Ads

পৃথিবীর কিছু অমীমাংসিত রহস্যময় ঘটনা জানুন।

পৃথিবীর কিছু অমীমাংসিত রহস্যময় ঘটনা জানুন।

বিজ্ঞানীদের গবেষণা অনুযায়ী আজ থেকে প্রায় ৫৫৪ কোটি বছর পূর্বে পৃথিবীর জন্ম হয়েছিল। পৃথিবীতে মানুষের বসবাস আদি পিতা আদম (আঃ) ও আদি মাতা হাওয়া (আঃ) এর দ্বারা শুরু হলেও এর বহুকাল আগ থেকেই এই ধরণীতে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী ও জীবজন্তুর অস্তিত্বের প্রমান পাওয়া যায়। এই গ্রহের সর্বত্রই তাদের বিচরণ ছিল। কালপরিক্রমায় সময়ের আবর্তনে বিরূপ আবহাওয়া ও প্রতিকূল পরিবেশের দৈন্যদশায় পর্যুদস্ত হয়ে সেইসব প্রানীকূলের অধিকাংশ প্রজাতিরই বিলুপ্তি ঘটেছে। বহুকাল পরে হলেও বিজ্ঞানী কিংবা প্রত্নতত্ত্ববিদদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও গবেষণার ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীদের জীবাশ্ম আবিষ্কারের মাধ্যমে মানুষের নিকট ঐসকল প্রাণী সমূহের অস্তিত্বের বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে।

পৃথিবীর সূচনা লগ্ন থেকে অদ্যবধি প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন ঘটনা ঘটে চলেছে নিরন্তর। সেই সকল ঘটনার অনুসন্ধান করতে গিয়ে কিছুর সন্তোষজনক উত্তর মানুষ খুঁজে পেয়েছে আর কিছু সংখ্যক ঘটনার কোনো উত্তর খুঁজে পায়নি। যে সকল ঘটনার কোন উত্তর খুঁজে পায়নি, সেগুলো নিয়ে মানুষের মনে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা ও রহস্য। সেই সকল রহস্য উদঘাটনে মানুষ হন্য হয়ে ঘুরে বেরিয়েছে এক দেশ থেকে আরেক দেশ। কিন্তু কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি। কিছু রহস্য রয়ে গেছে অমীমাংসিত। তার গুটিকয়েক বিষয় নিয়েই আমার আজকের আয়োজন।

পিরামিড তৈরীর রহস্য

বহুভুজের উপর অবস্থিত যে ঘনবস্তুর একটি শীর্ষবিন্দু থাকে এবং যার পার্শ্বতল গুলো প্রত্যেকটি ত্রিভুজাকার তাকে পিরামিড বলে। মিশরে মোট ৭৫ টি পিরামিড আছে। সবচেয়ে বড় পিরামিডটি হলো গিজার পিরামিড যা খুফু'র পিরামিড হিসেবেও পরিচিত। খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০০ বছর পূর্বে এই গিজার পিরামিডের

সৃষ্টি বলে ধারনা করা হয়। এর উচ্চতা ৪৮১ ফুট এবং এটি ৭৫৫ বর্গফুট জমির উপর অবস্থিত। প্রায় বিশ বছর ধরে এক লাখ শ্রমিকের দ্বারা এটি তৈরি করা হয়। এই পিরামিডটি তৈরি হয় বিশাল বিশাল পাথর দিয়ে যার প্রত্যেকটির ওজন প্রায় ৬০ টন এবং দৈর্ঘ্য ৪০ ফুট। প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান উন্নতির ছোঁয়ায় বর্তমানে হয়তো এত ভারী পাথর উত্তোলনের যন্ত্র বের হয়েছে।

কিন্তু প্রায় সাত হাজার বছর পূর্বে যখন প্রযুক্তির কোন ছোঁয়া ছিল না সেই সময়ে এত ভারী পাথর দিয়ে কিভাবে এই পিরামিড নির্মাণ করা হয়েছিল সেই রহস্য আজও মানুষের নিকট অমীমাংসিত।

ভয়নিখের রহস্যময় পান্ডুলিপি

আজ থেকে ১০০ বছর আগে রহস্যময় এই পান্ডুলিপিটি পাওয়া যায়। পোলিশ-আমেরিকান পুস্তক বিক্রেতা প্রত্নতাত্ত্বিক উলফ্রিড ভয়নিখ ১৯১২ সালে এক নিলামের মাধ্যমে এই পান্ডুলিপিটি ক্রয় করেন।উইলফ্রিড ভয়নিখ এর মালিক বিধায় এর নামকরন হয় ভয়নিখের পান্ডুলিপি। কিন্তু এর

