Ads

বিচ্ছেদময় প্রেমের করুন গল্প, 'এভাবেই থেকে যায় শুধু ভালবাসা' #মিঃ_বুদ্ধিমান_গাধা


অনন্য অনুভূতির গল্প-----------------

এভাবেই থেকে যায় শুধু  "ভালবাসা" 



বিচ্ছেদময় প্রেমের করুন গল্প, 'এভাবেই থেকে যায় শুধু  ভালবাসা'   #মিঃ_বুদ্ধিমান_গাধা



=
মাহমুদের সাথে ডির্ভোস হওয়ার প্রায় এক বছর পর, আজ মাহমুদ আমাকে ফোন দিলো । 

খুব অবাক হয়ে গেলাম, ডির্ভোস হওয়ার ৬ মাস পর আজ মানুষটা কি মনে করে
আবার আমাকে ফোন দিলো।
কিন্তু একটু আনন্দিত ও হলাম এই ভেবে যে - 
অনেকদিন পর আবার মানুষটার সাথে একটু কথা বলতে পারবো।

আচমকা হয়ে ফোনটা ধরলাম - হ্যালো,
ও পাশ থেকে আওয়াজ আসলো - কেমন আছো?

কথাটি শুনে চোখ দুটো কেনো জানি ঝাপসা হয়ে গেলো। হৃদয়ের মাঝে সেই পুরনো স্মৃতিগুলো আবার উকি মারতে লাগলো, ভালোবেসে মানুষটাকে বিয়ে করেছিলাম, কিন্তু কেনো জানি বিয়ের পর পাচঁটা বছর যেতে না যেতেই মানুষটা বদলে গেলো। 

আমার সাথে খারাপ আচরন করতে লাগলো, সামান্য ব্যাপার নিয়ে দিনরাত ঝগড়া করতে লাগলো, আমার সবকিছুই তার অপছন্দের তালিকার মাঝে স্থান পেলো ।
দিনরাত শুধু একটা কথাই বলতে লাগলো -আমি ডির্ভোস চাই।

কথাটি এককেবারে বুকের মাঝখানে গিয়ে লাগতো, 
যেই মানুষটা একটা সময় আমাকে ছাড়া কিছুই বুঝতোনা, আর আজ সেই মানুষটাই আমার কাছে ডির্ভোস চাচ্ছে? আমাকে সে এতটাই ভালোবাসতো যে আমার সামান্য খুশীতে তার পৃথিবীটা আলোকিত হয়ে যেতো, আর আমার চোখের সামান্য পানিতে তার পৃথিবীটা অন্ধকার হয়ে যেতো । 

অথচ সেই মানুষটাই কিনা আমাকে আমাকে কাঁদাচ্ছে ?

তবু ও সমস্ত ভাবনা, রাগ, অভিমানকে উপেক্ষা করে মানুষটার সাথে মানিয়ে নিয়ে আরও কয়েক বছর সংসার করলাম । কিন্তু তারপর আর পারলাম না । কেননা এক হাতে যেমন কখনোই তালি বাজে না,
ঠিক তেমনি জোর করে ও সংসার করা যায় না।

ওর অনাদর আর অবহেলা দিন- দিন ক্রমশ বাড়তে থাকে। অবশেষে একদিন খুব বাজে ভাবে জগড়া করে, অতপর আমাকে বলে - দয়া করে আমাকে মুক্তি দেও।

সেদিন কেনো জানি মনে হলো, মানুষটার হৃদয় মাঝে আমার জন্য আর ভালোবাসা নেই । এ

ই হৃদয়টায় অন্য কেউকে স্থান দিয়েছে । কিন্তু কেনো জানি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। 
কারন এই মানুষটা একদিন আমাকে বলেছিলো - নিতু আমার শরীরটা হয়তো আমার কাছে আছে কিন্তু আমার হৃদয়টা শুধু তোমার জন্য। আর আজ কিনা সেই মানুষটাই আমাকে বলে তাকে মুক্তি দিতে ?
ডির্ভোস পেপারে সই করতে গিয়ে, কেনো জানি বার - বার আমার হাতটা কাপছিলো । 

অশ্রু গুলো অনায়াসে গড়িয়ে পড়লো । কিন্তু একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম, মানুষটা এক নিমিষেই সই করে দিলো।
অবাক হয়ে গেলাম, সময়ের সাথে- সাথে মানুষ এতটা বদলে যায় ? নাকি সময়ের সাথে মানুষগুলোকে আমরা একটু বেশি চিনে ফেলি।
চলে আসলাম বাবার বাড়ি মানুষটাকে মুক্ত করে দিয়ে ? কিন্তু, আজ এক বছর পর আবার কি মনে করে ফোন দিলো?

