Ads

কোনো এক রাতের অজানা বোধের গল্প। #_মিঃ_বুদ্ধিমান_গাধা®️

কোনো এক রাতের অজানা বোধের গল্প। #_মিঃ_বুদ্ধিমান_গাধা®️



কোনো এক রাতের অজানা বোধের গল্প।

রাত দুটো বেজে দশ মিনিট।
এয়ারফোন কানে দিয়ে গান শুনতে শুনতে মাহমুদ বাড়ান্দায় এসে বসেছে।
দুইটি গান আজ সারাদিন ধরে শুনেছে। গান দুটি এই প্রথম শুনছে ব্যাপারটা মোটেই তা না।
সে প্রায়ই শোনে, আজ কেন যেনো বেশীই উপলব্ধি করছে গানের ভিতরটাকে। কেনো করছে কে জানে ।
অন্ধকার বাড়ান্দা, অবশ্য  আলো জালানোই ছিলো আসার সময় মাহমুদ আলোটা অফ করে এসেছে।
রাতের বাড়ান্দা সবসময় অন্ধকার অবস্থায় সুন্দর।
 আলো জালানো বাড়ান্দা তার কাছে জঘন্যতম লাগে। দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতায় মাহমুদ এই তথ্য আবিস্কার করেছে।
এই সমইয়ের মধ্যে নিশ্চয়ই কিছু মানুষের অর্ধেক ঘুম হয়ে গেছে। মাহমুদের কাছে অবশ্য এমন কোন রাত না! তার কাছে এটা রাতের কেবল শুরু!


রাতের এই সময়টা পৃথিবী তার আসল রুপ ধারণ করে থাকে বলে মাহমুদের ধারনা। বেশীকিছু না শুধু অন্ধকার বাড়ান্দায় বসে বাইরের আলো আধাঁরি আকাশের দিকে গভীর দৃষ্টিতে কিছু সময় তাকিয়ে থাকলেই হয়। 
তখন একধরনের ঘোর তৈরী হয়, অদ্ভুদ একরকম শিহরণ জাগে মনে। সমস্ত চেতনা গুলিয়ে যায়, অচেনা বিষাদে হৃদয় মন হুহু করে উঠে। 
সেই বিষাদে মিশে থাকে অদৃশ্য সুখানুভূতি । 
রাত যদি চাদঁনী হয়, তবে আরো ভয়ংকর অবস্থা। চেনা জানা এই জগত, তবুও একেবারে সম্পূর্ন অচেনা লাগবে।  চারপাশের যাকিছু চোখে পড়বে তার কোনকিছুই সাভাবিক মনে হবে না।

মানুষ স্বপ্নের ভিতরে যেরকম ধোয়া ধোয়া বর্ণিল আভা দেখতে পায়, অনেকটা সেরকম। সামনের ঘর-বাড়ি গাছগাছালী পুকুর ফাকা জমি এরাও জীবন্ত হয়ে উঠে। তাদের মধ্যে নানান অঙ্গভঙ্গি লক্ষ করা যায়। অনেকটা, মৃত্যুর পরের জগত আর এপাড়ের জীবিত জগতের মধ্যবর্তী একটা অবস্থা!
যদিও, মৃত্যুর পরের জগতের দৃশ্য কেমন তা আমাদের জানা নেই।

সাধারণ চোখে এসব দেখা যাবেনা,
দেখতে হবে ভিন্ন চোখ দিয়ে।
যে চোখ আমাদের শরীরের উপরে থাকে না।
অতি তির্যখভাবে লুকিয়ে থাকে, 
মনজগতে বা চেতনার কোন এক জায়গায় ।



বেশীরভাগ সময় ঘুমিয়ে থেকে, রহস্যময় এই রুপ দেখা থেকে অধিকাংশ মানুষ
বঞ্চিত থাকে বলে ওইসব মানুষের জন্য মাহমুদের খুব আফসোস হয়।
বাড়ান্দার এই জায়গা মাহমুদের অসম্ভব প্রিয়। এখান থেকে অনেক কিছু একসাথে দেখা যায়। দালান কোঠার এই শহরে, এখনও তার বাড়ান্দার কাছাকাছি কিছু দূরে একটা পুকুর আছে। 
এই ব্যাপারটা মাহমুদের জন্য বড় রকমের প্রাপ্তির, একইসাথে প্রচন্ড ভালোলাগার ।
কিছুদিন পরপর এই বাড়ান্দায় বসে থেকে,  সারা রাত পার করে দেওয়া তার শখে পরিণত হয়েছে । মানুষের নানান রকম শখ থাকে। বেড়াতে যাওয়া, সিনেমা দেখা, ছবি আকাঁ, মাহমুদের শখ বাড়ান্দায় বসে গভীর রাতের সময়গুলিকে ভিন্ন আঙ্গিকে দেখা।