ভিতরের কোন লেখার মর্মার্থ তো দূরের কথা একটি বর্ণও কেউ পড়তে পারেনি। কি নেই এই পান্ডুলিপিটিতে? ফুল,ফল, সংখ্যা, জ্যামিতিক নকশা, গ্রহ, নক্ষত্র, ছবি। এ যেন এক মহা দুর্বোধ্য ধাঁধা। প্রথমদিকে এর লেখক কে তা বের করতেই হিমশিম খেতে হয়েছিল।

পরবর্তীতে বহু চেষ্টা তদবীর করে এর লেখক রজার বেকন এর নাম জানা গেলেও এটাতে তিনি কোন বিষয়ে কি লিখে গেছেন তা জানা জায়নি। কেউ মনে করেন এটাতে তিনি সোনা তৈরীর।

পদ্ধতি লিখে গেছেন। আবার কেউ মনে করেন এটাতে তিনি আত্মার গোপন রহস্য বলে গেছেন। কারো মতে এটাতে মৃত্যুর ওপারের কথা কিংবা অমরত্বের কথা লেখা আছে ইত্যাদি। কেউ আবার দাবি করেছেন এর চৌদ্দটি বর্ণ তিনি বুঝতে পেরেছেন। কেউ আবার এর দশটি শব্দ বুঝেছেন বলেও দাবি করেছেন।

কিন্তু আজ অবধি কেউ এর পরিপূর্ণ মর্ম উদঘাটন করতে সক্ষম হননি। এই পান্ডুলিপিটি মানুষের নিকট অমীমাংসিত রহস্যই রয়ে গেছে।

রহস্য দ্বীপ বাল্ট্রা

দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ইকুয়েডরের নিকটবর্তী ১৩ টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ। তারমধ্যে একটি দ্বীপের নাম হল বাল্ট্রা দ্বীপ। ঐ দ্বীপপুঞ্জের ১২টি দ্বীপ ঠিক থাকলেও বাল্ট্রা দ্বীপ শুধু ব্যতিক্রম। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চল হওয়ায় সেখানে প্রায়ই বৃষ্টিপাত হয়। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্য বৃষ্টির একটি ফোঁটাও বাল্ট্রা দ্বীপে পড়ে না।

এই দ্বীপে অবস্থান করার সময় অভিযাত্রী নাবিকদের কম্পাস অস্বাভাবিকভাবে স্থির হয়ে থাকে অথবা শুধু একদিকে কাত হয়ে থাকে অথবা ভুল দিক প্রদর্শন করে। প্লেনে থাকাকালীন সময়েও একই আচরন করে। এখান থেকে চলে গেলে আবার ঠিক হয়ে যায়। এই দ্বীপে কোন গাছ কিংবা পশুপাখি নেই। উড়ন্ত পাখিরা উড়ে এসে বাল্ট্রার কাছে এসে আবার ফিরে যায়। যেন কোন অদৃশ্য দেয়ালে বাঁধা পড়ে।

অনেকে মনে করেন এই দ্বীপে অস্বাভাবিক কোন শক্তির অস্তিত্ব রয়েছে। তবে আজ পর্যন্ত কেউ এর কোন সুরাহা করতে পারেননি।

রহস্যময় লকনেস মনষ্টার

এটি স্কটল্যান্ডের লক নেসে বসবাসকারী অনেক বড় অদ্ভুত প্রাগৈতিহাসিক ড্রাগণ আকৃতির পাখাওয়ালা একটি প্রাণী। সর্বপ্রথম ১৯৩৩ সালে এক দম্পতি এই লেকে দানবটি দেখতে পায়। তারা দেখেন যে, ড্রাগন আকৃতির প্রাগৈতিহাসিক একটি প্রাণী মুখে একটি জন্তু নিয়ে রাস্তা পার হয়ে হ্রদের দিকে যাচ্ছে। তার পরের বছর একজন ছেলে মোটরসাইকেল করে যাওয়ার সময় এর সাথে ধাক্কা লাগে।

তার বর্ণনা ঐ দম্পতির বর্ণিত দানবটির আকৃতির সাথে অনেকটা মিলে যায়।পরবর্তীতে লকনেস ও এর আশপাশের হ্রদগুলোতে আরো অনেকেই নাকি এই প্রাণীটিকে দেখেছে বলে জোর গুঞ্জন ওঠে। এটি নাকি লম্বায় ৩০ ফুট। স্থানীয়রা এর নাম দিয়েছে নেসি। ১৯৩৪