- কি ব্যাপার আমার সাথে কি তোমার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।
- না সেরকম কিছু না, আসলে অনেকদিন পর ফোন দিলে তো তাই খুব অবাক হলাম। তা কি মনে করে ফোন দিয়েছো?
- আসলে আজ তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে একটু আমার সাথে দেখা করতে আসবা ?
কথাগুলো যেনো এক নিমিষে আমার মনের সমস্ত রাগ, অভিমানকে দূরে সরিয়ে আবার সেই পুরনো ভালোবাসাকে জাগ্রত করে । কেনো জানি মানুষটাকে না বলতে পারলাম না । কিছুক্ষণ ভেবে বললাম - আসবো কিন্তু কোথায় ?
- ইসলামিয়া হসপিটালের তিনতলার ৬ নং কেবিনে।
বিস্মিত হয়ে গেলাম, হসপিটালে কেনো? তাহলে মানুষটার কি কিছু হয়েছে
- হসপিটালে কেনো?
- এলেই দেখতে পারবে, আর হ্যা একদম লেট করবে না তোমার তো আবার স্বভাব সবসময় লেট করা।
কথাটা বলেই মানুষটা ফোনটা কেটে দিলো।

আমার পরানে তখন আনন্দের শিহরণ জাগলো -
যাক তাহলে মাহমুদ আমাকে এখন ও ভালোবাসে । তাইতো আমার সবথেকে বাজে স্বভাবটার কথা ওর মনে আছে। এই স্বভাবটার জন্য আমি যে প্রতিদিন ওর হাতে কত বকা শুনতাম তা বলে শেষ করা যাবে না।
আর শুধু বকাই না ওর সাথে রিলেশন হওয়ার পর থেকে আমার প্রত্যেক জন্মদিনে ও শুধু আমাকে ঘড়িই গিফট করতো একটু সময়ের প্রতি যত্নবান হতে । কিন্তু কেনো জানি আমি আমার এই স্বভাবটাকে পরিবর্তন করতে পারলাম না।

কিন্তু আজকে লেট করা যাবে না, খুব তাড়াহুড়ার সহিত ওর পছন্দের নীল শাড়িটি পড়লাম, চোখে একটু কাজল দিলাম, ঠোটটাকে রক্তজবা করে অতপর খোপায় এক গুচ্ছ ফুল লাগালাম । মাহমুদ সবসময় আমার এই সাজটাকে খুব পছন্দ করতো, তাই আজ আবার ওর পছন্দ মতো সাজলাম।

ও খুব পায়েস পছন্দ করে তাই ডির্ভোস হওয়ার পরও প্রতিদিন আমি নিজ হাতে পায়েস রান্না করে রেখে দিতাম । এই ভেবে যে - কোনো এক প্রয়োজনে হয়তো মানুষটি একদিন আমার নিকটে আসবে, আর আমি তার পছন্দের খাবারটা তাকে দিয়ে বিনিময়ে তার মুখে একটু মলিনমাখা হাসি দেখবো।
প্রতিদিনকার মতো আজ ও পায়েস রান্না করেছিলাম। অতঃপর পায়েসটাকে নিয়ে খুব দ্রুততার সাথে ঘর থেকে বের হয়ে গেলাম।
ঘড়ির কাটার সাথে পা মিলিয়ে আজ চলতে থাকলাম। একটা সিএনজি তে উঠলাম, ঘড়ির কাটাটা আজ মনে হচ্ছে একটু তাড়াতাড়ি ঘুরছে কিন্তু আমার পথ চলাটা যেনো শেষ হচ্ছে না।

হসপিটালে পৌছে তিনতলার ৬ নং কেবিনের দিকে অগ্রসর হতে লাগলাম।
কিন্তু যতই এগোচ্ছি ততই ভয় যেনো আমাকে কামড়ে ধরছে এই ভেবে যে ওর কিছু হলো না তো।

অবশেষে কেবিনে গিয়ে পৌছালাম, -কিন্তু কেবিনে গিয়ে দেখলাম আমার শাশুড়ি এক পাশে বসে কান্না করছে । আর, পার্থ" অর্থ্যাৎ আমার দেবর আমার দিকে তাকিয়ে কান্না করে দিয়েছে। কিন্তু মাহমুদকে কোথাও দেখতে পেলাম না। হঠ্যাৎ করে কেবিনের দিকে নজর পড়তেই দেখি মাহমুদ ঘুমিয়ে আছে একটা নিস্পাপ শিশুর মতো। কিছু বুঝে উঠার আগেই পার্থ আমাকে একটা চিঠি ধরিয়ে দিয়ে বললো - ভাবি ভাইয়ের লেখা শেষ চিঠি।

বিস্মিত হয়ে চিঠিটা খুললাম,
দেখলাম তাতে লেখা আছে - 

""আমি জানি, আজকেও তুমি লেট করবে, তোমার লেট করার স্বভাবটা আর আমি বদলাতে পারলাম না। কিন্তু কি জানো? কিছু ক্ষেএে সামান্যটুকু লেট তোমার জিবনের সব সুখ কেড়ে নিতে পারে, 
তাই দয়া করে একটু সময়ের প্রতি খেয়াল রেখো।

ভালোবেসে তোমায় আমি বিয়ে করেছিলাম, খুব ইচ্ছে ছিলো তোমার হাত ধরে মৃত্যু অবদি পথ চলার কিন্তু তা হয়ে উঠলো না। কেননা বিয়ের পাচঁ বছর পর আমি জানতে পারলাম আমার কিডনি দুটো ড্যামেজ হয়ে গেচ্ছে । 
সেদিন ইচ্ছে করছিলো এসে তোমাকে সত্যি কথাটা বলে দেই । কিন্তু তোমায় এতো বেশি ভালোবেসেছি যে, খুব স্বার্থপর হয়ে গেলাম।
আর তাইতো আমার কষ্টের ভাগ তোমাকে দিতে পারলাম না।


No comments

Powered by Blogger.