আজ যে গান দুটো সে শুনেছে, তা হলো "আমায় বান্ধিয়া রাখো কলিজায়" এবং
"নিলা তুমি আবার এসো ফিরে" ।
এমন আহামরি কিছু গান না, খুবই সাদামাটা গান। কিন্তু তার কাছে মোটেই সাদামাটা মনে হয় না। তার কাছে এই গান খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও একইসাথে স্পর্শকাতর ।  কেনো এই গান গুরুত্বপূর্ণ এবং 
স্পর্শকাতর তার ব্যাখ্যা অবশ্য সে নিজেও ঠিক জানে না ।  সময় পেলেই, শোনার পাশাপাশি মাহমুদ নিজেও এই গান গুনগুন করে গায়। অতটা ভাল হয় না, তবুও যতটুকু পারে গানের ভিতরে ঢুকে যাওয়ার চেস্টা করে। আজ এই গান দুটি সে একবার করে গেয়েছে। 
কোন গান গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় মত এমন কোন বিষয় না, কিন্তু তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ!
 কেনো?? এর উত্তর মাহমুদের জানা নাই। 


মাহমুদের পছন্দের গানের সংখা খুবই সীমিত, হাতে গোনা যায়।
তার প্রিয় গানের বাইরে আরো অগনিত গান আছে, যা জগত বিখ্যাত হয়ে আছে। 
মাহমুদের সেসব নিয়ে কোন আগ্রহ নেই। শুধুমাত্র তার নিজের পছন্দের গান নিয়েই যত ভাবনা। অনেকবারই তার মনে হয়েছে, পছন্দের গানগুলি আসলে তার জন্যই লেখা হয়েছে। 
তার হয়ে কেউ অন্তরালে বসে তার অচেনা অভিমান গুলোকে হয়তো তুলে ধরে।
তার প্রিয় গানগুলি শোনার সময় সে গানের গহীন গভীরে চলে যায়।
তার ধারনা হয়, গান আসলে সে নিজেই গায়,
শিল্পী শুধু তার সাথে তাল মিলিয়ে যায়!!  

মাহমুদ যখন ক্লাশ সিক্সে পড়ে তখন প্রথম সে "নিলা" গান'টি শুনেছিলো।
তার পরিস্কার মনে আছে এই গান শোনার সময় তার অদ্ভুত রকমের কস্ট হতো।  
কান্না এসে প্রায়ই চোখ ভিজে উঠতো। সে তখন কিশোর ছেলে, জগতের জটিল বিষয়ে তখনও তার কোন ধারনা হয়নি, হওয়ার কথাও নয়। 
কিন্তু তবুও তার মনে হতো তার ভিতরে কিছু একটা খালি হয়ে আছে।
অজানা অপ্রাপ্তিতে হৃদয় খা-খা করতো।
কেনো এমন করতো? এর উত্তর আজও সে বের করতে পারেনি।


"এই মন দেউলিয়া পাগলপারা" অবশ্য এখনকার গান।
তবে মাহমুদের কাছে এর আবেদন একই। এই গান যতবার শোনে
ততবারই সে অদ্ভূদ কিছু একটা অনুভব করে।
 হৃদপিন্ড শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়।
তার খুব ইচ্ছে করে গানের সাথে-সাথে মাথা দুদিকে ঝাকিয়ে ঝাকিয়ে গানের গভীরে চলে যেতে। যে গভীরতায় হয়তো দেখা পাওয়া যাবে অনন্তকাল ধরে সঞ্চয় করে রাখা মাহমুদের অতি প্রিয় যাতনাগুলি।
অজানা সেই যাতনাকে খুব কাছ থেকে দেখতে ইচ্ছে হয় তার।

কখনও কি সে পারবে তা দেখতে????????


লেখাঃ-- মিঃ বুদ্ধিমান গাধা 

1 comment:

  1. speechless, really I'm speechless ,, eto monomugdhokor kore bornona korolen kono ek rater ojana bodher golpo, it's really wonderful writing.

    ReplyDelete

Powered by Blogger.