ভাই - বোনের ভালোবাসায় অদ্ভুত এক মায়া জড়িয়ে থাকে। #_মিঃ_বুদ্ধিমান_গাধা®️
সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার সময় পাশের দোকান থেকে ২টা ডিম আর একটা নুডুলসের প্যাকেট নিয়ে বাসায় ঢুকলাম। আপুর রুমের সামনে গিয়ে আমার বন্ধু রাকিবকে ফোন দিয়ে আপুকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলতে লাগলাম, -- দেখ, তোর বোনের মত আমার বোন না। আমার বোনকে যদি রাত ১১টার সময়ও বলি আপু বিরিয়ানী খাবো আপু ঠিকিই আমার জন্য বিরিয়ানী রান্না করবে। এটা হলো ভাইয়ের প্রতি বড় বোনের ভালোবাসা। আমাদের ভাই বোনের ভালোবাসা দেখে কিছু শিখ কাজে লাগবে।
তারপর ফোনটা রেখে হাসি মুখে আপুর রুমে ঢুকলাম। আপু তখন টেবিলে বসে একমনে বইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি একটু কাশির আওয়াজ করতেই আপু আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
- আমাকে কি তোর গাড়ির টিউব মনে হয়, যে তুই আমাকে হাওয়া দিবি আর আমি ফুলবো?
কয়েকদিন পর আমার পরীক্ষা এখন চোখের সামনে থেকে যা।
আমি কোন নুডুলস রান্না করতে পারবো না।
আমি নুডুলসের প্যাকেট আর ডিমগুলো আপুর বিছানায় রাখতে রাখতে বললাম,
-- আমার ফ্রেশ হতে ১০ মিনিট লাগবে। ততক্ষণে হয়ে যাবে আশা করি।
আপু চিৎকার করে বললো,
- বান্দর,আমি বলেছি না আমি পারবো না...।
আমি আর কিছু না বলে আপুর রুম থেকে বের হয়ে আসলাম। আমি জানি ঠিক ১০ মিনিট পর আমার জন্য আপু নুডুলস রান্না করে নিয়ে আসবে.....।
পরদিন সকালে শ্রাবণীর(আমার গার্লফ্রেন্ড) সাথে দেখা করতে যাবো অথচ হাতে একটা টাকা নেই। আপুর রুমে গিয়ে দেখি আপু বেলকনিতে ফুলগাছে পানি দিচ্ছে। আমি আপুর পাশে এসে আপুকে বললাম,
-- আপু তুই জানিস আমি তকে কতটা ভালোবাসি?
আপু আমার দিকে বিরক্তিকর চোখে তাকিয়ে বললো,
- আমি তোর কোন ময়লা কাপড় চোপড় ধুঁতে পারবো না। আর আমার হাতে একটা টাকাও নেই।
আমি অসহায় দৃষ্টিতে আপুর দিকে তাকিয়ে বললাম,
-- তুই সব সময় আমায় ভুল বুঝিস।
যায় হোক, তোকে একটা কথা বলতে এসেছি। গলির মোড়ে একটা লোক অর্কিডের চারাগাছ নিয়ে বসে আছে। একেকটা অর্কিডের চারা ১০০ টাকা মাত্র। যদি পারিস কিনে নিয়ে আয়। আর যাওয়ার সময় সাবধানে যাস কারণ পাশের বাসার আজিজ আংকেলের কুকুরটা রাস্তায় দৌড়াদৌড়ি করছে।
তুই তো আবার কুকুর ভয় পাস...।
আমার কথা শুনে আপু খুশিতে আত্মহারা হয়ে বললো,
- আমার সোনা ভাই, তুই একটু কিনে এনে দে। আমি কুকুরটাকে প্রচন্ড ভয় পাই।
এই বলে আপু আমাকে ৫০০টাকার একটা নোট দিয়ে বললো,
- ৫টা চারা আনবি।
আমি পকেটে টাকাটা রাখতে রাখতে বললাম,
-- অসংখ্য ধন্যবাদ আপু ছোট ভাইয়ের প্রেমের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করার জন্য। তুই টাকাটা না দিলে আজকে শ্রাবণীকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে বসে দুইজন দুইজনের চোখের দিকে তাকিয়ে কফি খেতে পারতাম না।
আমার কথা শুনে আপু হাতে থাকা মগটা রাগে আছাড় মেরে বললো,
- তুই যদি অর্কিডের চারা না নিয়ে বাসায় ঢুকিস তাহলে কিন্তু তোর খবর আছে.. ।
বিকেলে ছাদে এসে দেখি আপু ছাদের রেলিং ধরে দূরে তাকিয়ে আছে। আমি কফির মগটা আপুর হাতে এগিয়ে দিয়ে বললাম,
-- আজকে আবার একটা মকবুল তকে দেখতে আসবে..
আপু কফির মগে চুমুক দিয়ে বললো,
- এই বার বুঝি বিয়েটা হয়েই যাবে রে। ছেলে ভালো জব করে বংশও না কি অনেক ভালো। অনেক টাকার মালিক না কি।
আমিও ছাদের রেলিং ধরে দূরের দিকে তাকিয়ে বললাম,
-- ভালো হলেই ভালো...।
সন্ধ্যার পর আপুকে দেখতে আসলো পাত্র সহ আরো কয়েকজন।
আপুকে দেখেই পাত্রের ছোট বোন মন্তব্য করলো,,~ মেয়ে সুন্দর কিন্তু নাকটা একটু বোঁচা।
এই কথাটা শুনে মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো। আব্বু হাসি মুখে ওদের সাথে কথা বলছে আর মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকিয়ে দেখছে।
পাত্রের বড় বোন বললো,
~তুমি অত্যাধিক ফর্সা। বেশি ফর্সা মেয়েদের দেখে মনে হয় রক্ত শূন্যতায় ভুগছে।
আমি কিছু বলতে যাবো তখনি খেয়াল করলাম মা আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে।
ছেলের মা তখন বললো,
~ মেয়ে আমাদের পছন্দ হয়েছে।
এই কথা শুনে বাবা মা খুশি হয়ে বললো,
~আলহামদুলিল্লাহ...
