা সঠিক জায়গায় সুখের সন্ধান করতে পারতাম, তাহলে পৃথিবীতে দুঃখী মানুষ একজনও খুঁজে পেতেন না। এতক্ষণ যাদের কাল্পনিক সাক্ষাৎকার নিলাম, যারা নিজেকে জগতের সবচেয়ে অসুখী মনে করে, তারাও সুখী হয়ে যেত!! কিভাবে চলুন পর্যালোচনায়,

ভেবে দেখুন, প্রথম ব্যক্তি যিনি অন্ধ ভিক্ষুক, সে কেন দুঃখী? শুধুমাত্র তার দুটো চোঁখ নাই। 
তার কি আছে? জ্বী ভাই, হাত, পা, চোঁখ, নাক, কান, গলা, স্ত্রী, সন্তান, পরিবার সবই আছে। 
আল্লাহ তাকে সবকিছু দান করার পরও শুধুমাত্র দুটো চোঁখের জন্য সে নিজেকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দুঃখী বানিয়ে নিল! আবার অন্য ভাবে তাকাই, আপনার আমার মত একজন মানুষ যেখানে সারাদিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পর তার পরিবার পরিজনের খাবার নিশ্চিত করতে হিমশিম খাচ্ছি, কিন্তু সেখানে মহান রব্বুল আলামীন তাকে বলতে গেলে প্রায় বিনা পরিশ্রমে খাওয়াচ্ছে!! (ভিক্ষা করাটা তার জন্য দূষণীয় নয়) সে যদি এটা ভাবত যে, এই পৃথিবীর এমন লক্ষ লক্ষ লোক আছে যারা মানসিক ভারসাম্যহীন, যাদের খাওয়া পড়ার কোন নিশ্চয়তা নেই, পরিবার পরিজন থেকে তারা বিচ্ছিন্ন, তাদের তুলনায় আল্লাহ আমাকে কত ভাল রেখেছেন!! 
তাহলে সে কি নিজেকে দুঃখী ভাবতে পারত?? আপনি কি জানেন, নিজেকে দুঃখী বলে সে আল্লাহর অগনিত অসংখ্য নেয়ামতের প্রতি সরাসরি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে? আর অকৃতজ্ঞ ব্যক্তিকে আল্লাহ ভালবাসেন না, এমনকি তার জন্য রয়েছে শাস্তির হুমকি! বিপরীতে কৃতজ্ঞ ব্যক্তিকে সকলেই ভালবাসেন। 
আবার তার জন্য রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ।

মহান রব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে বলেনঃ

"তোমরা কৃতজ্ঞ হলে তোমাদেরকে অবশ্যই অধিক দান করব, 
আর অকৃতজ্ঞ হলে অবশ্যই আমার শাস্তি হবে কঠোর"।

(সূরাঃ১৪, আয়াতঃ০৭)

আপনি এখন বলতে পারেন, তাহলে নিশ্চয়ই মানসিক ভারসাম্যহীন লোকজন জগতের সবচেয়ে দুঃখী, 
না ভাই এটাও সঠিক নয়, কারন তাকেও আল্লাহ রব্বুল আলামীন কোন না কোন ভাবে রিযিকের ব্যবস্থা, থাকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। তার বরং আরো কিছু বাড়তি সুবিধা আছে, সেটা হল তার কোনই কাজ করতে হয়না, কোন বিষয়ে তার বিন্দুমাত্র টেনশন নেই!! সে যা খাচ্ছে সেটা ইহলৌকিক এবং পারলৌকিক দুটোই সম্পূর্ণ ফ্রি!! কেননা যা খাচ্ছে তার জন্য তাকে দুনিয়াতে কোন প্রকার কষ্ট করতে হয়না, অন্য দিকে আখিরাতেও তাকে কোন হিসাব দিতে হবে না, কারন হাদিসে এসেছে, আয়িশাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত

"রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তিন ধরণের লোকের উপর থেকে কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছেঃ (১) নিদ্রিত ব্যক্তি, যতক্ষণ না জাগ্রত হয়, (২) অসুস্থ (পাগল) ব্যক্তি, 
যতক্ষণ না আরোগ্য লাভ করে এবং (৩) অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক, যতক্ষণ না বালেগ হয়"।

তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি, একজন মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি তার দুনিয়াবী জীবনটা যেভাবেই পার করুক না কেন, তার পরকালটা মোটামুটি নিশ্চিন্ত!! অথচ তার এই জীবন নিয়ে সে কিন্তু মোটেই দুঃখী নয়।

দ্বিতীয় ব্যক্তি যিনি একজন দিনমজুর, তার সুখী হওয়ার জন্য নিদর্শন হিসেবে অন্ধ ভিক্ষুক লোকটিই যথেষ্ট, সে যদি অন্ধ ভিক্ষুক লোকটির দিকে তাকাত, তাহলে সে এটা উপলব্ধি করতে পারত যে, অন্ধ ভিক্ষুক লোকটির তুলনায় সে কত ভাল আছে!! খাবারের জন্য তাকে কারো দুয়ারে হাত পাততে হয়না। 
আর যে ভবিষ্যৎ নিয়ে সে এত চিন্তিত, সে অনাগত ভবিষ্যতেও তাকে মহান রব্বুল আলামীন ঠিকই খাওয়াবে, সে তো খাবারের অভাবে না খেয়ে মরবে না। 
জীবন যে আল্লাহ দান করেন, রিযিকের ফয়সালা তো তিনিই করে দেন।

প্রেম আসলে কী? এবং মানুষ সুখে না থাকার প্রধান কারণ কী ?  @মিঃ মধু

আল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেনঃ-

"নিশ্চয় আল্লাহ, তিনিই রিযিকদাতা, প্রবল পরাক্রান্ত") (সূরাঃ৫১,আয়াতঃ৫৮)

তৃতীয় ব্যক্তি নিম্নবিত্ত,(চাকুরীজিবী)

সে তো অন্য দুই ব্যক্তির চেয়ে অনেক অনেকগুন ভাল আছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও সে তা উপলব্ধি করতে পারছে না, সে যখন তার উপরের স্তরের লোকদের দিকে তাকায়, তখন তাদের বাহিরের চাকচিক্য দেখে (কোম্পানির মালিকের মত) সে নিজেকে দুঃখী মনে করে। 
বস্তুত এটাই সত্য, ধ্রুব সত্য যে আমরা সবাই যার যার অবস্থানে সকলেই সুখী, কিন্তু আমরা আমাদের উচ্চাভিলাষী চিন্তা ভাবনার জন্য, আমাদের ধন-সম্পত্তি লাভের উচ্চাকাঙ্খার জন্য আমাদের ওপরের স্তরের লোকদের সাথে নিজের তুলনা করে নিজেকে দুঃখী মনে করি। 
আমরা ধন-সম্পত্তিকে সুখের মাপকাঠি মনে করি, যা প্রকৃত অর্থে শুধুই মরীচিকা। 

আর আমরা নিজেকে এভাবে দুঃখী বানিয়ে আল্লাহর দেওয়া অসংখ্য অগনিত নেয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করি। যা আল্লাহ পছন্দ করেন না। তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, 
কাউকে সুখী হতে হলে তাকে অবশ্য অবশ্যই তার নিচের স্তরের লোকদের প্রতি দৃষ্টিপাত করতে হবে। 
আর আমরা যদি আমাদের নিচের স্তরের লোকদের সাথে নিজেকে তুলনা করতে পারি, 
তবেই আমরা প্রকৃত সুখের দেখা পাব। 
এটাই সুখী হওয়ার এক এবং অদ্বিতীয় শর্ত। একেবারে সরল সোজা কথায় বললে, আপনি যদি নিজেকে আপনার নিচের স্তরের লোকদের সাথে তুলনা করতে পারেন, তবে এই পৃথিবীতে আপনার চেয়ে সুখী কেউ নয়, আর যদি আপনার উপরের স্তরের লোকদের সাথে তুলনা করেন তাহলে আপনার শত সহস্র থাকলেও আপনি সুখী হতে পারবেন না,,পারবেন না,,,,পারবেন না,,,,,,,,,!