সালে একজন সাংবাদিক এর সবচেয়ে আলোচিত ছবিটি তুলেন। যদিও এই ছবিটি ভুয়া প্রমানিত হয়। পরবর্তীতে অনেক লেখক এই দানবটিকে ষষ্ঠ শতকে দেখা গেছে বলেও দাবি করেন। অবশ্য বিজ্ঞানীরা ৬৬ মিলিয়ন বছর পূর্বে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া এই প্লেসিওসরাস প্রাণীটি এখনো বেঁচে থাকার বিষয়টি অসম্ভব বলে মনে করেন।

১৯৭০ সালে লকনেসের তলদেশে সাবমেরিন দিয়ে খুঁজেও এর কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।১৯৭২ সালে রাইসন নামের এক ব্যাক্তি কিছু যন্ত্রপাতির মাধ্যমে দু পাশে ডানা ওয়ালা এই দানবটির অস্তিত্ব খুজে পান। ১৯৮৪ সালে এক প্রকৌশলী একে সাতার কাটতে দেখেন।

সর্বশেষ ২০১১ সালে এর অস্তিত্ব অনুভূত হয়। বিজ্ঞানীরা অনেক গবেষনা করেও এর কোন কূলকিনারা করতে পারেননি। বিজ্ঞানের এই স্বর্ণ সময়ে এসেও দানব নেসি এক অপার রহস্য হয়েই রয়েছে।

নেতাজীর অন্তর্ধান রহস্য

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের কিংবদন্তি নেতা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্ম ১৮৯৭ সালে। আজীবন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামী এই নেতা ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক এগার বার কারারুদ্ধ হয়েছিলেন।

১৯৪৫ সালের ১৮ই আগস্ট জাপানের অধিকৃত ফরমোসা বর্তমানে তাইওয়ান দ্বীপে অধিক যাত্রীবাহীত বিমান দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে পুড়ে গিয়ে তার দেহাবসান হয়। কিন্তু অনেকে মনে করেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ঐ বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন নি।অনেকে দাবি করেন ভারতের

স্বাধীনতার পরেও নাকি তাকে দেখা গেছে। অনেকে আবার বলেন ভগবান জি ও গুমনামি বাবাই হলেন নেতাজি। যদিও ব্যাপারটি স্পষ্ট নয়। তার অনেক ভক্ত মনে করেন তিনি আজও জীবিত আছেন। তার অবশ্য যথেষ্ট কারনও আছে। কারণ হলো, কিছুদিন পূর্বে ভারত সরকার কর্তৃক নেতাজির কিছু ফাইল উন্মুক্ত করা হয়। যাতে দেখা যায় ভারতের স্বাধীনতার পরেও নেতাজি জীবিত ছিলেন।

এমনকি বর্তমানে জাপানের রেনকোজি মন্দিরে রাখা নেতাজির চিতাভষ্ম পরীক্ষা করে বোঝা যায় এগুলো তার নয়। সেইসাথে আজাদ ফৌজ বাহিনীর ১০৭ বছর বয়সী এক সদস্য সাম্প্রতিক সময়ে দাবি করেন যে,ঐ বিমান দুর্ঘটনার ৪ মাস পরেও তিনি মিয়ানমার থাইল্যান্ড সীমান্তে নেতাজিকে নামিয়ে দিয়ে এসেছিলেন।

এসকল কারনে নেতাজীর অন্তর্ধান রহস্য আরো ঘনীভূত হয়। আর তাই নেতাজীর অন্তর্ধানের প্রায় ৮০ বছর হয়ে গেলেও তার মৃত্যুর বিষয়টি বিশ্ববাসীর নিকট আজও রহস্যময়।

একটি কথা প্রচলিত আছে যে সব রহস্যেরই সমাধান আছে। বর্তমানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির উৎকর্ষতার যুগে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বিষয়ের আবিষ্কার হচ্ছে। আবার অনেক অজানা গোপন রহস্যেরও উদঘাটন হচ্ছে। যেগুলো মানুষের নিকট কল্পনাতীত ছিল।

সেদিন হয়তো বেশি দূরে নয় যেদিন পৃথিবীর মানুষ যুগ যুগ ধরে চলে আসা এ সকল অনুদঘটিত রহস্যেরও সমাধান করে ফেলবে। অথবা হয়তো সৃষ্টি জীবের মৃত্যু রহস্যের মতো চিরকালই তা হয়ে থাকবে অমীমাংসিত রহস্য। 

 

ধন্যবাদান্তেঃ---"মিঃ মধু"

আরও বিস্তারিত জানতে চেক করুন "অদৃশ্য কাব্য" মঞ্চ। 

No comments

Powered by Blogger.