এমন সময় ছেলের বাবা বললো,
~আমাদের কোন ডিমান্ড নেই। আল্লাহ আমাদের অনেক দিয়েছেন। তবে শুনেছি চরপাড়াতে না কি আপনারা ৪ তলা একটা বাসা তৈরি করছেন। সেখান থেকে একটা ফ্ল্যাট ছেলেকে উপহার সরূপ দিয়ে দিলেন আর নতুন ফ্ল্যাট সাজাতে যে যে আসবাসপত্র লাগে সেগুলো দিলেন এই আর কি। এটাকে আবার যৌতুক মনে করেন না যে। এইগুলোতো আপনার মেয়েরি থাকবে..।
না আর চুপ করে থাকা যায় না। আমি হাসতে হাসতে বললাম,
--হে অবশ্যই দিবো। তবে আমাদেরও একটা আবদার আছে।
ছেলের বাবা চমকে গিয়ে বললো,
~কি আবদার?
আমি তখন ছেলের বাবাকে বললাম,
- আমার বোনের পায়ের নুপূর থেকে শুরু করে মাথার টিকলি পর্যন্ত সব হীরার হতে হবে। আর যে ফ্ল্যাট আমার বোনকে দিবো সেই ফ্ল্যাটে আমার বোন আর ওর হাজবেন্ড বাদে অন্য কেউ থাকতে পারবে না। আর নিদিষ্ট একটা সময়ে আপনি আর আপনার স্ত্রী নিজেদের ইচ্ছায় বৃদ্ধাশ্রমে চলে যাবেন কারণ আপনাদের সেবা আমার বোন করতে পারবে না..
আমার মুখের কথা শুনে পাত্র রেগে গিয়ে বললো,
- তুমি আমাদের অপমান করছো না কি?
আমি মুচকি হেসে বললাম,
-- যাদের কোন মান সম্মান নেই তাদের কিভাবে অসম্মান করবো? আপনাদের মত কিছু ছোট লোক আছে যারা বিয়ের নামে মেয়ে পক্ষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভিক্ষা করে...
পাত্রীর ছোটবোনের দিকে তাকিয়ে বললাম,
-- আয়নায় আগে নিজের নাকটা দেখে পরে অন্য জনের নাক নিয়ে মন্তব্য করবেন। দেখে তো মনে হচ্ছে কেউ সজোরে ঘুষি মেরে নাক চেপ্টা করে দিয়েছে।
সব শেষে পাত্রের বড় বোনের দিকে তাকিয়ে বললাম,
-- কালো চামড়া ফর্সা করার জন্য নিজে তো ঠিকিই এক বস্তা ময়দা মেখে এসেছেন। আর এইখানে বলছেন বেশি ফর্সা মেয়েদের দেখে মনে হয় রক্ত শূন্যতায় ভুগছে...
আমার কথা শুনে পাত্র পক্ষ যখন রেগে চলে যাচ্ছে তখন আমি আপুর হাত থেকে দুইটা কাচের চুড়ি খুলে পাত্রের হাতে দিয়ে বললাম,
-- এতই যেহেতু টাকার দরকার এই চুড়িগুলো পরে রাস্তায় নেমে হাত তালি দেন দেখবেন ঠিকিই টাকা পাবেন...।
রাত ১১টা বাজে। বাবা আমায় অনেকক্ষণ বকাঝকা করলো। আমার জন্য না কি আমার বোনের বিয়ে কোনদিন হবে না। আমি তখন বাবাকে বললাম,
-- বাবা, মানুষ শিক্ষিত আর ভালো জব করলেই ভালো মানুষ হয় না। বাবা হিসেবে তোমার যতটা দ্বায়িত্ব আছে তেমনি ভাই হিসেবেও আমার ঠিক ততটাই দ্বায়িত্ব আছে নিজের বোনকে সুখে রাখার। কোন ছোটলোকের কাছে বিয়ে দিয়ে আমি আমার বোনকে সারাজীবন কষ্ট পেতে দিবো না। আমি চাই আমার বোনকে এমন কেউ বিয়ে করুক যে আমার বোনকে সম্মান করবে। আমার বোনের চোখের জল ঠোঁটে আসার আগেই মুছে দিবে। যতদিন পর্যন্ত ঐ রকম ছেলে না পাবো ততদিন পর্যন্ত না হয় আমি আমার বোনকে মাথায় করে রাখবো...
বাবা মার রুম থেকে বের হয়ে দেখি আপু দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে কান্না করছে।
আমি পকেট থেকে ফোনটা বের করে রাকিবকে ফোন দিয়ে বললাম,
-- আমার বোন তোর বোনের মত না। আমার এখন বিরিয়ানী খেতে ইচ্ছে হচ্ছে। আপুকে বললে আপু এখনি বিরিয়ানী রান্না করে দিবে...
আপু চোখের জল মুছতে মুছতে বললো,
- কুত্তা, আমি পারবো না এত রাতে বিরিয়ানী রান্না করতে। আমার কয়েকদিন পর পরীক্ষা...
আমি কিছু না বলে মুচকি হেসে আমার রুমে চলে আসলাম। আমি জানি একটু পর আপু ঠিকিই আমার জন্য বিরিয়ানী রান্না করে নিয়ে আসবে..।
মিঃ বুদ্ধিমান গাধা
No comments