প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সাঃ) বলেনঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ এমন ব্যক্তিকে দেখে যাকে মাল-সম্পদে, স্বাস্থ্য-সামর্থ্যে অধিক দেয়া হয়েছে, তখন সে যেন নিজের চাইতে নিম্নমানের ব্যক্তির দিকে তাকায়। (বুখারী ও মুসলিম)

সহীহ মুসলিমের অন্য বর্ননায় আছে নবী মুহাম্মদ (সাঃ) বলেনঃ

"তোমরা নিজেদের অপেক্ষা নিম্ন অবস্থার লোকের প্রতি তাকাও। এমন ব্যক্তির দিকে তাকিয়ো না যে তোমাদের চাইতে উচ্চ পর্যায়ের। 
তাহলে এ পন্থা অবলম্বনই হবে আল্লাহর নি'আমাতকে অবজ্ঞা না করার এক উপযোগী মাধ্যম"।

আর এ বিষয়টি খুব চমৎকার ভাবে কবিতার ছন্দে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছিলেন কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার, 
তিনি লিখেনঃ

"একদা ছিল না ‘জুতো’ চরণ-যুগল

দহিল হৃদয় মম সেই ক্ষোভানলে।

ধীরে ধীরে চুপি চুপি দুঃখাকুল মনে,

গেলাম ভজনালয়ে ভজন কারণে !

দেখি তথা এক জন, পদ নাহি তার,

অমনি ‘জুতো’র খেদ ঘুচিল আমার,

পরের অভাব মনে করিলে চিন্তন

নিজের অভাব ক্ষোভ রহে কতক্ষণ" ?

আমি বিশ্বাস করি, মানুষ সুখে না থাকার এটাই একমাত্র প্রধান কারন, এবং এটাই সত্য, চরম সত্য।

★ চলুন এবার আপনার সাথে কিছু কথা বলি, মনে করুন, এখন আপনার প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে, 
আমি আপনার কাছে জানতে চাইলাম, ভাই কেমন আছেন? আপনি কি বলবেন? 
নিশ্চয়ই একথাই বলবেন, আর বলবেন না ভাই, মাথা ব্যাথার জ্বালায় আর বাচি না! আপনি কি ভাবতে পারছেন, মাথাটা আপনার শরীরের অনেকগুলো অঙ্গের মাত্র একটা অঙ্গ! 
আপনার মাথাটা যখন ব্যাথা করছে, 
ঠিক সেই মূহুর্তে আপনার শরীরের বাকি সবগুলো অঙ্গ প্রতঙ্গ ভাল আছে!! সুখে আছে!!!! 

অথচ বাকি অঙ্গগুলো যে সুখে আছে সেজন্য কি আমরা কখনো আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করি? 
না করি না!! কিন্তু এই মাথা ব্যাথাটার জন্য আমরা আল্লাহর প্রতি কত না অসন্তুষ্ট হই! কেন আমাকে এই যন্ত্রণা না দিচ্ছে? মনে করুন, আমার চারটা মেয়ে আছে, আমি আল্লাহর প্রতি অসন্তুষ্ট, কেন আল্লাহ আমাকে ছেলে দিলনা, কিন্তু একবারও কি ভেবে দেখেছি, এমন হাজারো পরিবার পৃথিবীতে আছে, যাদের ছেলেও নেই মেয়েও নেই!!! 
সন্তানহীন পরিবারের দিকে তাকালে কি আমি আল্লাহর প্রতি অসন্তুষ্ট হতে পারতাম? জ্বী ভাই, 
অনেক হল আর বেশি বলতে চাইনা, 
যখন আপনার নিজেকে দুঃখী মনে হবে, ঠিক তখন যদি আপনি আপনার নিচের স্তরের লোকদের দিকে তাকাতে পারেন, আপনার কাছ থেকে দুঃখ বিদায় নিতে বাধ্য। এটাই সুখী হবার মূলমন্ত্র!!!! 
কিন্তু আমরা প্রায় সবাই এটা করতে পারিনা বলেই নিজেকে দুঃখী ভাবি, আর এটাই মানুষ সুখে না থাকার প্রধান কারণ!!"

যাক সম্মানিত ভাই/বোন, ভাল থাকুন, সুখে থাকুন,পরম করুনাময় আমাদের সকলকে অনাবিল সুখ-শান্তি দান করুক, আমিন।



ধন্যবাদ সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য। 
    ধন্যবাদান্তেঃ------
    মওদুদ আহমেদ মধু 



No comments

Powered by Blogger.